বিএনপির মানববন্ধন আজ, পাল্টা কর্মসূচি আওয়ামী লীগ
সারা দেশের মহানগর ও জেলা পর্যায়ে আজ মানববন্ধন করবে বিএনপি ও তার মিত্ররা। আর এ
গভীর শ্রদ্ধায় জাতীয় মেধাবী সন্তান শহীদ বুদ্ধিজীবীদের স্মরণ করলো পুরো জাতি। মুক্তিযুদ্ধে বাংলাদেশের স্বাধীনতার ঠিক আগ মুহূর্তে পাক হানাদার বাহিনী ও স্বাধীনতাবিরোধী চক্র তাদের পরাজয় নিশ্চিত জেনে এ জাতিকে মেধাশূন্য করতে পরিকল্পিতভাবে দেশের মেধাবী সন্তানদের হত্যায় মেতে ওঠে। গতকাল ছিল সেই করুণ দিনটি। জাতি এ দিনটিকে বুদ্ধিজীবী দিবস হিসেবে পালন করে তাদের স্মরণ করে।
গতকাল সকালে রাজধানীর মিরপুর শহীদ বুদ্ধিজীবী স্মৃতিসৌধে বিভিন্ন রাজনৈতিক, সামাজিক-সাংস্কৃতিক সংগঠন ও বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানসহ সর্বস্তরের মানুষ শহীদদের স্মরণে নির্মিত বেদীতে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানিয়েছে। দিবসটি উপলক্ষে সকালে কালো পতাকা উত্তোলন ও জাতীয় পতাকা অর্ধনমিত করণ, শহীদদের স্মরণে নির্মিত স্মৃতিসৌধে পুষ্পস্তবক অর্পণ, আলোচনা সভা, শহীদদের স্মরণে মোমবাতি প্রজ্জলন, শোক র্যালি, শ্রদ্ধা নিবেদন, চিত্রাঙ্কন, সাধারণ জ্ঞান ও হাতের লেখা প্রতিযোগিতা, মিলাদ ও দোয়া মাহফিলসহ বিভিন্ন কর্মসূচির আয়োজন করা হয়।
দিবসটিতে সকাল ৭টা ৫মিনিটে প্রেসিডেন্ট আব্দুল হামিদ এবং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস উপলক্ষে শহীদদের স্মরণে স্মৃতিসৌধের বেদীতে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন। এ সময় বিউগলে করুণ সুর বাজানো হয়। শহীদদের সম্মানে সশস্ত্র বাহিনীর একটি চৌকস দল ‘গার্ড অব অনার’ দেয়। শ্রদ্ধা নিবেদন শেষে প্রেসিডেন্ট ও প্রধানমন্ত্রী যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধা ও শহীদ বুদ্ধিজীবী পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে কুশল বিনিময় করেন।
পরে আওয়ামী লীগ সভাপতি হিসেবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কেন্দ্রীয় নেতাদের সঙ্গে নিয়ে দলের পক্ষ থেকে শহীদ বেদীতে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন। এসময় আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের, সভাপতিমন্ডলীর সদস্য এডভোকেট আব্দুল মতিন খসরুসহ দলের অন্যান্য কেন্দ্রীয় নেতারা উপস্থিত ছিলেন।
পরে একে একে শহীদ বেদীতে শ্রদ্ধা জানান কেন্দ্রীয় ১৪ দল, শহীদ পরিবারের সন্তান ও যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধারা। এরপর মিরপুর শহীদ বুদ্ধিজীবী স্মৃতিসৌধ সর্বস্তরের মানুষের জন্য খুলে দেয়া হয়। একে একে বিভিন্ন রাজনৈতিক, সামাজিক-সাংস্কৃতিক দল ও সংগঠন এবং বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানসহ সর্বস্তরের মানুষ শহীদদের স্মরণে নির্মিত বেদীতে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানায়।
ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগ, যুবলীগ, ছাত্রলীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগ, যুব মহিলা লীগ ও আওয়ামী লীগের বিভিন্ন অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের পক্ষ থেকে বুদ্ধিজীবী স্মৃতিসৌধে শ্রদ্ধা নিবেদন করা হয়।
এছাড়া সকালে ঢাকার বঙ্গবন্ধু ভবনে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতিকৃতিতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানায় আওয়ামী লীগ।
এদিকে সকাল ৯টার দিকে গণফোরাম সভাপতি ড. কামাল হোসেনের নেতৃত্বে জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের নেতারা সকাল সোয়া ৯টার দিকে শহীদ বুদ্ধিজীবী স্মৃতিসৌধে শ্রদ্ধা জানান। এ সময় তার সঙ্গে ছিলেন আ স ম আব্দুর রব, গণফোরামের জগলুল হায়দার আফিক, রেজা কিবরিয়া, বিএনপির নেতা আবদুস সালাম ও গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের ট্রাস্টি জাফরুল্লাহ চৌধুরীও সেখানে উপস্থিত ছিলেন।
এছাড়া জাতীয় পার্টি, জাসদ, ওয়াকার্স পার্টি, বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি, বাসদ, গণফোরাম, বিকল্পধারাসহ বিভিন্ন সামাজিক সাংস্কৃতিক সংগঠন শহীদ বুদ্ধিজীবিদের শ্রদ্ধা জানিয়ে রায়েরবাজার বধ্যভূমি স্মৃতিসৌধে পুষ্পস্তবক অর্পণ করেন।
বুদ্ধিজীবী দিবস উপলক্ষে ছাত্র-শিক্ষক কেন্দ্র মিলনায়তনে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এক আলোচনা সভার আয়োজন করে। এতে সভাপতির বক্তব্য রাখেন উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. আখতারুজ্জামান। ইসলামিক ফাউন্ডেশনের উদ্যোগে গতকাল সকাল ১০টায় বায়তুল মুকাররম জাতীয় মসজিদে পবিত্র কুরআনখানী, মিলাদ ও দোয়া মাহফিল অনুষ্ঠিত হয়।
এ সময় দেশের জন্য আত্মদানকারী শহীদ বুদ্ধিজীবীদের রূহের মাগফিরাত কামনা করে দোয়া করা হয়। মিলাদ ও মুনাজাত পরিচালনা করেন বায়তুল মুকাররম জাতীয় মসজিদের পেশ ইমাম মুফতি এহসানুল হক জিলানী।
ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির (ডিআরইউ) সভাপতি ইলিয়াস হোসেন ও সাধারণ সম্পাদক কবির আহমেদ খানের নেতৃত্বে সংগঠনটির সদস্যরা বুদ্ধিজীবী স্মৃতিসৌধে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানান। এ সময় ডিআরইউর সহ-সভাপতি খোন্দকার কাওছার হোসেন, যুগ্ম সম্পাদক জামিউল আহসান সিপু, সাংগঠনিক সম্পাদক আফজাল বারী, অর্থ সম্পাদক জিয়াউল হক সবুজ, নারী বিষয়ক সম্পাদক সাজেদা ইসলাম পারুল, সংগঠনের সাবেক সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ শুকুর আলী শুভ ও জ্যেষ্ঠ সদস্য আমান উদ দৌলা প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
উল্লেখ্য, মুক্তিযুদ্ধের শেষ লগ্নে ১০ থেকে ১৪ ডিসেম্বরের মধ্যে আল-বদর বাহিনী আরও অনেক বুদ্ধিজীবীকে ধরে নিয়ে মোহাম্মদপুর ফিজিক্যাল ট্রেনিং ইনস্টিটিউটে স্থাপিত আল-বদর ঘাঁটিতে নির্যাতনের পর রায়েরবাজার বধ্যভুমি ও মিরপুর কবরস্থানে নিয়ে হত্যা করে।
শহীদ বুদ্ধিজীবীদের মধ্যে রয়েছেন- অধ্যাপক মুনির চৌধুরী, ডা. আলিম চৌধুরী, অধ্যাপক মুনিরুজ্জামান, ড. ফজলে রাব্বী, সিরাজ উদ্দিন হোসেন, শহীদুল্লাহ কায়সার, অধ্যাপক জিসি দেব, জ্যোতির্ময় গুহ ঠাকুরতা, অধ্যাপক সন্তোষ ভট্টাচার্য, মোফাজ্জল হায়দার চৌধুরী, সাংবাদিক খন্দকার আবু তাহের, নিজামউদ্দিন আহমেদ, এসএ মান্নান (লাডু ভাই), এ এন এম গোলাম মোস্তফা, সৈয়দ নাজমুল হক, সেলিনা পারভিনসহ আরো অনেকে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।