Inqilab Logo

বৃহস্পতিবার, ০৯ মে ২০২৪, ২৬ বৈশাখ ১৪৩১, ২৯ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

নির্বাচনে স্থানীয় মহাজোটের এমপি প্রার্থীদের পরাজয়ের অপেক্ষায় সিলেটের তৃণমূল (!)

স্টাফ রিপোর্টার, সাভার | প্রকাশের সময় : ৩ ডিসেম্বর, ২০১৮, ৭:০৮ পিএম

আবার এমপি হচ্ছেন এমন হাবভাব সিলেটের আওয়ামীলীগ তথা মহাজোট প্রার্থীদের ! মহাজোটের নতুন মুখেও একই স্বপ্ন। পর্দার আড়ালে সক্রিয় একাধিক শক্তি টনিকে ক্ষমতার মসনদে বসাবে তাদের এমন ভাবনায় তারা চরম আত্মবিশ্বাসী। সেভাবেই কথা বলছেন নিজ বলয়ের নেতাকর্মীদের। প্রার্থীদের এহেন আচরণে অনেক ক্ষেত্রে হতভম্ব দলের কর্মী-সমর্থকরা। দলের কর্মী সমর্থক হলেও প্রার্থীদের সাথে গড়ে উঠেছে বিশাল দূরত্ব। দূরত্ব গোছানো বা মূল্যায়নের তোয়াক্কা করছেন না প্রার্থীরা। বরং ক্ষুব্ধ নেতাকর্মীদের রীতিমতো থ্রেট করে যাচ্ছেন প্রার্থীরা। কারো বিরোধিতায় কিছু যাবে আসবে না তাদের। এমপি বিরোধী অনুযোগ, অভিযোগ দলের হাই কমান্ডের নিকট দেওয়ার পরও মনোনয়ন লাভের ঘটনায় আরো বেপরোয়া হয়ে উঠছেন স্থানীয় এমপিরা। সিলেটের বেশিরভাগ এমপিদের বিরুদ্ধে ছিল অভিযোগের পাহাড়। বিরোধী দলের নয়, খোদ দলের নেতাকর্মীরা দাঁড়িয়েছিলেন এমপিদের বিতর্কিত কর্মকাণ্ডের বিরুদ্ধে। বিরোধী রাজনৈতিক নেতাকর্মীদের তোষন-লালন, দল বিরোধী কার্যক্রম, বলয় কেন্দ্রিক দৌরাত্ব, উন্নয়ন প্রকল্প নিয়ে দুর্নীতি, দলবাজি, মুক্তিযুদ্ধের চেতনা বিরোধী ঘটনা, স্থানীয় একাধিক নির্বাচনে দলীয় প্রার্থীদের বিরুদ্ধে অবস্থানের নানা অভিযোগ রয়েছে এমপিদের উপর। দলের হাই কমান্ডও এসব ঘটনায় জড়িত এমপিদের বাদ দেওয়ার আশ্বাস দিয়ে মাঠে নামিয়েছিলেন একাধিক নতুন মুখকে। সেই কারনে মনোনয়ন প্রত্যাশীদের তালিকা হয়ে পড়েছিল দীর্ঘ। এমপিদের বঞ্চনায় অতিষ্ঠ দলীয় নেতাকর্মীদের সংগঠিত করে মাঠে সক্রিয় হয়ে উঠেছিলেন তারা। রব উঠেছিল, এমপিদের বিপরীতে নতুন মুখ আসছে দলের পক্ষে ভোট যুদ্ধে। তাই নেতাকর্মীরা নতুন নেতৃত্বে চাঙ্গা ছিল সিলেট প্রায় সবগুলো আসনে।
এতে করে দলের কার্যক্রম ছিল পাল্টা-পাল্টি। কিন্তু শেষ পর্যন্ত নির্বাচনের নতুন সড়কে পুরাতন মুখেই আস্থাশীল হয়ে উঠে মহাজোট। রহস্যজনকভাবে এসব প্রার্থীদের মনোনয়ন লাভের ঘটনায়, মন ভেঙ্গে যায় বেশিরভাগ তৃণমূল নেতাকর্মীর। কারন দলের জন্য তাদের ধ্যান জ্ঞান, ত্যাগ তিতিক্ষা হলেও দলের মনোনীত এমপি প্রার্থীদের রোষানলে তারা। একদিকে বিরোধী রাজনীতিক দল অপরদিকে খোদ দলীয় এমপিদের বেপরোয়া মনোভাব। বাস্তবিক অর্থে চরম বিপাকে দলের এমপি বিরোধী সক্রিয় নেতাকর্মীরা। এমপিদের অনৈতিক আধিপত্যের বিরুদ্ধে অবস্থান নেওয়ায় তারা তটস্থ হয়ে উঠেছেন। কি করবেন নির্বাচনে এই নিয়ে অনিশ্চয়তায় ভুগছেন তারা। দল দীর্ঘ ১০ বছর ধরে ক্ষমতায় থাকার পরও এমপিদের বৈরী আচরণে মূলত তারা ঘরে থেকেও পর হয়ে থেকেছেন। সুবিধার চেয়ে নানামুখী বঞ্চনা ছিল তাদের সঙ্গী। সিলেটের বেশিরভাগ উপজেলায় কমিটি দলের সাংগঠনিক ধারাবাহিকতায় গঠন করা হয়নি। এক যুগের বেশি সময় অতিবাহিত হলেও কমিটি গঠন করা যায়নি এমপিদের অসহযোগিতা ও নেতিবাচক মনোভাবে। এমপিদের আধিপত্য খর্ব হতে পারে সেকারণে কমিটিকে স্থবির করে রাখা হয়েছে। সাংগঠনিক ভিত্তি বা নতুন নেতৃত্ব চ্যালেঞ্জ করতে পারে, সেই আশংকায় কমিটি নিয়ে মাথা ঘামাতে যাননি এমপিরা। বেশিরভাগ এমপিদের টার্গেট ক্ষমতা। দলের সাংগঠনিক অবস্থান নিয়ে তাদের মধ্যে বিরাজ করতো অনীহা। এমপিরা নিজদের ক্ষমতা ধরে রাখতে মনোযোগী হলেও সাংগঠনিক নতুন নেতৃত্ব দলের ভিত্তি সেই চিন্তার ধারধারেনি তারা। নিজস্ব বলয় নিয়েই পার করেছেন ক্ষমতার পুরো সময়। জী-হুজুর মার্কা কর্মী-সমর্থকই এমপিদের সম্বল। সেই কর্মী-সমর্থক নিয়ে নির্বাচনী বৈতরণী পার করতে চান এবার এমপিরা। এমপিদের নিজস্ব বলয়ের বাইরে রয়েছেন বিশাল কর্মী-সমর্থক দলে। যারা এমপিদের বিরুদ্ধে রয়েছেন সক্রিয়। সিলেটের একাধিক স্থানে প্রকাশ্যে মনোনয়ন লাভকারী এমপিদের মনোনয়নের বিরুদ্ধে মিছিল-মিটিং করছেন। মনোনয়ন পরিবর্তনে জন্য প্রতিবাদ করছেন জোরেশোরে।

স্থানীয় একাধিক রাজনীতিক বিশ্লেষকের মতে, আ‘লীগের নীতি নির্ধারক মহলের কঠোর হুঁশিয়ারির কারনে মনোনয়ন লাভকারী এমপিদের বিরুদ্ধে দলের অনেকে সম্ভাবনা থাকার পরও বিদ্রোহী প্রার্থী হতে পারছেন না। প্রার্থী হলেই স্থায়ীভাবে বহি:স্কার করে দেওয়া হবে। এমন হুশিয়ারী দিলেও, এমপিদের নির্দেশ দেওয়া হয়নি মনোনয়ন বঞ্চিত বা ক্ষুব্ধ দলীয় নেতাকর্মীদের মান অভিমান ভাংগানোর। বরং আওয়াজ আসছে পুনরায় দেশে সরকার গঠন করছে আওয়ামীলীগ তথা মহাজোট। তাই এমপিরাও দলের তৃণমল বা ভোট নিয়ে চিন্তিত নয়, তারা ক্ষমতায় যাবেন-ই। সাধারন বা দলের নেতাকর্মীদের একচ্ছত্র ভোটের বদলে, নৈপথ্যের শক্তিধর কারো মুখাপেক্ষি হয়ে বিজয়ের আশাবাদি এখন এমপিরা। মহাজোটের ভোটের বাজার মান্দা এই উপলব্ধি তৃণমুলে দলের নেতাকর্মীদের, সেকারনে ভোট যুদ্ধে মনোনয়ন লাভকারী এমপিরা রয়েছেন চরম ঝুঁকিতে। তারপরও দলের নেতাকর্মীদের পাত্তা দেওয়ার প্রয়োজনবোধ করছেন না প্রার্থীরা উল্টো বিজয়ের স্বপ্নে চরম অহংকারী হয়ে আছেন তারা। সেই অংহকারের নেপথ্যে শক্তি নিয়ে কৌতুল বিরাজ করছে খোদ দলের নেতাকর্মীদের মধ্যে। তবে নেতাকর্মীরা দেশের ক্ষমতায় পুনরায় দলের বিজয় আকাংখা করলেও স্থানীয় এলাকায় দল মনোনীত এমপি প্রার্থীদের পরাজয়ের অপেক্ষায় রয়েছেন।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: জাতীয় সংসদ নির্বাচন


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ