পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কে এম নূরুল হুদা পদে থাকার নৈতিক অধিকার হারিয়ে ফেলেছেন বলে মনে করেন বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী। তিনি বলেন, আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনে পটুয়াখালী-৩ আসনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পেয়েছেন সিইসির ভাগ্নে এসএম শাহজাদা সাজু।
আওয়ামী লীগের মনোনীত প্রার্থী হিসেবে তিনি চিঠি পেয়েছেন। সেখানে আওয়ামী লীগের আর এক মনোনয়ন প্রত্যাশী আখম জাহাঙ্গীর হোসেন বলেছেন, তাকে মনোনয়ন না দেবার কারণ শাহজাদা সিইসি’র ভাগ্নে। তিনি বলেন, সিইসিকে ক্ষমতাসীনদের পক্ষে কাজে লাগানোর জন্যই তাঁর ভাগ্নেকে আওয়ামী লীগ মনোনয়ন দিয়েছে। এই মনোনয়ন সিইসির জন্য স্বার্থের সংঘর্ষের একটি সুষ্পষ্ট ক্ষেত্র তৈরী করেছে, যার কারণে সিইসি স্বীয় পদে থাকার নৈতিক অধিকার সম্পূর্ণভাবে হারিয়েছেন। গতকাল (সোমবার) সকালে নয়াপল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন।
রিজভী বলেন, সিইসির পক্ষে একটি সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন পরিচালনা করা কোনভাবেই সম্ভব নয়। সিইসি যে আওয়ামী লীগের অঘোষিত নেতা তা তাঁর কর্মকান্ডে প্রমাণিত। তিনি নির্বাচন কমিশনের প্রধান হওয়ার কারণে নিজে নৌকায় না উঠে ভাগ্নেকে নৌকার মাঝি করলেন। ভাগ্নে সাজুর মনোনয়নের প্রেক্ষিতে সিইসি উচ্চ নৈতিক মান প্রদর্শন করে অবিলম্বে স্বীয় পদ থেকে সরে দাঁড়াবেন বলেও আশা প্রকাশ করেছেন তিনি।
এ প্রসঙ্গে তিনি একটি উদাহরণ দিয়ে বলেন, প্রশাসনের উর্দ্ধতন কর্মকর্তাদের সততা, নিরপেক্ষতার অনন্য দৃষ্টান্ত উল্লেখযোগ্য, যার তুলনা বর্তমানে নেই বললেই চলে। ২০০১ সালের নির্বাচনে তৎকালীন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান উপদেষ্টার মূখ্য সচিব ড. শাহ মোহাম্মদ ফরিদ স্বেচ্ছায় মূখ্য সচিবের পদ থেকে পদত্যাগ করেছিলেন-যাতে স্বার্থের সংঘাতের প্রশ্ন কোনভাবেই উঠতে না পারে। কারণ সেই নির্বাচনে তার ভাই বিএনপির মনোনয়ন পেয়েছিলেন। যদিও তিনি নির্বাচন পরিচালনার দায়িত্বে ছিলেন না। তবু তিনি পদত্যাগ করে এক অসাধারণ নজীর স্থাপন করেছিলেন। বর্তমান সিইসি সেই নৈতিকতা ও মূল্যবোধের দায়-দায়িত্ব থেকে অনেক দূরে অবস্থান করেন।
ইসি সচিবকে প্রত্যাহারের দবি জানিয়ে বিএনপির এই নেতা বলেন, আওয়ামী লীগ নেতাদের ভাষায় কথা বলে আসছেন ইসি সচিব হেলাল উদ্দিন সাহেব, দ্রুত দলবাজ ইসি সচিবকে নির্বাচন কমিশন থেকে প্রত্যাহারের দাবি জানাচ্ছি। কারণ আওয়ামী লীগ নেতারদের বক্তব্যের সাথে সুর মিলিয়ে বিরামহীন রাজনৈতিক বক্তব্য-বিবৃতি দিয়ে যাচ্ছেন তিনি। একতরফা ও নীলনকশার পাতানো নির্বাচনের মূল ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়েছেন ইসি সচিব। সরকার পরিকল্পিতভাবে সাজানো ভোটারবিহীন আরেকটি নির্বাচন করার জন্য দীর্ঘদিনের পরিকল্পনার অংশ হিসাবে নির্বাচন কমিশনে হেলাল উদ্দীন সাহেবকে নিয়োগ দিয়েছে। ইসি সচিব মূলত: নির্বাচন কমিশন পরিচালনা করছে। বাকী পাঁচ সদস্যের কমিশনারদের ওপর প্রভাব বিস্তার করতে জোরে সোরে তোড়জোড় চালাচ্ছেন তিনি।
তিনি বলেন, বিগত ৫ জানুয়ারির ভোটারবিহীন নির্বাচনের রুপকার ইসির তৎকালীন সচিব বর্তমান পিএসসির চেয়ারম্যান ড. মোহাম্মদ সাদিক ও প্রধানমন্ত্রীর রাজনৈতিক উপদেষ্টা এইচটি ইমামের পরামর্শে নির্বাচন কমিশনকে পরিচালনা করেন হেলাল উদ্দীন। ক্ষমতাসীন মহলের অন্দরে অবাধ বিচরণ নির্বাচন কমিশন সচিবের। ভাটারবিহীন সরকারের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিশেষ অনুগ্রহভাজনদের সমমর্যাদা বহন করে চলছেন তিনি। গত শনিবার নির্বাচন ভবনে বিএনপিকে হুঁসিয়ারি দিয়ে ইসি সচিব ভবিষ্যতে সতকর্তার সাথে কথা বলতে বলেছেন।›-তার এই বক্তব্য প্রমাণ করে তিনি নির্বাচন কমিশনের সচিব নন। তিনি নির্বাচন কমিশনে আওয়ামী লীগ শাখার প্রধান নেতা। ইসি সচিব গোপনে সবচেয়ে অজনপ্রিয় একটি সরকারকে আবার অবৈধ পন্থায় ক্ষমতায় আনার গভীর ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হয়েছেন।
রিজভী বলেন, বিশেষ সুবিধাভোগী হেলালউদ্দিন আহমদ ২০১৭ সালের ৩০ জুলাই ভারপ্রাপ্ত সচিব হিসেবে নির্বাচন কমিশন সচিবালয়ে যোগদান করে চলতি বছরের ২০ ফেব্রুয়ারি ২০১৮ পূর্ণ সচিব পদে সরকার তাকে পদোন্নতি দেয়। অথচ ২০১২ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত তিনি জেলা প্রশাসক ছিলেন। অল্প সময়ের মধ্যে সুদূরপ্রসারি পরিকল্পনার অংশ হিসাবে তাকে নির্বাচন কমিশনের মতো একটি গুরুত্বপূর্ণ স্থানে সরকার সচিব হিসাবে নিয়োগ দিয়েছে। তিনি চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের মেয়র মহিউদ্দিন আহমদের একান্ত সচিব ছিলেন। ছাত্রজীবনে ছাত্রলীগের রাজনীতির সাথে সম্পৃক্ত ছিলেন। আওয়ামী লীগপন্থী আমলা হিসাবে তার পরিচিতি ব্যাপক। তিনি বর্তমানে বাংলাদেশ অ্যাডমিনিস্ট্রেটিভ সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশনের সহ-সভাপতি। প্রশাসনের ভেতরে সরকারের প্রভাবশালী একজন আমলা। প্রধানমন্ত্রী, বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী, আওয়ামী লীগের প্রভাবশালী ব্যক্তিদের সঙ্গে তার হাস্যোজ্জ্বল ছবি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাসছে। বর্তমান প্রধানমন্ত্রীকে নিয়ে তার ব্যক্তিগত সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে প্রশংসামূলক পোস্ট দেয়া আছে। এসবে প্রমানিত হয় তিনি নিরপেক্ষ নন, চরম দলবাজ এবং আওয়ামী লীগের অন্ধ অনুসারী।
রুহুল কবির রিজভী বলেন, গত ৮ নভেম্বর নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পর থেকে হেলাল উদ্দীন আহমদ আরো বেপরোয়া হয়ে উঠেছেন। তফসিল ঘোষণার আগে তিনি পরিকল্পনা কমিশনে প্রধানমন্ত্রীর সাথে বৈঠক করেন। হেলাল উদ্দীনের উপস্থিতিতে প্রধানমন্ত্রীর মূখ্যসচিব এবং স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জন নিরাপত্তা বিভাগের সচিব চট্টগ্রামের রিটার্নিং কর্মকর্তা ও পুলিশ সুপারদের ডেকে গত ১৬ নভেম্বর বৈঠক করেছেন। পরবর্তীতে ২০ নভেম্বর চট্টগ্রামের পুলিশ কমিশনার, তার এলাকার দায়িত্বে নিয়োজিত কর্মকর্তাদের ডেকে সরকারের পক্ষে সুনির্দিষ্ট নির্দেশনা দিয়েছেন। এসব ঘটনায় নির্বাচনী আইনের প্রতি তিনি বৃদ্ধাঙ্গুলি প্রদর্শন করেছেন। নির্বাচন কমিশনের কর্মকর্তারা ইসি সচিবের ভয়ে তটস্থ। সরকারের ইচ্ছে অনুযায়ী দক্ষ ও নিরপেক্ষদের বদলি করে নির্বাচন ভবনটি তিনি আওয়ামীপন্থী ক্যাডারদের দিয়ে সাজিয়েছেন।
বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব বলেন, এ ধরণের চিহ্নিত, দলবাজ ও সরকারের চরম সুবিধাভোগী ইসি সচিব স্ব-পদে বহাল থাকলে কখনোই সুষ্ঠু নির্বাচন সম্ভব নয়। ইসি সচিবের বিরুদ্ধে সিইসির কাছে বিএনপির নেতৃত্বাধীন জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট সুনির্দিষ্ট অভিযোগ দাখিল করলেও তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে না। অবিলম্বে ইসি সচিবকে প্রত্যাহার করে রাজনৈতিক কর্মকান্ডে যুক্ত থাকার সুনির্দিষ্ট অভিযোগের জন্য তার বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করার দাবি জানান তিনি।
গ্রেফতার ও বিএনপি নেতাকর্মীদেরকে নির্যাতন-নিপীড়ণ প্রসঙ্গে রিজভী বলেন, একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে বিএনপির নেতাকর্মী ও সমর্থকদের হামলা, গ্রেফতার ভয়-ভীতি প্রদর্শন, নেতাকর্মীদের পুলিশ দিয়ে হয়রানি হুমকি ধমকি দেয়া হচ্ছে।
এসময় উপস্থিত ছিলেন-বিএনপির চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা সুকোমল বড়‚য়া, একরামুজ্জামান, যুগ্ম-মহাসচিব খায়রুল কবির খোকন, সহ-দপ্তর সম্পাদক মুনির হোসেন প্রমূখ।#
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।