Inqilab Logo

রোববার ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ০৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২১ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

পর্দা নামছে আজ আখেরি অফারে বাণিজ্য মেলা সরগরম

দর্শনার্থী ছাড়িয়েছে ২০ লাখ

হাসান সোহেল | প্রকাশের সময় : ৯ ফেব্রুয়ারি, ২০১৯, ১২:০২ এএম

মাসব্যাপী ঢাকা আন্তর্জাতিক বাণিজ্য মেলার পর্দা নামছে আজ শনিবার। শেষ মুহ‚র্তের প্রহর চলছে ২৪তম ঢাকা আন্তর্জাতিক বাণিজ্য মেলার। প্রথমদিকে ক্রেতা-দর্শনার্থীর খরা থাকলেও গত দুই সপ্তাহ ধরে জমজমাট মেলা প্রাঙ্গণ।
অন্যদিকে, মেলায় সব পণ্যের ওপর চলছে আখেরি অফার। আর তাই কেনাকাটায় ছাড়ের অফারে খুশি ক্রেতারা আর সেসব বিক্রি করে খুশি বিক্রেতারা। মেলার গেট ইজারা নেয়া প্রতিষ্ঠানের বর্ণনা মতে, গতকাল শুক্রবার ২৯ দিনে দর্শনার্থীর সংখ্যা ২০ লাখ ছাড়িয়েছে। আজ শনিবার লক্ষাধিক দর্শনার্থীর আগমন ঘটবে বলেও আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন সংশ্লিষ্টরা। জানা গেছে, মেলার প্রথম ১৭ দিনে ১০ লাখের মতো দর্শনার্থী এসেছেন। সে হিসাবে শেষ ১১ দিনে গড়ে এক লাখ করে দর্শনার্থী মেলায় প্রবেশ করেছেন। শুক্র ও শনিবার দর্শনার্থী বেশি হচ্ছে। গত দুই শুক্রবারে গড়ে দেড় লাখের মতো দর্শনার্থী মেলায় প্রবেশ করেছেন। এর আগের শুক্রবারগুলোতে এক লাখ ৩০ হাজারের মতো টিকিট বিক্রি হয়। স্বাভাবিক দিনগুলোতে গড়ে ৭০ থেকে ৮০ হাজারের মতো দর্শনার্থী মেলায় আসেন। মেলার প্রথম দুই সপ্তাহ প্রতিদিন গড়ে ৩০ হাজারের মতো টিকিট বিক্রি হয়।
এদিকে মেলার শেষ সময় ঘনিয়ে আসায় শুক্রবার সকাল থেকে মেলা প্রাঙ্গণে ভিড় করতে থাকেন রাজধানী ও এর আশপাশের বাসিন্দারা। বিকাল গড়াতেই একপ্রকার জনসমুদ্রে পরিণত হয় মেলা প্রাঙ্গণ। কানায় কানায় পূর্ণ হয়ে যায়। পরিস্থিতি সামাল দিতে মেলা কর্তৃপক্ষ মাইকে ঘোষণা করেন, দীর্ঘক্ষণ যারা মেলায় অবস্থান করছেন এবং কেনাকাটা শেষ করেছেন, তারা অনুগ্রহ করে মেলা প্রাঙ্গণ থেকে বেরিয়ে যান। সন্ধ্যা নাগাদ আরও ভিড় বাড়বে।
মেলা কর্তৃপক্ষের তথ্যমতে এ পর্যন্ত ২০ লাখ দর্শনার্থী প্রবেশ করলেও গেটে দায়িত্ব পালন করা একাধিক ব্যক্তি জানান, ২০ লাখ নয়, ৩০ লাখের মতো দর্শনার্থী হয়েছে। মেলার গেটে দায়িত্বে থাকা এক কর্মী নাম প্রকাশ না করে বলেন, এবার মেলায় দর্শনার্থী আসার হার বেশ ভালো। গতকাল শুক্রবার দুই লাখ ছাড়িয়েছে দর্শনার্থী, সব মিলিয়ে মেলার প্রথম থেকে এখন পর্যন্ত ৩০ লাখের ওপরে দর্শনার্থী হয়েছে।
অন্যদিকে মেলায় আখেরি অফারে’ সরগরম বাণিজ্য মেলা। গতকাল শুক্রবার বাণিজ্য মেলা ঘুরে এই চিত্র দেখা গেছে। মেয়েদের পোশাকের একটি স্টলে থ্রি পিচ বিক্রি হচ্ছে ৫৯৯ টাকায়। এছাড়া নারীদের যেকোনো পণ্য পাওয়া যাচ্ছে ১ হাজার টাকার ভেতরে। স্টলটিতে কথা হয় মেলায় আসা সাবরিনা সাবার সঙ্গে তিনি বলেন, দাম কম পণ্য ভালো এটাই চাই আমরা। মধ্যবিত্তদের কাছে একটা ভালো পণ্যই যথেষ্ট। এছাড়া সকল পণ্যের ওপর মেলায় অফার চলছে। তাই শেষ মূহুর্তে এসে মেলা থেকে প্রয়োজনীয় কিছু পণ্য কিনেছি।
মেলায় বেøজারে চলছে ধামাকা অফার। যেখানে মেলার শুরুতে ২৫০০-তিন হাজার টাকায় বেøজার বিক্রি হয়েছে সেখানে এখন ১ হাজার টাকায় বেøজার বিক্রি হচ্ছে। টিএস ফ্যাশানের ম্যানেজার এ বিষয়ে বলেন, শুরুতে ২৫শ বা ৩ হাজার টাকায় বেøজার বিক্রি করলেও এখন প্রতি পিচ ১ হাজার টাকায় বিক্রি করছি। এই অফার দেওয়ায় আমরা সবচেয়ে বেশি বিক্রি করতে পেরেছি।
এদিকে, প্লাস্টিকের পণ্যে চলছে ২০ শতাংশ পর্যন্ত ছাড়। মেলায় ১০ হাজার টাকার বেশি পণ্য কিনলে ২০ শতাংশ, ৫ হাজার টাকার বেশি পণ্য কিনলে ২৫ শতাংশ ও ২ হাজার টাকার বেশি পণ্য কিনলে ১২ শতাংশ ছাড় দেওয়া হচ্ছে। কথা হয় সরকারি চাকরিজীবী হুমায়ুন কবিরের সঙ্গে। তিনি বলেন, প্লাস্টিকের একটি ওয়্যারড্রব কিনলাম। ১৫ শতাংশ ছাড় পেয়েছি। সব সময় এমন ছাড় পেলে আমাদের জন্য ভালো। আমরা সরকারি ছোট চাকরি করি। সাধ থাকলেও সাধ্য কি আর আমাদের আছে। তাই, ছোট ছোট ইচ্ছাগুলো পূরণ করতেই মেলায় আসা।
প্লাস্টিক পণ্যের এক স্টলের সেলস ম্যানেজার রোকন আহমেদ বলেন, মেলায় কেনাবেচা সকাল থেকেই ভালো। শেষ দিকে এসে আমাদের সবচেয়ে বেশি বিক্রি হয়েছে। আমাদের পন্য অনেক ভালো। তাই ক্রেতাদের চাহিদা পূরণেও আমরা বদ্ধপরিকর। তবে, মেলা এক সপ্তাহ পরে শুরু হওয়ায় কেনাবেচা একটু কম হয়েছে বলেও তিনি জানান।
এদিকে, হোমটেক্সটাইলের পণ্যের ওপর চলছে ব্যাপক অফার। মেলায় এমন একটি স্টলে ২ হাজার টাকার চাদর ১২শ টাকা, ১ হাজার টাকার চাদর ৫শ টাকা, ৩৬শ টাকার বেড কভার ২৫শ টাকা। এছাড়া যেকোনো পণ্য কিনলেই ২০ শতাংশ ছাড় দিচ্ছে।
মেলায় গুড়া মসলায় চলছে অল ইন ওয়ান অফার। ১ হাজার টাকার এক বক্সে ১২টা আইটেম পাওয়া যাচ্ছে। যা আগে ছিলো ১২৫০ টাকা। কথা হয় গৃহিণী রাবেয়া বেগমের সঙ্গে তিনি বলেন, মেলায় গুড়া মসলায় দারুণ ছাড়। ১২টা মসলা একসাথে পাচ্ছি। সাথে একটা বড় বক্সও রয়েছে। সব মিলিয়ে অফারটা দারুণ।
এছাড়া মেলায় বিদেশি প্যাভিলিয়নের ছোট স্টলগুলোতে চলছে বিশেষ ডিসকাউন্ট। এসব স্টলগুলোতে মাত্র ৩০ টাকায় আপনি কিনতে পারবেন গলার চেইন, হাতের চুড়ি, ব্যাসলেট, পুতির মালা, মাথার ব্যান্ড, মাথার কাকড়া, কানের ফুল, মালা, ক্লিপসহ আরও অনেক পণ্য। ১২০ টাকায় কেনা যাবে ফ্রাই প্যান, সফট প্যান। তাছাড়া বোরকা কিনতে পারবেন ৫০ শতাংশ ডিসকাউন্টে। ছাড়ে কেনার সুযোগ রয়েছে জিরা, আচার, জুস, ফল, কসমেটিকস সামগ্রী, জুয়েলারি সামগ্রী। রয়েছে ঘর সাজানোর সব পণ্যও।
রেবেকা সুলতানা নামের এক দর্শনার্থী বলেন, মেলার শেষ দুইদিন ছাড় থাকে বেশি। তাই একটু ভিড় হলেও চলে এসেছি। তিনি বলেন, আমি মূলত মায়ের জন্য কয়েকটা শাড়ি কিনতে এসেছি। কেনা হয়েছে, এখন ঘুরে দেখছি অন্য কিছু কেনা যায় কিনা। শামীমা নামে অন্য এক দর্শনার্থী বলেন, যেহেতু মেলা শেষ মূহ‚র্তে এসেছে তাই আজ ঘোরার চেয়ে কেনাকে প্রাধান্য দেব। খুব ভালো লাগছে আজ দর্শনার্থীর চেয়ে ক্রেতা বেশি, আবার পণ্যে ছাড়ও বেশি।
শেষ সময়ে মেলার ওড়না হিজাব একশ’ টাকা, শাল দেড়শ’ এবং ওয়ান পিস দুইশ’ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। একাধিক প্রতিষ্ঠান তাদের স্টলে কাগজে লেখা স্টিকার ঝুলিয়ে এভাবে ওড়না হিজাব, শাল এবং ওয়ান পিস বিক্রি করছেন।
এসব স্টলের বিক্রয়কর্মীরা বলছেন, ওড়না হিজাব, শাল এবং ওয়ান পিস প্রতিটি পণ্যই মেলায় প্রকৃত দামের থেকে কম দামে বিক্রি করা হচ্ছে। তবে এতে প্রতিষ্ঠানগুলোর লোকসান হচ্ছে না। বরং লাভের পরিমাণ বেশিই হচ্ছে। কারণ কম লাভ করায় অনেক বেশি বিক্রি হচ্ছে।
অন্যদিকে ঢাকা আন্তর্জাতিক বাণিজ্য মেলায় এক মাসে ৫১ প্রতিষ্ঠানকে চার লাখ ৪৭ হাজার টাকা জরিমানা করেছে জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদফতর। গতকাল শুক্রবার সন্ধ্যা পর্যন্ত বাণিজ্য মেলায় অবস্থিত ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদফতরের স্টল থেকে এ তথ্য জানা যায়। ভোক্তা অধিদফতরের ঢাকা কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক শাহনাজ সুলতানা জানান, মাসব্যাপী বাণিজ্য মেলায় অভিযান চালিয়ে ৪১টি প্রতিষ্ঠানকে ২ লাখ ৯৯ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়।
অন্যদিকে ভোক্তা অধিকারের স্টলে এসে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে ৩৮টি অভিযোগ এসেছে। এসব অভিযোগের ভিত্তিতে ১০টি প্রতিষ্ঠানকে এক লাখ ৪৮ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়েছে। বাকি অভিযোগগুলোর মধ্যে কিছু সমঝোতা হয়েছে, কিছু অভিযোগের সত্যতা পাওয়া যায়নি। আর জরিমানা করার টাকার ২৫ শতাংশ, অর্থাৎ ৩৭ হাজার টাকা অভিযোগকারীদের ফেরত দেয়া হয়েছে।
একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের কারণে ৯ জানুয়ারি শুরু হওয়া এই মেলা শেষ হবে আজ শনিবার ৯ ফেব্রুয়ারি।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: বাণিজ্য মেলা

২৮ জানুয়ারি, ২০২৩

আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ