Inqilab Logo

শুক্রবার, ০৫ জুলাই ২০২৪, ২১ আষাঢ় ১৪৩১, ২৮ যিলহজ ১৪৪৫ হিজরী

নকশা জটিলতায় পদ্মা রেল সংযোগ প্রকল্প

বিশেষ সংবাদদাতা | প্রকাশের সময় : ২৯ জানুয়ারি, ২০১৯, ১২:০২ এএম

এবার নকশা জটিলতা দেখা দিয়েছে পদ্মা রেল সংযোগ প্রকল্পে। এজন্য ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে নকশা সংশোধন করতে বলা হয়েছে। আর নির্মাণ বিলম্বের কারণে চলতি অর্থবছরের বাজেটে প্রকল্পটির জন্য উন্নয়ন বরাদ্দ এক হাজার ৩০০ কোটি টাকা কমানোর প্রস্তাব করা হয়েছে। অর্থায়ন জটিলতায় বছর দেড়েক ধরে ঝুলে আছে প্রকল্পটি।
পদ্মা সেতুতে রেল সংযোগ স্থাপনে ঢাকা থেকে মাওয়া হয়ে যশোর পর্যন্ত নির্মাণ করা হবে ১৬৯ কিলোমিটার রেলপথ। এজন্য ২০১৬ সালে নেওয়া হয় পদ্মা সেতু রেল সংযোগ প্রকল্প। এরই মধ্যে এক দফা বেড়ে গেছে নির্মাণ ব্যয়। এর পরও তিন বছরে প্রকল্পটির কাজ হয়েছে মাত্র ১১ শতাংশ।
সংশ্লিষ্ট তথ্যমতে, চলতি অর্থবছর রেলওয়ের জন্য বার্ষিক উন্নয়ন বরাদ্দ (এডিপি) ছিল রেকর্ড ১১ হাজার ৩৩১ কোটি ৪৮ লাখ টাকা। তবে বড় বিভিন্ন প্রকল্পে অগ্রগতি ধীর হওয়ায় সংশোধিত এডিপি তিন হাজার ৩৪৪ কোটি ৪৬ লাখ টাকা কমানোর প্রস্তাব করা হয়েছে। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি বরাদ্দ কমছে পদ্মা রেল সংযোগ প্রকল্পে।
এডিপি বরাদ্দ কমানোর প্রস্তাবে রেলপথ মন্ত্রণালয় জানায়, পদ্মা সেতু রেল সংযোগ একটি মেগা প্রকল্প। এটি বাস্তবায়নের জন্য ২০১৮-১৯ অর্থবছরে পাঁচ হাজার ৩৩০ কোটি টাকা বরাদ্দ চাওয়া হয়েছিল। সে অনুযায়ী প্রকল্পটিতে বরাদ্দ রাখা হয়। তবে প্রকল্পটির ঋণচুক্তি বাস্তবায়নে দীর্ঘ সময় ব্যয় হওয়ার কারণে ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান মাঠপর্যায়ে কাজ শুরু করতে দেরি করে। এরপর ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান মাঠপর্যায়ে কাজ শুরু করে চারটি পরিক্ষামূলক পাইল নির্মাণ করে। তবে এগুলোর লোড বেয়ারিং ক্যাপাসিটি (ভারবহন ক্ষমতা) চাহিদা অনুযায়ী হয়নি। এ কারণে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে কারিগরি বিষয়ে অধিকতর যাচাই-বাছাই করে পুনঃডিজাইন করতে হচ্ছে। এতে সময়ের সঙ্গে নির্মাণকাজের প্রত্যাশিত অগ্রগতি ব্যাহত হচ্ছে।
প্রস্তাবে আরও বলা হয়, পদ্মা রেল সংযোগ প্রকল্পে এক হাজার ৭৮৬ একর ভূমি অধিগ্রহণ প্রয়োজন। এ কার্যক্রম চলমান রয়েছে। তবে মাঠপর্যায়ে অধিগ্রহণ কার্যক্রম লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী অর্জিত হয়নি। আর ভূমি অধিগ্রহণ ও ক্ষতিপূরণ কার্যক্রম প্রক্রিয়া সম্পন্ন করা অপেক্ষাকৃত সময়সাপেক্ষ। এ কাজে রেলওয়ে ছাড়াও ভূমি মন্ত্রণালয়, স্থানীয় জেলা প্রশাসন, বন বিভাগসহ বিভিন্ন দফতর/সংস্থার সম্পৃক্ততা রয়েছে। এজন্য জমি অধিগ্রহণ খাতেও এডিপিতে বরাদ্দকৃত অর্থ লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী ব্যয় করা যাচ্ছে না। এর পরিপ্রেক্ষিতে পদ্মা রেল সেতু সংযোগ প্রকল্পে এডিপি বরাদ্দ কমানোর প্রস্তাব করা হয়েছে।
এর আগে মূল পদ্মা সেতু প্রকল্পেও নকশা জটিলতার সৃষ্টি হয়েছিল। এতে সেতু নির্মাণকাজ লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে অনেক পিছিয়ে গেছে। স¤প্রতি পদ্মা সেতুর নকশা চূড়ান্ত করা হয়েছে।
সংশ্লিষ্টরা জানান, পদ্মা সেতু উদ্বোধনের দিন থেকেই সড়কের পাশাপাশি ট্রেন চালুর লক্ষ্যে ২০১৬ সালে রেল সংযোগ প্রকল্পটি নেওয়া হয়েছিল। প্রাথমিকভাবে মাওয়া থেকে পদ্মা সেতু হয়ে ভাঙ্গা পর্যন্ত অংশটি চালুর লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়। পরে ভাঙ্গা থেকে যশোর ও শেষ ধাপে মাওয়া থেকে ঢাকা পর্যন্ত অংশটি নির্মাণ করা হবে। এজন্য ২০১৬ সালের আগস্টে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান চায়না রেলওয়ে গ্রæপের সঙ্গে চুক্তি সই করা হয়। তবে অর্থায়ন জটিলতায় ঝুলে যায় প্রকল্পটি।
এক দফা বৃদ্ধির পর জিটুজি ভিত্তিতে পদ্মা রেল সংযোগ প্রকল্পের ব্যয় দাঁড়িয়েছে ৩৯ হাজার ২৪৬ কোটি ৮০ লাখ টাকা। এর মধ্যে ২১ হাজার ৩৬ কোটি ৬৯ লাখ টাকা ঋণ দিচ্ছে চীন। গত বছর এপ্রিলে চীনের এক্সিম ব্যাংকের সঙ্গে ২৬৬ কোটি ৭৯ লাখ ডলারের ঋণ চুক্তি সই করে বাংলাদেশ সরকার। যদিও প্রাথমিকভাবে প্রায় ২৫ হাজার কোটি টাকা বা ৩১৩ কোটি ৮৭ লাখ ডলার ঋণ দেওয়ার কথা ছিল চীন সরকারের। পরে তা ১২ দশমিক শূন্য ছয় শতাংশ কমানো হয়।
গত বছর জুনে প্রকল্পটির অর্থছাড় শুরু করে চীনের এক্সিম ব্যাংক। এরপর নির্মাণকাজ শুরু হলেও এবার নকশা জটিলতার মুখে পড়েছে পদ্মা রেল সংযোগ প্রকল্পটি। এতে পদ্মা সেতু উদ্বোধনের দিন সড়কের পাশাপাশি ট্রেন চালুর কোনো সম্ভাবনা নেই বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।
উল্লেখ্য, পদ্মা সেতু রেল সংযোগ প্রকল্পটি দুই পর্যায়ে বিভক্ত। প্রথম পর্যায়ে ঢাকা থেকে মাওয়া, পদ্মা সেতুর ওপর দিয়ে জাজিরা, শিবচর ও ভাঙ্গা জংশন হয়ে ভাঙ্গা স্টেশনের সঙ্গে যুক্ত হবে। আর দ্বিতীয় পর্যায়ে ভাঙ্গা থেকে নড়াইল হয়ে যশোর পর্যন্ত রেলপথ নির্মাণ করা হবে। এতে ঢাকা, নারায়ণগঞ্জ, মুন্সীগঞ্জ, শরীয়তপুর, মাদারীপুর, ফরিদপুর, গোপালগঞ্জ, নড়াইল ও যশোর জেলা রেলপথে যুক্ত হবে।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: রেল

২৮ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩

আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ