Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

চট্টগ্রামে বিএনপি জোটে নাভিশ্বাস

রফিকুল ইসলাম সেলিম : | প্রকাশের সময় : ১ ডিসেম্বর, ২০১৮, ১২:০৩ এএম

 প্রার্থী তালিকা চ‚ড়ান্ত এবং প্রতীক বরাদ্দ না হলেও চট্টগ্রাম অঞ্চলের ১৯টি আসনের প্রার্থীরা গণসংযোগ, উঠান বৈঠকসহ নানা উপায়ে প্রচার শুরু করে দিয়েছেন। এক্ষেত্রে সরকারি দলের প্রার্থীরা কিছুটা এগিয়ে। কারণ তাদের মামলা-মোকদ্দমার কোন ঝামেলা নেই। নিজেদের সরকার থাকায় তাদের মামলা হয় প্রত্যাহার হয়েছে, নয়তো তদন্ত শেষে মামলা থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে।
তবে উল্টো চিত্র বিএনপি জোটে। নেতাকর্মীদের মাথায় মামলার পাহাড়। প্রার্থীদের অনেকে এখনও কারাগারে। এতোদিন যারা হুলিয়া নিয়ে পালিয়ে ছিলেন তারাও জামিন নিতে ছুটছেন আদালতে। বন্দীদের মুক্ত করে ভোটের মাঠে আনতেও চেষ্টা চলছে। জামিনে থাকারাও হাজিরার জন্য আদালতে নিয়মিত চক্কর দিচ্ছেন। এরমধ্যেই চলছে ভোটের প্রচার। সব মিলিয়ে নাভিশ্বাস বিএনপি জোটে।
এরপরও দমবার পাত্র নন বিএনপি জোটের নেতাকর্মীরা। ‘আন্দোলনের অংশ হিসাবে নির্বাচন’-এমন যখন ঘোষণা তখন গ্রেফতার কারাবাস আর ধরপাকড়কে ‘স্বাভাবিক’ হিসাবে নেমে নিচ্ছেন নেতাদের অনেকে। তাদের বক্তব্য হলো-এসব মোকাবেলা করেই এগিয়ে যেতে হবে ভোটের চ‚ড়ান্ত লড়াইয়ে।
চট্টগ্রাম মহানগর ও জেলার ১৬টি আসনে মনোনয়ন পাওয়া মহাজোটের প্রার্থীদের কারো বিরুদ্ধে তেমন কোন মামলা নেই। বিএনপি জোটের মনোনয়নের চিঠি পেয়েছেন প্রায় ৪০ জন। তাদের মধ্যে মামলার আসামি নন এমন সংখ্যা হাতে গোনা। কারো কারো বিরুদ্ধে সর্বোচ্চ ৪৫টি পর্যন্ত মামলা আছে। কারাগারে বসেই অনেকে মনোনয়নপত্রে স্বাক্ষর করেছেন। আর সব মামলা হয়েছে গত দশ বছরে। সব মামলার বাদী পুলিশ, অভিযোগ গায়েবি- বলেছেন বিএনপির নেতারা।
নগর বিএনিপর হিসাবে পহেলা সেপ্টেম্বর থেকে ৭ নভেম্বর পর্যন্ত ৬৮ দিনে মহানগর ও জেলার বিভিন্ন থানায় বিএনপি ও অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে ২৫১টি মামলা হয়েছে। এসব মামলায় আসামি প্রায় ৫ হাজার। এর আগে নাশকতার অভিযোগে কয়েকশ মামলা করা হয়েছিল।
চট্টগ্রাম-৭ (রাঙ্গুনীয়া) আসনে ধানের শীষের প্রার্থী বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান গিয়াসউদ্দিন কাদের চৌধুরী ২২ নভেম্বর থেকে কারাগারে। পাঁচ মাস আগে প্রধানমন্ত্রীকে কথিত হুমকির অভিযোগে এক ছাত্রলীগ নেতার করা মামলায় তাকে কারাগারে প্রেরণ করা হয়। পুলিশ তাকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ওই মামলায় ১০ দিনের রিমান্ডের আবেদন করে। বৃহস্পতিবার আদালত সে আবেদন খারিজ করে দিলেও তাকে জেল গেইটে জিজ্ঞাসাবাদের অনুমতি দেন। ওই ঘটনায় পাঁচটিসহ তার বিরুদ্ধে মামলার সংখ্যা ১০টি।
চট্টগ্রাম-৯ (কোতোয়ালী) আসনে প্রার্থী নগর বিএনপির সভাপতি ডা. শাহাদাত হোসেন এখনও কারাগারে। তার বিরুদ্ধে নাশকতার ৪৫টি মামলা আছে। সর্বশেষ গত ২৫ নভেম্বর পুলিশের আবেদনের প্রেক্ষিতে নতুন একটি বিস্ফোরক মামলায় তাকে গ্রেফতার দেখানো হয়। সব মামলায় জামিন থাকার পরও তাকে ঢাকায় গ্রেফতার করে পুলিশ। বিএনপির বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক মাহবুবুর রহমান শামীম ও নগর বিএনপিসাধারণ সম্পাদক আবুল হাশেমও ২২ অক্টোবর থেকে কারাগারে। শামীমের বিরুদ্ধে আগে কোন মামলা ছিলনা। তবে বক্করের বিরুদ্ধে মামলার সংখ্যা ৪০টি।
চট্টগ্রাম-১১ (বন্দর-পতেঙ্গা) আসনের প্রার্থী বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী কথিত ফোনালাপের ঘটনায় ছাত্রলীগ নেতার করা মামলায় ২৩ দিন কারাভোগের পর ১২ নভেম্বর জামিনে মুক্তি পান। তার বিরুদ্ধে গাড়ি ভাঙচুরসহ ১০টি নাশকতার মামলা রয়েছে। নাশকতাসহ বিভিন্ন অভিযোগে অর্ধশত মামলায় দুই বছর ধরে কারাগারে বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব আসলাম চৌধুরী। তিনি চট্টগ্রাম-৪ (সীতাকুÐ) আসনে বিএনপির সম্ভাব্য প্রার্থী।
২৪ মামলায় কারাগারে আছেন দক্ষিণ জেলা বিএনপির সদস্য লেয়াকত আলী। রাঙ্গুনীয়া থানা বিএনপির নেতা কুতুব উদ্দিন বাহার সম্ভাব্য প্রার্থী, তিনিও কারাগারে। কারাগারে আছেন উত্তর জেলা বিএনপির নেতা প্রকৌশলী বেলায়েত হোসেন। চট্টগ্রাম-১৫ (সাতকানিয়া-লোহাগাড়া) আসনে বিএনপি জোটের প্রার্থী জামায়াতের আ ন ম শামসুল ইসলাম ও চট্টগ্রাম-১০ (ডবলমুরিং-পাহাড়তলী) আসনের স্বতন্ত্র প্রার্থী সাবেক এমপি শাহজাহান চৌধুরীও কারাগারে। নেতাদের পাশাপাশি জোটের কয়েকশ নেতাকর্মী এখনও কারাবন্দী। নাশকতার মামলার পাশাপাশি ওয়ান ইলেভেন সরকারের সময়ে বিএনপির ভিআইপি নেতাদের নামে দুদকের মামলা নিয়েও টেনশনে নেতারা। কয়েকজনের বিরুদ্ধে আছে ঋণখেলাপের মামলা। মামলার কারণে কারো কারো মনোনয়ন বাতিল হওয়ার আশঙ্কাও করা হচ্ছে।
মামলার ঝামেলা নেই মহাজোটের প্রার্থীদের। তাদের কয়েকজনের বিরুদ্ধে মামলা থাকলেও আগেভাগেই তারা অব্যাহতি পেয়ে গেছেন। দুদকের একটি মামলা থেকে এ বছরের ২৬ জানুয়ারি অব্যাহতি পেয়েছেন চট্টগ্রাম-১ (মীরসরাই) আসনের প্রার্থী ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন। তাকে বাদ দিয়েই মামলার অভিযোগ গঠন করা হয়। বঙ্গবন্ধুর ছবি বিকৃতির অভিযোগে তথ্যপ্রযুক্তি আইনে চট্টগ্রাম-১১ আসনের প্রার্থী এম এ লতিফের বিরুদ্ধে করা মামলা খারিজ হয়ে গেছে। তার বিরুদ্ধে চারটি মামলা হলেও তদন্ত শেষে পুলিশ চ‚ড়ান্ত প্রতিবেদন দিয়ে তাকে অব্যাহতি দেয়। চট্টগ্রাম-১৬ (বাঁশখালী) আসনে নৌকার প্রার্থী মোস্তাফিজুর রহমানের বিরুদ্ধে নির্বাচন কর্মকর্তাকে মারধরের মামলা হয়। তবে নির্বাচন কমিশনে দেওয়া হলফনামায় তিনি তা গোপন করেছেন বলে ইতোমধ্যে খবর পাওয়া গেছে।



 

Show all comments
  • পরেশ বড়ুয়া ১ ডিসেম্বর, ২০১৮, ৯:০৭ এএম says : 0
    এ কি ভীতিজনক অবস্থা?
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: জাতীয় সংসদ নির্বাচন


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ