Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

ফাইনালে সিমিওনের প্রত্যয়ী অ্যাটলেটিকো

স্প্যানিশ গেরো ছাড়াতে পারলেন না গার্দিওলা

প্রকাশের সময় : ৫ মে, ২০১৬, ১২:০০ এএম

স্পোর্টস ডেস্ক : পেপ গার্দিওলার স্প্যানিশ অধ্যায়টা সকলেরই জানা। কোচিং ক্যারিয়ারের শুরতেই যেখানে উঠেছিলেন সফলতার চুড়োয়। জার্মানে নিজের দ্বিতীয় অধ্যায়টাও ঠিক একইভাবে লিখে রাখতে পারতেন গার্দিওলা। কিন্তু যে স্প্যানিশ দলের হাত ধরে তাঁর এত সফলতা, সেই স্প্যানিশ প্রতিপক্ষই এখন তাঁর পথের কাঁটা। বায়ার্ন মিউনিখে যোগ দেওয়ার পর তিন মৌসুমেই তিনি দলকে নিয়ে গেছেন উয়েফা চ্যাম্পিয়ন্স লিগের সেমি-ফাইনালে। প্রতিবার তাঁর সামনে বাধা হয়ে দাঁড়ায় কোন না কোন স্প্যানিশ দল। প্রথমবার রিয়াল মাদ্রিদ, গেলবার বার্সেলোনা, এবার থামতে হয়েছে অ্যাটলেটিকো মাদ্রিদের কাছে। পরশু শেষ চারের দ্বিতীয় লেগের ম্যাচটি অবশ্য বায়ার্ন জিতেছে ২-১ গোলে। কিন্তু অ্যাওয়ে গোলের সুবিধা নিয়ে দুই লেগ মিলে ২-২ ব্যাবধানে এগিয়ে ফাইনালের টিকিট হাতে পেয়েছে অ্যাটলেটিকো। ডিয়েগো সিমিওনের দলের হয়ে মহামূল্যবান গোলটি করেন অঁতোয়ান গ্রিজম্যান। প্রথম লেগে ঘরের মাঠে ১-০ গোলে এগিয়ে ছিল মাদ্রিদের দল। দ্বিতীয় লেগে ঘরের মাঠে জিতেও দুঃখই সঙ্গী হল গার্দিওলার।
মিউনিখে গার্দিওলার এই দুঃখ রয়েই যাবে। সামনের মৌসুমেই যে মিউনিখের পাঠ চুকিয়ে ম্যানচেস্টার সিটিতে যাচ্ছেন তিনি। তবে গার্দিওলার ব্যর্থতার চেয়ে সিমিওনের সফলতার মূল্যায়নই এখানে বেশি। শুধু বেশি বললে হয়তো কমই বলা হবে। বার্সেলোনা বা বায়ার্ন মিউনিখের মত তার দলের নেই অর্থের ঝনঝনানি। প্রতি মৌসুমেই তাকে হারাতে হয়েছে দলের সেরা সেরা খেলোয়াড়কে। রামাদেল ফ্যালকাও, দিয়েগো কস্তার মত স্ট্রাইকারদের পর হারাতে হয়েছে গোলপোস্টের নীচে বিশ্বস্থ হয়ে ওঠা করতোয়াকে। সবশেষ হারাতে হয় মাঝমাঠের সেনানী আর্দা তুরানকেও। তাতে হয়তো কষ্ট পেতে পারেন সিমিওনে, কিন্তু মনোবলে চিড় ধরেনি একটুও। উপরন্তু সেটাই যেন আর্জেন্টাইনকে করেছে আরো দৃড়প্রতিজ্ঞ। সময়ের সেরা তিন দলের মধ্যে দু’টি দলকে হারিয়ে ফাইনালে উঠেছে তার দল। প্রিমিয়ার লিগে ‘পরিত্যক্ত’ ফার্নান্ডো তোরেসকে দিয়েই কি দারুণভাবেই না নিজের কাজ সেরে নিচ্ছেন তিনি। এরপর তৈরী করেছেন একজন গ্রিজম্যানকে। আর গোল পোস্টের নিচে আরেক অতন্দ্র প্রহরী হিসাবে আবিষ্কার করেছেন জান ওব্লাককে।
এই ওব্লাকই মিউনিখের অলিয়াঞ্জ অ্যারেনার নায়ক। প্রথমার্ধে এই তরুণ স্লোভানিয়ান রুখে দেন টমাস মুলারের পেনাল্টি শট। এর আগে অবশ্য জাভি আলানসোর ফ্রি-কিকে এগিয়ে যায় বায়ার্ন। যেখানে স্বাগতিকদের ভাগ্যেরও কিছু সহায়তা ছিল। প্রায় ৩০ গজ দূর থেকে জাভির শট মারিয়া হিমেনেসের পায়ে লেগে জালো জড়ায়। ওব্লাকের এখানে কিছুই করার ছিল না। সব প্রতিযোগিতা মিলে ৬৩৩ মিনিট পর অ্যাটলেটিকোর জালে বল জড়ালো। এর আগে-পরে প্রথমার্ধেই অ্যাটলেটিকোর বক্সে ১৮টি আক্রমণ শানিয়েছিল গার্দিওলার দল। কিন্তু সিমিওনের দৃড় রক্ষনের কাছে পরাস্থ হতে হয়েছে বার বার। নিজেদের রক্ষণ সামলে তোরেস-গ্রিজম্যানরা গেছে পাল্টা আক্রমণে। তেমনি এক পাল্টা আক্রমণ থেকে দ্বিতীয়ার্ধের ৮ মিনিট বাদে গোল করেন গ্রিজম্যান। আসরে এটি তার নবম ও মৌসুমে এটি ছিল তার ৩১তম গোল। তবে ম্যাচের ৭৩ শতাংশ বলের দখল রেখে একের পর এক অক্রমণ শানিয়ে গেছে মিউনিখের দল। ৭৫তম মিনিটে রবার্ট লেভান্দোভস্কির হেডে আবারো লিড নেয় তারা। আসরে পোলিশ ফরোয়ার্ডের এটি ছিল নবম গোল। দুই লেগ মিলে তখন ২-২ সমতা। ফাইনালে যেতে ন্যূনতম আরো একটি গোল চায় গার্দিওলার দলের। এজন্য শেষ ১৫ মিনিটে যেন তারা ঝড় বইয়ে দিলেন অ্যাটলেটিকোর রক্ষনের ওপর দিয়ে, আরো নির্দিষ্টভাবে বললে ওব্লাকের ওপর দিয়ে। তবে সেটা সামলে গোলের সহজতম সুযোগ তৈরী করে অ্যাটলেটিকো। বক্সের মধ্যে স্প্যানিশ স্ট্রাইকার তোরেসকে বায়ার্নের মার্টিনেজ ফাউল করলে পেনাল্টি পায় তারা। কিন্তু স্পট-কিক থেকে গোল করতে পারেনি তোরেস নিজে। তাতে অবশ্য অ্যাটলেটিকোর অনন্দে একটুও ভাটা পড়েনি। শেষ বাঁশি বাজার সাথে সাথে উৎসবে মাতে কোকে-গ্রিজম্যান-সাউল-তোরেসরা। গত তিন বছরে দ্বিতীয়বারের মত ফাইনালে উঠে ডিয়েগো সিমিওনের অ্যাটলেটিকো। অবসান ঘটে বায়ার্নে গার্দিওলার ইউরোপিয়ান শিরোপা প্রতীক্ষার। বায়ার্নের রক্ষনের বিপক্ষে জয় হল অ্যাটলেটিকোর রক্ষণের। গার্দিওলা সেটা মেনে নিয়েই বলেনÑ ‘আমরা হয়ত ফাইনালে যেতে পারলাম না, তবুও এই দলকে নিয়ে আমি গর্বিত। যেভাবে খেলতে চেয়েছিলাম সেভাবেই খেলেছি আমরা। সবই ঠিকঠাক ছিল, শুধু একটি জিনিসই পাইনি, মাত্র একটা গোল।’ ম্যাচ পরবর্তি গ্রিজম্যানের কথাতেই অবশ্য ফুটে উঠেছে পুরো ম্যাচের চিত্রÑ ‘আজ আমাদের চেয়ে বায়ার্ন ভালো ছিল, কিন্তু আমরা প্রথম লেগ জিতেছি, এটাই সব। আমরা মূল্যবান এ্যাওয়ে গোল করেছি যা ছিল সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। আমাদের এই ধারা বজায় রাখতে হবে।’
ধারা বলতে নিশ্চই ফাইনালের কথাই বলেছেন গ্রিজম্যান। এতক্ষণে হয়তো জেনে গেছেন ফাইনালে প্রতিপক্ষ হিসাবে কাকে পাচ্ছে তারা। গত রাতেই দ্বিতীয় সেমি-ফাইনালে লড়েছে রিয়াল মাদ্রিদ ও ম্যানচেস্টার সিটি। সান্তিয়াগো বার্নাব্যুতে রিয়াল জিতে থাকলে সিমিওনের সামনে সুযোগ আসবে ২০১৪ সালে আসরের ফাইনালের প্রতিশোধ নেয়ার। ঠিক যে ধরনের প্রতিশোধ নিয়ে ফাইনালে পা রেখেছে তারা। ৪২ আগে ইউরোপিয়ান কাপের ফাইনালে বায়ার্নের কাছে হেরেই শিরোপা বঞ্চিত হতে হয়েছিল তাদের। এরপর দীর্ঘ ৪০ বছর পর ফাইনালে উঠে হারতে হয়েছিল নগর প্রতিদ্বন্দ্বীর কাছে। প্রতিশোধ তো নিতেই চাইবেন সিমিওনে। তবে এমন পথে হাটতে রাজি নন তিনিÑ ‘আমি প্রতিশোধে বিশ্বাস করি না। জীবনে নতুন সুযোগ আসে, প্রতিশোধ নয়। আর এটাও একটা সুযোগ।’ গুরুর মত সুর তোরেসের কন্ঠেওÑ ‘আমরা প্রতিশোধ নিতে যাব না। আমরা ইতিহাস রচনা করতে চাই। আমরা এই শিরোপা কখনো জিতিনি এবং ফাইনালে রিয়াল বা ম্যানচেস্টার সিটিÑ কে এল তা নিয়ে আমাদের ভাবনা নেই।’ তবে ফাইনালে সিমিওনে যাকেই পান না কেন নিজেদের ঝালিয়ে নিতে সময় পাচ্ছেন ঢেরÑ ‘এই ফাইনালের জন্য আমরা আরো সময় পাবো। সেই বছর (২০১৪) আমরা এক সপ্তাহে বার্সেলোনার বিপক্ষে ফাইনালে খেলেছি এবং পরের সপ্তাহে রিয়ালের বিপক্ষে আরেকটি।’
আগামী ২৮ মে ইটালির মিলানে অনুষ্ঠিত হবে গ্রান্ড ফাইনাল। কে জানে সময়ের আরেক সেরা দলকে হারিয়ে মিলানে ইতিহাস রচনা করতে পারবে কি-না অ্যাটলেটিকো।

এক নজরে ফল
বায়ার্ন মিউনিখ    :    অ্যাটলেটিকো মাদ্রিদ
২    ১ম লেগ    ১
০    ২য় লেগ    ১
দুই লেগ মিলে ২ : ২ গোলে সমতা
অ্যাওয়ে গোলের সুবিধা নিয়ে ফাইনালে অ্যাটলেটিকো



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: ফাইনালে সিমিওনের প্রত্যয়ী অ্যাটলেটিকো
আরও পড়ুন
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ