Inqilab Logo

রোববার ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ০৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২১ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

প্রতিবছর সাড়ে ৭ হাজার শিশু রক্তের মারাত্মক রোগটি নিয়ে জন্মগ্রহণ করে

প্রকাশের সময় : ৮ মে, ২০১৬, ১২:০০ এএম

স্টাফ রিপোর্টার : বিশ্ব থ্যালাসেমিয়া দিবস আজ। দিবসটির এবারের প্রতিপাদ্য ‘এক্সেস টু সেফ এন্ড ইফেকটিভ ড্রাগস ইন থ্যালাসেমিয়া’। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার উদ্যোগে প্রতিবছর বিশ্বব্যাপী বিভিন্ন কার্যক্রম পালন করা হয়। অন্যান্য বছরের মতো এবারো বিভিন্ন স্বেচ্ছাসেবী, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠনের আয়োজনে বিভিন্ন কার্যক্রম পালন করা হচ্ছে। আজ সকালে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্যোগে র‌্যালি এবং বহির্বিভাগ-১নং ভবনের ৪০৩ ও ৪০৪ নং কক্ষে থ্যালাসেমিয়া সেন্টার উদ্বোধন করা হবে। 

থ্যালাসেমিয়া একটি বংশগত রক্ত রোগ। থ্যালাসেমিয়া শব্দের উৎপত্তি গ্রিক শব্দ থ্যালাসা থেকে এসেছে; যার অর্থ সমুদ্র। ভূমধ্যসাগর সন্নিহিত অঞ্চলে এ রোগের প্রাদুর্ভাব বেশি। এজন্য একে থ্যালাসেমিয়া বলে। এ রোগে রক্তে অক্সিজেন পরিবহনকারী হিমোগেøাবিন কণার উৎপাদনে ত্রæটি হয়। অর্থাৎ ত্রæটিপূর্ণ হিমোগেøাবিন জিনের কারণে এ রোগ হয়।
এক জরিপে দেখা গেছে, বিশ্বে থ্যালাসেমিয়ার বাহক সংখ্যা প্রায় ২৫০ মিলিয়ন। বাংলাদেশে এই রোগের বাহক বা আক্রান্ত রোগীর সঠিক পরিসংখ্যান না থাকলেও বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মতে, বাংলাদেশে প্রায় ১০-১২ ভাগ মানুষই থ্যালাসেমিয়া রোগের বাহক। এক কোটির অধিক মানুষ এ রোগের বাহক। বর্তমানে প্রায় ৩০ হাজারেরও বেশি শিশু এই রোগে ভুগছে এবং প্রতিবছর গড়ে প্রায় সাড়ে ৭ হাজার শিশু এই ঘাতক ব্যাধি নিয়ে জন্মগ্রহণ করে।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের হেমাটোলজি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ডা. মো. সালাহউদ্দীন শাহ্ বলেন, থ্যালাসেমিয়া দুই ধরনের হয় আলফা ও বিটা থ্যালাসেমিয়া। আলফা’র উপসর্গ মৃদু বা মাঝারি; অপরদিকে বিটা’র ক্ষেত্রে রোগের তীব্রতা বা প্রকোপ অনেক বেশি। এক-দুই বছরের শিশুর ক্ষেত্রে সঠিক চিকিৎসা না করলে এটি শিশুর মৃত্যুর কারণ হতে পারে।
তিনি বলেন, থ্যালাসেমিয়া ধারণকারী মানুষ সাধারণত রক্তে অক্সিজেন স্বল্পতা বা অ্যানিমিয়াতে ভুগে থাকেন। অ্যানিমিয়ার ফলে অবস্বাদগ্রস্ততা থেকে শুরু করে অঙ্গহানি ঘটতে পারে। বাবা অথবা মা কিংবা বাবা-মা উভয়েরই থ্যালাসেমিয়ার জীন থাকলে বংশানুক্রমে এটি সন্তানের মধ্যে ছড়ায়। এই রোগ কোনো ছোঁয়াচে নয়। জীনগত ত্রæটির কারণে এই রোগ হয়ে থাকে।
ডা. মো. সালাহউদ্দীন শাহ্ বলেন, থ্যালাসেমিয়া রোগীর শরীরে যে লাল রক্ত কণিকা অর্থাৎ রেড বøাড সেল (জইঈ) তৈরি হয়, সেগুলো ত্রæটিপূর্ণ হওয়ার কারণে নির্দিষ্ট সময়ের পূর্বেই ভেঙে যায়। এ কারণে শরীরে একদিকে হিমোগেøাবিন কমে যায়, অন্যদিকে বিলিরুবিনের এবং আয়রনের মাত্রা বেড়ে গিয়ে শরীর হলদেটে হয়ে যায় এবং অতিরিক্ত আয়রনের কারণে শরীরের বর্ণ হয়ে যায় তামাটে বা ধূসর। এ কারণে এদেরকে নিয়মিত রক্ত গ্রহণ করে বেঁচে থাকতে হয়।
ডা. মো. সালাহউদ্দীন শাহ্ এ রোগের কিছু লক্ষণের কথা বলেছেন- দুর্বলতা, অবসাদ অনুভব, অস্বস্তি, মুখ-মন্ডল ফ্যাকাশে হয়ে যাওয়া, প্লীহা বড় হয়ে যাওয়া, শ্বাসকষ্ট, গাঢ় রঙের প্রস্রাব হওয়া, ত্বক হলদে হয়ে যাওয়া (জন্ডিস), মুখের হাড়ের বিকৃতি, পেট বাইরের দিকে প্রসারিত হওয়া বা বৃদ্ধি পাওয়া, ধীরগতিতে শারীরিক বৃদ্ধি হৃৎপিÐের সমস্যা, অতিরিক্ত আয়রন, সংক্রমণ, অস্বাভাবিক অস্থি। এগুলো দেখা গেলে দ্রæত চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী রক্তের পরীক্ষা যেমন কমপ্লিট বøাড কাউন্ট এবং পেরিফেরাল বøাড ফিল্থ করতে হবে। হিমোগেøাবিনের মাত্রা কম থাকলে হিমোগেøাবিন ইলেক্ট্রোফোরেসিস করে থ্যালাসেমিয়া রোগ নির্ণয় সম্ভব। মৃদু থ্যালাসেমিয়ার ক্ষেত্রে লক্ষণ ও উপসর্গ খুবই অল্প থাকায় বøাড ট্রান্সফিউশন লাগে না। বিশেষ ক্ষেত্রে যেমন কোনো অপারেশন হলে বা প্রসাবের পর অথবা কোনো সংক্রমণ হলে প্রয়োজনবোধে রক্ত গ্রহণ করতে হয়। এই রোগের চিকিৎসা অনেক ব্যয়বহুল। এই রোগে আক্রান্ত রোগীকে মৃত্যুর আগ পর্যন্ত চিকিৎসাসেবা গ্রহণ করতে হয়। একমাত্র জনসচেতনতা বৃদ্ধির মাধ্যমেই এর প্রতিকার করা সম্ভব।
এদিকে গতকাল এক অনুষ্ঠানে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রসূতি ও স্ত্রীরোগ বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ডা. রেজাউল করিম কাজল বলেছেন, থ্যালাসেমিয়া সম্পর্কে সচেতনতা না থাকায় দিন দিন দেশে এ রোগে আক্রান্ত শিশুর সংখ্যা বাড়ছে। দেশের মোট জনসংখ্যার প্রায় ১০ ভাগ অর্থাৎ প্রায় দেড় কোটি পুরুষ-মহিলা নিজের অজান্তে থ্যালাসেমিয়া রোগের বাহক। ডা. কাজল বলেন, মা-বাবা এ রোগের বাহক হলে তাদের সন্তান থ্যালাসেমিয়া নিয়ে জন্মাতে পারে। যারা থ্যালাসেমিয়া রোগের বাহক তাদের কোনো উপসর্গ নেই। তাই তারা বুঝতে পারেন না। বাবা-মায়ের সামনেই ১০ থেকে ১৫ বছর বয়সের মধ্যে বেশিরভাগ থ্যালাসেমিয়া আক্রান্ত শিশুর জীবন প্রদীপ নিভে যাচ্ছে।
ডা. কাজল আরও বলেন, শুধু চিকিৎসার কথা বলে থ্যালাসেমিয়া রোগের বিস্তার রোধ সম্ভব নয়; থ্যলাসেমিয়াকে নিয়ন্ত্রণ করতে হলে সবাইকে সচেতন হতে হবে। মৃত্যু পরোয়ানা নিয়ে শিশুর জন্ম রোধ করতে হবে। বিয়ের আগে পাত্র-পাত্রী থ্যালাসেমিয়া রোগের বাহক কি-না তা পরীক্ষা করতে হবে উল্লেখ করে ডা. কাজল বলেন, পৃথিবীর অনেক দেশে বিয়ের আগে পাত্র-পাত্রীর থ্যালাসেমিয়া আছে কি-না তা পরীক্ষা বাধ্যতামূলক করে এ রোগ নিয়ন্ত্রণ করা গেছে।
গতকাল ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির (ডিআরইউ) সাগর-রুনি মিলনায়তনে বিশ্ব থ্যালাসেমিয়া দিবস উপলক্ষে এক সচেতনতামূলক সভা অনুষ্ঠিত হয়। ফ্যামিলি ডে কেয়ার ও ডিএনএ সল্যুশন লিমিটেড আয়োজিত সভায় ডা. রেজাউল করিম কাজল, ফ্যামিলি ডে কেয়ারের মহাসচিব শেখ রুহুল আমিন জয়, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং ও বায়োটেকনোলজি বিভাগের প্রফেসর ড. শরীফ আখতারুজ্জামান, ইন্টারভেনশনাল রেডিওলজিস্ট ডা. সায়মা আখতার চৌধুরী প্রমুখ বক্তব্য রাখেন।

 



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: প্রতিবছর সাড়ে ৭ হাজার শিশু রক্তের মারাত্মক রোগটি নিয়ে জন্মগ্রহণ করে
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ