Inqilab Logo

শুক্রবার, ০৫ জুলাই ২০২৪, ২১ আষাঢ় ১৪৩১, ২৮ যিলহজ ১৪৪৫ হিজরী

মাহবুবে আলম আইন কর্মকর্তা থাকেন কীভাবে

সংবাদ সম্মেলনে প্রশ্ন রিজভীর

স্টাফ রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ২৯ নভেম্বর, ২০১৮, ১২:০২ এএম

বেগম খালেদা জিয়া নির্বাচনের অযোগ্য অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলমের এই মন্তব্যে দেশবাসি স্তম্ভিত ও হতবাক বলে মনে করেন দলটির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী। তিনি বলেন, খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে মিথ্যা সাজানো মামলায় দেয়া দন্ডের বিরুদ্ধে তিনি আপিল করেছেন এবং তাতে তিনি স্থগিতাদেশ প্রার্থনা করেছেন। কিন্তু সেই বিষয়ে আদালত এখনো সিদ্ধান্ত দেননি। আদালত আপিল গ্রহণ করেছেন কিন্তু কোন প্রকার শুনানি হয়নি, আদালত কোন প্রকার রুল বা আদেশ দেন নি। তাহলে তিনি (অ্যাটর্নি জেনারেল) কিভাবে বললেন, বেগম খালেদা জিয়া নির্বাচনে অংশ নিতে পারবেন না। এটর্নি জেনারেলকে প্রশ্ন করতে চাই মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া, মহিউদ্দিন খান আলমগীর, হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের বিচারিক আদালতে সাজা হলেও, আপিল চলমান অবস্থায় তারা নির্বাচন করেছেন কিভাবে? গতকাল (বুধবার) দুপুরে নয়াপল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন। মাহবুবে আলম কিভাবে আইন কর্মকর্তা থাকেন প্রশ্ন করে রিজভী বলেন, এটর্নি জেনারেল আপনিতো আওয়ামী লীগের নেতা, আসন্ন সংসদ নির্বাচনে নৌকা মার্কার মনোনয়ন ফরম সংগ্রহ করেছেন তাহলে আপনি কিভাবে রাষ্ট্রের প্রধান আইন কর্মকর্তা থাকেন? সরকারি ক্ষমতার শক্তিতে বলীয়ান হয়ে আপনার মতো দলবাজ আগ্রাসি আইন কর্মকর্তা থাকলে ন্যায় বিচার পাওয়ার সকল পথ বন্ধ হয়ে যাবে। সাবজুডিশ বিষয়ে নির্দিষ্ট এবং স্পষ্ট বক্তব্য রেখে তিনি সংবিধান ও আদালতের অবমাননা করেছেন বলেও দাবি করেন তিনি।
বেগম খালেদা জিয়া নির্বাচন করতে অবশ্যই পারবেন মন্তব্য করে বিএনপির এই নেতা বলেন, এ বিষয়ে আইনে কোন বাধা নেই। তিনি বলেন, বাংলাদেশে নজির হলো আপিল করেই নির্বাচন করা যাবে। কারণ আপিলকে ধরা হয় চলমান বিচারের অংশ। আপিল বিভাগের রায় আছে, নির্বাচনী তফসিল ঘোষণার পর কে যোগ্য বা অযোগ্য সেটা ঠিক করবে ইসি। আর সেখানে যদি কোনো সংবিধান লংঘনের ঘটনা ঘটে তখন তা কেবল উচ্চ আদালতে আসতে পারে। এখন এটর্নি জেনারেল যা বলেছেন, তা ঘোড়ার আগে গাড়ি জুড়ে দেয়ার শামিল। এমনকি তার বক্তব্য আপিল বিভাগের রায় দ্বারা সমর্থিত নয়। আপিল বিভাগের রায় অনুযায়ী যেকোনো রিটার্নিং অফিসার বেগম খালেদা জিয়ার তিনটি মনোনয়নপত্রই বৈধ বলে ঘোষণা দিতে পারেন। আইনে তাতে কোন বাধা নেই।
রিজভী বলেন, ইসির নেয়া সিদ্ধান্তের বৈধতা রিটে পরীক্ষা না করতেও আপিল বিভাগের নির্দেশনা আছে। বৈধতা পরখ করতে চাইলে ভোটের পরে করতে হবে, ভোটের আগে নয়। তফসিলের পরে এগুলো নির্বাচনী বিরোধ হিসেবে বিবেচিত হবে। বিষয়টি দেখবেন নির্বাচনী ট্রাইব্যুনাল। আওয়ামী লীগ সরকারের অতীত নজির হলো একই দন্ডিত ব্যক্তির ক্ষেত্রে সকালে একরকম আবার বিকেলে অন্য রকম সিদ্ধান্ত হয়েছে।
বিচারিক আদালতে দন্ডিত হওয়ার পরও আপিল করে এমপি ও মন্ত্রীত্ব বহাল থাকার নজির আছে অভিযোগ করে বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব বলেন, দুর্নীতির মামলায় ২০০৮ সালের ১৪ ফেব্রুয়ারি ঢাকার একটি আদালত ত্রাণমন্ত্রী মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়াকে ১৩ বছর কারাদন্ড দেন। আর সম্পদের তথ্য গোপনের মামলায় ২০১৬ সালের ৩ নভেম্বর সরকারদলীয় এমপি আবদুর রহমান বদির তিন বছর কারাদন্ড দেন ঢাকার একটি আদালত। তারা এমপি মন্ত্রীর পদ তারপরও বহাল থেকেছে। সুতরাং এটর্নি জেনারেলের বক্তব্য দুরভিসন্ধিমূলকই নয় তিনি একজন চক্রান্তকারী, তিনি আদালতকে ভয় দেখিয়ে সরকারের হীন উদ্দেশ্য সাধনকারী। বিচারাঙ্গনে তার ভূমিকা আওয়ামী সন্ত্রাসীদের ন্যায়।
রিজভী বলেন, আগামী একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সন্ত্রাসের উর্বর ক্ষেত্র বানাবে ক্ষমতাসীন দল। তার আলামতগুলো এখন ফুটে উঠতে শুরু করেছে। নির্বাচনের সময় যত ঘনিয়ে আসছে জনগণের মধ্যে ততো সুষ্ঠু নির্বাচন নিয়ে শঙ্কা বৃদ্ধি পাচ্ছে। প্রায় প্রতিদিনই সরকারী কর্মকর্তাদের সঙ্গে আওয়ামী লীগের গোপন বৈঠকের তথ্য ফাঁস হচ্ছে। তবে আওয়ামী লীগ ও ইসি’র পক্ষ থেকে এসব বৈঠকের কথা অস্বীকার করা হলেও তথ্যগুলো যে সঠিক এটির বাস্তব প্রমান পাওয়া গেছে। আওয়ামী লীগ যে কেন্দ্র দখল করে ভোট ডাকাতি করবে এটা তাদের মনোনীত প্রার্থীরা বিভিন্ন জায়গায় ঘোষণাও দিয়েছেন। গণতন্ত্র, প্রশাসন, সুশাসন ধ্বংসকারীদের অন্যতম হোতা এইচ টি ইমামের পুত্র তানভীর ইমাম ইতোমধ্যে সিরাজগঞ্জের উল্লাপাড়ায় ভোটের দিন কেন্দ্র দখল রাখতে নেতাকর্মীদের নির্দেশ দিয়েছেন। আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য কাজী জাফরুল্লাহ ফরিদপুরে এক সভায় বলেছেন নৌকার বিপক্ষে গেলে শালাদের গুলি করে মারবো। এই বক্তব্যের ভিডিও ক্লিপ ভাইরাল হয়েছে বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলোতে। ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের গেমপ্ল্যান খুব সুস্পষ্ট, সেটি হলো বাংলাদেশে একটি পক্ষই থাকবে, সেটি হলো আওয়ামী লীগ ও তার দোসর’রা। আগামী একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অবাধ ও সুষ্ঠু’র অভিমূখী হওয়ার কোন লক্ষণ দেখা যাচ্ছে না। নির্বাচন কমিশনের সকল প্রস্তুতি প্রশ্নসাপেক্ষ।
এসময় সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন- দলের চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা কাউন্সিলের সদস্য নাজমুল হক নান্নু, যুগ্ম মহাসচিব সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল প্রমূখ।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: জাতীয় সংসদ নির্বাচন


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ