মাত্র ৪৮ ঘণ্টায় দেউলিয়া হলো যুক্তরাষ্ট্রের ২য় বৃহত্তম ব্যাংক
চলতি সপ্তাহের বুধবারও আর দশটি সাধারণ ব্যাংকের মতো বাণিজ্যিক ও আর্থিক লেনদেন সম্পন্ন করেছে যুক্তরাষ্ট্রের সিলিকন ভ্যালি ব্যাংক (এসভিপি), যা দেশটির দ্বিতীয় বৃহত্তম বাণিজ্যিক ব্যাংক
সীমান্ত দেয়ালের বরাদ্দ পাওয়া নিয়ে ডোনাল্ড ট্রাম্পের একগুঁয়েমির জেরে যুক্তরাষ্ট্রের সরকার ব্যবস্থায় সৃষ্টি হওয়া অচলাবস্থা অতীতের সব রেকর্ড ছাপিয়ে গেছে। মেক্সিকো সীমান্তে দেয়াল নির্মাণের জন্য দাবিকৃত ৫৭০ কোটি মার্কিন ডলার বরাদ্দ ছাড়া কোনো অর্থবাজেটে সাক্ষর করবেন না বলে স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছেন ট্রাম্প। অন্যদিকে বিরোধী ডেমোক্রেটিক নিয়ন্ত্রিত যুক্তরাষ্ট্রের কংগ্রেসের নিম্নকক্ষ হাউজ অব রিপ্রেজেনটেটিভের নেতারা ‘জনগণের করের টাকায়’ ট্রাম্পকে তার নির্বাচনী প্রতিশ্রুতি পূরণ করতে না দেওয়ার ‘প্রতিজ্ঞা’ করেছে। অচলাবস্থার কারণে বেতন না পাওয়ায় হোয়াইট হাউসের সামনে বিক্ষোভও করেছেন শ্রমিকরা।
গত ২১ ডিসেম্বর মধ্যরাতের পর থেকে শুরু হওয়া এই অচলাবস্থা শনিবার টানা ২২তম দিনে পড়েছে। এর আগে ১৯৯৫-৯৬ সালে তৎকালীন প্রেসিডেন্ট বিল ক্লিনটনের আমলে সর্বোচ্চ ২১ দিন অচল ছিল যুক্তরাষ্ট্র সরকার। মেক্সিকো সীমান্তে দেয়াল নির্মাণ নিয়ে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের অনড় অবস্থানের ফলেই এ পরিস্থিতির তৈরি হয়েছে। শনিবার এক টুইট বার্তায় তিনি বলেন, ‘ডেমোক্রেটরা চাইলে ১৫ মিনিটের মধ্যে মার্কিন অচলাবস্থা পরিস্থিতির সমাধান সম্ভব।’ তিনি আরেক টুইটে বলেন, ‘ডেমোক্রেটরা ছুটি কাটিয়ে কাজ শুরু না করা পর্যন্ত আমাদের অনেকদিন এভাবেই থাকতে হবে। আমি হোয়াইট হাউসে স্বাক্ষর করার জন্য প্রস্তুত হয়ে আছি।’
এদিকে, অচলাবস্থার কারণে বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ সেবা বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। প্রায় ৮ লাখেরও বেশি সরকারি কর্মকর্তার বড় একটি অংশের বেতনভাতা বন্ধ হয়ে গেছে। কারারক্ষী, বিমানবন্দরকর্মী এবং এফবিআই এজেন্টসহ আরও অনেকগুলো সরকারি সংস্থার কর্মীরা শুক্রবার তাদের নতুন বছরের প্রথম বেতন পাওয়া থেকে বঞ্চিত হয়েছেন। বিক্ষুব্ধ কর্মীরা সড়কে নেমে তাদের ক্ষোভ প্রকাশ করতে শুরু করেছেন। এদিন অনেক সরকারি কর্মী সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে তাদের খালি ‘পে স্লিপ’র ছবি পোস্ট করেছেন।
এমন একজন যুক্তরাষ্ট্রের মহাকাশ গবেষণা সংস্থা নাসা’র মহাকাশ প্রকৌশলী অস্কার মুরিলো। তিনি টুইটারে তার শূন্য মার্কিন ডলারের চেক পোস্ট করেন লেখেন, ‘আসলে বাধ্যতামূলক কর্তনের কারণে আমি অর্থ হারিয়েছি।’ বেতন না পাওয়া সরকারি কর্মীদের জন্য শনিবার রাজধানী ওয়াশিংটন ডিসিতে একটি ফুড ব্যাংকের পক্ষ থেকে পাঁচটি পপ-আপ মার্কেট চালু করা হয়েছে। বেতন দিতে না পারায় নিরাপত্তারক্ষীরা কাজে আসছেন না। যে কারণে ব্যস্ততম মিয়ামি আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের একটি পুরো টার্মিনাল বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে।
যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন অঞ্চলে অচলাবস্থার বিরুদ্ধে বিক্ষোভ করেছেন শ্রমিকরা। ওয়াশিংটনে বিক্ষোভ করেছে সরকারি কর্মকর্তাদের সংগঠন এএফএল-সিআইও। সংগঠনটির সভাপতি রিচার্ড ট্রুমকা অচলাবস্থার জন্য কংগ্রেস ও ট্রাম্প প্রশাসনের প্রতি ক্ষোভ প্রকাশ করেন। তিনি বলেন, ‘শেইম অন সিনেট, শেইম অন হোয়াইট হাউস।’ অবিলম্বে অচলাবস্থা নিরসনের দাবি জানান তিনি। ডেট্রোয়েটের সরকারি কর্মকর্তা গ্রেগরি সিম্পকিনস বলেন, ‘আগামী সপ্তাহে এটি আতঙ্কজনক রূপ নিতে যাচ্ছে। আমরা কীভাবে বাড়িভাড়া পরিশোধ করবো? কীভাবে আমরা অন্যান্য বিল দেবো?’
এই অচলাবস্থার পরেও কংগ্রেসকে এড়িয়ে দেয়াল নির্মাণকাজ চালিয়ে যাওয়ার সুযোগ রয়েছে ট্রাম্পের হাতে। আর তা হলো জরুরি অবস্থা জারি। তিনি ইতিমধ্যে এ পথ অনুসরণের হুমকিও দিয়েছেন। কিন্তু নিজ দলের মধ্যে ওই হুমকির তীব্র সমালোচনার মুখে ট্রাম্প চূড়ান্তভাবে জরুরি অবস্থা ঘোষণা করেন নি। তিনি কংগ্রেসকে সমঝোতায় আসার আহ্বান জানিয়েছেন। ট্রাম্প বলেছেন, ‘এখনই আমরা ন্যাশনাল ইমার্জেন্সি দিতে চাই না’। জরুরি অবস্থা জারি করার সক্ষমতার কথা স্মরণ করিয়ে দিয়ে ট্রাম্প আরো জানান, এত তাড়াতাড়ি এটা করতে চান না। কেননা এখনো তিনি যেকোনো বিষয়ে কংগ্রেসের সঙ্গে কাজ করাকেই বেশি পছন্দ করেন।
জনমত জরিপে দেখা গেছে, সরকারে অচলাবস্থার জন্য বেশিরভাগ মানুষ প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পকে দোষারোপ করছেন। তারা মনে করেন, প্রেসিডেন্টের একগুয়েমির কারণেই এ পরিস্থিতির তৈরি হয়েছে। এ অবস্থায় ট্রাম্প প্রশাসন অন্যান্য সরকারি তহবিলের অর্থ দিয়ে দেয়াল নির্মাণ কার্যক্রম চালিয়ে যেতে পারে। এক্ষেত্রে হোয়াইট হাউস কর্তৃপক্ষের নজর পড়েছে দুর্যোগ তহবিলের দিকে। গত বছরের প্রাণঘাতি হারিকেন ও বন্যার পর আর্মি কর্পস অব ইঞ্জিনিয়ার্স এর জন্য যে ১৩.৯ বিলিয়ন ডলার বরাদ্দ দেয়া হয়েছিল, ট্রাম্প প্রশাসন তা দেয়াল নির্মাণের কাজে লাগানোর কথা ভাবছে। তবে, পুয়ের্তোরিকোসহ প্রাকৃতিক দুর্যোগকবলিত কয়েকটি অঙ্গরাজ্য ইতিমধ্যেই দুর্যোগ তহবিলের অর্থ সরিয়ে নেয়ার বিরুদ্ধে ক্ষোভ প্রকাশ করেছে।
প্রভাবশালী রিপাবলিকান সিনেটর লিন্ডসে গ্রাহাম এক বিবৃতিতে বলেন, দেয়াল নির্মাণে অর্থায়নের জন্য জরুরি অবস্থা জারির ক্ষমতা ব্যবহার করার এখনই উপযুক্ত সময়। তবে অন্য রিপাবলিকানরা সন্দেহ প্রকাশ করে বলেছেন, প্রেসিডেন্টের জন্য এটা সহজ হবে না। কারণ এই পদক্ষেপ আইনি জটিলতার মুখে পড়তে পারে। সূত্র: আল-জাজিরা, দ্য গার্ডিয়ান।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।