পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে ইশতেহার ঘোষণা করতে যাচ্ছে বিএনপি। আজ সকাল ১১টায় রাজধানীর গুলশানে লেকশোর হোটেলে নির্বাচনী ইশতেহার তুলে ধরবেন দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। এসময় দলের স্থায়ী কমিটির সদস্যরাও উপস্থিত থাকবেন। এর আগে গতকাল সোমবার রাজধানীর পূর্বাণী হোটেলে ৩৫ দফা ইশতেহার তুলে ধরে নির্বাচনে বিএনপির অন্যতম জোট জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট। এর একদিন পরই বিএনপি তাদের দলীয় ইশতেহার ঘোষণা করতে যাচ্ছে। দীর্ঘ ১০ বছর পর অংশগ্রহণমূলক এই নির্বাচনে প্রায় আড়াই কোটি নতুন ভোটার যুক্ত হয়েছে। রয়েছে মোট ভোটারের অর্ধেকের বেশি নারী ভোটার। ফলে এসব ভোটারকে আকৃষ্ট করতে থাকছে পৃথক ঘোষণা।
বিএনপি সূত্রে জানা যায়, এবার বিএনপির নির্বাচনী ইশতেহার তৈরি করা হয়েছে দলের চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার ঘোষিত ভিশন ২০৩০ ভিত্তি করে। তরুণ প্রজন্মের চাহিদাকে ধারণ করে বিএনপির ইশতেহারে এবার বিশেষ গুরুত্ব পাচ্ছে কোটা সংস্কার, ভ্যাটমুক্ত শিক্ষা ও নিরাপদ সড়কের ব্যবস্থা। থাকছে বেকারদের জন্য বেকার ভাতা। নারীদের জন্য বিনামূল্যে শিক্ষা, প্রশিক্ষণ, যৌতুক মুক্ত সমাজ। এছাড়া প্রতিহিংসামূলক রাজনীতির অবসান ঘটিয়ে দুই মেয়াদে প্রধানমন্ত্রিত্বের ক্ষমতায়নসহ প্রজাতন্ত্রের মালিক জনগণ এমন বিষয়কে প্রাধান্য দিচ্ছে দলটি। ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনসহ সকল প্রকার কালাকানুন বাতিল, ব্যাংক লুট, শেয়ারবাজার লুটসহ সকল প্রকার দুর্নীতি-অনিয়মের ব্যবস্থা গ্রহণ করাও ঘোষণা থাকছে।
জানা গেছে, খসড়া অনুযায়ী এবার ইশতেহারের মূল স্লোগান হবে ‘এগিয়ে যাব একসাথে, ভোট দেব ধানের শীষে’। প্রজাতন্ত্রের সব ক্ষমতার মালিক জনগণ-জাতীয় ঐক্য সৃষ্টি করে প্রতিহিংসা বাদ দিয়ে সরকার পরিচালনার অঙ্গীকার এটাই হবে ইশতেহারের মূলনীতি।
বিএনপির আরও গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গীকারের মধ্যে রয়েছে বর্তমান সরকারের আমলে নেওয়া উন্নয়ন প্রকল্পগুলো বন্ধ করা হবে না। তবে এসব প্রকল্প বাস্তবায়নে কোনো দুর্নীতি হয়ে থাকলে তদন্ত করে বিচার হবে। ক্ষমতায় গেলে নিরপেক্ষ নির্বাচন অনুষ্ঠানে স্থায়ী নির্বাচনী ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা করতে নির্বাচনকালীন সরকারের একটি বিধান তৈরি করে মানুষের ভোটের অধিকার নিশ্চিত করা। এছাড়া তরুণদের আকৃষ্ট করতে শিক্ষায় কোনো ভ্যাট রাখবে না, বেকার ভাতা চালু করা, কর্মভিত্তিক শিক্ষা চালু, প্রাথমিক ও অষ্টম শ্রেণির পরীক্ষা তুলে দেয়া, আন্দোলনকারীদের দাবির ভিত্তিতে কোটা পদ্ধতির সংস্কার, মেধা ও যোগ্যতার ভিত্তিতে চাকরির সুযোগ, নিরাপদ সড়কের ব্যবস্থা গ্রহণ করা।
যা থাকতে পারে ইশতেহারে: বিএনপি সূত্রে জানা যায়, বেগম খালেদা জিয়া ২০১৬ সালের মার্চ মাসে যে ভিশন ২০৩০ ঘোষণা করেছিলেন তার ভিত্তিতেই নির্বাচনী ইশতেহার তৈরি করা হয়েছে। এই ইশতেহারে আরও থাকতে পারে- সকল ধর্ম-বিশ্বাসের মানুষ, পাহাড় ও সমতলসহ সকল অঞ্চলের মানুষ এবং প্রতিটি নৃ-গোষ্ঠীর মানুষের চিন্তা-চেতনা ও আশা-আকাক্সক্ষাকে ধারণ করে একটি সমৃদ্ধ সমাজ গড়ে তোলা। জাতীয় স্বার্থ সমুন্নত রেখে সকলের মত প্রকাশের স্বাধীনতা ও নাগরিক অধিকার সুরক্ষিত করা। জন-আকাক্সক্ষাকে মর্যাদা দিয়ে, তাদেরকে সম্পৃক্ত করে এবং সুধীসমাজ, গণমাধ্যম, জনমত জরিপ, জনগণের দৈনন্দিন চাওয়া-পাওয়া, বিশেষজ্ঞ মতামত ও সবধরনের অভিজ্ঞানের নির্যাস গ্রহণ করে দেশ পরিচালনা করা। মুক্তিযুদ্ধের লক্ষ্য অনুযায়ি রাষ্ট্রের মালিকানা জনগণের হাতে ফিরিয়ে দেয়া। সর্বক্ষেত্রে সুনীতি, সুশাসন এবং সু-সরকার প্রতিষ্ঠা করা। গণতান্ত্রিক ও অর্থনৈতিক সুশাসনের জন্য নির্বাচন কমিশন, দুর্নীতি দমন কমিশন, পাবলিক সার্ভিস কমিশন, মানবাধিকার কমিশন, আইন কমিশন ও বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের মতো সাংবিধানিক ও আধা-সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানগুলোকে দুর্নীতি, অনিয়ম ও দলীয়করণমুক্ত করা হবে। সততা, দক্ষতা, দেশপ্রেম ও বিচার ক্ষমতাকে গুরুত্ব দিয়ে প্রশাসন ও পুলিশসহ রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানসমূহের কার্যকারিতা নিশ্চিত করা হবে। সততা ও সৃজনশীলতা হবে সামরিক-বেসামরিক প্রশাসনে যোগ্যতার মাপকাঠি। আইনানুগভাবে বিচার বিভাগ, প্রশাসন, পুলিশ ও সামরিক বাহিনীর কর্তব্য পালনের স্বাধীনতা নিশ্চিত করতে দলীয় ও অবাঞ্ছিত সব হস্তক্ষেপ বন্ধ করা হবে। ডিজিটাল সিকিউরিটি অ্যাক্টসহ (ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন) সকল কালাকানুন বাতিল করা হবে। বিচারবহির্ভ‚ত হত্যাকান্ড এবং আটক অবস্থায় (রিমান্ডের নামে) দৈহিক-মানসিক অমানবিক নির্যাতনের অবসান ঘটানো হবে। আটকাবস্থায় মৃত্যুর প্রতিটি ঘটনার জন্য তদন্তের ব্যবস্থা থাকবে। উচ্চ আদালতে বিচারক নিয়োগের যোগ্যতা ও পদ্ধতি সংক্রান্ত আইন প্রণয়ন করবে বিএনপি। প্রধানমন্ত্রীর একক নির্বাহী ক্ষমতা সংসদীয় সরকারের আবরণে একটি স্বৈরাচারী একনায়কতান্ত্রিক শাসনের জন্ম দিয়েছে। এই অবস্থার অবসানকল্পে প্রজাতন্ত্রের নির্বাহী ক্ষমতার ক্ষেত্রে ভারসাম্য আনা হবে। জাতীয় সংসদের উচ্চকক্ষ প্রতিষ্ঠা করা হবে। সংসদকে দ্বি-কক্ষ বিশিষ্ট করার লক্ষ্যে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেয়া হবে। ক্ষমতার বিকেন্দ্রীকরণ, স্থানীয় পর্যায়ে সুশাসন, দক্ষ সেবা এবং সামাজিক ও রাজনৈতিক ভারসাম্য প্রতিষ্ঠা, সরকারি বরাদ্দের অপ্রতুলতা এবং বৈষম্য নিরসন, দুর্নীতির সাথে আপোষ না করা, স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করতে ‘ন্যায়পাল’-এর পদ ও কার্যালয় সক্রিয় করা।
গণতন্ত্রের জন্য অপরিহার্য অনেক সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠান সা¤প্রতিক বছরগুলোতে রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠান হিসেবে দায়িত্ব পালনের পরিবর্তে ক্ষমতাসীন দলের অঙ্গ-প্রতিষ্ঠানে পরিণত হয়েছে। এসব প্রতিষ্ঠানের কার্যকারিতা ও বিশ্বাসযোগ্যতা নিশ্চিত করা হবে। দেশের আর্থিক প্রতিষ্ঠানসমূহের শৃঙ্খলা নিশ্চিত করতে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ক্ষমতা ও তদারকি নিবিড় ও শক্তিশালী করা হবে। সংকীর্ণ দলীয় মতাদর্শের ভিত্তিতে নয়, যোগ্য, সৎ ও দক্ষ ব্যক্তিদের বেসরকারি ও রাষ্ট্রায়ত্ত¡ ব্যাংকসমূহ পরিচালনা বোর্ডে নিয়োগ দেয়া হবে। ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান পরিচালনায় রাজনৈতিক হস্তক্ষেপ বন্ধ করা হবে।
ভবিষ্যতে সন্ত্রাস জঙ্গিবাদ দমনে সেই কঠোরতা ও আন্তর্জাতিক সহযোগিতা অব্যাহত থাকবে। বাংলাদেশের মাটি থেকে অপর কোনো রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে সন্ত্রাসী ও বিচ্ছিন্নতাবাদী তৎপরতাও মেনে নেবে না। শিক্ষা, প্রযুক্তির প্রসার ও মানবসম্পদ উন্নয়নে জোর দেয়া। মাদরাসা শিক্ষাকে আরো আধুনিক ও যুগোপযোগী করা। কারিকুলামে পেশাভিত্তিক ও বৃত্তিমূলক বিভিন্ন বিষয়কে অন্তর্ভুক্ত করা হবে। মেয়েদের জন্য স্নাতক এবং ছেলেদের জন্য দশম শ্রেণী পর্যন্ত অবৈতনিক শিক্ষা নিশ্চিত করা হবে। মেয়েদের জন্য শিক্ষা উপবৃত্তি কার্যক্রম স¤প্রসারিত করা হবে। তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বা আইসিটি-র ক্ষেত্রে বিশ্বের সঙ্গে বাংলাদেশকে তাল মিলিয়ে চলায় সক্ষম করার লক্ষ্যে এবং প্রযুক্তি ও কৃৎকৌশলের বিষয়ে মানব সম্পদের উৎকর্ষ সাধন এবং অবকাঠামোগত সুবিধা স¤প্রসারণ করা হবে।
সুষম ও নিরাপদ খাদ্য ও পুষ্টি নিশ্চিত করা, ভর্তুকি দিয়ে কৃষি উপকরণ সুলভ ও সহজলভ্য করা, সার্বজনীন স্বাস্থ্যসেবা চালু করা, বাংলাদেশের স্বাধীনতা, সার্বভৌমত্ব এবং রাষ্ট্রীয় মর্যাদা অক্ষুন্ন রাখা, প্রতিবেশী দেশসমূহের সঙ্গে বন্ধুত্ব ও আন্তরিকতাপূর্ণ সম্পর্ক গড়ে তোলা, যুব, নারী ও শিশুদের কল্যাণ করা, পরিবেশ দূষণ রোধে জনসচেনতা বৃদ্ধি, জলবায়ু পরিবর্তনজনিত কারণে সম্ভাব্য ক্ষতি মোকাবেলায় আন্তর্জাতিক সহযোগিতা কাঠামো গড়ে তোলা, পানি সম্পদের ন্যায্য প্রাপ্তি নিশ্চিতকরণ, কাক্সিক্ষত ডবল ডিজিট প্রবৃদ্ধির জন্য যথোপযুক্ত পরিমাণ বিদ্যুৎ উৎপাদন, রেল ও নৌপথকে অধিকতর গুরুত্ব দেয়া, নগরায়নের চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করা, সকল নাগরিকের বাসস্থানের অধিকার নিশ্চিত করা, কর্মসংস্থান সৃষ্টি, তৈরী পোশাক শিল্পের বাধাগুলো দূর করা, মাদকের মারণ ছোবল থেকে কিশোর ও যুব সমাজকে রক্ষা করা, বাংলাদেশী জাতীয়তাবাদের ভিত্তিতে রাজনীতিক ও সামাজিক বিভাজনের অবসান ঘটানো।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।