Inqilab Logo

শক্রবার ০৯ নভেম্বর ২০২৪, ২৪ কার্তিক ১৪৩১, ০৬ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

গম চাষে আগ্রহ হারাচ্ছে কৃষক

টানা দুই মৌসুমে ছত্রাকবাহী ‘ব্লাস্ট’ সংক্রমণ

নাছিম উল আলম | প্রকাশের সময় : ২৩ জানুয়ারি, ২০১৯, ১২:০২ এএম

টানা দুই রবি মৌসুমে দেশে গমের আবাদ হ্রাসের সঙ্গে সঙ্গে কমছে উৎপাদন। অথচ শীতকাল হচ্ছে গম ফলনের উপযুক্ত সময়। বিগত মৌসুমে দেশের ৫টি জেলায় গমের জমিতে ছত্রাকবাহী ‘ব্লাস্ট’ রোগের সংক্রমণ শুরু হয়। এ রোগের কোন প্রতিষেধক না থাকায় আক্রান্ত জমির গম অতি দ্রুতই নষ্ট হয়ে যায়। এমনকি কিছু জমির গম ক্ষেত আগুনে পুড়িয়েও ফেলতে হয়। এর ফলে চলতি বছরে গম চাষে আগ্রহ হারাচ্ছে কৃষকরা।
কৃষিবিদদের মতে, যেসব এলাকায় একবার ব্লাস্ট সংক্রমন ঘটে, সেখানে টানা দুই বছর আবাদ বন্ধ রাখলে পরবর্তীতে ছত্রাকবাহী ওই রোগের প্রকোপ রোধ করা সম্ভব। কিন্তু ২০১৬ সালে আক্রান্ত অনেক এলাকাতেই পরবর্তী বছরও কৃষকরা গমের আবাদ করেন। ২০১৭ সালে দেশের উত্তর ও দক্ষিণ-পশ্চিমের কয়েকটি জেলার গমের জমিতে ব্লাস্ট সংক্রমণ ঘটে। এতে করে দেশে গম আবাদ হ্রাস পাচ্ছে।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর সূত্রে জানা যায়, কয়েক বছর আগে প্রায় চার লাখ ৭০ হাজার হেক্টরে আবাদের মাধ্যমে প্রায় ১৫ লাখ টনের কাছাকাছি গম উৎপাদিত হয়েছিল। সেখানে গত বছর চার লাখ ১০ হাজার হেক্টর জমিতে লক্ষ্যমাত্রার বিপরীতে মাত্র তিন লাখ ৫১ হাজার ৫০০ হেক্টরে গমের আবাদ হয়। উৎপাদনও হ্রাস পায় ১১ লাখ ৫৩ হাজার টনে।
সর্বশেষ খবর অনুযায়ী চলতি রবি মৌসুমের শেষ প্রান্তে এসে দেশে গম আবাদের পরিমান মাত্র তিন লাখ ২৬ হাজার হেক্টরের কিছু বেশী। যা গত বছর প্রকৃত আবাদের চেয়েও প্রায় ২৫ হাজার হেক্টর কম। তবে আরো কিছু জমিতে গম আবাদের লক্ষ্যে কাজ করছেন কৃষকরা। তারপরও গত বছরের উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা এবার অর্জন সম্ভব হবে কিনা তা নিয়েও সন্দিহান মাঠ পর্যায়ের কৃষিবিদরা।
ডিএই’র দায়িত্বশীল সূত্রের মতে, চলতি রবি মৌসুমে তাপমাত্রা কম থাকায় গমের ভাল ফলন হবার সম্ভবনা ছিল। কিন্তু আবাদ নিয়ে কৃষকদের মধ্যে গত তিনটি বছর ধরে যে অনিশ্চয়তা কাজ করছে, তার বিরূপ প্রভাব পড়েছে। অথচ শীত প্রধান দেশের গমের আবাদ ও উৎপাদনের ভালো সম্ভাবনা রয়েছে। জমি তৈরী সেচ, সার ও বালাই ব্যবস্থাপনা থেকে শুরু করে পরিচর্যা ব্যয়ও তুলনামূলকভাবে কম। আবার গমের দামও ধানের তুলনায় বেশী। এসব বিবেচনায় ইতোপূর্বে কৃষকদের মধ্যে গমের আবাদ জনপ্রিয়তা অর্জন করলেও পর পর দুই বছর ছত্রাকবাহী ব্লাস্ট সংক্রমনে তা হোচট খেয়েছে। আর এই সংক্রমণ কৃষক ও কৃষি অর্থনীতির জন্য ইতিবাচক নয়।
জানা গেছে, দক্ষিণাঞ্চলের ১১টি জেলায় চলতি মৌসুমে ৬৬ হাজার হেক্টর জমিতে গম আবাদের লক্ষ্যমাত্র নির্ধারিত থাকলেও তা পুরোপুরি অর্জিত হয়নি। উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে প্রায় দুই লাখ ১৮ হাজার টন। তবে গম আবাদ সম্প্রসারণ ও উৎপাদন বৃদ্ধির লক্ষ্যে বারি ও ডিএই’র সুষ্ঠু সমন্বয়সহ মাঠ পর্যায়ে নিবিড় কার্যক্রম গ্রহণের তাগিদ দিয়েছেন কৃষিবিদরা । কারণ এখনো দেশের অধিকাংশ কৃষকই গম আবাদ প্রযুক্তি সম্পর্কে জ্ঞাত নন। কৃষকদের কাছে পরিশুদ্ধ উচ্চ ফলনশীল বীজ ও আবাদ প্রযুক্তি পৌঁছে দেয়া প্রয়োজন। সে সঙ্গে গম আবাদে সরকারি প্রনোদনা চালু হলে আগামী ৫ বছরে দেশে দশ লাখ হেক্টর জমিতে কমপক্ষেম ৩০ লাখ টন গম উৎপাদন সম্ভব বলে মনে করেন মাঠ পর্যায়ের কৃষিবিদরা।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: গম

২৩ সেপ্টেম্বর, ২০২২

আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ