Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

ক্ষমতাসীনদের উৎসব বিরোধীদের শঙ্কা

মৌলভীবাজার জেলার চারটি আসন

মৌলভীবাজার থেকে এস এম উমেদ আলী | প্রকাশের সময় : ১৭ ডিসেম্বর, ২০১৮, ১২:০৭ এএম

একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন যত ঘনিয়ে আসছে ততই নির্বাচনী উত্তাপ ছড়িয়ে পড়ছে মৌলভীবাজার জেলার সর্বত্র। এবারের নির্বাচনে ভোটার ভবিষ্যৎ নেতা হিসেবে কোন প্রার্থীকে বাছাই করবেন এ নিয়ে জল্পনা-কল্পনার অন্ত নেই। সেই হিসাব-নিকাশ চলছে শহর থেকে গ্রামের প্রত্যন্ত অঞ্চলের ভোটারদের মাঝে।
জেলার চারটি আসন থেকে কারা নির্বাচিত হবেন সেই হিসাব-নিকাশ চলছে চায়ের দোকান থেকে শুরু করে সব জায়গায়ই।
২০০৮ সালের পর ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি মৌলভীবাজার জেলার চারটি আসনের মধ্যে দুটি আসন মৌলভীবাজার-১ এবং ২ আসনে নির্বাচন হয়েছেন। মৌলভীবাজার-৩ এবং ৪ আসনে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হন আ.লীগ প্রার্থী। পরবর্তীতে মৌলভীবাজাার-৩ আসনের সংসদ সদস্য সৈয়দ মহসীন আলী মৃত্যুবরণ করলে আসনটি শূন্য হয়। পরে ওই আসনে উপ-নির্বাচনে কোনো প্রার্থী না থাকায় বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় আবার নির্বাচিত হন সৈয়দ মহসীন আলীর স্ত্রী সৈয়দা সায়রা মহসীন। দুটি আসনে দীর্ঘ ১০ বছর ভোট না হওয়ায় ভোটের কথা অনেকের মন থেকে সরে বসে। এবার নির্বাচনী তফসিল ঘোষণার পর খুব একটা নির্বাচনী আমেজ দেখা না গেলেও প্রতীক বরাদ্দের পর মাঠে নেমেছেন আ.লীগ ও বিএনপি
ক্ষমতাসীন আ.লীগ নির্বাচনকে সামনে রেখে লিফলেট বিতরণ কর্মিসভা ও গণসংযোগসহ বিভিন্ন কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে জেলাজুড়ে। ক্ষমতাসীনদের মাঝে নির্বাচনী আমেজ পুরোদমে বিরাজ করছে। তারা বলছেন, নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু এবং শান্তিপূর্ণ হবে।
এদিকে নির্বাচন নিয়ে শঙ্কা রয়েছে বিএনপির নেতৃত্বাধীন জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট। তারা বলছেন, এখনো নির্বাচনের সুষ্ঠু পরিবেশ আসেনি। লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড তৈরি করতে পারেনি নির্বাচন কমিশন। এখনো পুলিশ তাদের নেতাকর্মীদের বাড়ি বাড়ি গিয়ে তল্লাশি ও গ্রেফতার করছে।
ভোটারদের সাথে কথা বলে জানা যায়, বিগত ১০ বছরে বর্তমান সরকারের সাফল্য-ব্যর্থতা এ হিসাব নিয়েই অনেকে ভোট দেবেন। তবে অনেকে বলছেন, বর্তমান সরকারের আমলে শেয়ারবাজার কেলেঙ্কারি, হলমার্ক কেলেঙ্কারি, সোনালী ব্যাংক, বেসিক ব্যাংক, ডেসটিনি, বাংলাদেশ ব্যাংকের টাকা চুরি, কয়লা খনিতে দুর্নীতি, ঘুষ বাণিজ্য, শিক্ষাখাতে ব্যাপক অনিয়ম, গুম, খুন, বিনাবিচারে হত্যা, দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি এই বিষয়গুলো সামনে আসবে ভোটের হিসাব-নিকাশ।
কিন্তু অনেকের মধ্যে শঙ্কা বিরাজ করছে নির্বাচন নিয়ে। তারা বলছেন, ক্ষমতাসীনদের মধ্যে শুধু উৎসব বিরাজ করছে। দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন কতটুকু সুষ্ঠু হবে সেটাও বিবেচনার বিষয়। ৫ জানুয়ারি মার্কা নির্বাচনের শঙ্কা প্রকাশ করছেন অনেক ভোটার।
সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) মৌলভীবাজার জেলা সাধারণ সম্পাদক জহর লাল দত্ত বলেন, একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন নিয়ে ভোটারদের মধ্যে আনন্দের কোনো বাতাস লাগেনি। নির্বাচন নিয়ে সাধারণ মানুষের মধ্যে কোনো চিন্তা নেই। এমনকি তাদের মধ্যে কোনো উৎসব নেই। তারা জনসচেনতা বৃদ্ধি করতে ৩০ ডিসেম্বরের নির্বাচনে ভোটকেন্দ্রে গিয়ে ভোট দিতে সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) সপ্তাহব্যাপী প্রচারণা চালাচ্ছে। তিনি আরো বলেন, জনগণের মধ্যে আশঙ্কা বিরাজ করছে নির্বাচন সুষ্ঠু হবে কিনা। জনগণ বলছে বিএনপি নির্বাচনে কতটুকু টিকে থাকবে সেটা নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে। নির্বাচন সুষ্ঠু হবে কিনা সেটা নিয়ে বিতর্ক রয়েছে ভোটারদের মধ্যে।
মৌলভীবাজার জেলার সাতটি উপজেলা পাঁচটি পৌরসভা ও ৬৭টি ইউনিয়ন নিয়ে চারটি সংসদীয় আসন। এই চারটি আসনে মোট ভোটার সংখ্যা ১৩ লাখ ৪০ হাজার ৬৩ জন। ভৌগোলিক অবস্থানগত কারণে এখানে চা-শ্রমিকের পাশাপাশি নদী ও হাওর পাড়ের কৃষি ও মৎস্যজীবীদের ভোটের সময় রয়েছে আলাদা কদর ও মর্যাদা। বরাবরই তাদের ভোটেই পাল্টে যায় জয়-পরাজয়ের হিসাব-নিকাশ। তাই ভোটের মাঠে প্রার্থীদের কাছে রয়েছে তাদের ভোটের গুরুত্ব।
মৌলভীবাজার সদর উপজেলার আজমেরু গ্রামের মসুদ মিয়া, হালেমা বেগম, গুমরা এলাকার মোক্তার মিয়া, মারকোনা গ্রামের শাহাজান মিয়া, জমির মিয়া, সোলেমান মিয়া, সিপা বেগম জানান, আমরা কৃষক ও দিনমজুর মানুষ আমরা সবসময়ই শান্তির পক্ষে তাই সংসদ নির্বাচনেও শান্তিপূর্ণ ভোট চাই।
ভুজবল গ্রামের খলিল মিয়া, মিলন বেগম, অমূল্য চন্দ্র নাথ ও ঘয়ঘর গ্রামের মোস্তফা মিয়া জানান, সব দলের অংশগ্রহণে ভোটের আমেজটাই অন্যরকম। ভোটের দিন যাতে মারামারি না হয়, ভোট দিলে যাতে গণনায় আসে এমনটিই দাবি।
মৌলভীবাজার শহরতলির ভ্যানচালক শরীফ আহমদ, কামরুজ্জামান ও পতন এলাকার শাহেদ আহমদ বলেন, সবকিছু আয়ত্বে রেখে ভোট হয় কিভাবে। তবে ভোট শান্তিপূর্ণ হোক এমনটি প্রত্যাশা তাদের।
কমলগঞ্জ উপজেলার মাধপুর ইউনিয়নের ভাসানিগাঁওয়ের সোয়েব আহমদ ও বনগাঁও গ্রামের জাহাঙ্গীর আলম, কুলাউড়ারা উপজেলার সাদিপুর গ্রামের মৎস্যজীবী কয়েছ আহমদ বটলাই, গোবিন্দপুর গ্রামের ব্যবসায়ী অজিহ উদ্দিন, মোক্তাদির হোসেন মনা ও রাজনগর উপজেলার মিটিপুর গ্রামের কৃষক সুলতান মিয়া জানান, গেল দু’দিন থেকে গ্রাম এলাকায়ও বেশ জোরেশোরে নির্বাচনী হাওয়া বইছে। তবে শান্তিপূর্ণ ভোট হওয়া নিয়ে তারা শঙ্কায় আছেন।
একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে মৌলভীবাজার জেলার মোট চারটি আসনে আ.লীগ, বিএনপি ও ইসলামী দলসহ মোট ১৯ জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। প্রার্থীরা হলেন হলেন-
মৌলভীবাজার-১ (বড়লেখা ও জুড়ি) : বর্তমান সংসদ সদস্য আ.লীগ মনোনীত বর্তমান সংসদ সদস্য ও সরকার দলীয় হুইপ মো. শাহাব উদ্দিন (নৌকা), বিএনপি থেকে জেলা বিএনপির সহ-সভাপতি নাসির উদ্দিন আহমদ মিঠু (ধানের শীষ), ইসলামী ঐক্য ফ্রন্ট থেকে আহমদ রিয়াজ (মোমবতি), বাংলাদেশ ইসলামী আন্দোলনের প্রার্থী মাওলানা গিয়াস উদ্দিন (হাতপাখা)।
মৌলভীবাজার-২ (কুলাউড়া) : বিএনপির নেতৃত্বাধীন জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট থেকে সাবেক এমপি সুলতান মোহাম্মদ মনসুর আহমদ (ধানের শীষ), আওয়ামীলীগের নেতৃত্বাধিন মহাজোট (বিকল্প ধারা) থেকে এম এম শাহীন (নৌকা), বাংলাদেশ ইসলামি ঐক্যজোট থেকে হাফিজ মতিউর রহমান (মিনার), বাংলাদেশ ইসলামি আন্দোলন মৌলানা আসলাম হোসাইন (হাতপাখা), বাংলাদেশ ওয়াকার্স পার্টি বামফ্রন্ট প্রশান্ত দেব সানা (কুদাল), জাতীয় পার্টি (এরশাদ) অ্যাডভোটে মাহবুবুল আলম শামীম (লাঙ্গল)।
মৌলভীবাজার-৩ (মৌলভীবাজার সদর ও রাজনগর) : জেলা বিএনপির সভাপতি ও সাবেক এমপি এম নাসের রহমান (ধানের শীষ), জেলা আ.লীগের সভাপতি নেছার আহমদ (নৌকা), বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের লুৎফুর রহমান কামালী (রিকশা), বাসদ থেকে অ্যাডভোকেট মো. মগনু মিয়া (মই), ইসলামী আন্দোল বাংলাদেশ মো. আসলম (হাতপাখা)।
মৌলভীবাজার-৪ (শ্রীমঙ্গল-কমলগঞ্জ) : আ.লীগ থেকে সাবেক চিপ হুইপ ও বর্তমান সংসদ সদস্য উপাধ্যক্ষ মো. আব্দুস শহীদ (নৌকা), বিএনপি থেকে মুজিবুর রহমান মুজিব (ধানের শীষ), গণফোরাম থেকে অ্যাডভোকেট শান্তি পদ ঘোষ (সূর্য), ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ থেকে মাওলানা সালাউদ্দিন (হাতপাখা)।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: জাতীয় সংসদ নির্বাচন

৬ ফেব্রুয়ারি, ২০১৯

আরও
আরও পড়ুন
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ