Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

মিয়ানমার সীমান্তে সেতু সংস্কার নিয়ে উত্তেজনা

রোহিঙ্গাদের মধ্যে আতঙ্ক, সতর্কাবস্থায় বিজিবি

বিশেষ সংবাদদাতা কক্সবাজার থেকে | প্রকাশের সময় : ১৫ জানুয়ারি, ২০১৯, ১২:০২ এএম

মিয়ানমার সীমান্তের তুমব্রু এলাকায় তুমব্রু খালে সেতু সংস্কার করা নিয়ে উত্তেজনার প্রেক্ষিতে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) কর্মকর্তারা এলাকাটি পরিদর্শন করেছেন। গতকাল সোমবার সকালে কক্সবাজার সেক্টরের সেক্টর কমান্ডার কর্নেল এস এম বায়েজিদ খান তুমব্রু সীমান্ত পরিদর্শন করেন বলে জানা গেছে।
তুমব্রু বাজারের কাছে নো-ম্যান্স ল্যান্ডের তুমব্রু খালের ওপর পাকা স্থাপনা নির্মাণ করা নিয়ে গত কয়েক দিন থেকে সেখানে উত্তেজনাকর পরিস্থিতি বিরাজ করছিল। স্থাপনাটি সেতু নাকি বাঁধ এটি নিয়ে স্থানীয়দের মধ্যে ছিল অষ্পষ্টতা। এ ছাড়া আতঙ্কও দেখা দেয় নো-ম্যান্স ল্যান্ডে বসবাসকারী রোহিঙ্গাদের মধ্যে। এর প্রেক্ষিতে সোমবার বিজিবির কর্মকর্তারা এলাকাটি পরিদর্শন করেন। বিজিবির কক্সবাজার সেক্টরের সেক্টর কমান্ডার কর্নেল এস এম বায়েজিদ খান জানান, তুমব্রু খালের ওপর মিয়ানমার কর্তৃপক্ষ কাঁটাতারের বেড়া সংস্কার করছে। খালের ওপর আগে কাঠের খুঁটি ছিল, সেটি পানিতে নষ্ট হয়ে যাওয়ায় সেখানে আরসিসি পাকা পিলার দেয়া হচ্ছে। এটি কোনো সেতু বা বাঁধ নির্মাণ নয়।
তবে নো-ম্যান্স ল্যান্ডে কেন তারা এটি নির্মাণ করছে তা জানতে চেয়ে সোমবার মিয়ানমারের সীমান্তরক্ষী বাহিনী বিজিপিকে চিঠি দিয়েছে বিজিবি। সোমবার দুপুরের দিকে এ চিঠি দেয়া হয়। তাদের কাছ থেকে চিঠির জবাব আসলেই পরবর্তী পদক্ষেপ নেয়া হবে বলে বিজিবির পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে। বায়েজিদ খান জানান, বর্তমানে সীমান্তের পরিস্থিতি স্বাভাবিক রয়েছে। তুমব্রু এলাকার ইউপি সদস্য আবদুর রহিম ও বাজার এলাকার স্থানীয়রা জানান, গত কয়েকদিন থেকেই খালের পাশে তারা (বিজিপি) পাকা স্থাপনা ও পিলার তৈরি করছে। এটির কারণে বর্ষা মৌসুমে পানিতে তুমব্রু বাজার ও কোনা পাড়া তলিয়ে যাওয়ার আশঙ্কা করা হচ্ছে। তবে এটি সেতু নাকি বাঁধ তা সঠিক করে বলা যাচ্ছে না। এ ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে সীমান্তে বিজিবি নজরদারি বাড়িয়েছে বলেও জানান স্থানীয়রা। নো-ম্যান্স ল্যান্ডের রোহিঙ্গারা জানান, তুমব্রু সীমান্তে মিয়ানমার আবারো সেনা টহল বাড়িয়েছে।
এদিকে, গত মাস থেকে বান্দরবান সীমান্তসংলগ্ন মিয়ানমারের আরাকান ও চিন রাজ্যে সেখানকার বিচ্ছিন্নতাবাদী গ্রুপ আরাকান আর্মির সাথে দেশটির সেনাবাহিনীর ব্যাপক সংঘর্ষ চলছে। গোলযোগের কারণে রাখাইন রাজ্যের বুথিডং, রাথিডং ও মংডুসহ বেশ কয়েকটি এলাকা থেকে বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বী রাখাইন ও রোহিঙ্গারা আতঙ্কে নিরাপদ জায়গায় সরে যাচ্ছে। সেখানে গত কয়েকদিন থেকে আরাকান আর্মির বিরুদ্ধে সেনাবাহিনীর সাঁড়াশি অভিযান চলছে।
রোহিঙ্গাদের শূন্যরেখা থেকে তাড়িয়ে দেয়ার কৌশল হিসেবে এ সেতু নির্মাণ করা হলেও বর্ষা মৌসুমে খালের পানি আটকে গিয়ে কোনারপাড়া ও আশপাশের এলাকা পাহাড়ি ঢলে তলিয়ে যেতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন স্থানীয়রা। রোহিঙ্গাকে সরাতে বারবার নানা অপচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে মিয়ানমার। রোহিঙ্গাদের দাবি- এবার শূন্যরেখা থেকে তাদের সরাতে নতুন পাঁয়তারা হিসেবে এটি করছে মিয়ানমার। এই সেতু নির্মাণ হলে খালে পানির স্বাভাবিক চলাচল বিঘ্ন ঘটবে এবং বর্ষা মৌসুমে শূন্যরেখা, বাংলাদেশের অভ্যন্তরের কোনারপাড়াসহ কৃষিজমি পানিতে তলিয়ে গিয়ে ব্যাপক ক্ষতি হবে। জিরো পয়েন্টে অবস্থান নেয়া রোহিঙ্গারা জানায়, প্রতিদিনই গুলিবর্ষণ করা হচ্ছে। আর ১০টির অধিক ক্যাম্প করেছে বিজিপি। তার পরও রাতে তার কাঁটাতারের পাশে এসে দাঁড়িয়ে থাকে সেনাবাহিনী। নতুন করে তৈরি করছে বাংকার। এতে আমরা আতঙ্কিত।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: মিয়ানমার


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ