পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
দেশের অধিকাংশ স্কুলে মেয়েদের মাসিককালীন স্বাস্থ্য ব্যবস্থাপনার বেহাল অবস্থা। স্কুলগুলোতে মাসিকবান্ধব টয়লেট, পানি, স্যানিটেশন ও হাইজিন (ওয়াশ) সুবিধা নেই বললেই চলে। একই সঙ্গে এর জন্য প্রয়োজনীয় বাজেট এবং সুবিধা নিশ্চিতে সুনির্দিষ্ট কোন নির্দেশনাও নেই সরকারের টেকসই উন্নয়ন অভীষ্ট (এসডিজি) ফাইন্যান্সিং স্ট্র্যাটেজি ২০১৭ প্রণীত দলিলে। যদিও সরকারের ৭ম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনায় (২০১৬-২০) ছাত্রীদের জন্য পৃথক টয়লেট এবং পর্যাপ্ত স্যানিটারি ন্যাপকিন ও পরিষ্কারের সুবিধা অন্তর্ভূক্তিকরণের গুরুত্বারোপ করা হয়েছে।
এছাড়াও ২০১৫ সালে শিক্ষা মন্ত্রণালয় ছাত্রীদের জন্য পৃথক টয়লেট ব্যবস্থাপনা, যার মধ্যে উন্নত সুবিধাসহ সাবান, পানির ব্যবস্থা, বিন এবং মাসিক স্বাস্থ্য ব্যবস্থাপনার উপর মেয়েদের শিক্ষা দেয়ার জন্য নারী শিক্ষক নিয়োগ দেয়ার জন্য সকল মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানকে নির্দেশনা দিয়েছে। দেশব্যাপি এই নির্দেশনা শুধুমাত্র কাগজ-কলমেই সীমাবদ্ধ। আর স্কুলগুলোতে মাসিকবান্ধব টয়লেট না থাকায় শতকরা ৪০ ভাগ ছাত্রীই প্রতি মাসে স্কুলে অনুপস্থিত থাকেন। এতে তারা একদিকে যেমন ক্লাসে পিছিয়ে পড়ছে, অন্যদিকে পরীক্ষার খারাপ ফল করছে।
বিশেষজ্ঞদের মতে, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে টয়লেটের দুর্বল ব্যবস্থাপনা ও মাসিক স্বাস্থ্য ব্যবস্থাপনা মেয়ে শিক্ষার্থীদের উপস্থিতি এবং তাদের শিক্ষা বিষয়ক দক্ষতায় প্রভাব ফেলে। যা এসব শিক্ষার্থীর মূল্যবোধ গঠনের উপর নেতিবাচক প্রভাব এবং দেশের অর্থনৈতিক ও সামাজিক উন্নয়নে প্রভাব ফেলছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতা, যথেষ্ট গোপনীয়তা এবং মেয়েদের জন্য আলাদা মাসিক স্বাস্থ্য ব্যবস্থাপনা উপযোগী টয়লেট মাসিক চলাকালীন সময়ে ছাত্রীদের স্কুলে আসা ও শিক্ষা গ্রহণের পরিবেশ নিশ্চিত করে। তাই সরকারি ও বেসরকারি সকল পর্যায়ে এ সম্পর্কে যথেষ্ট সহযোগী মনোভাব নিয়ে এগিয়ে আসতে হবে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক স্কুল শিক্ষক বলেন, স্কুলে পানি, স্যানিটেশন ও হাইজিন সুযোগ সুবিধা রাখার কথা বলা হয়েছে। তবে এটা কিভাবে করা হবে বা এই ব্যবস্থাপনায় অর্থের উৎস সম্পর্কে কোনও পরিষ্কার নির্দেশনা নেই। তাই ইচ্ছা থাকলেও স্কুলগুলোতে মাসিককালীন সঠিক স্বাস্থ্য ব্যবস্থাপনার সুযোগ থাকে না।
২০১৪ সালে প্রকাশিত বাংলাদেশ ন্যাশনাল হাইজিন বেজলাইন সার্ভে অনুযায়ী, প্রতি ১৮৭ জন শিক্ষার্থীর জন্য ১টি টয়লেট আছে। অথচ সরকারি নিয়ম অনুযায়ী প্রতি ৫০ জনের জন্য একটি টয়লেট থাকার কথা।
সার্ভের তথ্য অনুযায়ী, গ্রামীণ এলাকায় (৪৩ শতাংশ) অর্ধেকের কম স্কুলে উন্নত এবং কার্যকরী টয়লেট ছিল। যা মেয়ে শিক্ষার্থীদের জন্য খোলা ছিল। অপরদিকে মাত্র ২৪ শতাংশ স্কুলে টয়লেট পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন পাওয়া যায়, যার মধ্যে ৩২ শতাংশ স্কুলে সাবান ও পানি দিয়ে হাত ধোয়ার ব্যবস্থা ছিল।
অপরদিকে শহর এলাকায় ৬৩ শতাংশ স্কুলে উন্নত এবং কার্যকরী টয়লেট যা মেয়ে শিক্ষার্থীদের জন্য খোলা ছিল, ৪৭ শতাংশ স্কুলে সাবান ও পানি দিয়ে হাত ধোয়ার ব্যবস্থা ছিল। নেত্রকোনা জেলায় র্ডপ বাস্তবায়িত ঋতু প্রকল্পের (২০১৭) বেজলাইন সার্ভে রিপোর্টেও প্রায় একই ধরণের ফলাফল উঠে আসে।
বাংলাদেশ ন্যাশনাল হাইজেন বেজলাইন সার্ভে ২০১৪’-তে বলা হয়েছে, ৪০ শতাংশ ছাত্রী তাদের মাসিককালীন সময়ে স্কুলে অনুপস্থিত থাকে। ওই সার্ভেতে মাসিককালীন স্বাস্থ ব্যবস্থাপনাকে একটি চ্যালেঞ্জ হিসেবে উল্লেখ করা হয়। বিশেষ করে এ বিষয়ে পর্যাপ্ত জ্ঞান না থাকার কারণে স্কুলপর্যায়ে সমস্যা প্রকট বলে উল্লেখ করা হয়।
সার্ভেতে দেখা গেছে, বয়ঃসন্ধি বা প্রথম মাসিকের আগে মাত্র ৩৬ শতাংশ ছাত্রী বিষয়টি সম্পর্কে জানতে পারে। ফলে তারা যখন জীবনের এই অধ্যায়ে পা রাখে তখন চরম বিব্রতকর পরিস্থিতির মুখোমুখি হয়। কী করতে হবে সে জ্ঞান না থাকা এবং স্কুলে ছাত্রীদের জন্য আলাদা টয়লেট না থাকায় তারা স্কুলে আসা বন্ধ করে দেয়।
এ বিষয়ে সচেতনতা সৃষ্টিতে কাজ করছে বেসরকারি সংস্থা র্ডপ। সংস্থাটির গবেষণা পরিচালক মোহাম্মদ যোবায়ের হাসান বলেন, ঋতু প্রকল্প বর্তমানে নেত্রকোনা জেলার ৮টি উপজেলায় কাজ করছে। মাসিককালীন স্বাস্থ্য ব্যবস্থাপনা ও এই সময়ে স্বাভাবিকভাবে চলাফেরার জন্য করণীয় বিষয়ে সচেতনতা সৃষ্টিতে কাজ করছে র্ডপ। যোবায়ের বলেন, আমরা স্কুলগুলোতে মাসিকবান্ধব টয়লেট নিশ্চিত করতে কাজ করছি। কারণ মাসিকবান্ধব টয়লেট না থাকায় ছাত্রীরা নানাভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। যদিও প্রতিটি স্কুলে ছাত্রীদের জন্য মাসিকবান্ধব আলাদা টয়লেট নিশ্চিত করা হচ্ছে বলে বহু আগেই জানিয়েছিলেন শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ। এ বিষয়ে ২০১৫ সালের ২৩ জুন শিক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে একটি পরিপত্র জারি করা হয়। পরিপত্রে স্কুলে মাসিকবান্ধব স্বাস্থ্য ব্যবস্থাপনা নিশ্চিত করতে কয়েকটি নির্দেশনা দেয়া হয়। তার মধ্যে ছিল- স্কুলে মেয়েদের জন্য আলাদা টয়লেটের ব্যবস্থা করা, প্রতিটি স্কুলে একজন নারী শিক্ষককে মাসিককালীন স্বাস্থ্য নিয়ে সচেতনতা সৃষ্টির দায়িত্ব দেয়া, ছাত্রীদের ক্রয়ের জন্য স্কুলে প্যাড ও প্রয়োজনীয় দ্রব্যসামগ্রী সরবরাহের ব্যবস্থা করা এবং টয়লেটে পর্যাপ্ত সাবান ও পানির ব্যবস্থা রাখা। কিন্তু সরকারি ওই নির্দেশনা এখনো পর্যন্ত বাস্তবায়ন হয়নি বলে অভিযোগ উন্নয়ন সংস্থাগুলোর। রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে সরেজমিনেও দেখা যায় শিক্ষা মন্ত্রণায়ের পরিপত্র বাস্তবায়ন হয়নি। র্ডপ এর এডভোসির ফলে ঋতু প্রকল্প এলাকায় ব্যাপক পরিবর্তন এসেছে।
ঋতু প্রকল্পের প্রোগ্রাম ম্যানেজার (সিমাভী) মাহবুবা কুমকুম বলেন, এসডিজির চার নম্বর গোলে স্বাস্থ্যসম্মত স্যানিটেশনের বিষয়টি আছে। এ কারণেই সরকার বিষয়টির গুরুত্ব অনুধাবন করে পরিপত্র জারি করেছে। কিন্তু এটি নিশ্চিত করতে হলে স্কুল কর্তৃপক্ষ এবং স্কুল ব্যবস্থাপনা কমিটিকে সচেতন হতে হবে। নেত্রকোনা জেলায় বাস্তবায়িত প্রকল্পটি একটি দৃষ্টান্ত। স্কুল পর্যায়ে মাসিককালীন স্বাস্থ্য ব্যবস্থাপনার উন্নয়নে প্রকল্পটি অনুস্মরণীয় হতে পারে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।