গুলিস্তানের বিস্ফোরণে নিহত ১৬ জনের নাম-পরিচয় পাওয়া গেছে
রাজধানীর গুলিস্তানের সিদ্দিক বাজার এলাকায় ভয়াবহ বিস্ফোরণের ঘটনায় এখন পর্যন্ত ১৬ জন নিহত হয়েছেন। এ
বিশেষ সংবাদদাতা : রাজধানীর জুরাইনে সড়ক ও জনপথের জমিতে গড়ে ওঠা হকার্স মার্কেট নিয়ে উচ্ছেদ উচ্ছেদ খেলা চলছে। পক্ষে-বিপক্ষে অবস্থান নিয়েছেন দুই এমপি সৈয়দ আবু হোসেন বাবলা ও এ্যাড. সানজিদা খানম। কিছুদিন আগে ওই মার্কেটের পরিচালনা কমিটির নেতাদের মারধর করে দখলে নেয় বাবলা গ্রæপের লোকজন। এখন দখলদাররাই উচ্ছেদের জন্য মরিয়া হয়ে ওঠায় সন্দেহ দানা বেঁধেছে। অনেকের ধারণা, পুরাতন দোকানগুলো উচ্ছেদ করে নতুন করে দোকান বরাদ্দ দিয়ে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নেয়ার পাঁয়তারা করছে দখলদাররা। ইতোমধ্যে একটি কমিটিও গঠন করা হয়েছে। ভুক্তভোগিদের প্রশ্ন, মার্কেট যদি উচ্ছেদই করা হবে, তবে নতুন করে কমিটি কেনো? তাদের কাজ কি?
সরেজমিনে জুরাইন আলম মার্কেট সংলগ্ন হকার্স মার্কেট এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, গত সপ্তাহে অভিযান চালিয়ে ফুটপাথের বেশ কিছু দোকান উচ্ছেদ করা হয়েছে। সড়ক ও জনপথের প্রায় দুই বিঘা জমির উপর গড়ে উঠেছে হকার্স মার্কেট। এতে প্রায় পাঁচশ’ দোকান রয়েছে। পরিচালনা কমিটির মাধ্যমে মার্কেটটি পরিচালনা করা হয়। হকাররা জানান, চাঁদা তোলা ছাড়া কমিটির তেমন কোনো কাজ নেই। অর্থাৎ যারা কমিটিতে থাকবে তারাই ৫শ’ দোকান থেকে চাঁদা তুলবে। এই চাঁদার পরিমাণ মাসে প্রায় কোটি টাকা। এ কারণে ক্ষমতাসীন এমপির পছন্দের কমিটি দেয়া হয়। হকাররা জানায়, আওয়ামী লীগ সরকারের গত পর্বে স্থানীয় এমপি ছিলেন এ্যাড. সানজিদা খানম। তখন তাঁর পছন্দের লোকজন ছিল কমিটিতে। ৫ জানুয়ারীর নির্বাচনের পর স্থানীয় এমপি হন জাতীয়পার্টির সৈয়দ আবু হোসেন বাবলা। তবে বাবলা এমপি হওয়ার পরও ওই মার্কেটের কমিটি নিয়ে কখনও নাক গলাননি। বরং সানজিদার লোকজনই দীর্ঘদিন ধরে মার্কেটের দখলে ছিল। গত মাসে আওয়ামী লীগের থানা পর্যায়ে নতুন কমিটি হওয়ার পর হঠাৎ করেই পাল্টে যায় দৃশ্যপট। নতুন কমিটিতে ওয়ার্ড কাউন্সিলর নাসিম সভাপতি ও অগ্রণী ব্যাংকের কর্মকর্তা মোবারক হোসেন। কমিটি ঘোষণার একদিন পরই দখল-পাল্টা দখল শুরু হয়ে যায়। শ্যামপুর আওয়ামী লীগ অফিস, পোস্তগোলা অফিস দখল করে নেয় নতুন সভাপতি-সাধারণ সম্পাদকের সমর্থকরা। একইভাবে জুরাইন হকার্স মার্কেটও দখল করে নেয়া হয়। দখলদারদের মারপিটে ৫/৬ জন গুরুতর আহত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়। সেই থেকে দখলদারদের পক্ষে খায়রুল, মোশারফ, হানিফরাই মার্কেটটি পরিচালনা করছে। হকার্স মার্কেটের ব্যবসায়ীদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, দখলে আসার পর খায়রুল-মোশাররফরা খুব একটা সুবিধা করতে না পারায় আগের কমিটির সাথে একটা সমঝোতার চেষ্টা চলছিল। গত সপ্তাহে সেই সিদ্ধান্ত থেকে সরে এসে হঠাৎ করেই উচ্ছেদ উচ্ছেদ খেলা শুরু হয়। আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে সাধারণ ব্যবসায়ীদের মধ্যে। অনেকেই উচ্ছেদের কথা শুনে কান্নায় ভেঙ্গে পড়েন। ব্যবসায়ীরা বলেন, সড়ক ও জনপথের জায়গাটি তত্ত¡াবধায়ক সরকারের আমলে অস্থায়ীভাবে ছিন্নমূল হকার্স লীগের নামে বরাদ্দ দেয়া হয়। কিন্তু এখন সড়ক ও জনপথ বিভাগকে উচ্ছেদ করতে চাপ দেয়া হচ্ছে বলে মনে হয়। আগের মার্কেট পরিচালনা কমিটির সাধারণ সম্পাদক এসএম শহীদ বাবু বলেন, আমরা সরকারের অনুমতি নিয়েই এখানে ব্যবসা করছি। সরকার চাইলে আমাদেরকে উচ্ছেদ করবে কিন্তু সেজন্য তো সময় দিতে হবে। এভাবে ষড়যন্ত্রমূলকভাবে উচ্ছেদ করবে কেনো? এ বিষয়ে এ্যাড. সানজিদা এমপি বলেন, আমি দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের মেয়র এবং সড়ক ও জনপদ বিভাগের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সাথে কথা বলে ধোলাইপাড় থেকে উচ্ছেদ শুরু করার অনুরোধ করেছি। তিনি বলেন, পদ্মা সেতুর জন্য যাত্রাবাড়ী থেকে পোস্তগোলা পর্যন্ত রাস্তাটি ফোর লেন হবে। এজন্য উচ্ছেদ করতেই হবে। সরকারের উন্নয়ন কাজের জন্য উচ্ছেদে আমার কোনো আপত্তি নেই। কিন্তু জুরাইন হকার্স মার্কেট নিয়ে যে উচ্ছেদ উচ্ছেদ খেলা শুরু হয়েছে তা গরীব হকারদের উপর নির্যাতন ছাড়া কিছুই নয়। তিনি প্রশ্ন রেখে বলেন, উচ্ছেদ করতে হলে ধোলাইপাড় থেকে শুরু হোক। ধোলাইপাড় থেকে জুরাইন রেল গেইট পর্যন্ত রাস্তার পাশে শত শত দোকানগুলো কারো চোখে পড়ে না? সবার নজর শুধু গরীব হকারদের দিকে কেনো? সানজিদা খানম বলেন, আমি শুনেছি উচ্ছেদের নামে দোকানগুলো ভেঙ্গে নতুন করে দোকান তুলে নতুনভাবে বরাদ্দ দেয়ার পাঁয়তারা চলছে। এটা করা হলে তা হবে খুবই দুর্ভাগ্যজনক। এ বিষয়ে জানার জন্য এমপি সৈয়দ আবু হোসেন বাবলাকে গতরাতে ফোন করলে তিনি বলেন, আমি একটা মিটিংয়ে আছি। দলের সম্মেলন নিয়ে পার্টির চেয়ারম্যান এরশাদের উপস্থিতিতে গুরুত্বপূর্ণ মিটিং চলছে, এখন কথা বলতে পারবো না।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।