নারী দিবস ম্যারাথনে পাপিয়া চ্যাম্পিয়ন
‘নিরাপদ সমাজ, নিরাপদ নারী’-স্লোগানে অনুষ্ঠিত নারী দিবস রেগুলার ম্যারাথনে রেগুলার বাংলাদেশের পাপিয়া খাতুন চ্যাম্পিয়ন, হামিদা
শামীম চৌধুরী : আইপিএলে পুনে সুপার জায়ান্টসের বিপক্ষে দু’ম্যাচের একটিতেও উইকেট পাননি মুস্তাফিজুর। তবে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটই বলুন, কিংবা টুয়েন্টি-২০ ক্রিকেট, অথবা আইপিএলÑ টানা ২ ম্যাচে উইকেট শূন্য থাকার ঘটনা এবারই প্রথম মুস্তাফিজুরের। গত পরশু দিল্লী ডেয়ারডেভিলসের বিপক্ষে ম্যাচে ৪-০-৩৯-০, এমন বোলিং কাটার বিস্ময়ের কাছে কামনা করেনি কেউ। যে ছেলেটি দিল্লী ডেয়ারডেভিলসের বিপক্ষে ৪-০-৯-২ বোলিংয়ে ছড়িয়েছেন বিস্ময়, প্রতিটি ম্যাচে ডট বলের ছড়াছড়ি, সেই মুস্তাফিজুরকে কি সহজেই না খেলেছে দিল্লী ডেয়ারডেভিলস! পাওয়ার প্লে’র শেষ ওভারে (৬ষ্ঠ ওভারে) বোলিংয়ে খরচা ৯ রান, দ্বিতীয় স্পেলে যখন ডেভিড ওয়ার্নার তুলে দিয়েছেন তার হাতে বল, তখন দিল্লীর টার্গেট ৪২ বলে ৫৬। প্লাকার্ডে প্লাকার্ডে সয়লাব রাজিব গান্ধী স্টেডিয়ামে তখন মুস্তাফিজুরকে স্বাগত জানিয়েছে ভক্তরা। অথচ রিসবান্ত পান্ট নামে ১৯ বছরের বাঁ হাতি মিডল অর্ডারের সামনে এসেই ধাক্কা খেতে হলো মুস্তাফিজুরকে। দ্বিতীয় স্পেলের প্রথম ওভারে ১৪ রান, শেষ ওভারে ১৩ রান খরচা করতে হলো বাঁ হাতি কাটার মাস্টারকে। একটি অফ কাটারকে পর্যন্ত মেরেছেন রিসবান্ত ছক্কা, লো ফুলটসেও খেয়েছেন ছক্কা!
৪-০-১৯-১, এমন বোলিংয়ে দিল্লী ডেয়ারডেভিলসের প্রোটিয়া পেস অলরাউন্ডার ক্রিস মরিস ম্যাচ সেরার পুরস্কার নিয়ে মুস্তাফিজুরের বোলিং রহস্য করেছেন ভেদÑ ‘এর জন্য আমরা অবশ্যই বেশ সময় নিয়েছি। কীভাবে স্টিভেন স্মিথ তাকে খেলেছে, সেই ভিডিও দেখেছি। গত ম্যাচে অশ্বিন তাকে কীভাবে মোকাবিলা করেছে, সেটাও দেখেছি।’ মুস্তাফিজুরকে আটকানোর কাজটা যে কঠিন ছিল, তা বলতে দ্বিধা করেননি ক্রিস মরিসÑ ‘২০ বছর বয়সেই সে অবিশ্বাস্য এক বোলার হয়ে উঠেছে। প্রথমবারের মতো আইপিএলে খেলে দারুণ বল করছে। আতঙ্ক সৃষ্টি করেছে। তাকে নিয়ে সবার মাথার ঘাম পায়ে ফেলতে হচ্ছে, তাকে আটকানোর পথ খুঁজতে হচ্ছে। এর জন্য পর্দার আড়ালে বেশ ঘাম ঝরাতে হয়। সব কথা তো আর খুলে বলা যায় না! তাই আমরা অনেক কিছু বিশ্লেষণের পর তাকে আটকানোর জন্য গেম প্লান করেছি। ভাগ্য ভাল, আজ (গত পরশু) সেই পরিকল্পনা কাজে লেগেছে।’
ভুবনেশ্বর, আন্দ্রে রাসেল, ক্রিস জর্ডান, মোহাম্মদ সামী, জহির খানরা যেখানে চলমান আসরে ইনিংসে ৫০ রানের বেশি খরচ করে ফেলেছেন, তাতে উঠছে না কথা। সেখানে এক ম্যাচে ৩৯ রান খরচে মুস্তাফিজুরের কাটার রহস্য হয়েছে ফাঁস, তা মনে করছেন না হাবিবুল বাশার সুমনÑ ‘আগের ম্যাচে তো ধোনীর মতো অধিনায়ক পর্যন্ত মুস্তাফিজুরকে স্বাভাবিকভাবে খেলতে পারেনি।
চলমান আসরে ১০ উইকেট পেয়েছেন যারা, তাদের মধ্যে ইকোনমি সবচেয়ে ভাল মুস্তাফিজুরের (৬.৫৩), সুতরাং এক ম্যাচে মুস্তাফিজুরকে চেনা রূপে দেখা যায়নি বলে মুস্তাফিজুরকে নিয়ে উদ্বিগ্ন নন বাংলাদেশ দলের সাবেক অধিনায়ক এবং বর্তমানে ক্রিকেট দলের নির্বাচক হাবিবুল বাশার সুমনÑ ‘টুয়েন্টি-২০ ম্যাচে যেখানে বোলারদের উপর চড়াও হয় ব্যাটসম্যানরা, সেখানে ওভারপ্রতি ৬’র ঘরে রান খরচা মুস্তাফিজুরের। এর চেয়ে ভাল বোলিং কল্পনা করবেন কিভাবে? ওকে তো অধিকাংশ ব্যাটসম্যান মেরে খেলতে ভয় পায়। তা না হলে তো উইকেট সংখ্যা আরো বাড়তে পারতো। শেন ওয়ার্ন, মুরালীধরনও তো তাদের ক্যারিয়ারে কোন না কোন ইনিংসে বাজে বোলিং করেছে, তার পরও তো তারা বিশ্বের সর্বকালের সেরা বোলার। এক ম্যাচে মুস্তাফিজুর ৩৯ রান দিয়েছে বলে ওর সব কৌশল ধরে ফেলেছে, এমন ধারণা মোটেও ঠিক নয়। তাছাড়া প্রতিটি ম্যাচে একজন বোলার উইকেট পাবে, এটা ভাবাও ঠিক নয়। তাছাড়া ক্রিকেটাররা তো কম্পিউটার নয়, যে মাউসে হাত দিয়ে, কি বোর্ডে আঙুল দিয়ে যা চাইবেন, তা দেখতে পাবেন।’
আইপিএলে মুস্তাফিজুরের কাটার রহস্য ধরতে প্রযুক্তির ব্যবহার করছে প্রতিপক্ষ দলগুলো, তাতে তার কিছু কিছু কাটার রহস্য ধরে ফেলেছে দলগুলো। এমন ধারণা পোষণ করছেন হাবিবুলও। তবে প্রযুক্তির সকল সুবিধা নিয়েও মুস্তাফিজুরের সব কৌশলটা জানা সম্ভব নয় বলে মনে করছেন হাবিবুল বাশার সুমনÑ ‘মুস্তাফিজুর কিন্তু সীম অফ করে ভেরিয়েশনে বল করছে না। কাটার দিয়েই কিন্তু ও ১৪০ কিলোমিটার গতিতে কখনো কখনো বল করছে। আইপিএলে এক একটি দলে সাপোর্টি স্টাফ অনেক লম্বা। তাই ভিডিও এনালাইসিস অথবা অন্য কোন প্রযুক্তির মাধ্যমে মুস্তাফিজুরের বল ডেলিভারী বোঝার চেষ্টা করছে সবাই। ওকে যতোই ফেস করবে, ততোই ওর কাটারগুলো বুঝতে পারবে ব্যাটসম্যানরা। তবে ওর কিছু কিছু অস্ত্র ধরতে পারলেও সমস্যার কিছুই দেখছি না। মুস্তাফিজুর যে মানের বোলার, তাতেওর সব কাটার বুঝে ওঠা সম্ভব নয়।’
এশিয়া কাপের প্রথম ম্যাচে ভারতের বিপক্ষে ৪-০-৪০-০, এমন বোলিংয়েও মুস্তাফিজুরকে নিয়ে কম কথা ওঠেনি। কাটার জারি-জুরি এই বুঝি হয়ে গেল শেষ, এমন কথা পর্যন্ত উঠেছিল এই কাটার মাস্টারকে নিয়ে। অথচ, ওই ম্যাচের হতাশা ভুলে কি গর্জনই না দিয়েছেন এশিয়া কাপ এবং টি-২০ বিশ্বকাপের ম্যাচগুলোতে। সেই ভারতের বিপক্ষে ফিরতি দেখায়ই তো চেনা মুস্তাফিজুর হাজির (৪-০-৩৪-২)! আর টি-২০ বিশ্বকাপে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে ইডেন গার্ডেনসে তার বোলিংই আসর সেরা (৪-০-২২-৫)। সুতরং চলমান আইপিএলেই যে সেরাটা অপেক্ষায় আছেন মুস্তাফিজুর।
আইপিএল সব অস্ত্র খুলবেন না মুস্তাফিজুর, হায়দারাবাদ যাত্রার আগে এমনটাই জানিয়েছিলেন মিডিয়াকে। ইনজুরি এড়ানোর ভাবনাও মাথায় ঢুকিয়ে দিয়েছেন তার এজেন্ট। নিয়মিত বিসিবি’র সংশ্লিষ্ট বিভাগের সঙ্গে হচ্ছে কথা, হিথ স্ট্রিকের বোলিং টিপস মেনে চলার নির্দেশনাও রাখতে হচ্ছে কাটার মাস্টারের মাথায়।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।