স্বাধীনতার ৪৭ বছরেও তার নাম তালিকাভুক্ত হয়নি মুক্তিযোদ্ধা মন্ত্রণালয় গেজেটে। মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে সরকারি সকল সুযোগ সুবিধা থেকেও বঞ্চিত হয়ে আসছেন কক্সবাজারের একজন প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধা।
কিন্তু জীবনের শেষ মুহূর্তে একজন দেশপ্রেমিক হিসেবে নিজের নামটুকু মুক্তিযোদ্ধার তালিকায় দেখে যেতে চান তিনি। তিনি হলেন ঈদগাঁওয়ের উত্তর মাইজ পাড়া এলাকার মৃত মাহফুজুল করিমের ছেলে সাবেক চেয়ারম্যান মোঃ শাহজাহান চৌধুরী।
১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক ও প্রশিক্ষক ক্যাপ্টেন আব্দুস সোবাহানের নির্দেশে দেশ মাতৃকার টানে যুদ্ধ করেন তিনি। আর সহযোদ্ধা ছিলেন ডাঃ শামশুল হুদা (গেজট নং ২৩) ছৈয়দ ওমর (গেজেট নং ২৫) মিলন কান্তি পাল (গেজেট নং ৪৫)। পার্বত্য চট্টগ্রামে যুদ্ধ চলাকালীন মুক্তিযোদ্ধা প্রশিক্ষণ শিবির নতুন মুং পাড়া থেকে প্রশিক্ষণও গ্রহণ করেন তিনি। কিন্তু স্বাধীনতার অর্ধ শতাব্দী পর্যন্ত সকল সুযোগ সুবিধা থেকে বঞ্চিত হয়ে আসছেন একজন প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধা।
শাহজাহান চৌধুরী জানান, নতুন মুং পাড়া এলাকায় ১ নং সেক্টরের এফএফ বাহিনীর প্রশিক্ষকের দায়িত্বে ছিলেন ক্যাপ্টেন আবদু সোবাহন। দীর্ঘ নয় মাস মুক্তিযুদ্ধের পর দেশ হানাদার বাহিনী মুক্ত হয়। যুদ্ধ পরবর্তী সময়ে সহযোদ্ধাদের সঙ্গে তাকেও তৎকালীন রামু কাউন্সিলে অস্ত্র জমা দিতে হয়, সে তালিকায় ৮২ নং রে রয়েছে তার নাম।
তিনি ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মুক্তি সংগ্রামে অংশগ্রহণ করে স্বাধীনতা অর্জনের আগ মুহূর্ত পর্যন্ত সক্রিয়ভাবে ছিলেন মুক্তিযুদ্ধে। মহান মুক্তিযুদ্ধে তাঁর বিশেষ অবদানের জন্য ১৯৭২ সালের দিকে ক্যাপ্টেন আবদু সোবাহান স্বাক্ষরিত মুক্তিযোদ্ধা সনদপত্রও দেয়া হয় তাঁকে।
তিনি আরো জানান, স্বাধীনতা পরবর্তী সময়ে বেশ কয়েক বার মুক্তিযোদ্ধা যাচাই বাছাই ও নাম তালিকাভুক্ত করা হয়েছে। সে সময় একই সনদধারী সহযোদ্ধাদের নাম গেজেট তালিকায় অর্ন্তভুক্ত করা হলেও প্রয়োজনীয় তদবিরের অভাবে ও অজ্ঞাত কারণে তার নাম তালিকাবদ্ধ করা
হয়নি। সর্বশেষ ২০১৭ সালে যাচাই বাচাইয়ের আবেদন করা হয়। সেখানেও সব ঠিক রয়েছে। ডিজি নং ১৫১৬৯৪, তালিকা নং ৪৭, সিরিয়াল নাম্বার ৭৬।
মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে তার নাম সংশ্লিষ্ট মুক্তিযোদ্ধা মন্ত্রণালয়ের গেজেটভুক্ত না থাকায় তিনি স্বাধীনতা পরবর্তী দীর্ঘ ৪৭বছর ধরে মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে সরকারি সকল সুযোগ সুবিধা থেকে বঞ্চিত হয়ে আসছেন। জীবনের শেষ প্রান্তে এসে তিনি স্ত্রী সন্তানদের নিয়ে অত্যন্ত অসহায়ভাবে জীবন-যাপন করছেন বলেও জানান এ মুক্তিযোদ্ধা । তিনি এ বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী ও মুক্তিযোদ্ধা মন্ত্রণালয়ের সুদৃষ্টি কামনা করেন।
উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার ডাঃ শামসুল হুদা জানান, শাহজাহান চৌধুরীর নামে প্রদত্ত সনদপত্রটি সঠিক কিন্তু তারপরেও কেন তার নাম গেজেট তালিকায় উঠেনি তা বোধগম্য নয়। জীবন যুদ্ধে পরাজিত বীর মুক্তিযোদ্ধা শাহজাহান চৌধুরীর নাম মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে গেজেটভুক্ত করার দাবি জানান তিনি।