Inqilab Logo

শুক্রবার, ০৫ জুলাই ২০২৪, ২১ আষাঢ় ১৪৩১, ২৮ যিলহজ ১৪৪৫ হিজরী

চট্টগ্রামে ঘরোয়া বৈঠকের ব্যস্ততা

কেন্দ্রভিত্তিক কমিটি গঠনের প্রস্তুতি

শফিউল আলম | প্রকাশের সময় : ২ ডিসেম্বর, ২০১৮, ১২:০২ এএম

বন্দরনগরীসহ বৃহত্তর চট্টগ্রাম অঞ্চলে দুই প্রধান দল ও জোটের নির্বাচনমুখী তৎপরতা প্রতিদিনই বৃদ্ধি পাচ্ছে। আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে মহাজোট এবং বিএনপির নেতৃত্বে ২০ দলীয় জোট ও জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট এ মুহূর্তে ঘন ঘন ঘরোয়া মিটিংয়ের দিকেই বেশী মনোযোগী হয়ে পড়েছে। তৃণমূল পর্যায়ে দল ও জোটকে আরো গোছানো এবং সুসংহত করে তোলাই এসব ঘরোয়া বৈঠকের উদ্দেশ্য বলে জানান স্থানীয় নেতৃবৃন্দ। ‘ভোটের ক্যানভাস’ অর্থাৎ প্রচার-প্রচারণার পালা শুরু হয়নি। তবে এলাকা চষে বেড়িয়ে ভোটারদের সাথে কুশল বিনিময়েও ব্যস্ত প্রার্থীরা।  
মনোনয়নপত্র বাছাই, প্রত্যাহার, চূড়ান্ত প্রার্থিতা ঘোষণা এবং প্রতীক বরাদ্দ এখনো হয়নি; তাই বলে প্রার্থীগণ ও তাদের সমর্থিত নেতা-কর্মীরা বসে নেই। নির্বাচনী এলাকাওয়ারি প্রত্যেকটি ভোট কেন্দ্রভিত্তিক পরিচালনা কমিটি গঠনের এবং প্রার্থীদের নির্বাচনী ক্যাম্প বা অফিস স্থাপনের লক্ষ্যে প্রস্তুতি-প্রক্রিয়া শুরু করেছেন উভয় জোটের তৃণমূলের নেতা-কর্মী সমর্থকগণ। এরজন্য সক্রিয় কর্মীদের মাঝে বিভিন্নমুখী কার্যক্রম পরিচালনার দায়িত্ব বণ্টন করা হচ্ছে। নির্বাচন যতই ঘনিয়ে আসছে নির্বাচনমুখী এসব তৎপরতা বাড়ছে। বিশেষ করে আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে মহাজোটের ‘নৌকা’ ও ‘লাঙল’ এবং বিএনপির নেতৃত্বে ২০ দলীয় জোট ও জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের ধানের ‘শীষ’ প্রতীকে মনোনীত প্রার্থীদের ঘরোয়া বৈঠক, উঠান বৈঠকী কর্মকান্ডের মধ্যদিয়ে প্রতিটি এলাকায় ভোটের রাজনীতি জমে উঠেছে। বিএনপি ও জোট-ঐক্যফ্রন্টের যারা বিকল্প কিংবা ‘কৌশলী’ প্রার্থী তারাও নিজ নিজ এলাকায় ছুটে যাচ্ছেন। বিকল্প প্রার্থীদেরও বক্তব্য রয়েছে।
চট্টগ্রাম বিএনপি জোটের ‘ধানের শীষ’ প্রতীকের কয়েকজন বিকল্প প্রার্থীর মনোভাব ও পরবর্তী পদক্ষেপ কী হবে জানতে চাইলে তারা এই প্রতিবেদককে বলেছেন, আমরা বিএনপির নেতৃত্বে ২০ দলীয় জোট ও জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের সর্বস্তরের নেতা-কর্মী সমর্থকদের এক কাতারে এনে আরও সুসংগঠিত করার প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি। এর পাশাপাশি যে বার্তাটি আমরা তৃণমূলের নেতা-কর্মী সমর্থক তথা দেশবাসীর কাছে পৌঁছিয়ে দিচ্ছি তা হলো- আমরা ঐক্যবদ্ধভাবেই এই নির্বাচনকে বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তি ও গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের আন্দোলনের অংশ হিসেবে নিয়েছি।
বিকল্প প্রার্থীরা বলছেন, এখানে প্রার্থী কে বড় কথা নয়, বিভ্রান্তিরও কারণ নেই। ‘ধানের শীষ’ প্রতীকই আজকে সবার বড় পরিচিয়। কাজেই কেন্দ্রীয় সিদ্ধান্তে ৯ তারিখের পর চ‚ড়ান্তভাবে প্রার্থী যিনিই হবেন তাকে যে কোনো মূল্যে বিজয়ী করার লক্ষ্যে ঐক্যবদ্ধভাবে মাঠে তৎপর থাকুন- কেন্দ্রের নির্দেশে আমরা (বিএনপি জোটের বিকল্প প্রার্থীরা) সেই বার্তাটিই দিয়ে যাচ্ছি তৃণমূলের সকল পর্যায়ে। আমরা কর্মীদের বলছি এলাকার সাধারণ জনগণকে বেশিমাত্রায় সম্পৃক্ত করতে হবে, প্রতিটি ভোটকেন্দ্র পাহারা দিতে হবে। এর ফলে চট্টগ্রামে ২০ দলীয় জোট ও জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট কর্মীরা অতীতের যে কোনো সময়ের চেয়ে এখন আরও উজ্জীবিত ও সুসংগঠিত।   
অন্যদিকে বৃহত্তর চট্টগ্রামে আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে মহাজোটের প্রার্থীরা নিজ নিজ এলাকা চষে বেড়াচ্ছেন। তৃণমূল কর্মীদের সংগঠিত করার লক্ষ্যে উঠান বৈঠক করে নির্বাচনী কলাকৌশল নির্ধারণ করছেন। নেতা-মন্ত্রী, এমপিদের ড্রয়িং রুমে এখন তিল ধারণের ঠাঁই নেই। তবে দলীয় অফিসগুলোতে কর্মীদের আনাগোনা তেমন চোখে পড়েনা। মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রী, এমপি পদে আসীন থাকা অবস্থাতেই নির্বাচনে অবতীর্ণ হওয়ার বিষয়টি প্লাস পয়েন্ট হিসেবেই দেখছেন ক্ষমতাসীন দলের নেতা-কর্মীরা।  
অবশ্য চট্টগ্রামের বেশ কয়েকটি আসনে আওয়ামী লীগ ও মহাজোটের অন্য শরিকদলের ‘একক’ প্রার্থী থাকলেও বিদ্রোহী প্রার্থী এবং মনোনয়ন-বঞ্চিতদের আছে হতাশা, ক্ষোভ-অসন্তোষ। এ কারণে প্রার্থীদের দুশ্চিন্তা এ মুহূর্তে নিজের ঘর সামলানোর উপায় নিয়েই। এরমধ্যে, চট্টগ্রাম-(হাটহাজারী) আসনে মহাজোটের শরিকদল জাতীয় পার্টির ‘লাঙল’ প্রতীকের প্রার্থী, চট্টগ্রাম-৮ (চান্দগাঁও-বায়েজিদ-বোয়ালখালী) আসনে মহাজোটের ‘নৌকা’য় জাসদ একাংশের প্রার্থী, চট্টগ্রাম-২ (ফটিকছড়ি) আসনে ‘নৌকা’ প্রতীকে মহাজোটের শরিক তরিকত ফেডারেশনের প্রার্থীরা পড়েছেন টেনশনে।
এছাড়া চট্টগ্রাম-৪ (সীতাকুন্ড), চট্টগ্রাম-৯ (কোতোয়ালী-বাকলিয়া), চট্টগ্রাম-৩ (স›দ্বীপ), চট্টগ্রাম-১৪ (চন্দনাইশ), চট্টগ্রাম-১৫ (সাতকানিয়া-লোহাগাড়া) এবং চট্টগ্রাম-১৬ (বাঁশখালী) আসনে আওয়ামী লীগ ও মহাজোটের অপর শরিক দলগুলোর মনোনয়ন-বঞ্চিতদের সাথে দূরত্ব ঘোচানো কঠিন হয়ে পড়েছে। এ নিয়ে তৃণমূল কর্মীদের মাঝে আছে মেরুকরণ।
এদিকে নির্বাচনী আচরণবিধি যাতে ভঙ্গ না হয় সেদিকে লক্ষ্য রেখে চট্টগ্রামের বিভিন্ন আসনে গতকালসহ গত তিন দিনে শহর-গ্রাম-গঞ্জ-জনপদে, হাট-বাজারে এবং প্রার্থী ও নেতাদের বাড়িঘর, কাচারী ঘরে, বাড়ির উঠানে উঠান বৈঠক হয়েছে। সেই সঙ্গে ভোটার তথা স্থানীয় জনগণের কাছাকাছি গিয়ে অন্তরঙ্গ কুশল বিনিময় ও দোয়া কামনা করছেন মহাজোট আর ঐক্যফ্রন্টের প্রার্থী ও তাদের সমর্থকগণ।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: জাতীয় সংসদ নির্বাচন


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ