Inqilab Logo

রোববার, ১৯ মে ২০২৪, ০৫ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১, ১০ জিলক্বদ ১৪৪৫ হিজরী

বাইক্কা বিলে বাড়লেও কমেছে হাকালুকিতে

এস এম উমেদ আলী, মৌলভীবাজার থেকে | প্রকাশের সময় : ৩১ জানুয়ারি, ২০১৯, ১২:০৩ এএম

হাকালুকি হাওর ও বাইক্কাবিলে পাখি শুমারি শেষ হয়েছে। পৃথকভাবে এ দুটি স্থানে পরিযায়ী ও দেশীয় জলচর পাখি শুমারি বাংলাদেশ বার্ড ক্লাবের প্রতিষ্ঠাতা ও পাখি বিশেষজ্ঞ ইনাম আল হক ও বৃটিশ নাগরিক পল থমপসনের নেতৃত্বে অনুষ্ঠিত হয়। এ বছর হাকালুকি হাওরে পরিযায়ী পাখির সংখ্য কম মেললেও বেড়েছে বাইক্কাবিলে পাখির সংখ্যা। হাকালুকি ও বাইক্কাবিলে চার দিন ব্যাপী এ পাখিশুমারি ২৬ জানুয়ারি ধেকে শুরু হয়ে শেষ হয় ২৯ জানুয়ারি।
বাইক্কাবিলে দেখা মিলেছে ৩৯ প্রজাতির ১১ হাজার ৬১৫টি পাখি : এ বছর মৌলভীবাজার জেলার শ্রীমঙ্গলে অবস্থিত বাইক্কাবিলে দুইদিন ব্যাপী পাখিশুমারি অনুষ্ঠিত হয়েছে। ৩৯ প্রজাতির পরিযায়ী ও দেশীয় জলচর পাখির দেখা মিলেছে। তার মধ্যে রয়েছে ১৯ প্রজাতির পরিযায়ী পাখি আর ২০ প্রজাতির দেশীয় জলচর পাখি। ২০১০ সালের পর ২০১৯ সালে এসে এতো বেশী পরিমাণের পাখি বাইক্কাাবিলে দেখা মিলেছে। হাইলহাওরে মাছ বিলুপ্ত হতে থাকলে ২০০৩ সালে চাপড়া, মাগুড়া ও যাদুরিয়া বিলের ১০০ একর জলাভ‚মিতে বাইক্কা বিল নামে একটি স্থায়ী অভয়াশ্রম ঘোষণা করা হয়। এরপর থেকে ধীরে ধীরে বিলটি মাছের পাশাপাশি পাখির নিরাপদ আশ্রয়স্থল হিসেবে গড়ে উঠে।
বাইক্কাবিলে পাখি কম বেশীর থাকার কারণ জানতে চাইলে ডক্টর পল থম্পসন বলেন, বাইক্কাবিল অভয়াশ্রম প্রতিষ্ঠার পর সেখানে বিভিন্ন উন্নয়নমূলক কাজকর্ম করা হয়। এর মধ্যে যেমন হিজল করচের বাগান, গাছ লাগানো, খনন কাজ করা হয়। এ কাজগুলো সাধারণত শুকনা সিজনে করা হয়। যখন পাখি আসা শুরু হয়। তখনই কাজ শুরুর কারণে পাখি আসা কমে যায়। আবার কাজ শেষের পর পাখি আসা শুরু করে। পল থম্পসন বলেন, যদি সরকার এবং স্থানীয় জনসাধারণ একসাথে হাতে হাত মিলিয়ে কাজ করেন, তাহলেই কেবল প্রাকৃতিক সম্পদের সংরক্ষণ করা সম্ভব। পাখিগুলো আসে কোথা থেকে এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, সুদূর সাইবেরিয়া, চায়না, মধ্য এশিয়া, ইন্ডিয়া ও আসাম থেকে। আর কিছু হলো স্থানীয় দেশীয় প্রজাতীর পাখি বাইক্কা বিলে আসে।
হাকালুকি হাওরে এ বছর ২০ হাজার ৩৫০টি পাখি কমেছে : দক্ষিণ এশিয়ার বৃহত্তম হাওর হাকালুকিতে পরিযায়ী পাখির সমাগমস্থলে অনুষ্ঠিত পাখি শুমারিতে ২০ হাজার ৩৫০টি পাখি কমেছে। মৌলভীবাজারের ৩টি উপজেলা কুলাউড়া, জুড়ী, বড়লেখা এবং সিলেটের ৩টি উপজেলা বিয়ানীবাজার, গোলাপগঞ্জ ও ফেঞ্চুগঞ্জের ১৮হাজার একশত ১৫ হেক্টর পরিমাণ জমি নিয়ে এ হাওরের অবস্থান।
বাংলাদেশ বার্ড ক্লাব, ইন্টারন্যাশনাল ইউনিয়ন ফর কনজারভেশন অব নেচার’র (আইইউসিএন) জরিপে এ তথ্য উঠে এসেছে। হাকালুকি হাওরে ২৩৮টি বিলের মধ্যে ৪০টি বিলে পাখি শুমারি শেষে ২৮ জানুয়ারি বিকেলে আইইউসিএন বাংলাদেশ তাদের প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে। প্রতিবেদনে সর্বমোট ৫১ প্রজাতির ৩৭ হাজার ৯৩১টি জলচর পাখি পাওয়া গেছে।
বাংলাদেশ বার্ড ক্লাবের তথ্য অনুসারে ২০১৭ সালে হাকালুকি হাওরে পাখির সংখ্যা ছিল ৫৮ হাজার ২৮১টি। ২০১৮ সালে তা কমে এসে দাঁড়ায় ৪৫ হাজার ১শ’টি। ২০১৯ সালে সে সংখ্যা আরও কমে দাঁড়িয়েছে ৩৭ হাজার ৯৩১টিতে। শুমারি চলাকালে হাকালুকি হাওরের পরোতি, বালিজুড়ি, নাগুয়াধলিয়া বিলে বিষটোপ দিয়ে মারা পাখি পাওয়া গেছে।
জরিপে হুমকির মুখে আছে এমন ছয় প্রজাতির পাখিও পাওয়া গেছে বলেও জানানো হয়। তার মধ্যে মহাবিপন্ন-বেয়ারের ভুঁতিহাঁস, সংকটাপন্ন-পাতি ভুঁতিহাঁস ও বড়-গুটিঈগল এবং প্রায়-সংকটাপন্ন-মরচেরঙ ভুঁতিহাঁস, ফুলুরি-হাঁস ও কালামাথা-কাস্তেচরা। পাখিসমৃদ্ধ বিলের মধ্যে নাগুয়াধলিয়া বিল প্রথম (৮ হাজার ৬৭৬টি পাখি) এবং চাতলা বিল দ্বিতীয় (৫ হাজার ৩২৭টি পাখি)। জলচর পাখিদের মধ্যে মাত্র ৪০৫টি সৈকতপাখি পাওয়া যায়।
হাকালুকি হাওরের যে ৪০টি বিলে এ শুমারি পরিচালনা করা হয় তা হলো-কালাপানি, রঞ্চি, দুধাই, গড়কুড়ি, চোকিয়া, উজান তরুল, হিংগাউজুড়ি, নাগাঁও, লরিবাঈ, তল্লারবিল, কাংলি, কুড়ি, চেনাউড়া, পিংলা, পরোটি, আগদের বিল, চেতলা, নামাতরুল, নাগাঁও ধুলিয়া, মাইছলা ডাক, মালাম, ফুয়ালা, পলোভাঙা, হাওড় খাল, কইরকতা, মোয়াইজুড়ি, জল্লা, কুকুরডুবি, বালিজুড়ি, বালিকুড়ি, মাইছলা, গড়শিকোণা, চোলা, কাটুয়া, তেকোণা, মেদা, বায়া, গজুয়া, হারামডিঙা, গোয়ালজুড়। হাওরের ইকো সিস্টেম রক্ষায় অবিলম্বে হাকালুকিকে হাওর উন্নয়ন প্রকল্পের আওতায় অন্তর্ভুক্ত করার দাবি হাওর পাড়ের মানুষের।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ