পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
মানবিক বাংলাদেশ গড়ার অঙ্গীকার
রফিক মুহাম্মদ : স্বেচ্ছাচারী শাসন ব্যবস্থার অবসান করে সুশাসন, ন্যায়ভিত্তিক, শোষনমুক্ত একটি কল্যাণমূলক মানবিক রাষ্ট্র গঠনের লক্ষ্যে তৈরী হচ্ছে জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের নির্বাচনী ইশতেহার। জাতীয় ঐক্য, বিভক্তি আর নয়, কথা বলার অধিকার, গণমাধ্যমের অধিকার, আইনের সংস্কারের মাধ্যমে দেশে আইনের শাসন প্রতিষ্ঠার বিষয়কে ইশতেহারে গুরুত্ব দেয়া হচ্ছে। চলতি সপ্তাহের মধ্যে তা অনুষ্ঠানিকভাবে ঘোষণা করা হবে। বেগম খালেদা জিয়ার ‘ভিশন ২০৩০’ এবং ঐক্যফ্রন্টের ১১দফা লক্ষ্যকে সামনে রেখে নির্বাচনী ইশতেহারের খসড়া তৈরী হচ্ছে। এ ইশতেহারে দুর্নীতিমুক্ত, দক্ষ ও জবাবদিহিমূলক প্রশাসন গড়ে তুলে সুশাসন নিশ্চিতের অঙ্গিকার থাকছে। পাশাপাশি আইনের শাসন নিশ্চিত করতে বিচারবিভাগের স্বাধীনতা ও ক্ষমতা নিশ্চিত করা এবং স্বচ্ছ নিয়োগ প্রক্রিয়ার মাধ্যমে বিচারক নিয়োগের নীতমালা প্রণয়ন ও সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিল গঠন করার বিষয়ও ইশতেহারে থাকছে। ঐক্যফ্রন্টের ইশতেহারে সবচেয়ে গুরুত্ব দেয়া হচ্ছে শাসন ব্যবস্থায় ক্ষমতার ভারসাম্য আনয়নসহ প্রশাসন বিকেন্দ্রীকরণের বিষয়টি। এক ব্যক্তি কেন্দ্রিক নির্বাহীক্ষমতার অবসান কল্পে সংসদে, সরকারে, প্রেসিডেন্ট ও প্রধানমন্ত্রীর ক্ষমতার ভারসাম্য আনার কথা ইশতেহারে গুরুত্বের সাথে উল্লেখ করা হচ্ছে।
জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের ইশতেহার তৈরীতে ডা. জাফরুল্লাহর নেতৃত্বে পাঁচ সদস্যের একটি কমিটি গত প্রায় এক মাস যাবত কাজ করছেন। এ কমিটি প্রায় প্রতিদিনই বৈঠক করছেন। কমিটির অন্যান্য সদস্যরা হলেন, বিশিষ্ট সাংবাদিক মাহফুজ উল্লাহ, কৃষক শ্রমিক জনতা লীগের ইকবাল সিদ্দিকী, নাগরিক ঐক্যের ডা. জাহেদুর রহমান এবং গণফোরামের আ ও ম শফিকউল্লাহ প্রমুখ।
ঐক্যফ্রন্টের ইশতেহার তৈরী প্রসঙ্গে ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী গতকাল দৈনিক ইনকিলাবকে বলেন, আমরা ইশতেহারের খসড়া তৈরির জন্য কাজ করছি। প্রথমে খসড়া তৈরি হবে। পরে এটা ঐক্যফ্রন্টের স্টিয়ারিং কমিটির বৈঠকে চূড়ান্ত করা হবে।
ইশতেহারে কি কি থাকছে এ বিষয়ে ডা. জাফরুল্লাহ বলেন, ইশতেহারে মূল বিষয় থাকবে জাতীয় ঐক্য। আমরা আর বিভক্তি চাই না। জাতীয় ঐক্যের ভিত্তিতে আমরা একটি দুর্নীতি মুক্ত মানবিক মর্যাদা ও ন্যায় ভিত্তিক আইনের শাসনের সুন্দর বাংলাদেশ গড়ার অঙ্গিকার জাতীর সামনে তুলে ধরতে চাই। তিনি বলেন, বিএনপি চেয়ারপার্সন ঘোষিত ভিশন-২০৩০ এবং ঐক্য ফ্রন্টের ১১দফা লক্ষ্যকে সামনে রেখে নির্বাচনী ইশতেহার তৈরি হচ্ছে। আগামী এক সপ্তাহের মধ্যেই ইশতেহার ছাপানো হবে এবং তা জাতীর সামনে প্রকাশ করা হবে।
জাতীয় ঐক্য, দুর্নীতিমুক্ত, শোসন মুক্ত সমাজ গঠন এবং আইনের শাসন প্রতিষ্ঠার বিষয় ছাড়া ইশতেহারে আরও উল্লেখযোগ্য যে সব বিষয় থাকছে সেগুলো হচ্ছে, ৭০ অনুচ্ছেদসহ সংবিধানের যুগোপযোগী সংশোধন করা। বিচারবিভাগের স্বাধীনতা ও ক্ষমতা নিশ্চিত করা। দুর্নীতি দমন কমিশনকে যুগোপযোগী করার লক্ষ্যে প্রয়োজনীয় সংস্কার নিশ্চিত করা। দেশে বিনিয়োগ বৃদ্ধির পরিবেশ সৃষ্টি, বেকারত্বের অবসান ও শিক্ষিত যুবসমাজের সৃজনশীলতাসহ রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে নিয়োগ দানের ক্ষেত্রে মেধাকে যোগ্যতা হিসেবে বিবেচনা করে প্রয়োজনীয় কোটা সংস্কার করা। সকল নাগরিকের জানমালের নিরাপত্তা ও মৌলিক মানবাধিকারের নিশ্চয়তার বিধান করা। কৃষক, শ্রমিক ও দরিদ্র জনগণের শিক্ষা, চিকিৎসা, বাসস্থান ও পুষ্টি সরকারি অর্থায়নে সুনিশ্চিত করা। নারীর ক্ষমতায়ন নিশ্চিত করা। জনপ্রশাসন, পুলিশ প্রশাসন ও স্থানীয় সরকারসহ রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানসমূহকে দুর্নীতি ও দলীয়করণের কালো থাবা থেকে মুক্ত করার লক্ষ্যে এসব প্রতিষ্ঠানের সার্বিক ক্ষমতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করে প্রয়োজনীয় আইন প্রণয়ন ও কাঠামোগত সংস্কার সাধন করা। রাষ্ট্রের আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন, জনগণের আর্থিক স্বচ্ছলতা ও সামাজিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে বাংলাদেশ ব্যাংকসহ রাষ্ট্রের সকল আর্থিক প্রতিষ্ঠানসমূহের শৃঙ্খলা নিশ্চিত করা, জাতীয় সম্পদের সর্বোচ্চ ব্যবহার, সুষম বন্টন, ধনী-দরিদ্রের বৈষম্য দূরীকরণ ও জনকল্যাণমুখী অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি নিশ্চিত করা। নিম্ন আয়ের মানবিক জীবন মান নিশ্চিত করা এবং দ্রব্যমূলের সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ বেতন-মজুরি কাঠামো নির্ধারণ করা। জঙ্গিবাদ, সন্ত্রাসবাদ ও সা¤প্রদায়িকতার বিরুদ্ধে জাতীয় ঐকমত্য গঠন এবং প্রতিশোধ, প্রতিহিংসা ও নেতিবাচক রাজনীতির বিপরীতে ইতিবাচক সৃজনশীল এবং কার্যকর ভারসাম্যের রাজনীতি প্রতিষ্ঠা করা। কোনও জঙ্গিগোষ্ঠীকে বাংলাদেশের ভূখন্ড ব্যবহার করতে না দেওয়া। সকল ‘দেশের সঙ্গে বন্ধুত্ব-কারও সঙ্গে শত্রুতা নয়’-এই নীতির আলোকে জনস্বার্থ ও জাতীয় নিরাপত্তাকে সমুন্নত রেখে স্বাধীন পররাষ্ট্র নীতি অনুসরণ করা এবং প্রতিবেশী দেশসমূহের সঙ্গে পারস্পরিক সৎ-প্রতিবেশী বন্ধুত্ব ও সমতার ভিত্তিবে ব্যবসা বাণিজ্য, যোগাযোগ ও বিনিয়োগ ইত্যাদির ক্ষেত্রে আন্তরিকতাপূর্ণ সম্পর্ক গড়ে তোলার কার্যকর উদ্যোগ ও পদক্ষেপ গ্রহণ করা। বিশ্বের সকল নিপীড়িত মানুষের ন্যায়সঙ্গত অধিকার ও সংগ্রামের প্রতি পূর্ণ সমর্থন, মিয়ানমারের রোহিঙ্গা শরণার্থীদের তাদের দেশে ফেরত ও পুনর্বাসনের কূটনৈতিক তৎপরতা জোরদার এবং দেশের সার্বোভৌমত্ব ও রাষ্ট্রীয় নিরপত্তা সুরক্ষার লক্ষে প্রতিরক্ষা বাহিনীর আধুনিক প্রশিক্ষণ, প্রযুক্তি ও সমর-সম্ভারে সুসজ্জিত, সুসংগঠিত ও যুগোপযোগী করা।
স্যাটেলাইট বাংলাদেশ তারুণ্যের স্বপ্নের দেশ
ইয়াছিন রানা : একাদশ জাতীয় নির্বাচনের জন্য আওয়ামী লীগের ইশতেহার প্রস্তুত। একাধিক স্লোগান ঠিক রেখে তৈরী করা হয়েছে ইশতেহার। যা এখন দলীয় সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার টেবিলে। এর মধ্যে ইশতেহারে হালকা সংযোজন বা বিয়োজন হবে। তারপর আগামী ১৫ ডিসেম্বর ইশতেহার ঘোষণার সম্ভাব্য তারিখ। ইশতেহারের স্লোগানে বরাবরের মত এবারও চমক দিতে চায় আওয়ামী লীগ। এবার কয়েখটি স্লোগান ঠিক করা হয়েছে, এর মধ্যে স্যাটেলাইট বাংলাদেশ: তারুণ্যের স্বেেপ্নর দেশ, গ্রাম হবে শহর, উন্নয়নের মহাকাশে বাংলাদেশ ইত্যাদি। এ কয়েকটি ছাড়াও তিন-চারটি স্লোগান রয়েছে বলে ইশতেহার প্রণয়ন কমিটির নেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে।
দলের নীতি-নির্ধারকদের সঙ্গে কথা বলে আরো জানা যায়, ইশতেহারে দেশের উন্নয়ন পরিকল্পনা-ডেল্টা প্ল্যান, চলমান উন্নয়ন কর্মকান্ড শেষ করা, প্রশাসনিক কাঠামো-বিশেষ করে পুলিশ বাহিনীর, শিক্ষার ব্যবস্থা সংস্কার, তথ্য প্রযুক্তি, নিরাপদ সড়ক, কৃষি উন্নয়ন, তরুণদের কর্মসংস্থান, সরকারি চাকুরীর বয়স বৃদ্ধি, কোটার সংস্কার বিষয়ে নতুন ঘোষণা আসবে। দেশের প্রত্যেকটি সেক্টর একটি সুনির্দিষ্ট কাঠামোতে এনে নাগরিক সুবিধা বৃদ্ধি এবং দুর্নীতি দমনের সরকারের ভূমিকা তুলো ধরা হবে। এছাড়া শিল্পোদ্যোক্তা ও ব্যবসায়ীদের স্বার্থ রক্ষার বিষয় গুরুত্ব দেয়া হবে।
এ বিষয়ে ইশতেহার প্রণয়ন কমিটির সভাপতি ও আওয়ামী লীগের সভাপতিমন্ডলীর সদস্য ড. আব্দুর রজ্জাক বলেন, দেশর সার্বিক উন্নয়ন, যে কাজ সম্পন্ন করতে পারিনি, চলমান এবং আগামীতে করতে চাই এসব বিষয় ইশতেহারে থাকবে। প্রশাসনিক কাঠামো, শিক্ষাব্যবস্থার সংস্কার, তরুণদের কর্মসংস্থানের বিষয়ে চমকপ্রদ ঘোষণা থাকবে। নির্বাচনী প্রচারণা শুরু হবার পরপরই ইশতেহার ঘোষণা করা হবে জানান তিনি। তিনি আরো বলেন, কয়েকটি স্লোগানন ঠিক রেখে তা দলের সভাপতির কাছে জমা দেয়া হয়েছে।
আওয়ামী লীগের সভাপতি মন্ডলীর সদস্য লে. কর্নেল (অব.) ফারুক খান বলেন, এবারে নির্বাচনী স্লোগান হতে পারে ‘গ্রাম হবে শহর’। তবে স্লোগানের শব্দ বা ভাষার পরিবর্তন আসতে পারে। মনোনয়ন প্রক্রিয়া সম্পন্ন হলেই নির্বাচনী ইশতেহার আর স্লোগান প্রকাশ করা হবে।
তিনি বলেন, উন্নয়ন সুবিধার বণ্টনে সমতা আনতেই এবারে গ্রামকে অধিক গুরুত্ব দেয়ার কথা ভাবা হচ্ছে। এখনও দেশের অধিকাংশ মানুষ গ্রামে বসবাস করে। ছোট দেশে অধিক মানুষের বাস। শহর থেকে গ্রামকে আলাদা করে ভাবলে টেকসই উন্নয়ন সম্ভব না।
আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেন, ১৫ ডিসেম্বর ইশতেহার ঘোষণা করা হবে। মনোনয়নপর্ব শেষে ইশতেহারের বিষয়ে আমরা পদক্ষেপ নেব। সম্ভবত বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলনকেন্দ্র কিংবা কৃষিবিদ ইনস্টিটিউটে ইশতেহার প্রকাশ হতে পারে। নির্বাচনী ইশতেহারে ‘দিনবদলের অভিযান, অদম্য বাংলাদেশ’ গ্রামীন উন্নয়নগুলোকে প্রাধান্য দেয়া হচ্ছে বলে জানান কাদের।
এছাড়াও ২০২১ সালের মধ্যে সব ঘরে বিদ্যুৎ সুবিধা পৌঁছে দেয়া, ২০৪১ সালের আগেই দেশকে আধুনিক, উন্নত ও মানবিক রাষ্ট্র হিসেবে প্রতিষ্ঠার কথা থাকছে ইশতেহারে। প্রতিশ্রæত দেশ গড়তে করণীয় সম্পর্কে দিক-নিদের্শনা ও একটি গাইডলাইনও থাকবে। নির্ধারিত ২০৪১ সালকে টার্গেট করে আধুনিক শিক্ষা, কর্মসংসংস্থান, প্রশাসন ও সেবাখাতের বিকেন্দ্রিকরণও গুরুত্ব পাবে। থাকছে দেশের জন্য আগামী ১০০ বছরের কর্মপরিকল্পনা। ২১০০ সালের বাংলাদেশ কেমন হবে- এর একটি রূপকল্পও তুলে ধরা হবে।
ইশতেহার প্রণয়নের সঙ্গে জড়িত সূত্র জানায়, এবার ভোটদাতার তালিকায় যোগ হচ্ছে দেড় কোটি তরুণ। তাদের বিষয় মাথায় রেখে দেশজুড়ে নতুন কর্মসংস্থান সৃষ্টির বিষয়ে ঘোষণা থাকবে। ভবিষ্যত প্রজন্মকে কীভাবে প্রযুক্তিমনস্ক ও দেশের সম্পদে পরিণত করা যায়, এসব বিষয়ে দিক-নির্দেশনা যোগ হচ্ছে ইশতেহারে।
তথ্যপ্রযুক্তির স¤প্রসারণ, আইসিটি ও মেগা প্রজেক্ট বাস্তবায়নের ঘোষণা রাখা হচ্ছে। যুব সমাজকে প্রশিক্ষিত করে ও কাজে লাগিয়ে উন্নয়ন অগ্রযাত্রায় তাদের স¤পৃক্ত করার বিষয়গুলোকেও গুরুত্ব দেয়া হয়েছে। প্রধানমন্ত্রীর তথ্যপ্রযুক্তি বিষয়ক উপদেষ্টা সজীব ওয়াজেদ জয় এসব বিষয়ে পরামর্শ দিচ্ছেন। এ ছাড়া তরুণদের কর্মসংস্থান ও নিজের পায়ে দাঁড়াতে বিশেষ ব্যাংক ঋণের ব্যবস্থার কথাও থাকছে ইশতেহারে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।