Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

জনসন বেবি পাউডারে অ্যাসবেস্টস ব্যবহার

ইনকিলাব ডেস্ক : | প্রকাশের সময় : ১৭ ডিসেম্বর, ২০১৮, ১২:০৭ এএম

শিশুদের ব্যবহার উপযোগী প্রসাধনী নির্মাতা প্রতিষ্ঠান জনসন অ্যান্ড জনসনের জনপ্রিয়তা গোটা বিশ্বজুড়ে। বিশ্বের অনেক দেশেই মায়েরা শিশুর যত্নে ব্যবহার করেন জনসন বেবি পাউডার। কিন্তু বার্তাসংস্থা রয়টার্সের অনুসন্ধানী প্রতিবেদনে উঠে এসেছে চাঞ্চল্যকর এক তথ্য। প্রতিবেদন অনুযায়ী, জনসন বেবি পাউডারে রয়েছে ক্ষতিকর খনিজ পদার্থ অ্যাসবেস্টস। যা থেকে হতে পারে ক্যান্সার। আর তা জেনেও গত কয়েক যুগ ধরে বেবি পাউডারে এ বিষাক্ত পদার্থটির প্রয়োগ করে আসছে জনসন অ্যান্ড জনসন। তিন দশকেরও বেশি সময় ধরে তারা জানতো যে, অ্যাসবেস্টস রয়েছে তাদের পণ্যে। উচ্চ তাপ শোষণ ক্ষমতা সম্পন্ন এই খনিজ সিলিকেট তন্তুটি শরীরে ঢুকলে ক্যান্সার হওয়ার আশঙ্কা থাকে। রয়টার্স দাবি করছে, এই তথ্য লুকিয়েই বছরের পর বছর বেবি পাউডার বিক্রি করেছে জনসন অ্যান্ড জনসন। দীর্ঘদিন ধরে এই বেবি পাউডার শিশুদের শরীরে ব্যবহারের ফলে মায়েদের ক্যান্সার হওয়ার ঘটনা ঘটেছে। এ নিয়ে মার্কিন ফার্মাসিউটিক্যাল প্রতিষ্ঠান জনসন অ্যান্ড জনসনের বিরুদ্ধে কয়েক হাজার মামলাও হয়েছে। তবে প্রতিষ্ঠানটির আইনজীবীর দাবি, জনসন বেবি পাউডার নিরাপদ এবং এতে কোনো অ্যাসবেস্টস নেই। যুক্তরাষ্ট্রের টেক্সাসের বাসিন্দা ডারলিন কোকার মেসোথেলিয়োমা নামক ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়েছিলেন। খনি বা কারখানায় কাজ করার সময়ে অ্যাসবেস্টস কণা শরীরে ঢুকলে এই ক্যান্সার হয়। তা হলে কী ভাবে অ্যাসবেস্টসের সংস্পর্শে এলেন কোকার? চিকিৎসকরা জানান, বছরের পর বছর দুই মেয়েকে জনসনের যে পাউডার মাখিয়েছেন তিনি, তারই কণা শরীরে ঢুকেছে তার। চিকিৎসকের কাছে থেকে এরকম কথা শোনার পর জনসনের বিরুদ্ধে মামলা করেন কোকার। কিন্তু জনসন আদালতে সংস্থার গোপন তথ্য পেশ না করায় মামলাটি খারিজ হয়ে যায়। জনসন অ্যান্ড জনসনের পণ্য ব্যবহারের কারণে ক্যান্সার হওয়ার দাবি করে স¤প্রতি কোম্পানিটির বিরুদ্ধে হাজার হাজার মামলা করা হয়। এসব অভিযোগ আর মামলা আমলে নিয়েই অনুসন্ধান চালায় রয়টার্স। যুক্তরাষ্ট্রসহ গোটা বিশ্বে জনসনের বিরুদ্ধে একের পর এক মামলায় ১৯৯৯ সালে সংস্থার নানা নথি, গোপন তথ্য, পরীক্ষার রিপোর্ট আদালতে তুলে দিতে বাধ্য হয় প্রতিষ্ঠানটি। জনসনের বিরুদ্ধে প্রায় ১২ হাজার মামলা হয়। মামলাকারীদের অধিকাংশই নারী। তাদের অভিযোগ, জনসন পাউডার ব্যবহার করে জরায়ু ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়েছেন তারা। আদালতে জনসনের উত্থাপন করা বিভিন্ন নথি পর্যালোচনা করে রয়টার্স। নথি বিশ্লেষণের মাধ্যমে তারা জানতে পারে, ১৯৭১ সাল থেকে নিজেদের উৎপাদিত বেবি পাউডারে অ্যাসবেস্টস থাকার কথা জানতো জনসন অ্যান্ড জনসন। প্রতিষ্ঠানটি ওই সময় থেকেই পাউডারে শনাক্তযোগ্য পরিমাণ অ্যাসবেস্টসের উপস্থিতির বিষয়ে নিশ্চিত ছিল। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা ও শিশুস্বাস্থ্য নিয়ে কাজ করা অন্যান্য প্রতিষ্ঠান স্বীকার করে, মানব শরীরে অ্যাসবেস্টস গ্রহনের কোনও নিরাপদ মাত্রা নেই। অ্যাসবেস্টস গ্রহণকারী অনেকেরই কখনোই ক্যান্সার হয় না আবার কারও কারও ক্ষেত্রে সামান্য পরিমাণও বহু বছর পরে ক্যান্সার সৃষ্টির জন্য দায়ী। জনসন অ্যান্ড জনসনের বিরুদ্ধে মামলাকারীরা অভিযোগ করেছেন, দূষিত ট্যালকম পাউডার ব্যবহার করার সময়ে যে সামান্য পরিমাণ অ্যাসবেস্টস তারা গ্রহণ করেছেন তা ক্যান্সার সৃষ্টির জন্য যথেষ্ট। আদালতে উত্থাপিত বিভিন্ন নথি পর্যালোচনায় দেখা যায় ১৯৭১ থেকে ২০০০ সালের শুরু পর্যন্ত প্রতিষ্ঠানটির অভ্যন্তরীণ পরীক্ষায় তাদের পাউডারে বিষাক্ত খনিজ অ্যাসবেস্টসের উপস্থিতি জানতে পারে জনসন। কিন্তু নিয়ন্ত্রক প্রতিষ্ঠানের কাছে এই ফলাফল প্রকাশ করার কথা থাকলেও তা করেনি প্রতিষ্ঠানটি। জনসনের শীর্ষ কর্মকর্তা থেকে কারখানার ব্যবস্থাপক, বিজ্ঞানী, চিকিৎসক, আইনজীবী প্রত্যেকেই বিষয়টি সম্পর্কে অবগত ছিলেন। এমনকি প্রসাধনীতে অ্যাসবেস্টস ব্যবহারের মাত্রা যাতে বেঁধে দেওয়া না হয় তার জন্য মার্কিন নিয়ন্ত্রক সংস্থাগুলিকে প্রভাবিত করেছে প্রতিষ্ঠানটি। স্বাস্থ্যে পাউডারের কু-প্রভাব নিয়ে বৈজ্ঞানিক গবেষণাও বন্ধের চেষ্টা করেছে তারা। রয়টার্স।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: জনসন বেবি পাউডার
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ