Inqilab Logo

রোববার ১৭ নভেম্বর ২০২৪, ০২ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১৪ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

ভোটযুদ্ধে খেলাপিরা!

অর্থনৈতিক রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ৩ ডিসেম্বর, ২০১৮, ১২:০২ এএম | আপডেট : ১২:২৯ এএম, ৩ ডিসেম্বর, ২০১৮

‘ঋণখেলাপি’ তকমা থাকায় প্রভাবশালী অনেকের মনোনয়নপত্র বাতিল হয়েছে। আবার অনেকই ঋণ পুনঃতফসিলের মাধ্যমে আসন্ন সংসদ নির্বাচনে অংশ নেওয়ার সুযোগ পাচ্ছেন। এক্ষেত্রে বাংলাদেশ ব্যাংক বড় ভূমিকা রাখছে। ইতোমধ্যে দুই শতাধিক ঋণখেলাপি প্রার্থীকে ‘গ্রিন সিগন্যাল’ দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার শেষ দিন (২৮ নভেম্বর) পর্যন্ত ২০৫টি আবেদন অনুমোদন করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। এর বাইরে নির্ধারিত সময়ের পর আরও ডজনখানেক আবেদন অনুমোদন করেছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। তবে আরও প্রায় শতাধিক আবেদনে সাড়া দেয়নি কেন্দ্রীয় ব্যাংক। আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশ নেওয়া প্রার্থীদের পক্ষে দেশের তফসিলি ব্যাংকগুলো ঋণ পুনঃতফসিল অনুমোদনের জন্য কেন্দ্রীয় ব্যাংকে পাঠানো হয়। এর আগে ব্যাংকগুলোর পরিচালনা পরিষদে ঋণখেলাপিদের ছাড় দিয়ে নিয়মিত করে দিয়েছে।
নির্বাচন কমিশন থেকে পাঠানো তালিকা কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ক্রেডিট ইনফরমেশন ব্যুরোতে (সিআইবি) যাচাই-বাছাই করে ৪১ জন খেলাপিকে শনাক্ত বাংলাদেশ ব্যাংক। সংশ্লিষ্টরা জানান, ঋণখেলাপিদের ঠেকাতে বাংলাদেশ ব্যাংক উদ্যোগ নিলেও আগেই ঋণখেলাপিদের ছাড় দিয়ে নিয়মিত করে দিয়েছে ব্যাংকগুলো। বিশেষ করে উল্লেখযোগ্যসংখ্যক প্রভাবশালী প্রার্থী নানাভাবে সংশ্লিষ্টদের ‘ম্যানেজড’ করে নির্ধারিত সময়ের মধ্যেই তাদের খেলাপি ঋণ নবায়ন করে নিয়েছেন। আবার শুধু ব্যাংকের ক্ষেত্রে খেলাপিদের চিহ্নিত করলেও অনেক প্রার্থী আর্থিক প্রতিষ্ঠানে খেলাপি থাকা সত্তে¡ও তার হিসাব নেয়া হয়নি বলে জানা গেছে। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কর্মকর্তারা বলছেন, নির্বাচনকে কেন্দ্র করে কয়েক শত প্রার্থীর ঋণ পুনঃতফসিল করা হলেও এই সময়ে বড় অঙ্কের খেলাপি ঋণ আদায় করা সম্ভব হয়েছে। গত ২৮ নভেম্বর পর্যন্ত মোট ২০৫টি আবেদন কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কাছে আসে। এর বাইরে নির্ধারিত সময়ের পর আরও ১৫টি পুনঃতফসিলের আবেদন জমা পড়ে। এই আবেদনগুলো বিশেষ বিবেচনায় অনুমোদন দেওয়া হয়। ব্যাংক কোম্পানি আইন অনুযায়ী, সর্বোচ্চ ৩ বার যেকোনও গ্রাহক ঋণ পুনঃতফসিল সুবিধা নিতে পারেন। প্রথমবার পুনঃতফসিলের জন্য বকেয়া কিস্তির ১৫ শতাংশ বা মোট পাওনা ১০ শতাংশের মধ্যে যেটি কম সেই পরিমাণ নগদ অর্থ জমা দিতে হয়। দ্বিতীয়বার পুনঃতফসিল সুবিধা নিতে হলে বকেয়া কিস্তির ৩০ শতাংশ বা মোট পাওনার ২০ শতাংশের মধ্যে যেটি কম, তৃতীয়বার পুনঃতফসিলের জন্য বকেয়া কিস্তির ৫০ শতাংশ বা মোট পাওনার ৩০ শতাংশের মধ্যে যেটি কম সেই পরিমাণ নগদ অর্থ জমা দিতে হয়।
বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র ও নির্বাহী পরিচালক মো. সিরাজুল ইসলাম বলেন, ‘ঋণ পুনঃতফসিল আগেও হয়েছে। এখনও হচ্ছে। ব্যাংকিং সিস্টেমে এটি একটি নিয়মিত প্রক্রিয়া।’ তিনি বলেন, ‘ব্যাংকগুলো সম্প্রতি বাংলাদেশ ব্যাংকের কাছে যেসব আবেদন পাঠিয়েছে তা নিয়মানুযায়ী বিবেচনা করা হয়েছে।’
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, এ বছরের জুন পর্যন্ত মোট খেলাপি ঋণের পরিমাণ ৮৯ হাজার ৩৪০ কোটি টাকা; যা বিতরণ করা ঋণের ১০ দশমিক ৪১ শতাংশ। আর অবলোপন করা ঋণের পরিমাণ যোগ করা হলে খেলাপি ঋণ দাঁড়ায় ১ লাখ ৩৮ হাজার কোটি টাকা।
বাংলাদেশ ব্যাংকের সংশ্লিষ্ট এক কর্মকর্তা বলেন, এ বছরের সেপ্টেম্বর ভিত্তিক প্রতিবেদন তৈরি হচ্ছে। এখনও শেষ হয়নি। যেখানে জুন প্রান্তিকের চেয়ে খেলাপি ঋণের পরিমাণ কিছুটা কমে এসেছে। খুব শিগগিরই প্রতিবেদনটি প্রকাশ করা হবে।
প্রসঙ্গত, পুনঃতফসিলের মাধ্যমে গত বছরের শেষদিকে খেলাপি ঋণ কিছুটা কমিয়ে এনেছিল দেশের ব্যাংকগুলো। তবে বিশেষ সুবিধায় ২০১৫ সালে পুনর্গঠন করা ঋণের বড় একটি অংশ এখনও খেলাপি।
সাধারণত কোনও ঋণ নির্দিষ্ট সময়ে পরিশোধ না করা হলে ওই ঋণকে খেলাপি ঋণ হিসেবে ঘোষণা করে ব্যাংক।
এদিকে সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে ঋণখেলাপি প্রার্থীদের চিহ্নিত করতে বিশেষ সিআইবি সেল গঠন করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। ওই সেল গত ২৯ নভেম্বর থেকে প্রার্থীদের ঋণ সংক্রান্ত তথ্য যাচাই শুরু করে। শতাধিক ব্যক্তিকে খেলাপিকে হিসেবে শনাক্ত করা হয়েছে।
এর আগে ঋণখেলাপি প্রার্থী চিহ্নিত করতে গত ২২ নভেম্বর বাংলাদেশ ব্যাংকের ব্যাংকিং প্রবিধি ও নীতি বিভাগ থেকে দেশের সব বাণিজ্যিক ব্যাংককে চিঠি পাঠানো হয়। ওই চিঠিতে রিটার্নিং অফিসারের কাছ থেকে নেওয়া তথ্য প্রয়োজনীয় যাচাই-বাছাই শেষে সংশ্লিষ্ট রিটার্নিং কর্মকর্তাকে ঋণখেলাপ সংক্রান্ত তথ্য সরবরাহ করার কথা বলা হয়। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নির্দেশনায় বলা হয়েছে, গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশের ১২ অনুচ্ছেদের বিধান অনুযায়ী ঋণখেলাপি ব্যক্তিরা জাতীয় সংসদের সদস্য হওয়ার যোগ্য নন।#



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: জাতীয় সংসদ নির্বাচন


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ