বিএনপির মানববন্ধন আজ, পাল্টা কর্মসূচি আওয়ামী লীগ
সারা দেশের মহানগর ও জেলা পর্যায়ে আজ মানববন্ধন করবে বিএনপি ও তার মিত্ররা। আর এ
চট্টগ্রামের ফটিকছড়িতে বিএনপির প্রার্থী কর্নেল (অব.) আজিম উল্লাহ বাহার ও হাটহাজারীতে ২০ দলের শরিক কল্যাণ পার্টির চেয়ারম্যান মেজর জেনারেল (অব.) সৈয়দ মুহাম্মদ ইবরাহীম বীর প্রতীকসহ ধানের শীষের তিন প্রার্থীর ওপর হামলা হয়েছে। এসব হামলায় দুই প্রার্থীসহ অন্তত ৩০ জন আহত হয়েছে। গতকাল (রোববার) দুপুরে ফটিকছড়িতে বিএনপির প্রচার বহরে হামলায় প্রার্থী ছাড়াও সাবেক বিচারপতি ফয়সল মাহমুদ ফয়জীসহ অন্তত ২৫ জন আহত হয়েছে। বিকেলে চট্টগ্রাম-৫ (হাটহাজারী) আসনের প্রার্থী জেনারেল ইবরাহীমের গাড়িবহরে সন্ত্রাসী হামলায় তিনিসহ ৫ জন আহত হন। চট্টগ্রাম-৮ (চান্দগাঁও-বোয়ালখালী) আসনের প্রার্থী আবু সুফিয়ানের প্রধান নির্বাচনী কার্যালয়ে হামলা চালিয়ে ব্যাপক ভাঙচুর করা হয়েছে। এসব হামলার জন্য সরকারি দলের লোকজনকে দায়ী করেছেন প্রার্থীরা। অন্যদিকে পুলিশি ধরপাকড় এবং নির্বাচনী প্রচারে বাধা ও হামলার অভিযোগে থানার ওসি প্রত্যাহারের দাবি জানিয়েছেন চট্টগ্রাম-১২ (পটিয়া) আসনের প্রার্থী এনামুল হক এনাম। চট্টগ্রাম প্রেসক্লাবে পৃথক সংবাদ সম্মেলনে প্রার্থীরা তাদের ওপর হামলা ও পুলিশি ধরপাকড়ের বর্ণনা দেন।
ফটিকছড়ি সংবাদদাতা জানান, বিএনপির প্রার্থীর নির্বাচনী প্রচারণাকালে ধানের শীষ প্রতীকের প্রার্থী কর্ণেল (অব:) আজিম উল্লাহ বাহার এবং বিএনপির কেন্দ্রীয় সদস্য ও সাবেক বিচারপতি ফয়জীর উপর হামলা করেছে প্রতিপক্ষ নৌকা প্রতীকের সমর্থকরা। এতে অন্তত ২৫ নেতা-কর্মী আহত হয়েছে। গতকাল দুপুরে দক্ষিণ ফটিকছড়ির মুহাম্মদ তকিরহাট বাজারে এ হামলার ঘটনা ঘটে। অর্ধ শতাধিক নেতা-কর্মী নিয়ে দক্ষিণ ফটিকছড়িতে গণসংযোগে বের হন তিনি। ১০-১৫জন নৌকা সমর্থক কর্মী কিরিচ-লাঠি নিয়ে অকথ্য ভাষায় গালাগালি করে হামলে পড়ে এবং লাঠির আঘাতে প্রার্থীর পেছনের দিকে মাথা ফেটে যায়। এ সময় এলোপাতাড়ী আঘাতে সাবেক বিচারপতি ফয়সল মাহমুদ ফয়জীর বাম হাত পিটিয়ে ভেঙ্গে দেয় দুবৃত্তরা। উপর্যুপরি আঘাতে ছাত্রদল নেতা সাইফুল ইসলাম টিটুর মাথা ফেটে যায় এবং সাবেক চেয়ারম্যান শহিদুল আজমসহ অন্তত ২৫ নেতা-কর্মী গুরুতর আহত হয়। নির্বাহী ম্যাজিষ্ট্রেট মোহাম্মদ জানে আলমসহ বিজিবি-পুলিশ ফোর্স ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে এবং বিএনপি প্রার্থী আজিম উল্লাহ বাহারসহ আহতদের হাসপাতালে দেখতে যান। আমার প্রতিপক্ষ প্রার্থী তার সন্ত্রাসী বাহিনী দিয়ে এ আক্রমণ করেছে। আমরা শান্তিপূর্ণভাবে গণসংযোগ করছিলাম। ধানের শীষের শ্লোগান দিয়ে লিফলেট বিতরণ করা কালে নৌকার সন্ত্রাসীরা আমার উপর আক্রমণ করে।
এ ব্যাপারে নৌকার প্রার্থী সৈয়দ নজিবুল বশর মাইজভান্ডারী বলেন, ওনি অসত্য কথা বলেছেন। ওনি আমার প্রতিদ্বন্দ্বি সত্য; প্রতিপক্ষ নন। ওনার কাছ থেকে এ ধরণের মিথ্যা কথা আশা করি না। এ ঘটনার পর পুরো ফটিকছড়ি জুড়ে উত্তেজনা বিরাজ করছে। ধানের শীষের সমর্থকরা বিকেলে নাজিরহাট বাজারে তাৎক্ষণিক প্রতিবাদ মিছিল বের করে এবং ঝংকার মোড়ে নৌকার একটি মাইকিং সিএনজি ভাঙচুর করে। এ সময় পুলিশ ৬-৭ জন বিএনপি কর্মীকে আটক করেছে। এর প্রতিবাদে সন্ধ্যায় নজিবুল বশরের সমর্থকরাও নাজিরহাট বাজারে পাল্টা লাঠি মিছিল বের করে।
হাটহাজারী সংবাদদাতা জানান, বিকেল সাড়ে ৩টায় চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ১ নম্বর গেট এলাকায় হামলার শিকার হন জেনারেল ইবরাহীম। হামলাকারীদের ইট-পাটকেলের আঘাতে গুরুতর আহত হন চিকনদণ্ডী ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি মোঃ মহসিন। হামলায় জেনারেল ইবরাহীম ও তার গাড়ি চালক দীপকও আঘাত পান। ভাঙচুর হয় কয়েকটি গাড়ি। গণসংযোগকালে তার ওপর অতর্কিত এ হামলা হয়। হামলার বর্ণনা দিয়ে জেনারেল (অব.) সৈয়দ মুহাম্মদ ইবরাহিম জানান, ফতেপুর ইউনিয়নে প্রচারণা চালানোর সময় চবির ১ নম্বর গেট এলাকায় হামলা হয়। স্থানীয় চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট শামীমের বড় ভাই মোহাম্মদ সেলিম ও এ আসনে মহাজোট প্রার্থী জাতীয় পার্টির আনিসুল ইসলাম মাহমুদের পক্ষের ছাত্রলীগ নেতা শাহ আলমের নেতৃত্বে গাড়ি বহরে হামলার এ ঘটনা ঘটে বলে জানান তিনি।
সুফিয়ানের প্রধান কার্যালয়ে হামলা
শনিবার রাতে চট্টগ্রাম-৮ (বোয়ালখালী) আসনের প্রার্থী নগর বিএনপির ভারপ্রাপ্ত সভাপতি আবু সুফিয়ানের প্রধান নির্বাচনী কার্যালয়ে হামলা হয়। চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাবে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি অভিযোগ করেন, হামলার সময় সন্ত্রাসীরা ব্যাপক ককটেল বিস্ফোরণ ঘটায়। ১০টি মোটর সাইকেল ও বেশ কয়েকটি গাড়ি ভাঙচুর হয়। তৃতীয়বারের মতো তার বাড়ি এবং প্রধান কার্যালয়ে হামলা হলেও পুলিশ কাউকে গ্রেফতার করেনি। তিনি নিজে থানায় হাজির হয়ে এজাহার দিয়েছেন এবং নিজের নিরাপত্তায় সাধারণ ডায়েরী করেছেন। পুলিশ হামলাকারীদের গ্রেফতারের বদলে উল্টো তার দুই গাড়ি চালক ও এক ব্যক্তিগত কর্মচারীকে ধরে জাল টাকার মামলায় আসামি করে দিয়েছেন বলে অভিযোগ করেন তিনি।
পটিয়ার ওসিকে প্রত্যাহারের দাবি
চট্টগ্রাম-১২ (পটিয়া) আসনের প্রার্থী এনামুল হক এনাম মিথ্যা মামলা দিয়ে হয়রানি ও নিরপেক্ষ আচরণ না করায় পটিয়া থানার ওসি শেখ মো. নেয়ামত উল্লাহর প্রত্যাহার দাবি করেছেন। চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাবে সংবাদ সম্মেলনে তিনি অভিযোগ করেন, তার নির্বাচনী এলাকায় এ পর্যন্ত ৬০ জন নেতাকর্মীকে পুলিশ বিনা কারণে গ্রেফতার করেছে। নেমপ্লেট ছাড়া পুলিশের পোশাক পড়া সদস্যরা গিয়ে নেতাকর্মীদের হয়রানি করছে। গণসংযোগকালে সরকারদলীয় সমর্থকরা হামলা করছে। তিনি বলেন, পটিয়া থানা পুলিশের কাছে এসব অভিযোগ দিলেও তারা কোনো ধরনের ব্যবস্থা নিচ্ছে না। তাই ওসি নেয়ামত উল্লাহকে প্রত্যাহার করে নিতে হবে। ওসি নেয়ামত উল্লাহ বলেন, আমার থানায় সিসিটিভি আছে। এনাম সাহেব বা তার কোনো নেতাকর্মী অভিযোগ নিয়ে আসেননি।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।