পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
পোশাক খাতে ঘোষিত মজুরিতে কোনো অসামাঞ্জস্যতা, দুর্বলতা বা ফাঁক থাকলে জানুয়ারি মাসে তা সমাধান করা হবে বলে জানিয়েছেন শ্রম ও কর্মসংস্থান প্রতিমন্ত্রী মুজিবুল হক চুন্নু।
এছাড়া একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ভোটগ্রহণকে সামনে রেখে কোনো ধরনের আন্দোলনে না জড়িয়ে ১৭ ডিসেম্বর থেকে পোশাক শ্রমিকদের কাজে যোগ দেয়ার আহ্বান জানান তিনি। গতকাল শনিবার সচিবালয়ে পোশাক খাতের ক্রাইসিস ম্যানেজমেন্ট কোর কমিটির জরুরি সভা শেষে প্রতিমন্ত্রী সাংবাদিকদের এসব কথা জানান। ত্রিপক্ষীয় এ সভায় মালিক ও শ্রমিক নেতাদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন-বাংলাদেশ তৈরি পোশাক প্রস্তুতকারক ও রফতানিকারক সমিতির (বিজিএমইএ) সভাপতি সিদ্দিকুর রহমান, ইন্ডাস্ট্রি অল’র মহাসচিব সালাউদ্দিন স্বপন, জাতীয় গামের্ন্টস শ্রমিক ফেডারেশনের সভাপতি আমিরুল ইসলাম আমিন, শ্রমিক নেতা সিরাজুল ইসলাম রনি, শ্রম সচিব আপরোজা খান, অতিরিক্ত সচিব সৈয়দ আহমেদ, কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠানের অধিদফতরের মহাপরিচালক শামসুল জামান ভূঁইয়া, শিল্প পুলিশের মহা-পরিচালক আবদুস সালামসহ বিভিন্ন আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর কর্মকর্তারা।
পোশাক শ্রমিকদের জন্য ঘোষিত নতুন ন্যূনতম মজুরিতে বৈষম্য করা হয়েছে দাবি করে গাজীপুর, আশুলিয়া, ঢাকা ও নারায়ণগঞ্জে বিভিন্ন কারখানার শ্রমিক কয়েকদিন ধরে বিক্ষোভ করে আসছে। কোনো কোনো কারখানায় ভাঙচুরের ঘটনাও ঘটেছে, কাজ না করে শ্রমিকেরা রাস্তায় অবস্থান নিয়েছে। এমন পরিস্থিতিতে এই বৈঠকে বসে এ সংক্রান্ত ক্রাইসিস ম্যানেজমেন্ট কোর কমিটি।
নতুন বেতন নিয়ে শ্রমিকদের চিন্তিত হওয়ার কিছু নেই আশ্বাস দিয়ে শ্রম প্রতিমন্ত্রী বলেন, অনেক বিশ্লেণ ও আলাপ-আলোচনা করে ন্যূনতম মজুরি আট হাজার টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। নতুন মজুরি ডিসেম্বর থেকে বাস্তবায়ন হবে, শ্রমিকরা ডিসেম্বরের বেতনটা জানুয়ারি মাসে পাবেন। মুজিবুল হক বলেন, আমরা লক্ষ্য করছি, গত কয়েক দিন ধরে নারায়ণগঞ্জ, আশুলিয়া, ঢাকা, গাজীপুরের কিছু কিছু ইন্ডাস্ট্রিতে বেতন কাঠামো নিয়ে কিছু অপপ্রচার ও ভুল-বুঝাবুঝির কারণে শ্রমিকরা কাজ না করে রাস্তায় বেরিয়ে এসেছেন।
প্রতিমন্ত্রী বলেন, নতুন মজুরি বোর্ডের ৩, ৪ ও ৫ গ্রেড নিয়ে বিভ্রান্তি সৃষ্টি করা হচ্ছে। তাই জানুয়ারিতে নতুন বেতন পাবার পর, যদি কোনো সমস্যার সৃষ্টি হয়। তখন সবার সঙ্গে বসে আলোচনা করে সমাধান করা হবে।
মুজিবুল হক চুন্নু বলেন, নতুন বেতন নিয়ে শ্রমিকদের চিন্তিত হওয়ার কিছু নেই। তারা ২০১৮ সালের ডিসেম্বরের বেতনের সঙ্গে নতুন বধিত বেতন পাবেন ২০১৯ সালের জানুয়ারির প্রথম সপ্তাহে। এবারও ৭টি গ্রেডে শ্রমিকদের বেতন বাড়ানো হয়েছে। এক্ষেত্রে ২০১৩ সালের কাঠামোকে অনুসরণ করা হয়। তাই এটা নিয়ে কোনো বিভ্রান্তির কিছু নেই। এজন্য শ্রমিকদের ১৭ ডিসেম্বর থেকে নিজ নিজ প্রতিষ্ঠানে কাজে যোগ দেওয়ার অনুরোধ করেন।
তিনি বলেন, আগামী ৩০ ডিসেম্বর জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। তাই এ নির্বাচনকে বানচাল করতে একটি মহল চেষ্টা করে যাচ্ছে। নতুন বেতন কাঠামো নিয়ে তারা শ্রমিকদের বিভ্রান্ত করছে। সেখানে আপনাদের যাতে ব্যবহার করতে না পারে সে দিকে নজর রাখবেন। আর আপনাদের বেতন নিয়ে যদি কোনো সমস্যা বা অসামঞ্জস্য থাকে নির্বাচনের পর জানুয়ারিতে সবাই (শ্রমিক-মালিক) বসে সমাধান করা হবে। তাই শ্রমিকদের নিশ্চিন্তে কাজে ফিরে যাওয়ার আহ্বান জানান।
এ সময় বিজিএমইএর সভাপতি সিদ্দিকুর রহমান সাংবাদিকদের বলেন, এক শতাংশেরও কম পোশাক কারখানায় সমস্যা হচ্ছে। কিন্ত একটা ফ্যাক্টরিতেও কোনো সমস্যা হোক তা চাই না। নতুন মজুরি নিয়ে কিছুটা ভুল-ভ্রান্তি ও ধারণা আছে। অনেকেই হয়তো বিষয়টা সম্পর্কে ক্লিয়ার না যে কীভাবে হয়েছে, তারা কী পাবেন। তিনি বলেন, নতুন কাঠামোতে মজুরিটা পাবেন জানুয়ারি মাসের ৭ থেকে ১০ তারিখের মধ্যে। তখন যদি দেখেন কোনো ফ্যাক্টরিতে কোনো রকমের সমস্যা হয়েছে, তবে আমরা সমাধানের চেষ্টা করব। যদি সেখানে সমাধান না হয় বিজিএমইএতে আসতে পারবে। বিজিএমইএতে না পারলে সরকারের কাছে আসতে পারবে। তিনি বলেন, আগামী ৩০ ডিসেম্বর আমাদের নির্বাচন। আমি মনে করি মজুরি নিয়ে এই মুহূর্তে কোনো ধরনের বিভ্রান্তি কোনো অসন্তোষ উসকে দিয়ে কেউ যেন না ছড়ায়-সবাইকে সেই অনুরোধ করছি।
ইন্ডাস্ট্রি অল বাংলাদেশ কাউন্সিলের মহাসচিব সালাউদ্দিন স্বপন বলেন, স¤প্রতি কিছু কারখানায় নতুন মজুরি কাঠামো বাস্তবায়ন নিয়ে বিভ্রান্তি তৈরি হয়েছে। শ্রমিক নেতা আমিরুল ইসলাম আমিন বলেন, আমরা আশা করবো, সরকার যে বেতন নির্ধারণ করে দিয়েছে মালিকপক্ষ সেভাবে সঠিক সময়ে শ্রমিকদের বেতন পরিশোধ করবেন।
অন্যদিকে গতকাল বিজিএমইএ অফিসে পোশাক শিল্পখাতের বর্তমান শ্রম পরিস্থিতি নিয়ে সংবাদ করে প্রতিষ্ঠানটি। বিজিএমইএ সভাপতি মো. সিদ্দিকুর লিখিত বক্তব্য বলেন, জানুয়ারিতে বেতন পাওয়ার পর কোন শ্রমিক ভাই বা বোনদের মধ্যে দ্বিধা থাকলে তা কারখানা কর্তৃপক্ষের কাছে তুলে ধরার পরামর্শ দেন। এরপরও কারাখানা কর্তৃপক্ষ সমাধান না করলে সরাসরি বিজিএমইএ অথবা সরকারের কাছে আসার জন্য আহবান জানান এই নেতা।
বিজিএমইএ সভাপতি বলেন, সরকার ঘোষিত নতুন মজুরি পাওয়ার আগে কোন আন্দোলন করার যৌক্তিকতা নেই। শ্রমিকদের সরলতার সুযোগ নিয়ে একটি স্বার্থান্বেষী মহল আসন্ন জাতীয় নির্বাচনের আগে আপনাদেরকে উস্কানি দিয়ে অরাজক পরিস্থিতি সৃষ্টির অপতৎপরতায় লিপ্ত রয়েছে বলে অভিযোগ করেন তিনি।
আন্দোলকারী শ্রমিকদের উদ্দেশে বিজিএমইএ সভাপতি বলেন, ‘আবারো বলছি, আপনারা কর্মস্থলে ফিরে যান, কাজ করুন।’ আর যদি আপনারা কাজ না করেন, তা হলে কারখানা স্থায়ীভাবে বন্ধ করে দিতে আমরা বাধ্য হব।
সংবাদ সম্মেলনে বিজিএমইএ’র সহ-সভাপতি (অর্থ) মোহাম্মদ নাছির, পরিচালক মো. মুনির হোসেন ও পরিচালক আ.ন.ম সাইফউদ্দিন এবং শিল্প পুলিশের মহাপরিচালক ডিআইজি আব্দুস সালাম প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
শিল্প অধ্যুষিত অঞ্চলগুলোয় খোঁজ নিয়ে জানা যায়, নতুন মজুরি কাঠামোয় অসন্তোষ প্রকাশ করে গত এক সপ্তাহ ধরে কর্মবিরতিসহ বিক্ষোভ প্রদর্শন করে আসছে। ৯ ডিসেম্বর থেকে প্রতিদিনই কর্মবিরতি ও কারখানা বন্ধের ঘটনা বাড়ছে। ৯ ডিসেম্বর কর্মবিরতি ও বন্ধ হয় সাত-আটটি কারখানা। পরদিন সংখ্যাটি বেড়ে হয় প্রায় ১২। ১১ ডিসেম্বর বন্ধ হয় প্রায় ২৩টি, ১২ ডিসেম্বর ৩৬টি ও সর্বশেষ গতকাল বন্ধ হয় ৪৩টি কারখানা। সব মিলিয়ে প্রায় ৮০টি কারখানায় কর্মবিরতি ও উৎপাদন বন্ধের ঘটনা ঘটেছে। সংখ্যাটি ক্রমেই বাড়ছে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।
গত ১৩ সেপ্টেম্বর দেশের তৈরি পোশাক শিল্পের শ্রমিকদের ন্যূনতম মজুরি নির্ধারণ করে সরকার। ঘোষণা অনুযায়ী, দেশের প্রধান রফতানি খাত তৈরি পোশাক শ্রমিকদের ন্যূনতম মজুরি নির্ধারণ করা হয় আট হাজার টাকা। এর আগে সর্বশেষ ২০১৩ সালের ১ ডিসেম্বর পাঁচ হাজার ৩০০ টাকা ন্যূনতম মজুরি নির্ধারণ করেছিল সরকার। সেই হারেই এখন বেতন পাচ্ছেন শ্রমিকরা।
তবে বেশ কয়েক বছর ধরেই ন্যূনতম মজুরি ১৬ হাজার টাকা নির্ধারণের দাবি করে আসছে শ্রমিকরা। এর বিপরীতে পোশাক শিল্প মালিকরা প্রস্তাব করেন ৬ হাজার ৩৬০ টাকা। বেসরকারি গবেষণা সংস্থা সিপিডি ন্যূনতম মজুরি ১০ হাজার টাকা করার পক্ষে মতামত দিয়েছিল।
বিজিএমই সূত্র জানা গেছে, ২০১০ সাল থেকে ২০১৮ সাল পর্যন্ত আট বছরে পোশাক শিল্পে মজুরি ৩৮১ দশমিক ৩৫ শতাংশ বেড়েছে। এর মধ্যে ২০১৩ সাল থেকে প্রতি বছর পাঁচ শতাংশ হারে মজুরি বাড়ছে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।