পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
টঙ্গিতে বিশ্ব ইজতেমা ময়দানে তাবলীগের দুই পক্ষের দফায় দফায় ব্যাপক সংঘর্ষে ইসমাইল মন্ডল (৭০) নামে একজন নিহত ও তিন শতাধিক আহত হয়েছে। গতকাল শনিবার সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত সংঘর্ষের পর বিকেল থেকে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়। পুলিশসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।
দু’পক্ষের মধ্যে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া ও সংঘর্ষের কারণে বিমানবন্দর সড়ক সংলগ্ন খিলক্ষেত, কুড়িল, বনানী, মিরপুরসহ আশপাশের সংযোগ সড়কগুলোতে তীব্র যানজটের সৃষ্টি হয়। এতে ভোগান্তিতে পড়েন কর্মস্থলগামী মানুষ। এমনকি বিদেশগামী যাত্রীরাও বিপাকে পড়েন। বিকেল পৌনে ৪টার দিকে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা ইজতেমা ময়দানে উপস্থিত হয়ে মুসল্লিদের চলে যেতে বলেন। এরপর দু’পক্ষের লোকজনই সেখান থেকে সরে যান। এ ঘটনার পর গতকাল বিকেলে তাবলীগ জামাতের দুই পক্ষের সঙ্গে বৈঠক করেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল। আগামী ৩০ ডিসেম্বর একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে বলে নির্বাচন পর্যন্ত ইজতেমার সব আয়োজন বন্ধ থাকার সিদ্ধান্ত হয়েছে বৈঠকে। গতকাল সন্ধ্যায় টঙ্গী পূর্ব থানার ওসি মো. কামাল হোসেন দৈনিক ইনকিলাবকে জানান, সাদপন্থী ও জোবায়েরপন্থীদের মধ্যে দফায় দফায় ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া ও সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। পরে পুলিশ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ আনে। এ ঘটনায় একজন নিহত হয়েছে। আমরা বিষয়টি তদন্ত করছি। বর্তমানে তুরাগ তীরে বিশ্ব ইজতেমার ময়দানের পরিস্থিতি স্বাভাবিক রয়েছে। এ ঘটনায় একজন নিহত ও বহু আহত হয়েছেন। আমরা মামলার প্রস্তুতি নিচ্ছি।
টঙ্গী সরকারি হাসপাতালের চিকিৎসক মনিরা জানান, ইজতেমা ময়দানে সংঘর্ঘের ঘটনায় শতাধিক মুসল্লিকে হাসপাতালে চিকিৎসা দেয়া হয়েছে। ঢাকা মহানগর পুলিশের ট্র্রাফিক উত্তরা বিভাগের উপ-কমিশনার প্রবীর কুমার দাশ জানান, ভোর থেকেই আশকোনা এলাকায় মারমুখী অবস্থান নেয় তাবলীগ জামায়াতের দুই গ্রুপ। উত্তরার আবদুল্লাহপুরে অবস্থান নেয় আরেক পক্ষ। সংঘর্ষের পর ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ায় সড়ক স্থবির হয়ে পড়ে। তারা সড়কে অবস্থান নেয়ায় যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায় বিকেল পর্যন্ত।
স্থানীয় ও তাবলীগের মুরব্বিদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ৩০ নভেম্বর থেকে (৪ ডিসেম্বর পর্যন্ত) পাঁচ দিনের জোড় (সম্মিলন) আয়োজন করার কথা ছিল ভারতের তাবলীগ জামাতের মুরব্বি মাওলানা সাদ কান্ধলভির অনুসারীদের। আর তাবলীগের দেওবন্দপন্থীরা ঘোষণা দিয়েছেন, তারা ৭ ডিসেম্বর থেকে ১১ ডিসেম্বর পর্যন্ত জোড় আয়োজন করবেন। সাদপন্থীদের আগামী ১১ জানুয়ারি থেকে ১৩ জানুয়ারি পর্যন্ত তিন দিনের ইজতেমা এবং দেওবন্দপন্থীদের আগামী ১৮ জানুয়ারি থেকে ২০ জানুয়ারি পর্যন্ত তিনদিনের ইজতেমা করার কথা রয়েছে। এই বিবাদের জেরে আগে থেকেই ইজতেমা ময়দানে দেওবন্দপন্থীরা মাঠ দখল করে পাহারা দিচ্ছে বলে গত ২৯ নভেম্বর সংবাদ সম্মেলনে দাবি করেন সাদপন্থীরা। এ ক্ষেত্রে প্রধান নির্বাচন কমিশনার ও প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ কামনাও করেন সাদপন্থী তাবলীগের অনুসারীরা।
সাদপন্থীরা বলছেন, তাদের আয়োজনকে ঠেকাতে আরেক গ্রুপ গতকাল ভোরে ঢাকা থেকে টঙ্গীমুখী সড়কে অবস্থান নিলেই এ অবস্থার সৃষ্টি হয়।
টঙ্গী থেকে মো. হেদায়েত উল্লাহ জানান, টইজতেমা সূত্র এবং প্রত্যক্ষদর্শী মুসল্লিরা জানান, টঙ্গীর বিশ্ব ইজতেমা ময়দানে জোড় ইজতেমাকে কেন্দ্র করে মাওলানা জুবায়ের ও মাওলানা সাদ গ্রুপে বিভক্ত হয়ে পড়েন মুসল্লিরা। জোড় ইজতেমা উপলক্ষ্যে মাওলানা জুবায়ের গ্রুপের তাবলীগ জামাতের মুসল্লিরা ইজতেমা ময়দানে আগে থেকেই অবস্থান নিয়েছিলেন। শনিবার ভোর থেকেই সাদ গ্রুপের অনুসারীরা ইজতেমা ময়দান এলাকায় আসতে শুরু করেন এবং ভেতরে প্রবেশের চেষ্টা চালান। এ নিয়ে ইজতেমা মাঠের প্রবেশ পথগুলোতে উভয় পক্ষের মধ্যে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। এতে দফায় দফায় উভয় গ্রুপের মধ্যে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া ও সংঘর্ষের ঘটনা ঘটতে থাকে।
প্রত্যক্ষদর্শী মুসল্লিরা জানান, সকাল থেকে সাদ গ্রুপের মুসল্লিরা ইজতেমা মাঠের চারপাশের প্রবেশপথ এবং ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কে অবস্থান নেন। এতে ওই সড়কে যানবাহন চলাচলে বিঘ্ন ঘটে। এ সময় যোবায়ের গ্রুপের মুসল্লিরাও মহাসড়কে এসে অবস্থান নিলে উভয় গ্রুপের মধ্যে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটে। একপর্যায়ে দুপুরের দিকে সাদ গ্রুপের মুসল্লিরা জুবায়ের গ্রুপের মুসল্লিদের ওপর হামলা চালালে উভয় পক্ষের মধ্যে ব্যাপক সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। এতে ইসমাইল মন্ডল (৭০) নামে একজন মুসল্লি ঘটনাস্থলেই নিহত হন। ইসমাইল মন্ডলের বাবার নাম খলিল মন্ডল এবং তার গ্রামের বাড়ি মুন্সিগঞ্জ জেলায় বলে জানা গেছে। এ ছাড়াও উভয় পক্ষের মধ্যে ইটপাটকেল নিক্ষেপ ও লাঠিসোঁটার আঘাতে মো. সাইফুল ইসলাম (৪০), মাওলানা তাওহিদুল ইসলাম (৫৫), হাফেজ আবু বক্কর (৩৫), মো. গোলাম কিবরিয়া (৪২), জুয়েল (১৮), হাজী মো. রেজাউল করিম (৪৫), আশরাফুল ইসলাম (২৪), মতিউর রহমান (৪২), মাহমুদ হাসান (৩২), শামীম আহমেদ (২৩), মনিরুল ইসলাম (২৫) মানিক হোসেন (৩৩), দাউদ আহমেদ (৩৪), তাহের আলী (৪৪), আবু নাঈম (২৩), আবুল কালাম আজাদসহ (৪৪) অন্ততঃ তিন শতাধিক মুসল্লি আহত হয়ে টঙ্গী আহসান উল্লাহ মাস্টার জেনারেল হাসপাতাল ও স্থানীয় বিভিন্ন ক্লিনিকে চিকিৎসা নিতে জড়ো হন। আহতদের বেশির ভাগেরই মাথা, নাক ও পিঠে আঘাতপ্রাপ্ত হয়ে অঝোরে রক্ত ঝরছিল। গুরুতর আহতদের ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। এ সময় রক্তাক্ত অবস্থায় শতাধিক আহত মুসল্লিকে টঙ্গী হাসপাতালসহ আশপাশের বিভিন্ন হাসপাতালে নেয়া হয়। সেখান থেকে গুরুতর আহতদের ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়।
এ ব্যাপারে যোগাযোগ করলে সরকারি হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসক ডা. পারভেজ হোসেন বলেন, এক সাথে রক্তাক্ত জখমের এত রোগী টঙ্গী হাসপাতালে আর আসেনি। আমরা সবাই মিলে তাদের প্রাথমিক চিকিৎসা দিতে হিমশিম খেতে হচ্ছে।
প্রত্যক্ষদর্শী এক মুসল্লি জানান, শনিবার সকাল ৯টা ৪৫ মিনিটের সময় রাজধানীর উত্তরা ১০ নম্বর সেক্টরে বিশ্বনবী (স.) দারুল উলুম মাদরাসার সামনে তাবলীগ জামাতের দু’গ্রুপ সাদপন্থী ও যোবায়েরপন্থীদের মধ্যে সংঘর্ষে অন্তত ২০ জন আহত হয়েছেন। এ ঘটনাকে কেন্দ্র করে উভয় গ্রুপের মধ্যে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে এবং উভয় গ্রুপের মুসল্লিরা মহসড়কে অবস্থান নিলে বিমানবন্দর থেকে গাজীপুর চৌরাস্তা পর্যন্ত ঢাকা-ময়মনসিংহ সড়কের যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। এ সময় শত শত সাধারণ মানুষ ভোগান্তিতে পড়েন। ঘণ্টার পর ঘণ্টা যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। অনেকেই যানবাহন না থাকায় হেঁটে গন্তব্যের উদ্দেশ্যে যাত্রা করেন। শুধু তাই নয়, বিদেশগামী সাধারণ মানুষও চরম ভোগান্তির শিকার হন। অনেকে বিমানবন্দরে আসার জন্য ট্টেনে চড়ে বিমানবন্দর স্টেশনে আসেন। একই ধরনের পরিস্থিতিতে পড়তে হয় বিদেশ ফেরত যাত্রীদের। অনেকেই দেখে গেছে যানবাহন না থাকায় ঘণ্টার পর ঘণ্টা বিমানবন্দরে বসে আছেন।
মুসল্লিরা আরো জানান, এর আগে সকাল সোয়া ৮টার দিকে শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর গোলচত্বরে তাবলীগের দুই পক্ষের মধ্যে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটে। এতে বিমানবন্দর সড়কে তীব্র যানজট সৃষ্টি হয়। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে ঘটনাস্থলে কয়েক প্লাটুন পুলিশ মোতায়েন করা হয়। প্রশাসনের পক্ষ থেকে দ্রুততম সময়ের মধ্যে ইজতেমা ময়দান খালি করে দেয়ার জন্য তাবলীগ জামাতের উভয় পক্ষকে নির্দেশ দেয়া হয়।
টঙ্গী কামারপাড়া রোডের চা-বিক্রেতা সোহাগ ও রাকিব জানান, জোবায়েরপন্থী মুসল্লিরা বুধবার ২৮ নভেম্বর রাত থেকে ইজতেমা ময়দানের ভেতরে অবস্থান নেন। তারা শুক্রবার ৩০ নভেম্বর সকালে ইজতেমা ময়দানে ঢোকার সব গেট বন্ধ করে দেন। বাইরের সাধারণ মুসল্লিদেরও ইজতেমা মাঠে জুমার নামাজ আদায় করতে দেয়া হয়নি।
তারা আরো জানান, শনিবার ভোরে ফজরের নামাজের আগে থেকে মাওলানা সাদপন্থী মুসল্লিরা ইজতেমা মাঠের চারদিকে টঙ্গী বাটাগেট ও কামাড়পাড়া রোডে তসবিহ ও কিতাব হাতে অবস্থান নেন। পরে সকাল সাড়ে ১০টায় ইজতেমা মাঠের ভেতর থেকে সাদপন্থী মুসল্লিদের উদ্দেশে ইটপাটকেল নিক্ষেপ করেন। পরে ওই ইটপাটকেলগুলো নিয়ে সাদপন্থী মুসল্লিরা পাল্টা জোবায়েরপন্থী মুসল্লিদের দিকে নিক্ষেপ করেন। এতে উভয়পক্ষের প্রায় শতাধিক মুসল্লি মাথায় আঘাত পান।
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে বৈঠক
৩০ ডিসেম্বর একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। এ কারণে নির্বাচন পর্যন্ত ইজতেমার সব আয়োজন বন্ধ থাকার নির্দেশ দিয়েছে প্রশাসন। শনিবার বিকেলে সচিবালয়ে তাবলীগ জামাতের দুই পক্ষের সঙ্গে বৈঠক শেষে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল বলেন, সভায় সর্বসম্মতিক্রমে আমরা সিদ্ধান্ত নিয়েছি যে, ৩০ ডিসেম্বর জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। সে জন্য আমরা আগেও বলেছিলাম নির্বাচনের আগে কোনো ধরনের ইজতেমা হবে না। আমরা সেটাকেই আবার রিপিট করেছি- ইলেকশন পর্যন্ত ইজতেমার জন্য সব ধরনের প্রস্তুতিসভা কিংবা জোড় ইজতেমা কিংবা ইজতেমার জন্য সব ধরনের কার্যকলাপ সারা দেশব্যাপী বন্ধ থাকবে।
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আরো বলেন, আমরা আবারো রিপিট করছি, ইজতেমার তারিখ কিন্তু বন্ধ হচ্ছে না, ইজতেমার তারিখ শুধু শিফট হচ্ছে, ইলেকশনের পর যে কোনো সময় এটা হবে। এখন থেকে ইজতেমার মাঠ প্রশাসনের নিয়ন্ত্রণে থাকবে। প্রশাসন সেটা নিয়ন্ত্রণে রাখবে, আমরা সেখানে কাউকে অ্যালাউ করব না। আজকে যে ঘটনা ঘটেছে, তারা সবাই নিরপেক্ষ তদন্ত চেয়েছেন। এ বিষয়ে ফৌজদারি মামলা হবে। ফৌজদারি মামলায় যেভাবে তদন্ত হয়, সেভাবেই তদন্ত হবে। তদন্তে চিহ্নিত দোষী ব্যক্তিদের আইনানুযায়ী বিচার হবে। বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন দিল্লি মারকাজের মাওলানা মোহাম্মদ সাদ কান্ধলভিপন্থী বাংলাদেশে তাবলীগের শুরা সদস্য সৈয়দ ওয়াসিফুল ইসলাম, বিরোধীপক্ষ কওমিপন্থী মাওলানা জুবায়েরের পক্ষ থেকে তাবলীগের উপদেষ্টা মাওলানা আশরাফ আলী ও আবদুল কুদ্দুস প্রমুখ। এ ছাড়া পুলিশের মহাপরিদর্শক মোহাম্মদ জাবেদ পাটোয়ারী, র্যাবের মহাপরিচালক বেনজীর আহমেদ, ঢাকা মেট্টোপলিটন পুলিশ কমিশনার মো. আছাদুজ্জামান মিয়া ও মাওলানা ফরিদ উদ্দীন মাসঊদ প্রমুখ।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।