Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

ধর্মহীন শিক্ষানীতি সেক্যুলার শিক্ষা আইন হিন্দুত্ববাদের পাঠ্যসূচি বাতিল না হলে কঠিন আন্দোলন-বেফাক নেতৃবৃন্দ

প্রকাশের সময় : ৪ মে, ২০১৬, ১২:০০ এএম

স্টাফ রিপোর্টার : বাংলাদেশ কওমী মাদরাসা শিক্ষা বোর্ডের (বেফাক) নেতৃবৃন্দ ধর্মহীন শিক্ষানীতি ২০১০, সেকুলার শিক্ষা আইন ২০১৬ এবং হিন্দুত্ববাদের পাঠ্যসূচি অবিলম্বে বাতিলের দাবি জানিয়েছেন। তারা বলেন, এই দাবি মেনে না নেয়া পর্যন্ত বেফাকের আন্দোলন ও কর্মসূচি অব্যাহত থাকবে। নেতৃবৃন্দ আরো বলেন, চলমান আন্দোলনের একপর্যায়ে বেফাকের নেতৃত্বে দেশের পীর-মাশায়েখ, ওলামায়ে কেরাম ও সচেতন মুসলমানদের নিয়ে রাজপথে কঠিন আন্দোলন গড়ে তুলে দাবি মানতে সরকারকে বাধ্য করবেন।
সাংবাদ সম্মেলনে উথাপিত দাবিসমূহ হচ্ছে : ১. শিক্ষানীতি-২০১০ এবং তদালোকে প্রণীত শিক্ষাআইন-২০১৬-এর খসড়া অবিলম্বে বাতিল করতে হবে। ২. প্রাথমিক এবং উচ্চমাধ্যমিক বিদ্যালয়ের পাঠ্যপুস্তকে চক্রান্তমূলকভাবে বাদ দেওয়া ইসলামী ভাবধারার গল্প, রচনা ও কবিতাসমূহ পুনঃঅন্তর্ভুক্ত করতে হবে। ৩. পরিকল্পিতভাবে যুক্ত করে দেওয়া হিন্দুত্ববাদী ও ইসলামবিদ্বেষী কবিতা, গল্প ও রচনাবলী শিক্ষা সিলেবাস থেকে বাদ দিতে হবে। ৪. শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তকে ৯২ ভাগ জনগণের চিন্তা, বিশ্বাস, ভাবনা, জীবনবোধ ও সংস্কৃতির প্রতি শ্রদ্ধার বহিঃপ্রকাশ ঘটাতে হবে। ৫. এ বছর অনুষ্ঠিত এইচএসসি পরীক্ষায় ঢাকা ও চট্টগ্রাম বোর্ডের প্রশ্নপত্রে ইসলাম ধর্ম অবমাননাকর প্রশ্ন দেওয়ার সাথে জড়িতদেরকে চিহ্নিত করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দিতে হবে। ৬. যুগোপযোগী পদক্ষেপ গ্রহণ করার নামে কওমী মাদরাসার স্বকীয়তা ও স্বাতন্ত্র্য বিলুপ্ত হয় এমন যে কোনো সিদ্ধান্ত গ্রহণ থেকে বিরত থাকতে হবে। ৭. পাঠ্যপুস্তক পর্যালোচনা কার্যক্রমে দক্ষ ও বিজ্ঞ ইসলামী শিক্ষাবিদ, গবেষক ও আলেমগণের সমন্বয়ে পর্যালোচনা কমিটি গঠন করতে হবে।
বাংলাদেশ কওমী মাদরাসা শিক্ষা বোর্ডের (বেফাক) উদ্যোগে গতকাল দুপুরে জাতীয় প্রেস ক্লাবের ভিআইপি লাউঞ্জে এক সংবাদ সম্মেলনে উল্লিখিত দাবী উত্থাপন করেন নেতৃবৃন্দ। সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ কওমী মাদরাসা শিক্ষা বোর্ডের (বেফাক) সহ-সভাপতি আল্লামা নূর হোসেন কাসেমী, বেফাক মহাসচিব আল্লামা আব্দুল জাব্বার জাহানাবাদীসহ আল্লামা জুনায়েদ বাবু নগরী, মাওলান মাহফুজুল হক, মাওলানা জোবায়ের আহমাদ চৌধুরি, মাওলানা নূরুল ইসলাম, মাওলানা সাজেদুর রহমান, মুফতি ওমর ফারুক সন্দীপী প্রমুখ। সাংবাদিক সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন মাওলানা মঞ্জুরুল ইসলাম।
এতে বলা হয়, শতকরা ৯০ জন মুসলমানের এ দেশের শিক্ষানীতিকে ধর্মীয় ভাবধারামুক্ত করে তৈরি করা হয়েছে। অথচ সংবিধানে ধর্মনিরপেক্ষতা অর্থ ধর্মহীনতা বোঝানো উদ্দেশ্য ছিল না। ‘সব ধর্মের মানুষ নিজ নিজ ধর্ম পালনে সমান সুযোগ লাভ করবে’ এ স্লোগানই ছিল ধর্ম নিরপেক্ষতার অর্থ। বর্তমান সরকার কর্তৃক প্রণীত শিক্ষা নীতিমালায় ধর্মীয় শিক্ষার ক্ষেত্রে প-িত ও গ্রহণযোগ্য কোনো প্রতিনিধি যেমন রাখা হয়নি, তেমনি শিক্ষা আইনেও প্রকৃত ধর্মীয় শিক্ষাকে অবহেলিত করে রাখা হয়েছে। সর্বশেষ জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড কর্তৃক তৈরি সিলেবাসে এমন ধরনের বই-পুস্তক রাখা হয়েছে যা ধর্মনিরপেক্ষ তো নয়ই, বরং ইসলামবিবর্জিত, ইসলামবিদ্বেষী এমনকি ক্ষেত্রবিশেষে পৌত্তলিক বিশ্বাস ও সংস্কৃতির ধারকও বটে। ৯০ ভাগ মুসলমানের সন্তান শিক্ষার্থীরা এ ধরনের পাঠ্যপুস্তক থেকে শিক্ষালাভ করে কোনোদিন মুসলমানি ভাবধারার সাথে পরিচিত হতে পারবে না। কোমলমতি শিক্ষার্থীরা এ সিলেবাসে শিক্ষিত হয়ে হয় নাস্তিক্যবাদী নয়তো হিন্দুত্ববাদী চেতনা বিশ্বাস ও সংস্কৃতিতে গড়ে উঠতে বাধ্য। জাতির মেরুদ-রূপী এ ধরনের পাঠ্যসূচি কোনোভাবে মেনে নেয়া যাবে না।
সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, বর্তমান পাঠ্যসূচিতে প্রথম শ্রেণী থেকে দ্বাদশ শ্রেণী পর্যন্ত বাংলা বইয়ে গদ্য ও পদ্যর সংখা ১৯৩-এ সব গদ্য-পদ্যের মধ্যে হিন্দু লেখক ৮১ জন ও নাস্তিক লেখক ৫৬ জন। শতকরা হিসাবে মোট গদ্য ও পদ্যের সংখা অনুপাতে হিন্দু ও নাস্তিকের লেখা ৭১ শতাংশ আর মুসলমান লেখকের লেখা ২৯ শতাংশ।
পাঠ্যসূচি থেকে যেসব বিষয়ের গদ্য ও পদ্যের বাদ দেয়া হয়েছে। তা হলো শেষ নবী (স.), হযরত আবু বকর (রা), হযরত ওমর (রা) ও বিদায় হজ্ব শহীদ তিতুমির, ড. মুহম্মদ শহীদুল্লাহ, উমর ফারুক প্রভৃতি ইসলামী লেখকের লেখাসমূহ বাদ দেয়া হয়েছে। অপরদিকে বিভিন্ন শ্রেণীতে যুক্ত করা হয়েছে হিন্দুদের দেব-দেবীর প্রশংসা। হিন্দুত্ববাদ দেবী অন্য পূর্ণার প্রশংসা ও প্রার্থনা। রাধা-কৃষ্ণের লীলা কীর্তন ইত্যাদি। একইভাবে পরীক্ষার প্রশ্নপত্রের মধ্যেও হিন্দুত্ববাদের প্রশ্ন সন্নিবেশিত করা হয়েছে।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: ধর্মহীন শিক্


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ