Inqilab Logo

শুক্রবার, ১৭ মে ২০২৪, ০৩ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১, ০৮ জিলক্বদ ১৪৪৫ হিজরী

ভয়ভীতির ঊর্ধ্বে উঠে দায়িত্ব পালন করুন : ইসিকে ড. কামাল

গ্রেফতার বন্ধ না হলে বৃহত্তর কর্মসূচি : মির্জা ফখরুল

বিশেষ সংবাদদাতা | প্রকাশের সময় : ২ ডিসেম্বর, ২০১৮, ১২:০২ এএম

জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের আহবায়ক বিশিষ্ট আইনজীবী ড. কামাল হোসেন দলীয় আনুগত্য ও ভয়ভীতির উর্ধ্বে উঠে নিরপেক্ষভাবে দায়িত্ব পালন করার জন্য নির্বাচন কমিশনের প্রতি আহবান জানিয়েছেন। নির্বাচন যাতে অবাধ ও সুষ্ঠুভাবে হয় সেজন্য জনগণকে স্বতস্ফূর্তভাবে ভোটকেন্দ্রে গিয়ে ভোটপ্রদান ও ভোটকেন্দ্র পাহারা দিতে বলেছেন। জনগন যদি তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে না পারেন তাহলে দেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্বই হুমকির মুখে পড়বে। গতকাল জাতীয় প্রেসক্লাবে নির্বাচন ও চলমান রাজনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ কথা বলেন।
সংবাদ সম্মেলনে ঐক্যফ্রন্টের মুখপাত্র বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন,  অবাধ সুষ্ঠু নিরপেক্ষ নির্বাচনের জন্য যে ‘লেভেল  প্লেয়িং ফিল্ড’ প্রয়োজন তা এখনো তৈরি হয়নি। গায়েবী মামলায় নেতাকর্মীদের গ্রেফতার অব্যাহত আছে। নির্বাচনে প্রার্থী হয়েছেন তাদেরও গ্রেফতার করা হয়েছেন। এ অবস্থার পরিবর্তন না হলে সুষ্ঠু নির্বাচনের স্বার্থে বৃহত্তর আন্দোলন কর্মসূচি দেয়া হবে।
তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী প্রতিশ্রুতি দিলেও তফসিল ঘোষণার পরে বিরোধীপক্ষের নেতাকর্মীদের অনবরত গ্রেফতার চলছে। সরকারের নীলনকশা বাস্তবায়নে কাজ করছে নির্বাচন কমিশন। নির্বাচন গ্রহণযোগ্য করতে কোনো পদক্ষেপই নিচ্ছে না কমিশন। সংবাদ সম্মেলনে ঐক্যফ্রন্টের পক্ষ থেকে তফসিল ঘোষনার পর গ্রেফতার হওয়া ৬৮১জন নেতাকর্মীর তালিকা সাংবাদিকদের কাছে সরবরাহ করা হয়। এর মধ্যে তিন জন সংসদ সদস্য প্রার্থী রয়েছেন।
ড. কামাল হোসেন বলেন, সকল বাধা বিপত্তি উপেক্ষা করে সকলকে ঐক্যবদ্ধ থেকে ভোটকেন্দ্রে যেতে হবে। সরকারের সুষ্ঠু ভোট অনুষ্ঠানে কোন প্রকার বাধার সৃষ্টি করলে তা সকলে মিলে প্রতিরোধ করতে হবে। জনগণকে সক্রিয়ভাবে দেশ শাসনে অংশগ্রহণ করতে হবে। শুধু একদিন ভোট দিয়ে তাদের দায়িত্ব শেষ হয় না।
ঐক্যফ্রন্টের আহবায়ক বলেন, সংবিধান অনুযায়ী জনগণ দেশের মালিক। মালিকরা যদি তাদের সঠিক প্রতিনিধি নির্বাচন না করেন, তবে তারাই বঞ্চিত হবেন। সেই দায়িত্ব মনে রেখে সবাইকে এগিয়ে আসতে হবে। নির্বাচন যেন সুষ্ঠুভাবে হয়, সেটা জনসাধারণকে মালিক হিসেবে পাহারা দিতে হবে। ড. কামাল বলেন, অবাধ নিরপেক্ষ নির্বাচনকে সরকার বা অন্য কারো পক্ষ থেকে বাধা দেয়া হবে বলে শোনা যাচ্ছে। বাধা দিলে নির্বাচনের প্রক্রিয়াকে রক্ষা করতে হবে। বুথ খোলার সঙ্গে সঙ্গে আপনারা দল বেধে সেখানে উপস্থিত হবেন। পরিবারকে নিয়ে ভোট দিতে যাবেন। আপনাদের অধিকার আপনারা প্রতিষ্ঠিত করবেন।
তিনি বলেন, আমার একটা বিনীত নিবেদন আপনারা কষ্ট করে নির্বাচনের ব্যাপারে সর্তক থাকবেন। পাড়া-প্রতিবেশী সবাইকে নিয়ে যাতে ভোট দিতে একদম সকালে চলে যেতে পারেন, বুথ খোলার সাথে সাথে যেন আপনারা সেখানে উপস্থিত হোন। প্রত্যেক বাড়িতে যত ভোটার আছে সবাই যেন ভোট দেয় সেই ব্যবস্থা করবেন।
ড. কামাল হোসেন বলেন, দেশের মানুষ পরিবর্তন চায়। আমি দেশবাসীর প্রতি ১৯৭১ সালের মতো ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহবান জানাই। আমি বিশ্বাস করি, সুষ্ঠু ও অবাধ নির্বাচন হচ্ছে স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্বের অপরিহায্র্ অংশ। যদি জনগন তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে না পারেন তাহলে দেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্বই হুমকির মুখে পড়বে।
ভোট কেন্দ্রে সাংবাদিক প্রবেশ এবং তাদের কার্যক্রমের যে নীতিমালার কথা ইসি বলছে তা কিভাবে দেখছেন। অর্থাৎ সাংবাদিকরা কেন্দ্রে যেতে পারলেও ক্যামেরা নিতে পারবেন না , কোন ছবি বা ভিডিও ধারণ করতে পারবেন না, তাহলে দায়িত্ব পালন কি ভাবে করবেন? সাংবাদিকের মেন প্রশ্নের জবাবে ড. কামাল হোসেন বলেন, ভোটের দিন ‘ভোট কক্ষের ভেতরে ভিডিও বা স্থিরচিত্র ধারণ করা অপরাধ’ নির্বাচন কমিশনের (ইসি) এমন বক্তব্যের বিষয়ে প্রয়োজনে আদালতে যাবো। এটা আসলেই নৈতিক একটা ব্যাপার। এটা সত্যিই আইনের শাসন যদি থাকে যে ধরনের নিষেধাজ্ঞাগুলো দেয়া হচ্ছে তা অপ্রত্যাশিত, অপ্রসাঙ্গিক। এটার ব্যাপারে আমরা দেখছি, যদি কোর্টেও যেতে হয়, যেতেও পারি। কোন সময় আইনের লংঘন হলে আমরা সে বিষয়ে সচেতন আছি। এজন্য আপনাদের (সাংবাদিকরা) কাছে সহযোগিতা চাই। এই যে ছবি তোলার বিষয়টা এটা শুধু আপনার কথা বা দাবি নয়, এটা একটা উচিত কথা। আমিও মনে করি এটা উচিত কথা।
সংবাদ সম্মেলনে ড. কামালের পক্ষ থেকে লিখিত বক্তব্য পাঠ করে ঐক্যফ্রন্টের অন্যতম নেতা মাহমুদুর রহমান মান্না। বক্তব্যে বলা হয়, ৩০ ডিসেম্বরের নির্বাচনকে কেন্দ্র করে আমরা কঠিন চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি। নির্বাচনে যোগ্য প্রার্থী মনোনয়ন দেয়াটাই সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ, ঐক্যফ্রন্টের সবদলই এ ব্যাপারে সচেতন। যাচাই বাছাইয়ের পর দেশের সব আসনেই জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের একক প্রার্থী নির্ধারিত হবে।
বক্তব্যে বলা হয়, নির্বাচনের সাথে সংশ্লিষ্ট রিটার্নিং অফিসার, প্রিজাইডিং অফিসার, পোলিং অফিসারসহ সব কর্মকর্তাদের প্রতি আমাদের আহবান , আপনারা দলীয় আনুগত্যের উর্ধেব উঠে নিজ নিজ দায়িত্ব পালন করুন। পোলিং এজেন্টরা যাতে নির্ভয়ে তাদের দায়িত্ব পালন করতে পারেন সে ধরনের পরিস্থিতি তৈরি করুন। ড. কামাল হোসেন বলেন, ২০১২ সালে আমাদের স্বাধীনতার সুবর্ণ জয়ন্তীর প্রাক্কালে ৩০ ডিসেম্বরের নির্বাচন আমাদের দেশ ও জাতির জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। দেশের মানুষ এই গুরুত্ব উপলব্ধি করেছে। আশা করি , নির্বাচনে অংশগ্রহনকারী সব রাজনৈতিক দল, সকল প্রার্থী ও নির্বাচন কমিশনের সম্মিলিতভাবে দায়িত্ব পালনের ফলে আমরা একটি সুন্দর নির্বাচন পাব। এই নির্বাচনে অংশগ্রহনকারী ঐক্যফ্রন্টসহ সব প্রার্থীদের প্রতি আমার শুভেচ্ছা ও শুভ কামনা রইলো।
সংবাদ সম্মেলনে আরও উপস্থিত ছিলেন কৃষক শ্রমিক জনতা লীগের সভাপতি বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকী, গণফোরামের কার্যকরী সভাপতি এডভোকেট সুব্রত চৌধুরী, সাধারণ সম্পাদক মোস্তফা মহসীন মন্টু, ড. রেজা কিবরিয়া, গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী, ডাকসুর সাবেক ভিপি সুলতান মোহাম্মদ মনসুর, কৃষক শ্রমিক জনতালীগের সাধারণ সম্পাদক হাবিবুর রহমান তালুকদার বীর প্রতীক, ঐক্যফ্রন্টের ঢাকা মহানগরীর আহবায়ক আব্দুস সালাম প্রমুখ। #



 

Show all comments
  • Md Khan ২ ডিসেম্বর, ২০১৮, ১:০৮ এএম says : 0
    তাহলে আওয়ামীর দালালী করবে কে??? কুকুরের লেজ কখনই সোজা হয় না। ১২ বছর চুন্গায় দিয়ে রাখলে,...
    Total Reply(0) Reply
  • Selina Yesmin Shelly ২ ডিসেম্বর, ২০১৮, ১:০৮ এএম says : 0
    এতো গুণাবলীর দরকার নেই। শুধু মানুষ হয়ে বিবেকের তাড়নায় কাজ করলেই চলবে।
    Total Reply(0) Reply
  • Md Soreful ২ ডিসেম্বর, ২০১৮, ১:০৯ এএম says : 0
    Yes all right
    Total Reply(0) Reply
  • Md Masum ২ ডিসেম্বর, ২০১৮, ১:১০ এএম says : 0
    চোরে না সোনে ধর্মের কাহিনী৷ কুকুরের লাগে মুগুর Manage
    Total Reply(0) Reply
  • Rajon Msh ২ ডিসেম্বর, ২০১৮, ১:১১ এএম says : 0
    ওরা বিএনপি কে নির্বাচন করতে দিবে না। নির্বাচন কমিশন ঘেরাও করা দরকার, নতুবা কলা খাও ।
    Total Reply(0) Reply
  • Kaniz Fatema ২ ডিসেম্বর, ২০১৮, ১:১৫ এএম says : 0
    ভোটাররা যদি নিজের ইচ্ছামতো ভোট দিতে পারেন,তবে আ'লীগ সারা বাংলাদেশে কুড়িটা আসন পাবে কিনা সন্দেহ!
    Total Reply(0) Reply
  • Montasir Mamun ২ ডিসেম্বর, ২০১৮, ১:১৫ এএম says : 0
    আপনাকে আরো অনেক কাজ করতে হবে, আপনি এগিয়ে যান বাংলাদেশ আপনার পাশে আছে। যাদের করার কিছু নেই তারা কেবল আপনার সমালোচনা করে।
    Total Reply(0) Reply
  • Mohammed Kowaj Ali khan ২ ডিসেম্বর, ২০১৮, ৫:৩০ এএম says : 0
    ডঃ কামাল হোসেন। আপনি ইনশায়াল্লাহ বলে সকল রাস্ট্র বীরুদ্বীদের প্রতিহত করেন। ইনশাআল্লাহ। *********
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: জাতীয় সংসদ নির্বাচন


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ