সড়ক দুর্ঘটনায় জিডিপির ক্ষতি ১ দশমিক ৬ শতাংশ
অর্থনৈতিক রিপোর্টার : সড়ক দুর্ঘটনার আর্থিক ক্ষতি বাংলাদেশের মোট দেশজ উৎপাদন বা জিডিপির ১ দশমিক ৬ শতাংশ বলে জানিয়েছে ইউনাইটেড নেশনস ইকোনমিক অ্যান্ড সোশ্যাল কাউন্সিল
ফ জ লে রা ব্বী দ্বী ন
পৃথিবী সৌরজগতের সবচেয়ে সুন্দর একটা গ্রহের নাম। এত মনোরম সৌন্দর্যের লীলাভূমি আর বেঁচে থাকার সমস্ত উপকরণ দিয়ে সৃষ্টিকর্তা এই পৃথিবীটাকে এমনভাবে সৃষ্টি করেছেন যা অন্য কোন গ্রহে গিয়ে খুঁজে পাওয়া দুষ্কর! আর এই সুন্দর ধরণীর রূপটাকে শতগুণে বাড়িয়ে দিয়েছে প্রকৃতির সব থেকে কাছের ও অবিচ্ছেদ্য এক অংশ পাখি। পাখির নামটা শুনলেই হৃদয় মন জুড়ায় না এমন মানুষ হয়ত পাওয়া যাবে না! পরিবেশের ভারসাম্য ও জীববৈচিত্র্য রক্ষায় পাখিদের কোন তুলনা নেই। পরিবেশবান্ধব এই প্রাণীরা মানুষের সুস্থ জীবনধারাকে টিকিয়ে রাখতে সহয়তা করে প্রচুর। পৃথিবীতে প্রায় সব দেশেই পাখির বিচরণ দেখা যায়। বিজ্ঞানীদের মতে পৃথিবীতে প্রায় ১০ হাজার প্রজাতির পাখি রয়েছে। তার মধ্যে বিশাল এক অংশজুড়ে পরিযায়ী পাখিদের অবস্থান। এই পাখিরা নিজের দেশে বছরের মাত্র কিছু সময় অবস্থান করে আর বাকি পুরু সময়টা অন্য দেশেই কাটায়। এর প্রধান কারণ হচ্ছে নিজ দেশের ভৌগোলিক অবস্থা। পরিবেশের সাথে নিজেদেরকে তারা মানিয়ে নিতে পারেনা। যার ফলে বংশবৃদ্ধি এবং খাবার সংগ্রহে ব্যাপক ভোগান্তির শিকার হতে হয়। এই সমস্যাগুলো এড়িয়ে জীবনের সুন্দর পথকে সুগম করতে এই পাখিরা পছন্দ মত ভিনদেশে পরিযায়ী সেজে চলে আসে। তারপর সেই দেশেই বংশবৃদ্ধিসহ প্রয়োজনীয় সকল চাহিদা মিটিয়ে তৃপ্ততা অর্জন করে।
বিশ্বের অসংখ্য দেশের মধ্যে পরিযায়ী পাখিদের জন্য সুন্দর এক আবাসস্থল হচ্ছে বাংলাদেশ। রূপসী বাংলার এ দেশ রূপে গুণে অতুলনীয় এক উজ্জ্বল প্রদীপের মত। বিস্তীর্ণ সবুজের মাঠ, ফসলের সমারোহ, নদী-নালা, খাল-বিল, হাওর-বাঁওড় আর বহুজাতিক উদ্ভিদের পারস্পরিক মিলনাস্থলে এ দেশ হয়ে উঠে রূপসী বাংলা। আর এই রূপসী বাংলায় প্রতি বছর বিশেষ করে শীতকালীন সময়ে অসংখ্য পরিযায়ী পাখিরা চলে আসে আমাদের দেশে। হিমালয়ের পাদদেশ থেকে বেশিরভাগ পাখির আগমন ঘটে। এসব পাখিরা হিমালয়ের পাদদেশে অবস্থিত তিব্বতের লাদাখ থেকে সেন্ট্রাল এশিয়ান ইন্ডিয়ান ফ্লাইওয়ে দিয়ে বাংলাদেশে প্রবেশ করে। এছাড়া ইউরোপ, দুরপ্রাচ্য থেকেও এসব পাখি নভেম্বরের দিকে বাংলাদেশে আসে। প্রতি বছর বাংলাদেশে প্রায় ১৫০ প্রজাতির পরিযায়ী পাখির আগমনের ঘটে। বাংলাদেশের প্রায় প্রতিটি নদ-নদী, হাওর-বাঁওড়, বিল-ঝিলে এইসব পাখিদের প্রচুর বিচরণ লক্ষ করা যায়। উল্লেখযোগ্য স্থানগুলোতে নিয়মিত দর্শনার্থীদেরও ভিড়ের কোন ফোয়ারা নেই। প্রকৃতির অলংকার এ পাখিরা কেবল অতিথি হয়েই আসে না দেশ-বিদেশে, এরা মূলত একটা দেশের অবিচ্ছেদ্য অংশ হিসাবে থেকে যায় বছরের নির্দিষ্ট সময়গুলো। সেখানে এরা বংশবৃদ্ধি ঘটিয়ে থাকে। প্রতি বছর দূর দেশ থেকে এই পরিযায়ী পাখিদের আগমন না ঘটলে বাংলাদেশের ভারসাম্য পুরোপুরি নষ্ট হয়ে যাবে। ক্ষতিকর পোকামাকড় দমন এবং এদের বিষ্ঠার মাধ্যমে মাটির উর্বরতা বৃদ্ধি পায়। তাই এদেরকে সংরক্ষণ করা জরুরি।
কিন্তু সংরক্ষণের তাগিদ দিনে দিনে কলম-খাতা, পত্র-পত্রিকায় বাড়লেও বাস্তবে কতটুকু সংরক্ষণ করা যাচ্ছে তা ভাবতে গেলে মাথাটা সত্যিই ঘুরপাক খায়। বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় হাওরের নাম সিলেটের হাকালুকি হাওর। এছাড়া ছোটবড় অসংখ্য হাওর-বিলের অভাব নেই প্রতিটি জেলায়। এই সমস্ত স্থানগুলো পাখিদের জন্য যেমন মনোরম রহস্যের প্রতিচ্ছবি তেমনি আজকাল প্রতিকূলের বাস্তব উদাহরণ হয়ে সামনের কাতারের দাঁড়িয়ে পড়ছে এই সমস্ত মনোমুগ্ধকর স্থানগুলো। বছরের একটা নির্দিষ্ট সময়ে পাখি শিকারের ধুম পড়ে যায়। চোখের সামনে শিকারিরা পাখিদেরকে টপাটপ মেরে খাচায় বন্দি করে ফেলছে আর আমরা দাড়িয়ে দাঁড়িয়ে কেবল তা দেখছি। এই সুন্দর পরিবেশবান্ধব পরিযায়ী পাখিরা আজকাল কম আসা যাওয়ার ঘটনা ঘটাচ্ছে। কেননা যতসংখ্যক পাখিরা এখানে আসে তার বেশিরভাগই শিকারির হাতে আটকা পড়ে যায়। পাখি নিধনের এ সমস্যা শুধু বাংলাদেশে নয় পৃথিবীর সমগ্র দেশেই দিনদিন এ সমস্যা প্রকট হয়ে উঠছে। শকের বশে পাখি পালনের লোভ জাগে না কার? এই পাখি পালনের লোভে হাজার হাজার লোভাকাতর মানুষেরা পাখিদেরকে ধরে ধরে মারছে। পৃথিবীতে দশ হাজার প্রজাতির পাখির মাঝখান থেকে আগামী শতাব্দীর মধ্যেই প্রায় বার শতাংশ বিলুপ্ত হবার আশংকা দেখা দিয়েছে। এভাবে চলতে থাকলে আগামী প্রজন্ম শুধু নয় নিশ্চিত বিপর্যয়ের মুখে পড়বে বর্তমান বিশ্ব। সুতরাং পরিরেশের ভারসাম্য কিভাবে টিকিয়ে রাখা যায় সেই ব্যাপারে তৎপর হতে হবে সবার।
পরিযায়ী পাখিদের সব প্রতিকূলতাকে দূরে ঠেলে বিশ্বে সচেতনতা বৃদ্ধির লক্ষে ২০০৬ সাল থেকে বিশ্ব পরিযায়ী পাখি দিবস পালন করা শুরু হয়। সেজন্য প্রতি বছর ১০ ও ১১ মে দিন দুইটিকে নির্ধারণ করা হয়েছে। আসুন আমরা সবাই মিলে নিজেদের দেশকে নিজেদের মত করে সাজিয়ে তুলি। প্রকৃতি প্রেমী পাখিদেরকে নিধন না করে মুক্তভাবে বিচরণ করতে দেই প্রকৃতির কোলে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।