পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
বঙ্গোপসাগর উপকূলভাগে মূল্যবান মৎস্য সম্পদের ভয়াবহ ধ্বংসযজ্ঞ চলছে। দেশের উপকূলীয় অঞ্চলজুড়ে জেলে পরিবারসহ দরিদ্র জনগোষ্ঠি জীবিকার তাগিদে চিংড়ি পোনা সংগ্রহ করছে। মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ বিশেষজ্ঞরা উদ্বেগের সাথে জানান, অগভীর সমুদ্র উপকূলে প্রতিটি বাগদা চিংড়ি পোনা ধরতে গিয়ে অন্যন্য প্রজাতির স্থানভেদে কমপক্ষে ৫০টি থেকে ২১২টি পর্যন্ত মাছের রেণু ও পোনা মারা পড়ছে। সেই সঙ্গে ব্যাপক হারে মরছে হরেক প্রজাতির মাছ, অন্যান্য জীববৈচিত্র্য ও উদ্ভিদ খাদ্যকণা। রফতানমুখী চিংড়ি চাষের জন্য দেশে হ্যাচারি রয়েছে খুবই অপ্রতুল। এরফলে বাগদা পোনা জোগান দেয়ার জন্য উপকূলীয় অঞ্চলে দরিদ্র পরিবারের শিশু-কিশোর, মহিলা থেকে শুরু করে সব বয়সের মানুষ চিংড়ি পোনা শিকারে কমবেশি জড়িত। তবে পেছনে সক্রিয় দালাল, মহাজন ও মধ্যস্বত্ত্বভোগী চক্র ফায়দা লুটে নেয়।
ঠেলা জাল, মশারি জালসহ বিভিন্ন ধরনের ছোট ফাঁসের (ছিদ্র) জালের সাহায্যে সংগ্রহ করা হয় চিংড়ির পোনা। জালে আহরিত বাগদা চিংড়ির রেণু বা পোনা বেছে বেছে রেখে অবশিষ্ট অন্যান্য প্রজাতির মাছের রেণু পোনা মৃত ও অর্ধমৃত অবস্থায় সাগরের তীরে কিংবা সাগরেই ফেলে দেয়া হচ্ছে। যথেচ্ছ নিধনের কারণে চিংড়ির পোনাও অনেকাংশে মারা যাচ্ছে। এভাবেই টেকনাফ-সেন্টমার্টিন দ্বীপ-শাহপরীর দ্বীপ থেকে শুরু করে বৃহত্তর চট্টগ্রাম, নোয়াখালী, ভোলা, পটুয়াখালী, বরিশাল, খুলনা পর্যন্ত দেশের বিস্তীর্ণ সমুদ্র উপকূলভাগে বাগদা চিংড়ি পোনা ধরা হচ্ছে নির্বিচারে। ব্যাহত হচ্ছে সামুদ্রিক মাছের স্বাভাবিক প্রজনন ও উৎপাদনশীলতা। এতে করে উপকূলে অর্থকরী মৎস্য সম্পদ বিরান হতে চলেছে।
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় প্রাণিবিজ্ঞানী অধ্যাপক ড. মনজুরুল কীবরিয়ার অভিমত, চিংড়ি পোনা সংগ্রহের কারণে উপক‚লে মৎস্য সম্পদের ভয়াবহ ধ্বংসকরণ প্রক্রিয়া চলছে। প্রাকৃতিক উৎস থেকে চিংড়ি পোনা ক্রয়-বিক্রয় বন্ধে কঠোর আইন প্র্রণয়ন ও কার্যকর করতে হবে। বিজ্ঞানসম্মত হ্যাচারির উৎস থেকেই চিংড়ি পোনার জোগান নিশ্চিত থাকা চাই। চিংড়ি পোনা আহরণের সাথে জড়িত গরীব জনগোষ্ঠির মাঝে ব্যাপক সচেতনতা সৃষ্টি করা, তাদের জন্য বিনামূল্যে চাল, ডাল, তেল, ওষুধ প্রদান শিক্ষামুখী করে তোলাসহ জীবিকার তাগিদে বিকল্প কর্মসংস্থানের লক্ষ্যে সরকারের সমন্বিত পরিকল্পনা গ্রহণ করা প্রয়োজন। সেই সাথে বিশেষজ্ঞদের সম্পৃক্ত করে দেশে পর্যাপ্ত চিংড়ি হ্যাচারি গড়ে তোলা অপরিহার্য। নিছক উপকূলে অবৈধ জাল আটক করলে বা গরিবদের শাস্তি দিলেই সমস্যার স্থায়ী সমাধান আশা করা যায়না।
বাংলাদেশের বৃহৎ সমুদ্রসীমা ও উপক‚লভাগে ৩৬ রকমের চিংড়িসহ ৪৭৬ প্রজাতির মৎস্য সম্পদের মজুদ রয়েছে। সুষ্ঠু সংরক্ষণের অভাবে এবং পরিবেশ বিপর্যয় ও জলবায়ু পরিবর্তনের নেতিবাচক প্রভাবে অনেক প্রজাতির চিংড়িসহ মৎস্য সম্পদ হুমকির সম্মুখীন। এরমধ্যে বিশেষজ্ঞদের মতে উদ্বেগজন চিত্র হচ্ছে চিংড়ি পোনা আহরণের মধ্যদিয়ে নির্বিচারে মাছের ধ্বংসলীলা। এ কারণে ইলিশ, কোরাল, রূপচান্দা, কালিচান্দা, পোয়া, ছুরি, সুরমা, লাক্ষাসহ বিভিন্ন জাতের সুস্বাদু ও অর্থকরী মাছের রেণু পোনা বেঘোরে মারা যাচ্ছে। অথচ অধিকাংশ হতদরিদ্র উপক‚লবাসী এ সম্পর্কে আদৌ সচেতন নয়।
এদিকে সমগ্র দেশের উপকূলীয় জেলাগুলোতে মৎস্য সম্পদ ধ্বংসকারী বিভিন্ন ধরনের অবৈধ জাল নির্মূলের লক্ষ্যে আগামী ২১ জানুয়ারি থেকে ৪ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত পক্ষকাল ব্যাপী টাস্কফোর্সের অভিযান শুরু হতে যাচ্ছে। কোস্ট গার্ডসহ আইন প্রয়োগকারী সংস্থাসমূহের সহায়তায় উপকূলীয় এলাকার সংশ্লিষ্ট জেলা প্রশাসকদের নেতৃত্বে পরিচালিত হবে এ অভিযান। গত ১৬ জানুয়ারি মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয় এ বিষয়ে নির্দেশনা জারি করেছে। কর্তৃপক্ষ জানায়, মৎস্য সংরক্ষণ আইন ১৯৫০, (সংশোধনী ১৯৮৫ ও ১৯৯৫) মোতাবেক সমুদ্র, নদ-নদী, মোহনা ও উপকূলীয় এলাকায় ঠেলা জাল, মশারি জাল, বেহুন্দী জাল, টং জাল, খুঁটি জাল, গাড়া জাল, বাঁধা জাল, চিংড়ি পোনা ধরার কাজে বিভিন্ন ধরনের জাল ব্যবহার সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ। এসব অবৈধ জাল ব্যবহারের কারণে নির্বিচারে মাছের রেণু পোনা ধ্বংস করা হচ্ছে। যা মৎস্য সম্পদের স্বাভাবিক উৎপাদনশীলতা ব্যাহত করছে।
চট্টগ্রাম অঞ্চলের সমুদ্র উপক‚লের আনোয়ারা, বাঁশখালী, সীতাকুন্ড, মহানগরীর পতেঙ্গা, কাট্টলী, হালিশহরসহ বিভিন্ন এলাকায় দরিদ্র পরিবারের শিশু-কিশোররা সকাল থেকেই বঙ্গোপসাগরের জোয়ারে অথৈ পানিতে নেমে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে বাগদা চিংড়ির পোনা সংগ্রহ করে। আহরিত রেণু পোনা চিংড়ি স্থানীয় দালাল-মহাজনদের কাছে প্রতি একশ’টি মাত্র ২০ থেকে ৩০ টাকা দরে বিক্রি করছে। সেই পোনা দশ-বিশগুণ মূল্যে হাতবদল হয়ে চলে যাচ্ছে দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের সাতক্ষীরা, বাগেরহাটসহ দেশের বিভিন্ন এলাকার চিংড়ি হ্যাচারিগুলোতে। ট্রাক, মাইক্রোবাস যোগে পরিবহনের সময় অনেক পোনা মারা যাচ্ছে। চিংড়ির পোনা আহরণের সময় দেখা যায়, পোনা সংগ্রহকারী গরীব শিশু-কিশোর এমনকি মহিলারা বেছে বেছে বাগদা চিংড়ির পোনা নিয়ে রাখছে পানি ভর্তি বালতি কিংবা পাত্রে। আর চিংড়ি পোনার সাথে ঠেলা জাল কিংবা মশারি জালে উঠে আসা অন্যান্য জাতের মাছের ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র পোনা রেণু মারা পড়ছে অজস্র। তা ফেলে দেয়া হচ্ছে সমুদ্র তীরে ও সাগরেই।
মৎস্যজীবীরা জানান, জানুয়ারি থেকে জুন মাস পর্যন্ত ৬ মাস সমুদ্র উপক‚লে বাগদা চিংড়ি পোনা সংগ্রহের উপযুক্ত মৌসুম। এ সময় দেশের উপক‚লজুড়ে হাজার হাজার মানুষ চিংড়ি পোনা ধরার উৎসবে মেতে থাকে। আর সেই সঙ্গে চিংড়ি পোনা ধরতে গিয়ে শতাধিক প্রজাতির মূল্যবান মাছের রেণু পোনার মৃত্যু ঘটছে। মাছের খাদ্য-শৃঙ্খল হচ্ছে বিপর্যস্ত। রাতের আঁধারে দালাল, মহাজন, ফড়িয়া ও পাইকাররা এসে দরিদ্র জনগোষ্ঠির কাছ থেকে নামমাত্র মূল্যে কিনে নিয়ে যাচ্ছে বাগদা চিংড়ির পোনা। অতি ক্ষুদ্র ফাঁসের ঠেলা ও মাশারি জালের ফাঁদ থেকে মাছের ডিমসহ হরেক প্রজাতির কোনো মৎস্য ও প্রাণী রেহাই পাচ্ছে না। একেকটি বাগদা চিংড়ির পোনা সংগ্রহ করতে গিয়ে ৫০, ৭০ থেকে ২১২টি বিভিন্ন প্রজাতির মাছের পোনা নিধন হয়ে যাচ্ছে। এতে করে বঙ্গোপসাগর উপক‚লীয় এলাকায় মৎস্য সম্পদ ও জীববৈচিত্র্য পড়েছে হুমকির মুখে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।