Inqilab Logo

রোববার ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ০৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২১ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

নতুন রেলমন্ত্রীর সামনে যতো চ্যালেঞ্জ

নূরুল ইসলাম | প্রকাশের সময় : ৮ জানুয়ারি, ২০১৯, ১২:০২ এএম

দেশজুড়ে রেলের উন্নয়নেও নেয়া হয়েছে মেগা প্রকল্প। তাতে ব্যয় ধরা হয়েছে হাজার হাজার কোটি টাকা। এসব প্রকল্পের মধ্যে বেশ কিছু বাস্তবায়িত হয়েছে। চলমান আছে অনেকগুলো। আগামী ৫ বছরের মধ্যেই চলমান প্রকল্পগুলোর মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ কয়েকটির কাজ শেষ করতে হবে। সেই দায়িত্ব পড়েছে নতুন রেলমন্ত্রী নূরুল ইসলাম সুজনের উপর। নতুন মন্ত্রীর সামনে এটাই এখন চ্যালেঞ্জ।
বিশেষজ্ঞদের মতে, রেলকে এগিয়ে নিতে শুধু প্রকল্প বাস্তবায়ন করলেই চলবে না। রেলের কাঁধে চেপে থাকা অনিয়ম-দুর্নীতির ভূত তাড়ানোর দায়িত্বও নিতে হবে নতুন মন্ত্রীকে। বিশেষ করে রেলকে লাভজনক প্রতিষ্ঠানে রুপান্তর করতে না পারলে উন্নয়নের ধারা অব্যাহত রাখা কষ্টসাধ্য হবে।
বাংলাদেশের সব জেলাকে রেলওয়ে নেটওয়ার্কের আওতায় আনতে কাজ করছে সরকার। ঢাকা থেকে পদ্মা সেতুর ওপর দিয়ে ভাঙ্গা-নড়াইল হয়ে যশোর পর্যন্ত ১৭২ কিলোমিটার সিঙ্গেল লাইন স্থাপন প্রকল্পটি সরকারের বৃহৎ উন্নয়ন প্রকল্প। এছাড়া ভাঙ্গা থেকে বরিশাল হয়ে পায়রা সমুদ্র বন্দর পর্যন্ত রেলপথ নির্মাণের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। ঢাকা শহরে সার্কুলার ট্রেন চালুর বিষয়েও সমীক্ষা চলছে।
খুলনা থেকে দর্শনা পর্যন্ত ডাবল লাইন এবং পার্বতীপুর থেকে কাউনিয়া পর্যন্ত ডুয়েল গেজ রেলপথ নির্মাণ হবে। লাকসাম থেকে আখাউড়া পর্যন্ত ডাবল লাইন নির্মাণ করা হচ্ছে।
অন্যদিকে, পদ্মা সেতু চালুর দিন থেকেই ট্রেন চলাচল করার ঘোষণা দিয়ে রেখেছে সরকার। নতুন রেলমন্ত্রীর সামনে এগুলো বাস্তবায়নই এখন বড় চ্যালেঞ্জ।
রেলওয়ে সূত্রে জানা গেছে, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন আওয়ামী লীগ সরকার ২০০৯ থেকে ২০১৭ সাল পর্যন্ত সময়ে সারাদেশে রেলওয়ের উন্নয়নে ৫১টি প্রকল্প হাতে নেয়া হয়েছে। প্রকল্পগুলো বাস্তবায়নে ব্যয় ধরা হয়েছে ৯ হাজার ২২ কোটি টাকা। ইতোমধ্যে ২৮০ কিলোমিটার নতুন রেলপথ নির্মাণ, ৭৯টি নতুন স্টেশন নির্মাণ, ২৪০টি নতুন রেলসেতু নির্মাণ করা হয়েছে।
যাত্রী সাধারণের ক্রমবর্ধমান চাহিদার কথা বিবেচনা করে আন্তঃনগর ও মেইল ট্রেনসহ সর্বমোট ১১৪টি নতুন ট্রেন বিভিন্ন রুটে চালু রয়েছে। অনলাইন টিকিটিং ব্যবস্থা চালু, ট্রেনট্র্যাকিং অ্যান্ড মনিটরিং সিস্টেম চালু এবং যাত্রীদের তথ্য প্রদানের জন্য কল সেন্টার চালু হয়েছে। এসবের বিপরীতে আরও নতুন ট্রেন চালু, কোচ ও ইঞ্জিন বৃদ্ধিসহ সিগন্যালিং সিস্টেম আধুনিকীকরণ, অরক্ষিত রেলক্রসিং ঝুঁকিমুক্তকরণের অনেক কাজ বাকি আছে।
রেলওয়ে সূত্র জানায়, নতুন সরকারের সামনে সচচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ পদ্মা সেতু নির্মাণকাজ শেষ করার। আর এই সেতুর সাথে রেলসংযোগ প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করা রেল মন্ত্রণালয়ের জন্য বড় চ্যালেঞ্জ।
পদ্মা সেতু রেলপথ ব্যবহার করে ঢাকা থেকে মাওয়া হয়ে জাজিরা-ভাঙ্গা-যশোর পর্যন্ত দক্ষিণ-পশ্চিমের ২৩টি জেলায় যাওয়া যাবে। এ রেলপথের দূরত্ব ১৬৯ কিলোমিটার। চায়না রেলওয়ে গ্রুপ এ প্রকল্পের কাজ হাতে নিয়েছে। ৩৫ হাজার কোটি টাকার এ প্রকল্পে ১৬৯ কিলোমিটার নতুন রেললাইন স্থাপিত হলে ঢাকা থেকে খুলনায় ট্রেনযাত্রা সাড়ে তিন ঘণ্টায় নেমে আসবে। বর্তমানে ঢাকা থেকে খুলনায় রেলপথের দূরত্ব ৪১২ কিলোমিটার, যেতে লাগে ৯ ঘণ্টা সময়। এ প্রকল্প বাস্তবায়িত হলে ঢাকা থেকে খুলনার দূরত্ব ২১৩ কিলোমিটার কমবে। ২০২২ সালের জুনের মধ্যে প্রকল্পটি বাস্তবায়নের কথা রয়েছে।
অন্যদিকে, সরকার প্রাথমিকভাবে ফরিদপুর (ভাঙ্গা) থেকে বরিশাল পর্যন্ত প্রায় ১০০ কিলোমিটার রেললাইন নির্মাণের কাজ হাতে নিয়েছে। পরবর্তীতে আরও ৮৫ কিলোমিটার বাড়িয়ে ফরিদপুর থেকে পায়রা বন্দর পর্যন্ত ১৮৫ কিলোমিটার রেলপথ স¤প্রসারিত হবে। এ প্রকল্পের ব্যয় ধরা হয়েছে ৯ হাজার ৯৯০ কোটি টাকা। ঢাকা থেকে পায়রা পর্যন্ত ২৪০ কিলোমিটার রেলওয়ে নির্মাণ করতে খরচ পড়বে ৬ হাজার কোটি টাকা। ব্রিটিশ কোম্পানি ডিপি রেলের সঙ্গে এ প্রকল্পের কাজের জন্য ইতোমধ্যে সমঝোতা স্মারক সই হয়েছে। সম্পূর্ণ প্রকল্পটি (ঢাকা থেকে পায়রা) বাস্তবায়ন হতে ২০২৪ সাল লেগে যাবে। এ প্রকল্পের কাজ এগিয়ে নেয়ার দায়িত্ব পড়ছে নতুন মন্ত্রীর উপর।
অন্যদিকে, যমুনা নদীর ওপর বিদ্যমান বঙ্গবন্ধু সেতুর সমান্তরালে বিকল্প একটি আলাদা রেলসেতু নির্মাণকাজ হাতে নিয়েছে সরকার। এ প্রকল্প বাস্তবায়ন করতে প্রায় ১০০ বিলিয়ন ডলার খরচ হবে। ডুয়েল গেজ ডাবল ট্র্যাকে সেতু (চার দশমিক আট কিলোমিটার) তৈরি করতে সময় লাগবে ২০২০ সাল পর্যন্ত। নতুন রেলমন্ত্রীর জন্য এটাও একটা বড় চ্যালেঞ্জ।
রেলওয়ে সূত্র জানায়, ঢাকা-মাওয়া-যশোর রেলওয়ে প্রকল্পটি ভবিষ্যতে বাংলাদেশ-চীন-ভারত ও মিয়ানমার (বিসিআইএম) করিডোরের সাব রিজিওনাল রুট হিসেবে ট্রান্স এশিয়ান রেলওয়ে (টিএআর) অংশ হিসেবে পরিগণিত হবে। এ প্রকল্পটিতে মোট ১৪টি স্টেশন থাকবে । এগুলো হলো- কেরানীগঞ্জ-নিমতলা-শ্রীনগর-মাওয়া-জাজিরা শিবচর-ভাঙ্গা-নগরকান্দা-মুকসুদপুর-মহেশপুর-লোহাগড়া-নড়াইল-জামদিয়া ও পাদমাবিলা।
বিদ্যমান ছয়টি স্টেশন ওই রেলওয়ের সঙ্গে সংযুক্ত হবে। এ স্থানগুলো হচ্ছে- ঢাকা-গেন্ডারিয়াা-ভাঙ্গা-কাশিয়ানী-রূপদিয়া ও সিনজিয়া।
প্রকল্পটি দুই পর্বে শেষ হবে। প্রথম পর্বে ঢাকা-মাওয়া-ভাঙ্গা (পদ্মা সেতুর ওপর দিয়ে) যা জুন ২০২০ সালের মধ্যে এবং দ্বিতীয় পর্বে ভাঙ্গা-যশোর, যা জুন ২০২২ সালের মধ্যে শেষ হওয়ার কথা রয়েছে।
মংলা থেকে খুলনা পর্যন্ত রূপসা নদীর ওপর দিয়ে রেলওয়ে সেতুসহ ৬৫ কিলোমিটার সিঙ্গেল লাইন ব্রডগেজ রেলওয়ে ট্র্যাক নির্মাণের কাজ হাতে নিয়েছে সরকার। রূপসা নদীর ওপর ৫ কিলোমিটার রেলওয়ে সেতু নির্মিত হবে। ৪০ বিলিয়ন ডলারের এ প্রকল্পের সম্পূর্ণ কাজ শেষ হবে আগামী বছর।
এ ছাড়া খুলনা থেকে দর্শনা পর্যন্ত বর্তমান সিঙ্গেল লাইনের পাশ দিয়ে ২১৭ কিলোমিটার ডাবল রেল লাইন স্থাপনের কাজ ইতোমধ্যে হাতে নিয়েছে সরকার। প্রকল্পটি বাস্তবায়নে মোট ৩৫ বিলিয়ন (সাড়ে তিন হাজার কোটি টাকা) ডলার খরচ হবে। আগামী ২০২২ সালের মধ্যে এ প্রকল্পের কাজ শেষ হওয়ার কথা।
বিশেষজ্ঞদের মতে, এসব প্রকল্প বাস্তবায়ন ছাড়াও নতুন রেলমন্ত্রীকে রেলের অনিয়ম- দুর্নীতিরোধে ব্যবস্থা নিতে হবে। পশ্চিমাঞ্চলে এখনও যাত্রীরা টিকিট কেটে নির্ধারিত আসনে বসতে পারেন না। আন্তঃনগর ট্রেনগুলোতে টিকিটবিহীন যাত্রীদের দাপট। রেলের তেল চুরি, সারাদেশে রেল শ্রমিকলীগের স্বেচ্ছাচারিতা, ট্রেনের টিকিট বিক্রিতে কারসাজি, কালোবাজারি বন্ধেও ব্যবস্থা নিতে হবে রেলমন্ত্রীকে।
এমপি সুজন রেলমন্ত্রী হওয়ায় আনন্দে ভাসছে পঞ্চগড়
বোদা (পঞ্চগড়) উপজেলা সংবাদদাতা : এমপি অ্যাডভোকেট নুরুল ইসলাম সুজন রেলমন্ত্রী হওয়ায় আনন্দে ভাসছে বোদা-দেবীগঞ্জসহ পঞ্চগড় জেলার মানুষ। তিনি পঞ্চগড়-২ (বোদা-দেবীগঞ্জ) আসনের তিন বারের সংসদ সদস্য। গতকাল সোমবার পূর্ণ রেলমন্ত্রী হিসেবে শপথ নিয়েছেন তিনি।
রোববার নতুন মন্ত্রীসভার নামের তালিকায় নুরুল ইসলাম সুজনের নাম বিভিন্ন ইলেকট্রনিক ও প্রিন্ট মিডিয়ায় প্রচার হওয়ায় এ সংসদীয় আসনের সর্বস্তরের মানুষ আনন্দের জোয়ারে ভাসছিল। গোটা পঞ্চগড় জেলা জুড়ে দলীয় নেতাকর্মীসহ সাধারণ মানুষের মাঝে মিষ্টি খাওয়া হয়েছে। জেলা জুড়ে আনন্দ মিছিলে সবস্তরের জনতার ঢল নামে।
এব্যাপারে বোদা উপজেলার আওয়ামী লীগের সভাপতি ও পৌর মেয়র অ্যাডভোকেট ওয়াহিদুজ্জামান সুজা ও সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক ফারুক আলম টবি বলেন, সুজন মন্ত্রী হওয়ার খবরে শুধু আওয়ামী লীগ পরিবার না এ সংসদীয় আসনের সর্বস্তরের মানুষ এখন আনন্দে ভাসছে। একইসঙ্গে তাকে মন্ত্রী করায় আওয়ামী লীগের সভাপতি জননেত্রী শেখ হাসিনার কাছে কৃতজ্ঞতা জানিয়েছেন তারা।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: রেল

২৮ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩

আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ