Inqilab Logo

শনিবার, ০৪ মে ২০২৪, ২১ বৈশাখ ১৪৩১, ২৪ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

পড়াশোনায় ভালো হয়েও কর্মক্ষেত্রে পিছিয়ে মেয়েরা

নিউ ইয়র্ক টাইমস | প্রকাশের সময় : ১১ ফেব্রুয়ারি, ২০১৯, ১২:০৪ এএম

প্রাথমিক স্কুল থেকে কলেজ পর্যন্ত দেখা যায় যে, মেয়েরা ছেলেদের চেয়ে তাদের স্কুল ওয়ার্কে অধিক শৃঙ্খলাবদ্ধ এবং ভালো গ্রেড পায়। মেয়েরা শিক্ষাগতভাবে ছেলেদের চেয়ে ভালো করে। কিন্তু তা সত্তে¡ও বিস্ময়করভাবে বৃহৎ সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোর ৯৫ শতাংশ শীর্ষপদে পুরুষরা অধিষ্ঠিত।
যেসব অভ্যাস এই মেয়েদের ক্লাসের সেরা করে, স্কুল ওয়ার্কে তাদের গভীর মনোযোগ নিবদ্ধ করে সেই একই অভাসে কেন তারা কর্মক্ষেত্রে পিছিয়ে থাকে?
নারীদের অগ্রগতির ক্ষেত্রে বাধা অনুসন্ধান করতে গিয়ে সাংবাদিক কেটি কে ও ক্লেয়ার শিপম্যান দেখেছেন যে, আস্থার অভাবের চেয়ে যোগ্যতার অভাবই এ ব্যাপারে বাধা হয়ে থাকতে পারে। যখন তা কর্মসংশ্লিষ্ট আস্থার ক্ষেত্রে আসে, তারা দেখেছেন পুরুষরা অনেক বেশি এগিয়ে। তারা লিখেছেন, কমশিক্ষিত ও প্রস্তুতিহীন পুরুষ এগিয়ে যেতে দু’বার চিন্তা করে না। উচ্চশিক্ষিত ও অতিরিক্ত প্রস্তুতি সম্পন্ন মেয়েরা পিছিয়ে থাকে। মেয়েরা তখনি আস্থাশীল হয় যখন তা সঠিক থাকে।
টিনএজারদের সাথে কাজ করা একজন মনস্ত্বতাত্ত্বিক হিসেবে আমার বহু রোগীর পিতামাতার কাছ থেকে এ উদ্বেগের কথা শুনেছি। তারা নিয়মিতভাবে মন্তব্য করেছেন যে, তাদের পুত্ররা বয়স্কদের তাদের পিছে ফেলে রাখতে প্রচুর কাজ করে, সেখানে তাদের কন্যারা নানা সমস্যার মধ্যেও ভুল না করতে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ। নিজেদের অ্যসাইনমেন্ট উচ্চমানের করে নিষ্পন্ন না করা পর্যন্ত মেয়েরা ক্ষান্ত হয় না।
আমাদের প্রশ্ন করা দরকার যে, স্কুল যদি আমাদের ছেলেদের জন্য আস্থার কারখানা হয় আর আমাদের মেয়েদের জন্য যদি শুধু যোগ্যতার কারখানা হয় তাহলে কী হবে?
এ সম্ভাবনার বিষয়টি আমার মাথায় আসে যখন আমি পেশাগত কারণে এক ৮ম গ্রেডের ছাত্রীর যত্ম নিচ্ছিলাম। সে খুব উচ্চ গ্রেড পেয়েছিল, স্কুল তাকে উদ্দীপনার অনুভ‚তি যুগিয়েছিল। নবম গ্রেডে পড়া তার ভাইও একই রকম অসাধারণ ফল করেছিল। কিন্তু আমি যখন তাকে জিজ্ঞেস করলাম, সে কি বোনোর মত কঠোর পরিশ্রম করেছে, তখন বোন তাকে উপহাস করল। যদি সে কোনো অ্যসাইনমেন্টের জন্য এক ঘন্টা পরিশ্রম করে থাকে ও ‘্এ’ পেয়ে থাকে, সে অন্য অ্যাসাইনমেন্টগুলোর ক্ষেত্রেও যদি সে পুরো এক ঘন্টা দিতে পারে তবেই শুধু সে নিরাপদ অনুভব করবে। এর বিপরীতে তার ভাই কাজে তত মনোযোগী নয়। সে যখন বাড়িতে ‘এ’-র খবর নিয়ে আসে তাকে খুব গর্বিত মনে হয়। যদি তার গ্রেডের একটু অবনতি ঘটে সে একটু জোর চেষ্টা চালায়। কিন্তু মেয়ের ক্ষেত্রে যদি এ রকম ঘটে তখন সে সর্বোচ্চ চেষ্টা চালিয়েও নিরাপদ বোধ করে না।
ন্যূনতম বা মাঝারি চেষ্টা চালিয়ে সাফল্য লাভ করার এ উদাহরণ সম্ভবত অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এটা আমাদের পুত্রদের আস্থা উন্নয়নে সাহায্য করবে, তারা দেখবে তারা বুদ্ধি খাটিয়ে তা কতখানি সম্পন্ন করতে পারে। তাদের জন্য স্কুল হচ্ছে পরীক্ষার মাঠ যেখানে তারা সামর্থ্য অনুযায়ী বিশ্বাস তৈরি করতে পারবে ও তার উপর নির্ভর করে সহজেই উপরে উঠতে পারবে। অন্যদিকে আমাদের কন্যারা তাদের সামর্থ্য অনুযায়ী আস্থা লাভের সুযোগ থেকে বঞ্চিত হতে পারে যদি তাদের সবসময় বুদ্ধিবৃত্তিক কঠোর পরিশ্রমের উপর নির্ভর করতে হয়।
সুতরাং আমরা কীভাবে স্কুলে আস্থা ও যোগ্যতা তৈরির উচ্চ-সচেতনতাসম্পন্ন মেয়েদের (এবং ছেলেদের) পেতে পারি?
প্রথমত, বাবা-মা ও শিক্ষকরা অযোগ্য অতিরিক্ত কাজের প্রশংসা বন্ধ করতে পারেন, এমনকি তার ফলাফল যদি ভালো গ্রেডের হয়, তবুও।
গোড়ার দিকেই লিঙ্গভিত্তিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠিত হতে পারে যাতে তা খুব শিগগিরই কখনো তাদের তাদের বিরুদ্ধে কাজ শুরু করতে না পরে। সম্প্রতি আমি আমার ৮ বছরের মেয়েকে ‘হ্যারি পটার অ্যান্ড দি প্রিজনার অব আজকাবান’ পড়ে শোনানোর সময় একটি জায়গায় এসে থেমে যাই যেখানে হারমিওন একটি প্রবন্ধের দিকে নজর দিয়েছে যার নাম হচ্ছে ‘টু রোলস অব পার্চমেন্ট মোর দ্যান প্রফেসর বিনস আস্কড ফর’। আমি বললাম, হারমিওন তার সময়ের সর্বোত্তম সদ্ব্যবহার করেনি। সে একজন সক্ষম ছাত্রী এবং কঠিন পরিশ্রম না করেই ভালো করা তার পক্ষে সম্ভব। আমার মেয়ে বলল, ঠিক, অবশ্যই সে পারে।
আমরা স্কুলের প্রতি ভিন্নপন্থায়ও মেয়েদেরকে উৎসাহিত করতে পারি। একটি হচ্ছে তারা কত ঘন্টা ব্যয় করে তার বদলে তাদের চেষ্টার সাশ্রয়ের দিকে গুরুত্ব আরোপ। যখন পড়াশোনায় আগ্রহী ও তা নিয়ে উদ্বেগের মধ্যে থাকা কোনো মেয়ে আমাকে বলে যে, সকালে সে দু’ঘণ্টা পড়াশোনা করেছে, আমি সেটাকে শুরু হিসেবে দেখি। এটাই তাদের কৌশলী হয়ে ওঠা, লেখাপড়া কীভাবে অব্যাহত রাখা যায় তা ঠিক করা ও কিছু কম করেও একই গ্রেড লাভ করার মত বিষয়গুলো বুঝিয়ে দেয়ার সময়। আমার রোগী ও আমার কিশোরী কন্যার প্রতি আবেদন যে, নমুনা পরীক্ষার মাধ্যমে শিক্ষা কার্যক্রম শুরু করা প্রয়োজন। যে কোনো ধারণা বা কাজে দক্ষতা অর্জনের জন্য তাদের কতটা প্রয়োজন তা নির্ধারণের আগে তারা কতটা জানে, তা এ পরীক্ষায় বোঝা যাবে। বহু মেয়ের মধ্যেই কাজের অবিশ্বাস্য শক্তি থাকে, কিন্তু তাদের সেটা আবিষ্কার করা ও তারা ইতোমধ্যে কতটা তা উপলব্ধি করেছে তা জানা দরকার।
মেয়েদের উচ্চ প্রবণতার ব্যাপারটি শিক্ষকরা চ্যালেঞ্জ করতে পারেন। গড়ে উচ্চ ‘এ’ পাওয়া কোনো মেয়ে যখন অত্যধিক ভালো করার দিকে মনোযোগ দেয় তখন তার ইনস্ট্রাক্টর তাকে জিজ্ঞেস করতে পারেন যে, সে সত্যই সে বিষয়টি নিয়েছে অথবা সে কিছু মেয়ে যাকে ‘ইনস্যুরেন্স পয়েন্ট’ বলে আখ্যায়িত করে তা যোগাড় করতেই সে আগ্রহী কিনা। যদি আগেরটা হয় তাহলে তাকে সমর্থন দিতে হবে। আর যদি পরেরটা হয় তাহলে শিক্ষক ছাত্রীটিকে উৎসাহিত করতে পারেন এ বলে যে, সে যা জানে তার ওপর আস্থা রাখতে পারে ও সে ইতিমধ্যে যা কাজ করছে তাতে সে যে গ্রেড চাইছে তা অর্জন করতে পারে। শিক্ষকরা ছাত্রীটির কাছে এটাও উল্লেখ করতে পারেন যে, তার ইন্স্যুরেন্সের প্রয়োজন নাও হতে পারে, সম্ভবত তার যা আছে তা তার লক্ষ্য অর্জনের জন্য বেশ ভালো।
সর্বশেষ আমরা মেয়েদেরকে আশ^স্ত করতে পারি যে, স্কুল সম্পর্কে কিছু উদ্বেগ বোধ করা স্বাভাবিক ও স্বাস্থ্যকর। প্রায়ই মেয়েরা চিন্তায় উদ্বিগ্ন হয়ে পড়ে। তাই তারা স্বস্তি পাবার আশায় অত্যধিক পড়াশোনা করে। আমরা তাদের মনে করিয়ে দিতে পারি যে, স্কুলওয়ার্কের ব্যাপারে একটু নার্ভাস হয়ে পড়ার মানে এই যে, তারা এ ব্যাপারে যত্মশীল, যেটা তাদের হওয়া উচিত।
আপনি বা আপনার মেয়ের কেউই যদি প্রধান নির্বাহী হওয়ার প্রত্যাশী না হন, আপনি চিন্তায় পড়তে পারেন যে, সে শেষ পর্যন্ত তার নিজ পড়াশোনার অভ্যাসের চাপে গুঁড়িয়ে যেতে পারে। যখন একটা চাপের মাত্রা উন্নয়ন ঘটায়। সব সময় প্রতি ক্লাসে উচ্চ গতিতে কাজ করা এমনকি সবচেয়ে নিষ্ঠাবান স্কুল শিক্ষার্থীর জন্যও স্বাস্থ্যকর নয় এবং টেকসইও নয়। আমার এক সহযোগী টিনএজারদের স্মরণ করিয়ে দিতে চান যে, যেসব ক্লাসে স্কোর ৯০ কাউন্টের উপর ‘এ’ বলে গণ্য, সেখানে ৯১ ও ৯৯ এর মধ্যে ব্যবধান হচ্ছে জীবনতুল্য।
নিশ্চিত হোন যে, আস্থার অভাবই চাকরির শীর্ষপদগুলোতে মেয়েদের না থাকাটার একমাত্র কারণ নয়। তারা কর্মক্ষেত্রে লিঙ্গ বৈষম্যর সাথে যৌন হয়রানি ও শক্তিশালী কাঠামোগত বাধার সম্মুখীন হয়ে থাকে। তবে স্কুলে আস্থার অভাবের অসুবিধাটা আমরা এখুনি কাটিয়ে উঠতে পারি। বহু পেশাদার মানুষই আস্থায় পরিপূর্ণ, কারণ তারা তাদের সক্ষমতাগুলো জানার জন্য বহু বছর ব্যয় করেছে। মেয়েদেরও সেভাবেই কর্মক্ষেত্রে উপস্থিত হতে হবে।
*লিসা ডেমার যুক্তরাষ্ট্রের ওহিও অঙ্গরাজ্যে একজন ক্লিনিক্যাল প্যাথলজিস্ট এবং প্রকাশিতব্য ‘আন্ডার প্রেসারঃ কনফ্রন্টিং দি এপিডেমিক অব স্ট্রেস অ্যান্ড অ্যাংজাইটি ইন গার্লস’ গ্রন্থের লেখিকা।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ