পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
হামলা-গ্রেফতার চলতে থাকলে ভয়াবহ অবস্থার দিকে মোড় নিতে পারে
জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের শীর্ষ নেতা ড. কামাল হোসেন বলেছেন, নির্বাচনে নজীরবিহীন গ্রেপ্তার ও বিরোধীদলের নেতাকর্মীদের উপর হামলা করা হচ্ছে। দেশে এমন হামলা-গ্রেফতার চলতে থাকলে একটি ভয়াবহ অবস্থার দিকে মোড় নিতে পারে। তখন আমাদের কারো কিছু করার থাকবে না। এ ধরনের পরিস্থিতি হোক তা আমরা চাই না। তিনি বলেন, সারাদেশে পরিবর্তনের পক্ষে গণজোয়ার সৃষ্টি হয়েছে। আগামী ৩০ ডিসেম্বর দেশে এক গণঅভ্যুত্থান ঘটবে। ভোট বিপ্লবের মাধ্যমে এই স্বৈরাচারী শাসকের পরিবর্তন হবে। গতকাল রাজধানীর হোটেল পুর্বাণীতে ঐক্যফ্রন্টের নির্বাচনী ইশতেহার ঘোষণা অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্যে ড. কামাল হোসেন এসব কথা বলেন।
ড. কামাল বলেন, সারাদেশে নেতাকর্মীদের ব্যাপকভাবে গ্রেফতার চলছে। গত কয়েক দিনে গ্রেফতার ১৯০০ ছাড়িয়েছে। স্বাধীনতার ৪৭ বছরের মধ্যে অনেক নির্বাচন হয়েছে। কিন্তু এতো খারাপ অবস্থা কখনো ছিল না। এমন দৃশ্য আমি দেখিনি। এবার নির্বাচনে প্রার্থীদের উপর নজীরবিহীন আক্রমণ হয়েছে। এটা একটা লজ্জার বিষয়। এটা অবশ্যই জাতীয় লজ্জার বিষয়।
পুলিশের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, পুলিশ আমাদের গর্বের বাহিনী। মুক্তিযুদ্ধের সময় তারা অসাধারণ ভ’মিকা রেখেছে। অথচ আজকে তারা যে ভাবে বিরোধীদলের উপর অন্যায়ভাবে চড়াও হচ্ছে এটা খুবই দু:খজনক। তাদেরকে জিজ্ঞেস করলে বলেন, এটা উপরের হুকুম। আমাদের করার কিছু নেই। ড, কামাল বলেন, আপনারা বেআইনী হুকুম শুনবেন না। বেআইনি হকুম কোনদিন হুকুম হতে পারে না। বেআইনী কাজ করা আইনত অপরাধ। তিনি বলেন, আইজি সাহেব আপনার একটা সুনাম আছে। সে সুনাম নষ্ট হতে দিয়েন না। এলোপাথাড়ি গ্রেফতার-হামলা থেকে বিরত থাকুন। জনগণের পাশে থাকুন।
ড. কামাল হোসেন বলেন, ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির প্রহসনের নির্বাচনের মাধ্যমে দেশের জনগণ তাদের মালিকানা হারিয়েছে। আর জনগণ ক্ষমতা হারালে কায়েমী স্বার্থবাদী গোষ্ঠী ক্ষমতা দখল করে। দেশে দুর্নীতি এখন সীমাহীন। দুর্নীতির হিসাব দেয়া এখন কঠিন। হাজার হাজার নয় হাজার হাজার কোটি টাকা দুর্নীতি হচ্ছে। ব্যাংকগুলো আজ দেওলিয়ার পর্যায়ে পৌঁছেছে। প্রশাসন ও বিচার ব্যবস্থা আজ বিপর্যস্ত। এ অবস্থা থেকে দেশকে বাঁচাতে হলে জনগণকে ঐক্যবদ্ধ হয়ে রুখে দাঁড়াতে হবে। নিজেদের মালিকানা প্রতিষ্ঠিত করতে হবে।
তিনি বলেন, আজ জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের পক্ষে গণজোয়ার সৃষ্টি হয়েছে। ৩০ ডিসেম্বর ভোট বিপ্লব হবে। জনগণকে উদ্দেশ্য করে ড. কামাল বলেন, নির্ভয়ে সোচ্চার হোন। ঐক্যর বিজয় অবশ্যই হবে ইনশাআল্লাহ।
ড. কামাল হোসেন বলেন, ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি দেশে এক প্রহসনের নির্বাচন হয়েছে। এ নির্বাচনের বৈধতা নিয়ে আদালতে এমিকাস কিউরি হিসেবে আমাকে ডাকা হয়েছিল। সেখানে সরকারের পক্ষ থেকে বলা হয়েছিল, পরিস্থিতি মোকাবেলার জন্য তারা ৫ জানুয়ারির নির্বাচন করেছে। দ্রæত সব দলকে নিয়ে তারা আরেকটি নির্বাচন দেবে। কিন্তু সেই দ্রæত শব্দটির অর্থ এতদিনে বুঝতে পারলাম না। দ্রæত শব্দটা ডিকশনারিতে নতুন করে ঢুকানো দরকার যে দ্রæত শব্দ বলতে কত দ্রæত বোঝানো হয়। ৫ বছর?
তিনি বলেন, ২০১৪ সাল থেকে সরকার দিচ্ছি দিচ্ছি বলে পাঁচ বছর কাটিয়েছে। এই সরকারকে অভিনয়ের জন্য অস্কার দেয়া উচিত। কারণ তারা এই দিচ্ছি এই দিচ্ছি অভিনয় করে পাঁচ বছর কাটিয়ে দিয়েছে। ২০১৪ সালের নির্বাচনের মাধ্যমে জনগণ রাষ্ট্রের মালিকানা হারিয়েছে অভিযোগ করে তিনি বলেন, জনগণকে হাড়ে হাড়ে এর মাশুল দিতে হচ্ছে। এই বছরগুলোতে অর্থনীতি নানাভাবে বাধাগ্রস্ত হয়েছে। এ ছাড়া এই সরকারের আমলে সীমাহীন দুর্নীতি হয়েছে। হাজার হাজার কোটি টাকার দুর্নীতি। ব্যাংকের কথাতো বলবোই না, তাহলে রাষ্ট্রের ওপর মানুষ আস্থা হারাবে।
তিনি বলেন, সংলাপের শেষ দিন আমি প্রধানমন্ত্রীর কাছ থেকে একটি আশ্বাস পেয়েছিলাম যে আর কোন গ্রেফতার হবে না। আমাদের কোন দাবি মানা না হোক গ্রেফতার বন্ধ হবে এই আশায় আশান্বিত হয়ে ছিলাম। তবে এরপর থেকে শুধু গ্রেফতার, গ্রেফতার আর গ্রেফতার চলছে। গ্রেফতার কোনোভাবেই বন্ধ হচ্ছে না। তফসিল ঘোষণার পর থেকে এ পর্যন্ত ১৯০০ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। গ্রেফতারকৃতদের নাম ও স্থানের তালিকা আমাদের কাছে রয়েছে।
তিনি বলেন, আমি পুলিশ বাহিনীকে অনুরোধ করি, আবেদন করি, তাদের যেকোনোভাবে বোঝানোর চেষ্টা করি, এগুলো আপনারা করবেন না। পুলিশ একাডেমিতে বক্তব্যে আমি অনেকবার বলেছি এখনও বলছি আপনারা কোনো বেআইনি হুকুম মানবেন না। বেআইনি আদেশ মানা অপরাধ। পুলিশ বাহিনীকে এলোপাথারি গ্রেফতার করা থেকে সরে আসতে হবে, বিশেষ করে নির্বাচনের ১২-১৩ দিন আগে। সরকারের উচিৎ জনগণ যেভাবে দেশে পরিবর্তন আনতে চায় সেভাবে হতে দেয়া। তা না হলে আমি সতর্ক করে দিতে চাই, দেশের অবস্থা ভয়াবহের দিকে মোড় নিতে পারে যা কারোরই কাম্য নয়।
তিনি বলেন, শিক্ষার্থীদের নিরাপদ সড়ক আন্দোলনের মতো আমরাও বলতে চাই এই রাষ্ট্রের মেরামত প্রয়োজন। আমি চাই ৩০ ডিসেম্বর আপনারা দলে দলে জনে জনে ভোটকেন্দ্রে যাবেন ভোট দেবেন অনিয়ম রুখবেন।
ড.কামালের স্বাগত বক্তব্যের পর ইশতেহার পাঠ করেন নাগরিক ঐক্যের আহŸায়ক মাহমুদুর রহমান মান্না। অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন, জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের মুখপাত্র ও বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, জেএসডির সভাপতি আ স ম আবদুর রব, কৃষক শ্রমিক জনতা লীগের সভাপতি বঙ্গবীর আবদুল কাদের সিদ্দিকী, গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী, গণফোরামের কার্যকরী সভাপতি এডভোকেট সুব্রত চৌধুরী, গণফোরামের সাধারণ সম্পাদক মোস্তফা মহসিন মন্টু, গণফোরাম নেতা রেজা কিবরিয়া, জগলুল হায়দার আফ্রিক, জেএসডির নেতা শহিদ উদ্দিন মাহমুদ স্বপন।
এছাড়াও উপস্থিত ছিলেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপচার্য এমাজ উদ্দিন আহম্মেদ, অধ্যাপক মাহাবুব উল্লাহ, চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা সুকুমল বড়ুয়া, সাংবাদিক মাহফুজ উল্লাহ, বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান আবদুল আউয়াল মিন্টু, ডা. এজেড এম জাহিদ হোসেন, যুগ্ম মহাসচিব সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল প্রমুখ।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।