দেশে দেশে রোজার উৎসব
মাহে রমজান আরবী নবম মাসের নাম। চাঁদের আবর্তন দ্বারা যে এক বৎসর গণনা করা হয়,
এ জিলকদ্ মাস হজ্বের প্রস্তুতি মাস। তাই হজ্বের নিয়তে মুসলমানরা যেতে শুরু করেছেন সৌদী আরব। নবী ইব্রাহীম, কা’বা ঘর নির্মাণের পর দোয়া করেন, “হে আল্লাহ! তুমি, আমার বংশধরদের মধ্য হতে এমন একজন সম্মানীত রাসুল প্রেরণ কর যিনি তোমার বানী সমূহ তাদের পাঠ করে শুনাবে এবং কিতাব ও হিক্মত শিক্ষা দেবে। আর তাদের সংশোধন ও পবিত্র করবে। নিশ্চয় তুমি অতিশয় পরাক্রমশালী ও মহাজ্ঞানী।” (সুরা ঃ বা কারাহ)
তার এ দোয়ার ফলে আল্লাহ্ হযরত মোহাম্মদ (সাঃ) কে তাঁর বংশে পাঠান এবং তাঁকে ইব্রাহীম দ্বারা প্রতিষ্ঠিত মিল্লাতের অনুসরণ করতে বলেন। এভাবে সেদিন ইব্রাহীমী দিয়ে - মোহাম্মদীকে ঢেকে রাখা হয়।
১৪০০ বছর পর এর উম্মোচন করেন রাসূল বংশের শ্রেষ্ঠ সন্তান হযরত শাহ্ সূফী মীর মাস্উদ হেলাল (রঃ)। ইমাম (রঃ) তাই বলেছিলেন, “মোহাম্মদীর সাথে ইব্রাহীমী এমনভাবে মিশে আছে যা পৃথক করা ছিল কঠোর সাধনা গভীর রাসূল প্রেম ও আল্লাহর দয়ার বিষয়।” এটা ছিল মারেফাত এর গভীরে। ইমাম (রঃ) তাই দুঃখ করে বলেছিলেন, “সাদা আর সবুজ হল না।” কারণ মানুষ বুঝতে পারছে না। সাদা হল ইব্রাহীমী প্রতীক।
তাই রাসূল (সাঃ) বায়তুল মুক্কাদ্দেসের দিকে মুখ করে নামাজ পড়তেন আর মনে মনে ইচ্ছা পোষণ করতেন কেব্লা পরিবর্তনের। তাই আল্লাহ সূরাঃ বাকারার ১৪৫ আয়াতে তাঁকে মস্জিদুল হারামের দিকে মুখ করার নির্দেশ দিলেন। একদিন কা’বা ঘর ধবংস হবে। কিন্তু বলা হয় নাই মদীনার মসজিদ ধবংস হবে। কা’বা ঘর ধবংস হবার পর কেবলা কোনটা হবে? চিন্তাশীলদের চিন্তার খোরাক কোরাণ ও হাদীস। এ প্রসঙ্গে ইমাম (রঃ) বলেছিলেন, “ কা’বা ধ্বংসের অর্থ এর বর্তমান মর্যাদা সম্মান ও আধ্যাত্মিক শক্তি সেটা কমে যাবে। যেমন ঃ মোহাম্মদী প্রকাশের পর নামাযের শক্তি ও কমে যাবে। প্রশ্ন আসে সোলায়াম ও ইব্রাহীম নবীর মসজিদ যদি কেবলা হতে পারে তবে কেন নবী শ্রেষ্ঠ আমাদের নবীর নির্মিত মসজিদ কেবলা হতে পারে না? যেখানে রাসূল এর ইচ্ছাতে কেবলা পরিবর্তন হয়ে গেল। রাসুল বলেছেন, “ঈমান মদীনার দিকে এমনভাবে প্রত্যাবর্তন করবে যেমন সাপ নিজ গর্তের দিকে প্রত্যাবর্তন করে।”এখানে কিন্তু “প্রত্যাবর্তন” শব্দ ব্যবহার করা হয়েছে। অর্থাৎ এক স্থান হতে অন্য স্থানে। আল্লাহ বলেন, “রহমানের বান্দা হচ্ছে তারা যাদের কে তাদের প্রতিপালকের আয়াত স্মরণ করে দিলে তারা অন্ধ ও কানার মতো তার উপর লুটিয়ে পড়ে না, বরং তারা বুদ্ধি-জ্ঞান ব্যবহার করে।
এত হজ্ব, ওমরাহ, তাফসির, তাব্লিগ, জুম্মায় মস্জিদ ভরা লোক তবু কেন মুসলমানদের এত দুঃখ জনক অবস্থা? তবে কি এসবের আধ্যাত্মিক শক্তি কমে গেছে? সময় সেটা বলে দিবে। মুসলমানদের মধ্যে এত দ্ব›দ্ব বিভেদ যুদ্ধ কেন? কেন এক হতে পারছে না? উত্তরে ইমাম বলেছিলেনে; “যতদিন না মোহাম্মদীতে না আসবে ততদিন এক হতে পারবে না। ইব্রাহীমিই তো এ বিভেদ সৃষ্টি করে রেখেছে”।
রাসূল (সাঃ) বলেছেনঃ এমন এক যুগ সমাগত প্রায়, যখন জ্ঞানের অšে¦ষণে উটের কলিজা বিদীর্ণ করে ফেলবে (অর্থাৎ উটে করে এত ছুটাছুটি করবে)। কিন্তু কোথাও মদীনার আলেম অপেক্ষা বিজ্ঞ আলেম খুঁজে পাবে না।” (তিরামিযী)।
ব্যাখ্যা ঃ বেশীর ভাগ আলেমের অভিমত এই যে, অত্র হাদীসে রাসুল (সাঃ) শেষ জামানার প্রতি ইংগিত করেছেন। যখন ইসলাম মদীনার দিকে প্রত্যাবর্তন করবে। সেই যুগে নির্ভরযোগ্য আলেমগণ মদীনাতে অবস্থান করবে।” সময়ই বলে দিবে; সেটা মোহাম্মদী ইসলাম না ইব্রাহীমী, ইসলাম-না মোহাম্মদ ভুমি বাংলার মদীনা।
মোকামে ইব্রাহীমকে সামনে রেখে নামায পড়েছিলেন নবীজী আল্লাহর নির্দেশে। তাই হাজীরা এটা করে থাকেন। প্রশ্ন আসে মোকামে মোহাম্মদ কেন হতে পারে না? কা’বা ঘরের সামনে কাফেরদের চ্যালেঞ্জ এর মোকাবেলায় নবী (সাঃ) কিছু পাথরের উপর দিয়ে হেঁটে যান। এতে কম করে সাতটি পাথরে উনার পবিত্র কদম এর চিহ্ন অংকিত হয়ে যায়। যা তোপকপি প্রসাদে সংরক্ষিত। মদীনা বাসিরা একবার রাসূলের কাছে অভিযোগ করেছিলো, মক্কায় কা’বা ঘর আছে? সেখানকার মানুষ হজ্ব ও ওমরাহ করে অশেষ সওয়াব হাসিল করছে। কিন্তু মদীনায় আমাদের সে সুযোগ নাই। তখন নবীজী বলেছিলেন, “তোমরা বাড়ী থেকে ওজু করে এসে এই মসজিদে (মসজিদ-এ গামামা) দুই রেকাত নফল নামায আদায় করো তাতেই তোমরা ওমরাহ্র সওয়াব পাবে।” তাই বলি, রাসূল যখন এতটা পারলেন-হজ্ব পর্য্যন্ত যেতে পারলেন না কেন? এখানেই রয়েছে মারিফাত। রাসুল একদিন দোয়া করলেন, “হে আল্লাহ! তোমরা নবী ইব্রাহীম যাকে তুমি খলিলুল্লাহ উপাধিতে ভূষিত করেছ। তিনি মক্কার জন্য দোয়া করেছিলেন যে, মক্কাকে রহমতে বরকতে পরিপূর্ণ করে দাও। আমি ও তোমার নবী, তুমি আমাকে “হাবীবুল্লাহ” উপাধিতে ভূষিত করেছে। আমি মদীনার জন্য দোয়া করছি। তুমি মদীনাকে রহমতে বরকতে পরিপূর্ণ করে দাও। যা দিয়েছো মক্কায়, দ্বিগুণ দাও মদীনায়।” তাই, বলি কি নাই মদীনায়, মদীনায় সব আছে; যা নাই মক্কায়। ১২ শরীফের ইমাম (রাঃ) ১২ জেলহজ্ব ১২ শরীফের দিনে রাসূলের নামে কোরবানীর নিয়ম করে গেছেন। এতে যারা শরীফ হতে চান তারা জনাব মেহেরুল ভাই এর সাথে কথা বলতে পারেন। আল্লাহ বলেন, তোমার তোমাদের পারস্পরিক অবদান এর কথা ভুলে যেয়ো না।” (সূরা-বাকারাহ)। আমাদের জন্য রাসূল (সাঃ) অপেক্ষা বড় উপকারী আর কে আছে। তাই তার ভালবাসার উপকারের প্রতিদান স্বরূপ কুরবানী, দেয়া কর্তব্য। রাসূল তার স্ত্রী হযরত খাদীজার অবদান বার বার স্মরণ করতেন। ছাগল জবাই করে বিভিন্ন অংশে ভাগ করতেন এবং খাদিজার বান্ধবীদের কাছে তা পাঠিয়ে দিতেন। ১২ শরীফের ইমাম যে সব ভক্তের দ্বারা বেশী উপকৃত হয়েছেন তাদের কাউকে তার স্থালভিসিক্ত কাউকে প্রেমিক ও রাসূলের গোলাম বলেছেন। এসব উপকারীর প্রতিদান। তাই, রাসূল বলেছেন, “যে ব্যক্তি মানুষের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে না, সে আল্লাহর কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করে না।” বলেছেন, যে কারও দ্বারা উপকার পেলে কিন্তু প্রতিদান দেবার মত কিছু না থাকলে, তার জন্য ততক্ষণ পর্যন্ত দোয়া করতে থাক, যতক্ষণ না তোমাদের মনে হয় তোমার প্রতিদান আদায় করেছ।” আসেন আমর অজ্ঞতা ও গোড়ামী হতে সরে এসে “মোহাম্মদীতে” আশ্রয় নেই। আল্লাহ দয়া করুন।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।