Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

আপনারা কেন আমাদের প্রতিপক্ষ হচ্ছেন? রিটার্নিং কর্মকর্তাদের আমীর খসরু

চট্টগ্রাম ব্যুরো | প্রকাশের সময় : ১৮ ডিসেম্বর, ২০১৮, ১২:০৩ এএম

‘আপনারা কেন আমাদের প্রতিপক্ষ হচ্ছেন? আমরা তো আপনাদের বিশ্বাস করি। আপনারা কেন রাজনৈতিক দলের পক্ষ নেবেন? দয়া করে গ্রেফতার অভিযানটা বন্ধ করুন।’ রিটার্নিং কর্মকর্তার উদ্দেশে এভাবেই নির্বাচনের সুষ্ঠু পরিবেশ নিশ্চিত করার দাবি করেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ও চট্টগ্রাম-১১ (বন্দর-পতেঙ্গা) আসনে ধানের শীষের প্রার্থী আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী। জবাবে বিভাগীয় কমিশনার আবদুল মান্নান বলেন, ‘আমরা কারও পক্ষ বা প্রতিপক্ষ না। সাংবিধানিক দায়িত্বটা সঠিকভাবে পালন করতে চাই।’ গতকাল (সোমবার) চট্টগ্রাম সার্কিট হাউসে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে চট্টগ্রামের ১৬টি আসনের প্রার্থীদের সাথে মতবিনিময় সভায় নৌকা ও ধানের শীষের প্রার্থীদের পাল্টাপাল্টি অভিযোগের মধ্যে উৎসবমুখর পরিবেশে স্বচ্ছ ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন পরিচালনার প্রতিশ্রæতি দেন রিটার্নিং কর্মকর্তাসহ প্রশাসন ও পুলিশের কর্মকর্তারা। বিভাগীয় কমিশনারের সাথে মতবিনিময় করেন মহানগর ও মহানগর সংলগ্ন ছয়টি আসনের প্রার্থীরা। এরপর জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ ইলিয়াস হোসেনের সাথে মতবিনিময় করেন জেলার ১০টি আসনের প্রার্থীরা। মতবিনিময় সভায় রিটার্নিং কর্মকর্তা ছাড়াও চট্টগ্রাম রেঞ্জের ডিআইজি বিএনপির কমিশনার সিএমপির কর্মকর্তা ও পুলিশ সুপার উপস্থিত ছিলেন। এতে ৩১জন প্রার্থী তাদের মতামত তুলে ধরেন।
বিএনপি নেতা আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেন, অস্বীকার করা যাবে না, এই মুহূর্তে একটা ভয়ভীতির পরিবেশ সৃষ্টি হয়েছে। মানুষের মধ্যে প্রশ্ন, ভোট দেওয়া যাবে কি-না? বিএনপির নেতাকর্মীদের এলাকা ছেড়ে যেতে হুমকি দেওয়া হচ্ছে। গায়েবি মামলা দেওয়া হচ্ছে। ৩০ তারিখের আগেই যেন সব বিচার শেষ করে ফেলা হবে! তিনি ভোটের দিন সকালে কেন্দ্রে প্রার্থীর সব প্রতিনিধির সামনে ব্যালট বাক্স ও ব্যালট পেপার ভোটারের সংখ্যা অনুযায়ী গণনা করে নেওয়ার প্রস্তাব করেন।
আমীর খসরুর বক্তব্যের পর চট্টগ্রাম-৯ আসনের আওয়ামী লীগের প্রার্থী মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল বলেন, বিএনপির প্রার্থীরা ভোটারদের মধ্যে ভয়ভীতি থাকার কথা বলছেন। আমার নির্বাচনি এলাকায় তো আমি ভোটারদের মধ্যে কোন ভয়ভীতি দেখছি না। চট্টগ্রাম-১০ আসনে বিএনপির প্রার্থী আবদুল্লাহ আল নোমান নগরীর নয়াবাজারে বিজয় দিবসের র‌্যালিতে সরকারি দলের হামলার প্রসঙ্গ উল্লেখ করে বলেন, আমাকে গুলি করার জন্য উদ্যত হয়েছিল। আমার পোস্টার-ব্যানার কেটে ফেলে দেওয়া হচ্ছে। আওয়ামী লীগের কর্মীরা এবং পুলিশও এ কাজ করছে।
চট্টগ্রাম-৮ আসনে বিএনপির প্রার্থী আবু সুফিয়ান বলেন, চান্দগাঁওয়ের পাঁচটি ওয়ার্ডে নারকীয় তাÐব চলছে। প্রতিদিন রাতে পুলিশ যাচ্ছে। বাড়িঘরে হামলা হচ্ছে, নেতাকর্মীদের ভয়ভীতি দেখাচ্ছে। চট্টগ্রাম-৯ আসনের বিএনপির প্রার্থী কারাবন্দি ডা. শাহাদাত হোসেনের প্রতিনিধি এস এম বদরুল আনোয়ার এ আসনের প্রতিটি ভোটকেন্দ্রে ইভিএমের পাশাপাশি ব্যালট পেপারও রাখার প্রস্তাব করেন।
চট্টগ্রাম-৮ আসনের নৌকা মার্কার প্রার্থী মঈনউদ্দিন খান বাদল বলেন, মতের ভিন্নতা নিয়েই তো আমরা বিভিন্ন রাজনৈতিক দল নির্বাচনে এসেছি। প্রার্থীর সঙ্গে প্রার্থীর এই মতভিন্নতা না থাকলে আমরা পরস্পরের বিরুদ্ধে নির্বাচন করছি কেন? তিনি বলেন, আমরা যারা প্রার্থী, আমাদের প্রতিদিন একজনের সঙ্গে আরেকজনের দেখা হবে। সুতরাং একটা নির্বাচনের কারণে আমাদের সম্পর্ক নষ্ট হয়ে যাবে না।
বিএনপির প্রার্থীদের মধ্যে চট্টগ্রাম-১২ (পটিয়া) আসনের এনামুল হক এনাম বলেছেন তিনি এলাকায় কোন বাধা পাচ্ছেন না। নির্বিঘেœ প্রচার-প্রচারণা চালাতে পারছেন। হাটহাজারী আসনে ইসলামী ঐক্যজোট একাংশের প্রার্থী মাঈনুদ্দিন রুহী বলেন, সারাদিন ভোট দেওয়ার পর রাতে যাতে ফলাফল পাল্টে না যায়, সেটার ব্যবস্থা করতে হবে। চট্টগ্রাম-৮ আসনে সিপিবি’র প্রার্থী মো. সেহাবউদ্দিন নির্বাচন কমিশনের কাছে নিরাপত্তা দাবি করেছেন।
নিরপেক্ষ আছি থাকব
প্রার্থীদের অভিযোগ পাল্টা অভিযোগের জবাবে বিভাগীয় কমিশনার আবদুল মান্নান বলেন, অতীতের ১০টি সংসদ নির্বাচনের চেয়ে একাদশ সংসদ নির্বাচন অনেক বেশি আলোচিত। সব দলের অংশগ্রহণের কারণে সব শ্রেণি পেশার মানুষের মধ্যে নির্বাচন নিয়ে উৎসাহ-উদ্দীপনা সৃষ্টি হয়েছে। উৎসব মুখর এ পরিবেশ আমরা বজায় রাখতে চাই। তিনি বলেন, নির্বাচন কমিশনের দেওয়া রিটার্নিং অফিসারের দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে কারও প্রতি অনুরাগ কিংবা বিরাগ দেখাতে চাই না। বিদেশ থেকে কল দিয়ে, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে পোস্ট দিয়ে অশ্লীলভাবে হুমকি দেওয়া হচ্ছে অভিযোগ করে তিনি বলেন, সরকারি কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে গুজব ছড়ানো হচ্ছে। ভয়-ভীতি দেখানো হচ্ছে। এসব তো ঠিক নয়।
সবাই সমান সুযোগ পাবে
জেলা প্রশাসক ইলিয়াস হোসেন বলেন, একটি সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য আমরা সবাই কাজ করছি। সবাই সমান সুযোগ পাবে। নির্বাচনী প্রচারণায় আচরণবিধি মেনে চলতে হবে। নির্বাচন কমিশনের নির্দেশনা অনুযায়ী অহেতুক কাউকে হয়রানি করা যাবে না। ওয়ারেন্ট ছাড়া কাউকে গ্রেফতার না করতে পুলিশকে নির্দেশ দেয়া হয়েছে। বৈধ অস্ত্র জমা নেয়া হবে, অবৈধ অস্ত্র উদ্ধারে অভিযান আরও জোরদার করা হবে।
ঘুম নষ্ট করে দেবেন না
অতিরিক্ত ডিআইজি আবুল ফয়েজ বলেন, পুলিশ কারো প্রতিপক্ষ নয়। নির্দিষ্ট অভিযোগ ছাড়া আমরা কাউকে গ্রেফতার করছি না। পুলিশ যে অভিযান পরিচালনা করছে, তা নির্বাচনকে টার্গেট করে নয়। রুটিন ওয়ার্ক অনুযায়ী কাজ করছে মাত্র। প্রার্থীদের প্রতি আমাদের অনুরোধ, নির্বাচনকে কেন্দ্র করে এমন কোনো জটিল পরিস্থিতির সৃষ্টি করবেন না, যাতে আমাদের সবার রাতের কিংবা দিনের ঘুম নষ্ট হয়। সুনির্দিষ্ট অভিযোগ থাকলে লিখিতভাবে জানান, আমরা সব ধরনের ব্যবস্থা নেবো।
গায়েবি মামলা বলে কিছু নেই
সিএমপির অতিরিক্ত কমিশনার আমেনা বেগম বলেন, গায়েবি মামলা বলে কিছু নেই। থানায় এসে কেউ অভিযোগ করলে পুলিশ অভিযোগের তদন্তকালীন সময়ে যে কাউকে গ্রেফতার করতে পারে। আইনেই বলা আছে এসব। তিনি বলেন, নির্বাচনে প্রত্যেক প্রার্থীকে নিরাপত্তা দেওয়া আমাদের নৈতিক দায়িত্ব। সবাইকে সমান সুযোগ দিয়ে লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড করতে চাই আমরা। নির্বাচনকে কেন্দ্র করে আইন শৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি ঘটলে সেটা আমাদের কারও জন্যই সুখকর হবে না।
ভোটগ্রহণ প্রক্রিয়া স্বচ্ছ হবে
আঞ্চলিক নির্বাচন কর্মকর্তা মো. হাসানুজ্জামান বলেন, ভোটগ্রহণ প্রক্রিয়া স্বচ্ছ করতে আমরা সব ধরনের ব্যবস্থা নেবো। প্রত্যেক প্রার্থীদের মনোনীত ৫ জন এজেন্টকে প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে। নির্বাচনের আগের দিন প্রতিটি কেন্দ্রে, প্রত্যেক প্রার্থীর মনোনীত এজেন্টকে পরিচয়পত্র দেওয়া হবে। যাতে বাইরের কেউ এসে ভোটগ্রহণ প্রক্রিয়ায় বাধা সৃষ্টি করতে না পারে।

 



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: জাতীয় সংসদ নির্বাচন


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ