মাত্র ৪৮ ঘণ্টায় দেউলিয়া হলো যুক্তরাষ্ট্রের ২য় বৃহত্তম ব্যাংক
চলতি সপ্তাহের বুধবারও আর দশটি সাধারণ ব্যাংকের মতো বাণিজ্যিক ও আর্থিক লেনদেন সম্পন্ন করেছে যুক্তরাষ্ট্রের সিলিকন ভ্যালি ব্যাংক (এসভিপি), যা দেশটির দ্বিতীয় বৃহত্তম বাণিজ্যিক ব্যাংক
পাকিস্তানের আর্থিক রাজধানী করাচির একটি জনবহুল ও অবহেলিত অঞ্চলের নারী ও শিশুদের প্রতিদিন পানির সন্ধানে মাইলের পর মাইল হাঁটতে হয়। পাকিস্তানের প্রায় সব শহরেই এ দৃশ্য প্রতিনিয়ত দেখা যায়। সরকারি এক গবেষণায় উঠে এসেছে, দেশটির সীমান্ত এলাকার প্রায় ৭৫ শতাংশ মানুষের বাড়িতে খাবার পানির সরবরাহ নেই এবং ৭০ শতাংশ পানিই দূষিত। নদী ও পানির আধারগুলো শুকিয়ে আসার সঙ্গে সঙ্গে চিরপ্রতিদ্ব›দ্বী ভারত-পাকিস্তানের মধ্যে বিরোধের কেন্দ্রবিন্দুতে উঠে আসছে পানি। ১৯৬০-এর দশকে ভারত-পাকিস্তানের মধ্যকার ছয়টি নদীর পানির যৌথ ব্যবস্থাপনার উদ্দেশ্যে বিশ্বব্যাংকের মধ্যস্থতায় ইন্দুজ ওয়াটার্স ট্রিটি স্বাক্ষরিত হয়। ভারত ও পাকিস্তান উভয়ের বিরুদ্ধে এ চুক্তি লঙ্ঘনের অভিযোগ তুলছে। ভারত-পাকিস্তানের মধ্যে সর্বশেষ বিরোধ সৃষ্টি হয় চেনাব নদীতে ভারতের পানিবিদ্যুৎ প্রকল্প নিয়ে। পাকিস্তান বলছে, এ প্রকল্পের মাধ্যমে ভারত ইন্দুজ ওয়াটার্স ট্রিটি লঙ্ঘন করছে। একই সঙ্গে এ প্রকল্পের মাধ্যমে পানির সরবরাহ ক্ষতিগ্রস্ত হবে বলেও অভিযোগ তোলে পাকিস্তান।
পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান এ প্রকল্প পরিদর্শনে পরিদর্শক পাঠানোর ঘোষণা দিয়েছেন। আজই পরিদর্শকদের সেখানে যাওয়ার কথা। ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি স্থাপনার কাজ চলমান রাখার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। এ সঙ্কট কীভাবে নিরসন হবে, তা এখনো অস্পষ্ট। ওয়াশিংটনের উইড্রো উইলসন সেন্টারের দক্ষিণ এশিয়া অঞ্চলের জ্যেষ্ঠ সহযোগী মাইকেল কাগেলম্যান জানান, পানিকে ঘিরে উত্তেজনা নিঃসন্দেহে আরো তীব্র হয়ে উঠবে এবং এর ফলে ইন্দুজ ওয়াটার্স ট্রিটি হুমকির মুখে পড়বে। আপাতত ভারত-পাকিস্তান সম্পর্ক স্থিতিশীল ও ইতিবাচক দেখা যাচ্ছে। পাকিস্তানে ছয় মাস আগে ক্ষমতায় আসা ইমরান খান সরকার ভারতের সঙ্গে সম্পর্ক স্থাপন করতে চাইছেন। দেশটির শক্তিশালী সামরিক বাহিনীও এতে সমর্থন দিচ্ছে। নয়াদিল্লি কিছুটা সংশয়ের সঙ্গে পাকিস্তানের এ দৃষ্টিভঙ্গিকে গ্রহণ করেছে। তারপরও দেশ দুটির মধ্যে বিরোধের দীর্ঘমেয়াদি ঝুঁকি রয়ে গেছে। ইমরান খান দুটি বৃহৎ বাঁধ নির্মাণ প্রকল্পে ১ হাজার ৭০০ কোটি ডলার তহবিল সংগ্রহের চেষ্টা করছেন। এর মধ্যে একটি বাঁধ নির্মিত হবে বিতর্কিত কাশ্মীর অঞ্চলে।
পানির বিষয়টির কথা উল্লেখ করে পাকিস্তানের সামরিক বাহিনীর মুখপাত্র মেজর জেনারেল আসিফ গফুর গত বছর সাংবাদিকদের জানান, ‘ভবিষ্যতে যদি কোনো যুদ্ধ সংঘটিত হয়, তবে তা এ ইস্যুতেই হবে। আমাদের বিষয়টির প্রতি আরো বেশি মনোযোগ দেয়া প্রয়োজন।’ সুইডেনের আপসালা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক অশোক সোয়েন জানান, যদি মোদি পুনরায় নির্বাচিত হন, তবে পাকিস্তানকে নিয়ন্ত্রণে আনার জন্য তিনি পানিকে অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করবেন। তিনি হয়তো ক্ষমতা গ্রহণের সঙ্গে সঙ্গেই তা করবেন না। যদি পাকিস্তানের সঙ্গে সম্পর্কের অবনতি হয়, তবে ২০২০-২১ সালের মধ্যেই পানিকে ব্যবহার করে পাকিস্তানকে নিয়ন্ত্রণ করার চেষ্টা করবেন মোদি। বৈশ্বিক সংস্থাগুলো অনুমান করছে, বিশ্বের বৃহত্তম হিমবাহ থাকা সত্তে¡ও ২০২৫ সালের মধ্যে ব্যাপক পানি সঙ্কটে পড়বে পাকিস্তান। আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের মতে, এরই মধ্যে দেশটির মাথাপিছু পানির প্রাপ্যতা ১৯৯১ সাল থেকে এক-তৃতীয়াংশ হ্রাস পেয়েছে। ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরামের মতে, পানি সঙ্কট নিয়ে পাকিস্তান সবচেয়ে বেশি ঝুঁকিতে রয়েছে।
এদিকে নয়াদিল্লিভিত্তিক সরকারি থিঙ্ক ট্যাঙ্ক নীতি আয়োগের মতে, ২০১৩ সালের মধ্যে ভারতে পানির চাহিদা বর্তমান পানি সরবরাহের দ্বিগুণে দাঁড়াবে। পানি সঙ্কট সমাধানে ভারত-পাকিস্তানের মধ্যে আঞ্চলিক সহযোগিতা বাড়ানো প্রয়োজন। কিন্তু ১৯৬০ সালের পানি চুক্তির পর এ সমস্যা সমাধানে আর বিশেষ কোনো উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়নি। দুই পক্ষের কর্মকর্তারাই বলছেন, বিষয়টি নিয়ে জরুরি পদক্ষেপ গ্রহণ করা প্রয়োজন। ভারতের কেন্দ্রীয় ওয়াটার কমিশনের চেয়ারম্যান এস মাসুদ হুসেন জানান, ‘আমরা সঙ্কটের দ্বারপ্রান্তে আছি। আমাদের পানির উৎসগুলোর সর্বোত্তম ব্যবস্থাপনা প্রয়োজন।’ সূত্র : ব্লমবার্গ।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।