দেশে দেশে রোজার উৎসব
মাহে রমজান আরবী নবম মাসের নাম। চাঁদের আবর্তন দ্বারা যে এক বৎসর গণনা করা হয়,
মহান আল্লাাহ তায়ালা শিশু অধিকারের গুরুত্বারূপ করে কুর‘আনুল কারীমে ইরশাদ করেন “তোমরা তোমাদের সন্তানদেরকে দারিদ্রের ভয়ে হত্যা করোনা। তাদেরকে (শিশুদেরকে) এবং তোমাদেরকে আমিই রিযিক দেই। তাদেরকে (শিশুদেরকে) হত্যা করা মহাপাপ” ( বণী ইসরাঈল :৩১)। ইসলামে শিশু অধিকার বলতে বুঝায় যে অধিকার সমূহ শিশু মায়ের গর্ভে থাকা থেকে শুরু করে কৈশোর বা শৈশব পর্যন্ত অব্যাহত থাকে। হযরত ওমর (রা:) এর মতে, শিশু অধিকার শিশু জন্মের থেকেই শুরু হয়ে যায়। একবার হযরত ওমর (রা:) এর শাসনামলে তার কাছে শিশু অধিকার সম্পর্কিত একাট অভিযোগ এলে তিনি শিশুর তিনটি অধিকারের কথা বলেছেন। এক.মতার পিতা একটি ভাল মায়ের ব্যাবস্থা করবে। এটা এ জন্য যে, ভাল মায়ের গর্ভে ভাল সন্তান হয় । দুই. সন্তানের ভাল নাম রাখতে হবে। কেননা ভাল নামের ভাল প্রভাব হয়ে থাকে। তিন. পিতা-মাতা তাকে দীনি শিক্ষা দিবে। শিশুর প্রতি দয়া প্রদর্শনও ইবাদত। হযরত আবু হুরায়রা (রা:) বলেন, এক ব্যক্তি একটি শিশু নিয়ে বিশ্বনবীর খেদমতে এসে শিশুটিকে চুমু দিতে লাগলেন। রাসূলুল্লাহ (সা:) এ দৃশ্য দেখে জিঙ্গেস করলেন, শিশুটির প্রতি কি তোমার দয়া জেগে উঠেছে? সে বলল হ্যা, হে আল্লাহর রাসূল ! তারপর রাসূলুল্লাহ (সা:) বললেন,আল্লাহ তায়ালা তোমার প্রতি এর চেয়ে ও অধিক দয়া করবেন। কেননা তিনি দয়ালুদের দয়ালু। (বুখারী)
শিশুর প্রতি ভালোবাসায় জাহান্নাম হারাম হয়ে জান্নাত আবশ্যক হয়ে যায়। হযরত আয়েশা (রা:) এর নিকট একদা এক মহিলা দু‘টি কন্যা সন্তানসহ আসলেন। তিনি তাদেরকে তিনটি খেজুর দিলেন। মহিলা দুই সন্তানকে দুটি খেজুর দিলেন। আর একটি খেজুর নিজে খাওয়ার জন্য মুখে দিতে যাবেন,এমন সময় বাচ্চারা সেটিও খেতে চাইলো। মহিলা খেজুরটি দুই টুকরা করে সন্তানদেরকে দিয়ে দিলেন। যা হযরত আয়শা (রা:) কে আশ্চার্য করলো। তিনি বিশ্বনবী (সা.) কে ঘটনাটি বর্ণনা করলেন। তিনি বললেন, হে আয়েশা ! আল্লাহ তায়ালা এ স্ত্রীলোকটিকে এর বিনিময়ে জান্নাত দান করবেন অথবা এর বিনিময়ে জাহান্নাম থেকে মুক্তি দিবেন (মুসলিম) ।
এবার আলোচনা করবো ইসলাম শিশু অধিকার ও প্রতিপালনে কি ভূমিকা পালন করেছে :- (এক) বৈধভাবে জন্ম গ্রহণ করার অধিকার :জন্মগত বৈধতা ইসলামিক পরিবার গঠনের ভিত্তি এবং শিশুর ন্যায্য অধিকার। অবৈধ সন্তান মানবিক অধিকার হতে অনেক ক্ষেত্রে বঞ্চিত হয় এবং তার জীবন ধারণ ও লালন পালনের সুযোগ- সুবিধা সহজলভ্য হয়না। যদিও পিতা-মাতার অপরাধ সন্তানের উপর বর্তায় না , তবুও সমাজ অবৈধ সন্তানকে পূর্ণ সামাজিক মর্যাদা দিতে সন্মত নয়। (দুই) কানে আজান শুনার অধিকার : সন্তান ভূমিষ্ঠ হওয়ার সাথে সাথেই পিতা-মাতা অভিবাবকদের দায়িত্ব ডান কানে আজান , বাম কানে ইকামত দেওয়্ া। হযরত আবু রাফে (রা:) বলেন ফাতিমা (রা:) যখন হাসান ইবনে আলী (রা:) কে প্রসব করলেন, তখন আমি রাসূলুল্লাহ (সা:) কে নামাজের আযানের ন্যায় তার কানে আযান দিতে দেখলাম । অন্য বর্ণনায় এসেছে বাম কানে একামত দিয়েছেন (আবু দাউদ ও তিরমিযী)। (তিন) নব জাতকের জন্য তাহনীক করা : হযরত আয়শা (রা:) বলেন , রাসূলুল্লাহ (সা:) এর কাছে নবজাতক শিশুকে নিয়ে আসা হত, তিনি শিশুর কল্যাণ ও বরকতের জন্য দু‘আ করতেন এবং তাদের মুখে চিবিয়ে খেজুর বা মিষ্টান্ন কিছু দিয়ে তাহনিক করাতেন। (চার) শিশুকে মায়ের দুধ পান করানো : আদর্শ খাবারের মধ্যে মায়ের দুধ অন্যতম। শিশুর শারীরিক ও মানসিক বিকাশের জন্য মায়ের দুধের বিকল্প নেই। আল্লাহপাক ইরশাদ করেন: “মাতাগণ তাদের সন্তানদের পূর্ণ দুই বছর দুধ পান করাবে (সূরা বাকারা :২৩৩)। নবজাতকের জন্মের পর প্রথম খাবার হল মায়ের বুকের শালদুধ। যা মায়ের গর্ভকালীন সময়ে ৬/৭ মাস থেকে আল্লাহ তায়ালা তার রহমত স্বরুপ শিশুর প্রয়োজন ও চাহিদা অনুযায়ী মায়ের স্তনে সৃষ্টি করে দেন শালদুধকে আল্লাহ তায়ালা মায়ের স্বভাবিক দুধের চেয়ে অধিক আমিষ এবং ভিটামিন ‘এ’ দিয়ে নবজাতকের প্রথম সঠিক সুষম খাদ্য হিসেবে সৃষ্টি করে থাকেন। শালদুধে অনেক রোগ প্রতিরোধক উপাদান ও শ্বেতকণিকা থাকে যা শিশুকে বিভিন্ন রোগ জীবানু হতে রক্ষা করে । সুতরাং শালদুধ হচ্ছে শিশুর প্রথম টিকা। বর্তমানে প্রগতিশীল নারীরা তাদের সুন্দর্যতা ধরে রাখতে গিয়ে শিশুদেরকে শালদুধ থেকে বঞ্চিত করছে, যা সম্পূর্ণ কুর’আন ও হাদীস বিরোধীকাজ।
(পাঁচ) শিশুর উত্তম নাম রাখা : রাসূলুল্লাহ (সা:) পিতা-মাতাকে সুন্দর ও ভাল নাম রাখার নির্দেশ দিয়েছেন। হযরত আব্দুল্লাহ ইব্ন আব্বাস (রা:) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, একদা রাসূলুল্লাহ (সা:) এর নিকট জানতে চাইলাম পিতার সন্তানের প্রতি হক কি ? তিনি বললেন, পিতা (সন্তানের) সুন্দর নাম রাখবে ও সুশিক্ষা প্রদান করবে (বায়হাকী) । হযরত আব্দুল্লাহ ইব্ন ওমর (রা:) বলেন ,রাসূলুল্লাহ (সা:) বলেছেন, “ তোমাদের নাম সমূহের মধ্যে আল্লাহর নিকট সবচেয়ে উত্তম নাম হচ্ছে আব্দুল্লাহ ও আব্দুর রহমান (মুসলিম) ।
(ছয়) সপ্তম দিনে আক্বীকা করা: রাসূলুল্লাহ (সা:) ইরশাদ করেছেন, সন্তান জন্মের সপ্তমদিনে ছেলের জন্য দু‘টি বকরী আর মেয়ের জন্য একটি যবেহ করতে হবে (নাসায়ী)। (সাত) চুলের ওযন পরিমান রুপা ছদকা করা :হযরত আলী (রা:) বলেন, আমরা হাসান (রা:) এর মাথার চুল কামিয়ে ওজন করলাম ,তার ওজন এক দিরহাম বা তার চাইতে কিছু কম হলো ( তিরমিযী)। (আট) খাৎনা করা ও উত্তম পোশাক পরিধান করানো। (নয়) ইসলাম শিক্ষা দেওয়া : রাসূলুল্লাহ ( সা:) বলেছেন ,সন্তানের যবান থেকে প্রথমে বের হবে, লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ্ (সা:) । আল্লাহ তায়ালা ইরশাদ করেছেন, “পড়, তোমার প্রভূর নামে,যিনি সৃষ্টি করেছেন (সূরা আলাক -০১) রাসূলুল্লাহ (সা:) বলেছেন –“বিদ্যার্জন করা সকল মুসলিমের জন্য ফরজ (ইব্ন মাজাহ)। (দশ) উত্তম আদর্শ শিক্ষা দেওয়া : শিশুর উত্তম আদর্শ গঠন করার জন্য পিতা-মাতার সার্বক্ষণিক নজরদারী করা। কারন চরিত্র হল জীবনের রাজ মুকুট স্বরুপ। রাসূলুলাহ (সা:) বলেছেন- তোমাদের মধ্যে আমার কাছে সর্বাধিক প্রিয় সেই ব্যক্তি , যে সর্বাধিক উত্তম চরিত্রের অধিকারী (বুখারী)। (এগার) শিশু নির্যাতন, পাচার ও যৌন হয়রানি বন্ধ করা । রাসূলুল্লাহ (সা:) বলেছেন-যে ছোটদের স্নেহ করলোনা সে আমার উম্মত নয় (মিশকাতুল মাসাবীহ)।
আজ শিশুরা নিজ পরিবারে ,আত্মীয়-স্বজনদের বাড়ি ,শিক্ষক,সমাজের অসৎ ও দুশ্চরিত্র ব্যক্তিদের মাধ্যমে শারীরিক ও মানসিকসহ বিভিন্ন ভাবে নির্যাতিত হচ্ছে। দোকানও গামের্ন্টসের শিশু কর্মচারীদের উপর চলে অমানবিক নির্যাতন এবং যৌন হয়রানী। অথচ রাসূলুল্লাহ (সা:) এর ইন্তেকালের পূর্বে দু‘টি কথা বলেছেন, এক. নামাজের কথা দুই.অধিনস্থদের সাথে উত্তম আচরণের কথা (বুখারী) ।
পরিশেষে বলা যায়, শিশুকে সুস্থ্য ,সবল ও আদর্শ মানুষ হিসেবে গড়ে তুলতে পিতা-মাতা এবং শিক্ষক সহ সকল অভিবাবকদের সচেতন থাকা একান্ত প্রয়োজন। মহান আল্লাহ তায়ালা আমাদের সকলকে শিশু অধিকার বাস্তবায়ন ও তাদেরকে নির্যাতন থেকে রক্ষা করার তৌফিক দান করুন। আমিন
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।