মাত্র ৪৮ ঘণ্টায় দেউলিয়া হলো যুক্তরাষ্ট্রের ২য় বৃহত্তম ব্যাংক
চলতি সপ্তাহের বুধবারও আর দশটি সাধারণ ব্যাংকের মতো বাণিজ্যিক ও আর্থিক লেনদেন সম্পন্ন করেছে যুক্তরাষ্ট্রের সিলিকন ভ্যালি ব্যাংক (এসভিপি), যা দেশটির দ্বিতীয় বৃহত্তম বাণিজ্যিক ব্যাংক
যুক্তরাষ্ট্রে ২০১৭ সালে বন্দুকের গুলিতে ২০ বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ সংখ্যক মানুষের প্রাণহানি হয়েছে। বন্দুক ব্যবহার করে হত্যা ও আত্মহত্যার ঘটনা আশঙ্কাজনকভাবে বৃদ্ধি পাওয়ার কারণে এই রেকর্ড সৃষ্টি হয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের রোগ নিয়ন্ত্রণ ও প্রতিরোধ সেন্টারের (সিডিসি) সদ্য প্রকাশিত এক পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, বন্দুকের গুলিতে ২০১৭ সালে যুক্তরাষ্ট্রে প্রাণ হারিয়েছে প্রায় ৪০ হাজার মানুষ। এদের ৬০ শতাংশই আত্মহত্যা করেছেন।অস্ত্র আইনের শিথিলতাকেই বন্দুক সহিংসতায় নিহতের সংখ্যা বৃদ্ধির নেপথ্য কারণ হিসেবে শনাক্ত করা হয়েছে সিডিসির পরিসংখ্যানে। দেখা গেছে, যেসব অঙ্গরাজ্যে বন্দুক আইন শিথিল বা বন্দুক মালিকেরা প্রভাবশালী সেই রাজ্যেই বন্দুক সহিংসতায় মানুষের মৃত্যুর ঘটনাও বেশি।
মার্কিন সংবিধানের দ্বিতীয় সংশোধনীতে দেশটির নাগরিকদের ব্যক্তিগতভাবে আগ্নেয়াস্ত্র রাখার বৈধতা দেওয়া হয়। এর সুযোগে সংঘটিত একের পর এক বন্দুক হামলার প্রেক্ষাপটে ওবামা প্রশাসন বেশ কয়েকবার আগ্নেয়াস্ত্র আইন কঠোর করার চেষ্টা করেও ব্যর্থ হয়। বন্দুক ব্যবহারের মাধ্যমে সন্ত্রাস-সহিংসতা যেন সেখানকার সাধারণ আর স্বাভাবিক এক বাস্তবতা। গড়ে প্রায় ৩০ হাজার মানুষের মৃত্যু হয় বন্দুকের গুলিতে। এখন অনেক নাগরিকই এই সংশোধনীর পরিবর্তন চাইলেও বাধ সাজছে বৃহৎ অস্ত্র নির্মাতা প্রতিষ্ঠানগুলো। ২০১৭ সালে ১ অক্টোবর লাস ভেগাস শহরের একটি হোটেলে আয়োজিত কনসার্টে বন্দুকধারীর হামলায় ৫০ জন নিহত হওয়ার ঘটনাকে সে দেশের ইতিহাসে সবচেয়ে বড় বন্দুক হামলা হিসেবে বিবেচিত। এছাড়া স্কুল শিক্ষার্থীরাও মাঝে মাঝেই বন্দুক ব্যবহারের মাধ্যমে সহিংসতা সৃষ্টি করে। তবে সিডিসির পরিসংখ্যান বলছে, বন্দুক ব্যবহার করে অন্যকে হত্যার পাশাপাশি আত্মহত্যার প্রবণতা বেড়েছে।
২০১৭ সালে বন্দুকের গুলিতে প্রাণ হারানো মানুষের সংখ্যা ৩৯ হাজার ৭৭৩ জন। এরমধ্যে প্রতি এক লাখে ৪.৬ শতাংশ হারে ১৪ হাজার ৫৪২ জনের মৃত্যু হয়েছে অন্যের বন্দুক হামলায়। বিগত বছরগুলোর বিবেচনায় এই হার বেড়েছে আশঙ্কাজনকভাবে। ২০০০ সালে এই হার ছিল ৩.৬। এদিকে লাখে ৬.৯ শতাংশ হারে ২০১৭ সালে বন্দুকে আত্মহত্যা করেছেন ২৪ হাজার মানুষ। ২০০০ সালে এই হার ছিল ৫.৯।
জামা নেটওয়ার্ক নামে একটি প্রতিষ্ঠানের সা¤প্রতিক গবেষণায় দেখা গেছে, সারা বিশ্বে প্রতি বছর বন্দুকের গুলিতে প্রাণ হারায় ২ লাখ ৫০ হাজার মানুষ। এদের অর্ধেকই নিহত হয় ৬টি দেশে। যুক্তরাষ্ট্রসহ বাকিদেশগুলো হলো ব্রাজিল, মেক্সিকো, কলম্বিয়া, ভেনেজুয়েলা এবং কলম্বিয়া। সিডিসির পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, প্রতি বছর লাখে ১২ জনের মৃত্যু হচ্ছে বন্দুকের গুলিতে। এর আগে ১৯৯৬ সালের পর থেকে ২০১০ সালে বন্দুকের গুলিতে লাখে সর্বোচ্চ ১০ দশমিক ১ জনের মৃত্যু হতো।
সিডিসির পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, যেসব অঙ্গরাজ্যে বন্দুক মালিকরা প্রভাবশালী আর বন্দুক আইন শিথিল সেসব অঙ্গরাজ্যে বন্দুকে আত্মহত্যার ঘটনা বেড়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের শিক্ষা বিষয়ক তহবিল সিডিসির পরিসংখ্যান বিশ্লেষণ করে দেখেছে, তিনটি অঙ্গরাজ্যে বন্দুক দিয়ে আত্মহত্যার ঘটনার হার সর্বোচ্চ। বন্দুক মালিকানা নীতি শিথিল থাকার কারণে মন্টানা অঙ্গরাজ্যে এ বছর প্রতি এক লাখে ১৯ দশমিক ৪ জন, ওইমিংয়ে ১৬ দশমিক ৬ জন এবং আলাস্কায় ১৬ জন বন্দুক দিয়ে আত্মহত্যা করছে। মার্কিন অঙ্গরাজ্যগুলোর মধ্যে আলাস্কায় সর্বোচ্চ ৬১ দশমিক ৭ শতাংশ অধিবাসীই বন্দুকের মালিক। ওইমিংয়ে ৫৩ দশমিক ৩ শতাংশ, আর মন্টানায় ৫২ দশমিক ৩ শতাংশ মানুষের ব্যক্তিগত বন্দুক রয়েছে।
যুক্তরাষ্ট্রে আগ্নেয়াস্ত্র নিয়ন্ত্রণ নিয়ে বিতর্ক নতুন নয়। সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা তার দায়িত্ব পালনকালে আগ্নেয়াস্ত্র নিয়ন্ত্রণের পক্ষপাতী ছিলেন। তবে এ নিয়ে তিনি রিপাবলিকান শিবিরের ব্যাপক বিরোধিতার মুখে পড়েন। বর্তমান প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড অবশ্য ট্রাম্প নাগরিকদের অস্ত্র রাখার অধিকারের পক্ষপাতী। তবে গত ফেব্রুয়ারিতে ফ্লোরিডার একটি স্কুলে বন্দুক হামলার পর যুক্তরাষ্ট্র জুড়ে জোরালো হওয়া প্রতিবাদের মুখে অস্ত্র আইন সংশোধনের দাবির একাংশ মেনে নেন ট্রাম্প। আইনপ্রণেতা ও বিশেষজ্ঞদের বিস্মিত করে দিয়ে ‘বন্দুকের দোসর’ ট্রাম্প অস্ত্র আইনে কঠোরতার প্রস্তাব আনেন। তবে মার্কিন পার্লামেন্টে তা এখনও অনুমোদন পায়নি। বিপরীতে অস্ত্র আইনকে কঠোরতা কমাতে লবিস্টদের প্রচারণা অব্যাহত রয়েছে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।