Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

পঞ্চপাণ্ডবের অন্যরকম সেঞ্চুরি

ইমরান মাহমুদ | প্রকাশের সময় : ১১ ডিসেম্বর, ২০১৮, ১২:০২ এএম

তাদের নামই যেন বাংলাদেশ ক্রিকেটের প্রতিচ্ছবি। অনেক চড়াই-উৎরাইয়ের সাক্ষী তারা। হারের গ্লানির উল্টো রথে চড়ে আজ বিশ্ব ক্রিকেটের পরাশক্তিতে পরিণত তাদেরই হাত ধরে। লড়াই, সংঘাত, বিভাজন আর সমালোচনার তীরে বিদ্ধ হয়েও অটল ছিল তাদের বন্ধন- বাংলাদেশ ক্রিকেটকে টেনে নিয়ে চলেছেন এক যুগেরও অধিক সময় ধরে। মাশরাফি-সাকিব-তামিম-মুশফিক-রিয়াদ, এই পঞ্চপাণ্ডব আজ দাঁড়িয়ে দারুন এক মাইলফলকের সামনে।
প্রায় এক যুগের এই পথচলায় আজ দলের এই পাঁচ সিনিয়র ক্রিকেটার দাঁড়িয়ে শততম ওয়ানডের সামনে। বাংলাদেশের লাল-সবুজের গর্বিত জার্সি গায়ে এই পাঁচজনই খেলেছেন এমন ম্যাচের সংখ্যা ৯৯টি। ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে তিন ম্যাচ ওয়ানডে সিরিজের দ্বিতীয় ম্যাচে আজ মুখোমুখি হবে বাংলাদেশ। মিরপুর শের-ই-বাংলা জাতীয় ক্রিকেট স্টেডিয়ামের এই ম্যাচটি দিয়ে একসঙ্গে বিশেষ শতক পূর্ণ হতে যাচ্ছে এই ফেভ-ফাইভের।
বিশ্বে এমন ঘটনা বিরল। টেস্টে এই পাঁচজনই খেলেছেন এমন ম্যাচ এখন পর্যন্ত হয়েছে একটি। ওয়ানডেতে এমন ম্যাচ হয়েছে ৬৯টি। আর টি-টোয়েন্টি ম্যাচ হয়েছে ২৯টি। অর্থাৎ, তিনি ফরম্যাট মিলিয়ে তারা এখন পর্যন্ত একই সঙ্গে ৯৯টি ম্যাচ খেলেছেন। সুতরাং, আজ পঞ্চপাণ্ডব মাঠে নামলে একসঙ্গে ১০০টি ম্যাচ খেলার ইতিহাস গড়বেন।
বিশ্বে এখন পর্যন্ত এমন ৬৪টি পঞ্চপাণ্ডবের দেখা মিলেছে। বাংলাদেশে সাধারণত ক্রিকেটারদের একটু বয়স হয়ে গেলেই দল থেকে ছেটে ফেলা হয়। কিন্তু বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড (বিসিবি) এই পাঁচ ক্রিকেটারকে দীর্ঘ সময় ধরে সুযোগ দিয়েছে। কারণ এই পঞ্চপাণ্ডবের হাত ধরেই বাংলাদেশের ক্রিকেটে এসেছে বিশাল অর্জন। তারা প্রত্যেকেই ফর্মে রয়েছেন।
এই পাঁচজনের মধ্যে সবচেয়ে সিনিয়র হচ্ছেন মাশরাফি বিন মুর্তজা। এমন এক ক্ষণে দাঁড়িয়ে ওয়ানডে অধিনায়ক মনে করেন, সিনিয়রদের নিয়মিত পারফরম্যান্স এবং তাদের মধ্যে ভালো বোঝাপড়া তার অধিনায়কত্বকে আরো সহজ করে দিয়েছে, ‘তারা সবাই নিয়মিত পারফর্মার। নিশ্চিতভাবে এটি আমার কাজকে আরো সহজ করে দেয়। সাকিব এক্সট্রাওর্ডিনারি খেলোয়াড়। তাকে নিয়ে আলাদা করে বলার কিছু নেই। মুশফিক কোয়ালিটি প্লেয়ার। তামিম এবং রিয়াদও অসাধারণ। তারা যত সময় গিয়েছে তত বুঝেছে যে, আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে তাদের কেমন খেলতে হবে। তাদের সম্পর্কে বেশি ব্যাখ্যা করার কিছু নেই।’
বিশেষ এই সেঞ্চুরি নিয়ে রোমাঞ্চিত পঞ্চপাণ্ডবের অপর সদস্য তামিম ইকবাল, ‘অবশ্যই এটি বিশেষ কিছু। গত ১৫ বছর ধরে আমরা একে অপরকে চিনি। আশা করি বিশেষ কিছুর মাধ্যমে আমরা দিনটিতে স্মরণীয় করে রাখব। সাকিব, মুশফিক ও আমার চেয়ে মাশরাফি ভাই ও রিয়াদ ভাই বয়সে বড়। অনূর্ধ্ব-১৫ সময় থেকে আমরা তিনজন খেলছি। আমাদের মধ্যে সম্পর্ক দারুণ। আমরা সব বিষয় শেয়ার করি। সাকিব ও মুশফিকের সঙ্গে আমার বন্ধু সম্পর্ক। কিন্তু মাশরাফি ভাই এবং রিয়াদ ভাইয়ের সঙ্গেই আমার বেশি সময় কাটে। আমাদের সবার মধ্যে সম্পর্ক অনেক গভীর।’
২০০১ সালের নভেম্বরে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে টেস্ট ম্যাচের মাধ্যমে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে পা রাখেন মাশরাফি। তিনি এখন পর্যন্ত ৩৬টি টেস্ট, ২০০টি ওয়ানডে ও ৫৪টি টি-টোয়েন্টি ম্যাচ খেলেছেন। তিনিই বাংলাদেশের একমাত্র ক্রিকেটার যিনি ২০০টি ওয়ানডে ম্যাচ খেলেছেন। তাছাড়া ওয়ানডেতে বাংলাদেশি বোলারদের মধ্যে তিনি সেরা উইকেটশিকারি বোলার। ২০০ ওয়ানডে ম্যাচে তার উইকেট সংখ্যা ২৫৫টি।
২০০৬ সালের আগস্টে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে ওয়ানডে ম্যাচের মাধ্যমে আর্ন্তর্জাতিক ক্রিকেটে অভিষেক হয় সাকিব আল হাসানের। অল্প সময়ের মধ্যেই তিনি নিজেকে নিয়ে যান অনন্য উচ্চতায়। এক সময় একই সঙ্গে তিন ফরম্যাটের বিশ্বসেরা অলরাউন্ডার ছিলেন তিনি। বর্তমানে তিনি শুধু টেস্ট ফরম্যাটের বিশ্বসেরা অলরাউন্ডার। সাকিব আল হাসান এখন পর্যন্ত ৫৫টি টেস্ট, ১৯৩টি ওয়ানডে ও ৬৯টি টি-টোয়েন্টি ম্যাচ খেলেছেন।
২০০৭ সালের ফেব্রুয়ারিতে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে ওয়ানডে ম্যাচের মাধ্যমে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে পা রাখেন তামিম ইকবাল। তিনি এখন পর্যন্ত ৫৬টি টেস্ট, ১৮৪টি ওয়ানডে ও ৬৮টি টি-টোয়েন্টি ম্যাচ খেলেছেন। বর্তমানে তিন ফরম্যাটেই বাংলাদেশের সেরা রান সংগ্রহকারী ব্যাটসম্যান তামিম। তিন ফরম্যাটে তার রান সংখ্যা যথাক্রমে টেস্টে ৪০৪৯, ওয়ানডে ৬৩১৯ ও টি-টোয়েন্টিতে ১৫২৮।
২০০৭ সালের জুলাইয়ে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে ওয়ানডে ম্যাচের মাধ্যমে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে অভিষেক হয় মাহমুদউল্লাহ রিয়াদের। তাকে বলা হয় বাংলাদেশ দলের ‘আনসাং হিরো’। কেউ বলেন ‘সাইলেন্ট কিলার’। ২০১৫ সালের আইসিসি বিশ্বকাপে দুইটি সেঞ্চুরি করেছিলেন তিনি। ওই বিশ্বকাপে কোয়ার্টার ফাইনালে খেলেছিল বাংলাদেশ। মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ এখন পর্যন্ত ৪৩টি টেস্ট, ১৬৬টি ওয়ানডে ও ৭৩টি টি-টোয়েন্টি ম্যাচ খেলেছেন।
২০০৫ সালের মে মাসে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে টেস্ট ক্রিকেটের মাধ্যমে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে পা রাখেন উইকেটরক্ষক-ব্যাটসম্যান মুশফিকুর রহিম। তিনি এখন পর্যন্ত ৬৬টি টেস্ট, ১৯৬টি ওয়ানডে ও ৭৪টি টি-টোয়েন্টি ম্যাচ খেলেছেন। তিন ফরম্যাটে তার রান সংখ্যা যথাক্রমে টেস্টে ৪০০৬, ওয়ানডেতে ৫২৬৮ ও টি-টোয়েন্টিতে ১১৩১। মুশফিকুর রহিমই বাংলাদেশের একমাত্র ব্যাটসম্যান যিনি টেস্টে দুইটি ডাবল সেঞ্চুরি করেছেন।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: পঞ্চপাণ্ডবের সেঞ্চুরি
আরও পড়ুন
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ