Inqilab Logo

শনিবার ১৬ নভেম্বর ২০২৪, ০১অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১৩ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

বরেন্দ্র অঞ্চলে চলছে ধান কাটার উৎসব

রেজাউল করিম রাজু : | প্রকাশের সময় : ২৭ নভেম্বর, ২০১৮, ১২:০২ এএম

মিঠে-কড়া রোদ মেখে বরেন্দ্র অঞ্চলে চলছে ধান কাটার উৎসব। শীতকালীন শাকসবজির যত্মআত্তি আর বাজারজাতকরণ নিয়ে ব্যস্ত সময় পার করছেন মানুষ। সর্বত্রই ব্যস্ততা। কুয়াশা মাখা ভোরে মাঠে নামছেন কৃষক। চলছে আমন ধান কাটা ও মাড়াই। গেরস্ত বাড়ির খৈলানগুলোয় ব্যস্ত কৃষাণ কৃষাণী আর গৃহবধূরাও। ধান মাড়াই ঝাড়াই, সেদ্ধ আর নতুন চালের মন মাতানো সৌরভে ভরা গ্রামীণ জনপদ।
বরেন্দ্র অঞ্চল ঘুরে দেখা যায়, মাঠের অর্ধেক ধান কাটা হয়ে গেছে। বাকীগুলোয় উত্তর পশ্চিমের বাতাসে দোল খাচ্ছে। গোলায় ওঠার অপেক্ষার প্রহর গুনছে। বাধ সেধেছে ধান কাটা শ্রমিক। বেশী মজুরী দিয়ে শ্রমিক পাওয়া যাচ্ছেনা। এমন শ্রমিক সঙ্কট প্রসঙ্গে আবাদকারীরা বলেন, এবার আমনের আবাদ নামলা (বিলম্বিত) হয়েছে। বৃষ্টি নির্ভর ফসল আমন। বৃষ্টির পানিতে সেচ হয়ে যায়। কিন্তু এবার আবহাওয়া বিরুপ আচরণ করেছে। সময়মত বৃষ্টি ঝরেনি। গভীর নলকূপের পানি দিয়ে আবাদ করতে হয়েছে। বৃষ্টির জন্য মানুষ ইসতেস্কার নামাজ পর্যন্ত আদায় করেছে। সেচ দিতে গিয়ে বেড়েছে উৎপাদন খরচ। গত বছর যেখানে বিঘা প্রতি খরচ ছিল সাত আট হাজার টাকা। এবার সেখানে পড়েছে দশ বারো হাজার টাকা। অথচ শুরুতেই যে দাম তাতে হতাশ আবাদকারীরা।

মাঠ পর্যায়ে খবর নিয়ে জানা যায়, এখন স্বর্ণা জাতীয় ধান বিক্রি হচ্ছে সাতশো টাকা মন দরে। আর গুটি স্বর্না ছয়শো সত্তর টাকা দরে। খুব ভাল মানের দাম আড়তে দেয়া হচ্ছে প্রতি কেজি সতের টাকা দরে। পুরোপুরি ধান উঠলে আরো কমবে বলে শঙ্কা কৃষকদের। কমদামে ধান বেচে কৃষক ক্ষতিগ্রস্ত হলেও লাভবান হচ্ছে চাল ব্যবসায়ীরা। আবার নতুন ধান উঠার পরেও বাজারে চালের দাম কমেনি।

রাজশাহী কৃষি বিভাগের সূত্র জানায়, এখন মূলত স্বর্না আমন ধান উঠছে। এ অঞ্চলে ৭৫ হাজার ১৬৫ হেক্টর জমিতে এ ধানের চাষ হয়েছে। শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত প্রায় পয়ত্রিশ হাজার হেক্টর জমির ধান কাটা হয়ে গেছে। গড় ফলন প্রতি হেক্টরে ৭.৫৭ টন। জাতভেেদ ধানের দাম ওঠানামা করছে এমনটি জানালেন সূত্র। গোদাগাড়ির কৃষক শহিদুল জানালেন এবার সেচের কারণে খরচ বাড়লেও ফলন ভাল হয়েছে। পোকা মাকড়ের উপদ্রব কম ছিল। তাছাড়া কীটনাশক ব্যবহারের বদলে পার্চিং পদ্ধতি বেশ কাজে দিয়েছে।
রাজশাহী কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্র জানায়, এবার রাজশাহী অঞ্চলের চার জেলা রাজশাহী, নওগাঁ, নাটোর, চাপাইনবাবগঞ্জে আমন আবাদ হয়েছে সাড়ে তিন লাখ হেক্টর জমিতে।

রাজশাহী অঞ্চলের সবচেয়ে বেশী ধান উৎপাদনকারী এলাকা নওগাঁ। অগ্রহায়নের শুরুতেই ঘটা করে নিয়ামতপুর উপজেলায় নবান্ন উৎসব করা হয়েছে। মহাদেবপুর উপজেলায় চকরাজাপুর দামড়া ধনজেইলের মাঠে মাঠে সোনালী ধান সবার নজর কাড়ে। বিভিন্ন জাতের ধান। রয়েছে সুগন্ধি চালও। আগামী মাসের মাঝামাঝি সময়ের মধ্যে প্রায় সবধান কাটাই মাড়াই হয়ে যাবে। ধান কাটাই মাড়াইয়ে সনাতন পদ্ধতির সাথে আধুনিক যন্ত্রপাতি যোগ হয়েছে। মাঠের পাশেই ধান মাড়াই হয়ে যাচ্ছে। কোথাও যন্ত্র দিয়ে ধান কাটার দৃশ্য নজর এড়ায়না।
একদিকে যখন ধান কাটার উৎসব চলছে। তখন আবার আলুসহ বিভিন্ন শাকসবজীর আবাদ নিয়েও ব্যস্ততা। মাঠজুড়ে শোভা পাচ্ছে দুধসাদা ফুলকপি, সবুজ বলের মত বাধাকপি, ব্রোকলি। পালংশাক লালশাকের সবুজ লাল চাদরের বিছানা। এবার আলুর দাম ভাল পাওয়ায় আলু চাষের দিকে ঝোক বেশী দেখা যায়। যদিও বাজারে আগাম লাগানো আলু চলে এসেছে। ছোট ছোট আলু যা জামাই ভাজি নামে পরিচিত বিক্রি হচ্ছে প্রতি কেজি একশো টাকা আর পেয়াজের ফুলকাও আশী টাকা। গোলাপী আভার গাজর ষাট টাকা কেজি নিয়ে বাজারে চোখ মেলেছে। ব্যবসায়ীরা জানান চায়না থেকে আসা গাজরের কারণে দেশী গাজর শুরুতে বেশী দাম পায়নি।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: উৎসব

২২ ডিসেম্বর, ২০২২
১৭ নভেম্বর, ২০২২

আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ