পোশাক রপ্তানিতে উৎসে কর ০.৫ শতাংশ নির্ধারণের প্রস্তাব
আগামী পাঁচ বছরের জন্য তৈরি পোশাক রপ্তানির বিপরীতে প্রযোজ্য উৎসে করহার ১ শতাংশ থেকে হ্রাস করে ০.৫ শতাংশ নির্ধারণের প্রস্তাব করেছে পোশাক খাতের দুই সংগঠন
মিল মালিকরাও চালের দাম বাড়িয়ে দিয়েছেন। এর প্রভাব পড়েছে পাইকারি ও খুচরা বাজারে। ১০ দিনের ব্যবধানে মিল পর্যায়ে চালের দাম বেড়েছে বস্তায় (৫০ কেজি) ২১০-২৫০ টাকা বা মণপ্রতি ১৫৮-১৮৭ টাকা। মিল পর্যায়ে মূল্যবৃদ্ধির প্রভাব পাইকারিতে পুরোপুরি পড়তে আরো কিছুটা সময় লাগবে। তার পরও এরই মধ্যে পাইকারিতে ৫০ কেজির প্রতি বস্তা চালের দাম ১২০-১৪৫ বা মণপ্রতি ৯০-১১০ টাকা বেড়েছে। আর খুচরা পর্যায়ে বেড়েছে কেজিতে চার টাকা পর্যন্ত। মূল্যবৃদ্ধির কারণ হিসেবে এতদিন লোকসানে চাল বিক্রির কথা বলছেন মিল মালিকরা। মিল পর্যায়ে মূল্যবৃদ্ধির পাশাপাশি পরিবহন ভাড়া বৃদ্ধিকেও কারণ হিসেবে উল্লেখ করছেন পাইকারি ব্যবসায়ীরা। সরকারিভাবে চাল সংগ্রহকে আরেকটি কারণ হিসেবে দেখছেন তারা।
এদিকে নির্বাচনেকালীন পরিবহন সঙ্কটের কারণ দেখিয়ে রাজধানীর কাঁচাবাজার গুলোতে সবজি বাজারে যে নেতিবাচক প্রভাব পড়েছিল তা ধীরে ধীরে কাটতে শুরু করেছে। স্বাভাবিক হয়ে আসছে সবজির বাজার। তবে মুরগি ও ডিমের বাড়তি দাম। গতকাল শুক্রবার রাজধানীর বিভিন্ন কাঁচাবাজার ঘুরে ব্যবসায়ী ও ক্রেতাদের সঙ্গে কথা বলে এমন তথ্য পাওয়া গেছে।
অন্যদিকে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, দিন দশেক আগে হাসকিং মিলে ৫০ কেজি ওজনের প্রতি বস্তা মিনিকেট চালের দাম ছিল ১ হাজার ৭৮০ থেকে ১ হাজার ৮০০ টাকা। একই চাল গতকাল বিক্রি হয়েছে ২ হাজার ২৩ টাকায়। এ হিসাবে মিল পর্যায়ে প্রতি বস্তা মিনিকেট চালের দাম বেড়েছে সর্বোচ্চ ২৪০ টাকা।
এছাড়া অটো রাইস মিলে ১০ দিন আগে প্রতি বস্তা (৫০ কেজি) মিনিকেট চালের দাম ছিল ২ হাজার ২০০ টাকা। বর্তমানে তা সর্বোচ্চ ২ হাজার ৪১০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এ হিসাবে অটো রাইস মিল পর্যায়ে মিনিকেট চালের দাম বেড়েছে বস্তায় ২১০ টাকা। তবে সবচেয়ে বেশি দাম বেড়েছে মোটা চালের, প্রতি বস্তায় (৫০ কেজি) ২৫০ টাকা। দিন দশেক আগে মিল পর্যায়ে প্রতি বস্তা মোটা চাল ৯৩৩ টাকায় বিক্রি হলেও এখন বিক্রি হচ্ছে ১ হাজার ৫০০ টাকায়। মিল মালিকরা বলছেন, বাজারে চালের দাম অস্বাভাবিক কমে গিয়েছিল। এতে লোকসানে চাল বিক্রি করছিলেন তারা। লোকসান যাতে না হয়, সেজন্য দাম কিছুটা সমন্বয় করা হয়েছে।
মিল ও পাইকারিতে মূল্যবৃদ্ধির প্রভাব পড়েছে খুচরা বাজারেও। রাজধানীর খুচরা বাজারগুলোয় মানভেদে প্রতি কেজি উন্নত মানের সরু চাল বিক্রি হচ্ছে ৫৮-৬২, সাধারণ মানের ৫৪-৫৮, মাঝারি মানের ৪৪-৫২ ও মোটা চাল প্রতি কেজি ৩৮-৪২ টাকায়। ১০ দিন আগেও এসব চাল কেজিপ্রতি ৩-৪ টাকা কমে বিক্রি হয়েছিল। খুচরা পর্যায়ে চালের মূল্যবৃদ্ধির তথ্য রয়েছে সরকারি প্রতিষ্ঠানেও। কৃষি বিপণন অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, সপ্তাহের ব্যবধানে বোরো সরু চালের দাম বেড়েছে কেজিপ্রতি ৪ টাকা। আর কেজিপ্রতি ২ টাকা বেড়েছে বোরো মাঝারি চালের দাম। গত সপ্তাহে বোরো সরু চাল প্রতি কেজি ৫২ টাকায় বিক্রি হলেও এ সপ্তাহে কিনতে হচ্ছে ৫৬ টাকায়। একইভাবে ৪০ টাকা কেজি দরের বোরো মাঝারি চাল বিক্রি হচ্ছে ৪২ টাকায়।
চট্টগ্রামেও দিন দশেকের ব্যবধানে পাইকারিতে চালের দাম বেড়েছে বস্তাপ্রতি (৫০ কেজি) ১০০-১৪৭ টাকা পর্যন্ত। দেশে ভোগ্যপণ্যের সবচেয়ে বড় পাইকারি বাজার খাতুনগঞ্জের চাক্তাই এলাকার বিভিন্ন আড়তে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, দিন দশেক আগে পাইকারিতে প্রতি বস্তা জিরাশাইল চাল ২ হাজার ৩৪৫ টাকায় বিক্রি হলেও এখন বিক্রি হচ্ছে ২ হাজার ৪৯০ টাকায়। প্রায় একই হারে বেড়েছে মিনিকেট (সিদ্ধ), মিনিকেট (আতপ) ও পারি (সিদ্ধ) চালের দাম।
মূল্যবৃদ্ধির কারণ জানতে ছাত্তার অটো রাইস মিলের স্বত্বাধিকারী শান্তি দাশগুপ্ত বলেন, নির্বাচনের আগে প্রতিটি ট্রাকের ভাড়া ১০-১২ হাজার টাকা পর্যন্ত বেড়েছিল। এ কারণে চালের দাম বাড়তি ছিল। এছাড়া কয়েক মাস ধরে বস্তাপ্রতি ৩০০-৪০০ টাকা লোকসানে থাকায় ব্যবসায়ীরা এখন বাড়তি দামেই চাল বিক্রি করছেন। সরকারের চাল সংগ্রহ কর্মসূচি শেষ হলে বাজার আবার স্থিতিশীল হতে পারে।
এদিকে কমেনি মুরগি ও ডিমের দাম। ডিম পাইকারি ৯৮ টাকা, খুচরা ১০০ থেকে ১০৫ টাকা ডজন বিক্রি হচ্ছে। ডিম ব্যবসায়ীরা জানান, ডিমের চাহিদার তুলনায় সাপ্লাই কম, উৎপাদনও কিছুটা কমেছে। এক সপ্তাহ আগে এক ডজন ডিম বিক্রি হয়েছে ৮৫ টাকায়। এখন সেই ডিম ১০০ টাকা ডজন বিক্রি করতে হচ্ছে। ব্রয়লার মুরগি বিক্রেতা স্বপন মিয়া বলেন, ব্রয়লার মুরগি কেজি বিক্রি হচ্ছে ১৩০ টাকায়। তবে ৪/৫ কেজি হলে কেজিতে ৫ টাকা কম নেয়া হচ্ছে। দাম বাড়ার বিষয়ে তিনি বলেন, চাহিদা বেশি কিন্তু সে তুলনায় সাপ্লাই নেই।
মুরগি কিনতে এসে হতাশ হয়ে ডিম কিনতে গিয়েও বিরক্তি প্রকাশ করেন বেসরকারি চাকরিজীবী মনসুর আলী। তিনি বলেন, সাড়ে ৩শ’ টাকা কেজিতে দেশি মুরগি কিনে খাওয়া কষ্টকর। সেখানে ব্রয়লারই ছিল ভরসা। কিন্ত ১১০ টাকার ব্রয়লারের দাম বেড়ে হয়েছে ১৩০ টাকা। আর ডিমে ডজনেই ১৫ টাকা বেড়েছে। বাধ্য হয়েই কেনা, বাঁচতে তো হবে।
অন্যদিকে স্বাভাবিক হতে শুরু করেছে কাঁচাবাজার। গতসপ্তাহ থেকে পণ্য ও বাজারভেদে ৫ থেকে ১০ টাকা কম দরে বিক্রি হচ্ছে বিভিন্ন ধরনের শাকসবজি।
বিক্রেতারা বলছেন, নির্বাচনের আগে পাইকারি বাজারে সবজির সরবরাহ কম থাকলেও নির্বাচন শেষে বাড়তে শুরু করেছে সরবরাহ। তাই কমতে শুরু করেছে সবজির দাম। আর ক্রেতারা বলছেন, বাজারে পর্যাপ্ত পরিমাণে সবজির সরবরাহ থাকলেও বিক্রেতারা বিভিন্ন অজুহাতে তার দাম বাড়িয়ে দেয়। এখন আবার কমাতে শুরু করেছে।
রাজধানীর শান্তিনগর কাঁচাবাজারে প্রতিকেজি টমেটো বিক্রি হচ্ছে ৪০ থেকে ৫০ টাকা, শিম ৩০ থেকে ৪০ টাকা, শসা ৩০ থেকে ৪০ টাকা, নতুন আলু ৩০ টাকায়। কাঁচামরিচ প্রতিকেজিতে ৫ থেকে ১০ টাকা কমে ৫০ থেকে ৭০ টাকায় বিক্রি করতে দেখা গেছে। এ বাজারে প্রতিকেজি গাজর ৩০ টাকা থেকে ৪০ টাকা, ঢেঁড়স ৪০ টাকা, মুলা ৩০ টাকা, বেগুন ৪০ থেকে ৫০ টাকা, কচুর লতি ৩০ থেকে ৪০ টাকা, করলা ৪০ থেকে ৫০ টাকা, শালগম ৪০ টাকা, কাঁকরোল ৪৫ থেকে ৫৫ টাকায় বিক্রি করতে দেখা গেছে।
এছাড়া বাজারে প্রতিটি বাঁধাকপি ও ফুলকপি ৩০ থেকে ৪০ টাকায়, লাউ প্রতিটি ৪০ থেকে ৫০ টাকা, জালি কুমড়া ৩০ থেকে ৪০ টাকা বিক্রি হচ্ছে। প্রতি আঁটি কলমি ও লাল শাক ১০ থেকে ১৫ টাকা, লাউ শাক ৩০ টাকা, পালং শাক ১৫ টাকা এবং পুঁই শাক ২০ টাকায় বিক্রি করতে দেখা গেছে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।