পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
একদিকে উল্লাস। আরেক পাশে হতাশা আর অসন্তোষ। গতকাল রোববার আওয়ামী লীগের ‘নৌকা’র মাঝিদের নাম প্রকাশের পর থেকেই বন্দরনগরীসহ বৃহত্তর চট্টগ্রামের সর্বত্র আলোচনা-সমালোচনা নতুন মাত্রা পেয়েছে। ‘নৌকা’ প্রতীকে নির্বাচনের জন্য মনোনীত প্রার্থীদের চিঠি দেওয়া শুরু হলেই ক্ষমতাসীন দলের চাটগাঁর তৃণমূল পর্যায়ের নেতা-কর্মী, সমর্থকদের মাঝে সরব মিশ্র প্রতিক্রিয়া লক্ষ্য করা যায়। এর পাশাপাশি আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে মহাজোটের শরিক জাতীয় পার্টিসহ অন্যান্য দল-সংগঠনের নেতা-কর্মীরাও কেউ খুশী আবার কেউ নাখোশ।
কেননা বন্দরনগরীর তিনটিসহ চট্টগ্রামের ১৬ আসন এবং তিন পার্বত্য জেলার তিনটি আসনসহ ১৯টি সংসদীয় এলাকায় অধিকাংশ আসনেই আওয়ামী লীগের একাধিক সম্ভাব্য প্রার্থী বা মনোনয়ন প্রত্যাশী আবির্ভূত হয়েছিলেন। তেমনি মহাজোটের অন্য শরিক দলেরও প্রার্থী রয়েছেন।
‘নৌকা’র টিকিট ঘোষণার পর এখন বোঝা যাচ্ছে, চট্টগ্রামে মহাজোটের আওয়ামী লীগের সাথে শরিক অপর তিনটি দল ৫টি আসনে এবং হেফাজতভূক্ত ইসলামী ঐক্যজোট (একাংশ) একটি আসনে দরকষাকষিতে থাকলেও শেষ পর্যন্ত জোটগত মনোনয়ন পেতে যাচ্ছে তিনটি। এরমধ্যে জাতীয় পার্টি একটি মাত্র আসনে (চট্টগ্রাম-৫ হাটহাজারী) এবং তরিকত ফেডারেশন ও জাসদের একাংশ যথাক্রমে চট্টগ্রাম-২ (ফটিকছড়ি) ও চট্টগ্রাম-৮ (বোয়ালখালী-চান্দগাঁও) আসনে জোটগত মনোনয়ন পাচ্ছে।
গতকাল আওয়ামী লীগের মনোনীত প্রার্থীরা ‘নৌকা’র চিঠি হাতে পাওয়ার পর মহাজোটভূক্ত তৃণমূলের নেতা-কর্মীদের আলোচনা আর সমালোচনার মূল সুর ছিল- মনোনয়ন টিকিট প্রাপ্তিতে কার কপাল খুললো এবং মনোনয়ন বঞ্চনায় কার কার কপাল পুড়লো।
অবশ্য আওয়ামী লীগের বিগত ২০০৮ এবং ২০১৪ সালে নির্বাচিত দলের সংসদ সদস্যগণ চট্টগ্রামে অধিকাংশ আসনে এবারও টিকিট পেয়ে গেছেন। অর্থাৎ ‘পুরনো চাল ভাতে বাড়ে’- এই আপ্ত প্রবাদবাক্যের ওপর ভরসা রেখেছে ক্ষমতাসীন দল।
চট্টগ্রাম-১০ (ডবলমুরিং-হালিশহর), চট্টগ্রাম-১১ (বন্দর-পতেঙ্গা) এবং চট্টগ্রাম-১৬ (বাঁশখালী) এই তিনটি আসনে বর্তমান আওয়ামী লীগের মনোনয়ন প্রশ্নে চূড়ান্ত ঘোষণা আসেনি শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত। এ তিনটি আসনে আওয়ামী লীগের একাধিক করে মনোনয়ন প্রত্যাশী রয়েছেন।
অন্যদিকে বিএনপির নেতৃত্বে ২০ দলীয় জোট ও জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের সম্ভাব্য প্রার্থী বা মনোনয়ন প্রত্যাশীরা তাদের মূল প্রতিপক্ষ আওয়ামী লীগ ও মহাজোট কোন আসনে কাকে মনোনয়ন দিচ্ছে তা দেখেই এখন নির্বাচনী মাঠের কৌশল গ্রহণ করবেন। তাই আওয়ামী লীগের প্রকাশিত প্রার্থী মনোনয়ন তালিকা নিয়ে বিএনপির তৃণমূলেও আলোচনা-পর্যালোচনার কমতি নেই। প্রার্থী মনোনয়নে বঞ্চনার কারণে আওয়ামী লীগের তৃণমূলে সৃষ্ট অসন্তোষ বা হতাশাকে ‘প্লাস পয়েন্ট’ হিসেবে কাজে লাগানোর জন্য স্বভাবতই নির্বাচনী কৌশল গ্রহণ করবে বিএনপির জোট।
‘নৌকা’র টিকিট প্রাপ্তি ও বঞ্চনা-
বন্দরনগরী চট্টগ্রামের কেন্দ্রীয় ও মর্যাদাপূর্ণ সংসদীয় আসন হিসেবে সবসময়ই গুরুত্ব বহন করে আসছে চট্টগ্রাম-৯ (কোতোয়ালী-বাকলিয়া) নির্বাচনী এলাকাটি। এবার আসনটিতে ‘নৌকা’র নতুন মাঝি হিসেবে মনোনয়ন পেলেন ব্যারিস্টার মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল। সাবেক চট্টগ্রাম সিটি মেয়র ‘চট্টলবীর’ মরহুম এবিএম মহিউদ্দিন চৌধুরীর ছেলে ব্যারিস্টার নওফেল ২০১৬ সালে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদকের দায়িত্ব লাভ করেন। তিনি দলের নির্বাচন পরিচালনা কমিটির সদস্য হিসেবেও দায়িত্ব পালন করছেন এবং আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আস্থাভাজন। শেখ হাসিনার চমক হিসেবেই দেখা হচ্ছে দলের তরুণ নেতা ব্যারিস্টার মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেলের চূড়ান্ত টিকিট লাভের বিষয়টি। গতকাল সকাল থেকেই চট্টগ্রাম নগরীর সর্বত্র নওফেল ছিলেন আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে।
এ আসনে বর্তমান সংসদ সদস্য জাতীয় পার্টির কেন্দ্রীয় প্রেসিডিয়াম সদস্য জিয়াউদ্দিন আহমেদ বাবলু মহাজোটের ‘লাঙল’ প্রতীকে প্রার্থিতার প্রত্যাশায় থেকেও অবশেষে জোটগত মনোনয়ন-বঞ্চিত হলেন। অনেকেরই ধারণা ছিল জাতীয় পার্টির কেন্দ্রীয় নেতা ও বর্তমান এমপি বাবলু এইচ এম এরশাদের ভাগ্নি জামাই হিসেবেও তার মনোনয়নের ভাগ্যের শিকে ছিঁড়বে! তবে তা আর হলো না।
আসনটিতে (কোতোয়ালী-বাকলিয়া) ওই দু’জন ছাড়াও আওয়ামী লীগের মনোনয়ন ফরম সংগ্রহ ও জমা দিয়েছিলেন চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রী নুরুল ইসলাম বিএসসি, নগর আওয়ামী লীগ নেতা চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (সিডিএ) চেয়ারম্যান আবদুচ ছালামসহ দলের আরো ডজন সংখ্যক নেতা। গতকাল মনোনয়নের চিঠি নওফেলের হাতে যাওয়ার পরিপ্রেক্ষিতে দলের তৃণমূল কর্মীদের প্রতিক্রিয়া মিশ্র ধরনের। অনেকেই বলেছেন, সিটি মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দীন, মহানগর নেতা ও মন্ত্রী নুরুল ইসলাম বিএসসি এবং সিডিএ চেয়ারম্যান ছালামের ভূমিকা তথা তাদের সমর্থিত নেতা-কর্মীদের মেরুকরণ কী হয় তাই এখন দেখার বিষয়।
এদিকে চট্টগ্রাম-১ (মিরসরাই) আসনে আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য গৃহায়ণ ও গণপূর্তমন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন এবং চট্টগ্রাম-১৩ (আনোয়ারা) আসনের দলের সাবেক কেন্দ্রীয় নেতা ও চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা সভাপতি আখতারুজ্জামান চৌধুরী বাবুর পুত্র ভূমি প্রতিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী জাবেদ ‘নৌকা’র টিকিট পেয়েছেন অনায়াসেই। একইভাবে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পেলেন চট্টগ্রাম-৬ (রাউজান) আসনে বর্তমান সংসদ সদস্য এবিএম ফজলে করিম চৌধুরী, চট্টগ্রাম-১২ (পটিয়া) আসনে শামসুল হক চৌধুরী এবং চট্টগ্রাম-৭ (রাঙ্গুনিয়া) আসনে দলের কেন্দ্রীয় প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক ড. হাছান মাহমুদ। তাদের বিপরীতে দলের জোরালো মনোনয়ন প্রত্যাশী ছিলেন না।
তবে চট্টগ্রাম-৪ (সীতাকুন্ড) আসনে বর্তমান এমপি মোঃ দিদারুল আলম, চট্টগ্রাম-৩ (স›দ্বীপ) আসনে মাহফুজুর রহমান মিতা, চট্টগ্রাম-১৪ (চন্দনাইশ) আসনে নজরুল ইসলাম চৌধুরী, চট্টগ্রাম-১৫ (সাতকানিয়া-লোহাগাড়া) আসনে ড. আবু রেজা মুহাম্মদ নেজামুদ্দিন নদভী আওয়ামী লীগের ‘নৌকা’র টিকিট পেলেন। নিজ নিজ সংসদীয় এলাকায় দল বা মহাজোটের একাধিক মনোনয়ন প্রত্যাশীর দাবি ও চ্যালেঞ্জ অতিক্রম করেই অবশেষে মনোনয়ন তাদের মনোনয়ন নিশ্চিত হলো।
তবে মনোনয়ন-বঞ্চিতদের তৃণমূলে কর্মী-সমর্থকদের মতিগতি কী হয় সেদিকে এখন রাজনীতি সচেতন চট্টগ্রামবাসীর নজর।
আওয়ামী লীগের ‘নৌকা’ প্রতীকের জন্য মনোনীত প্রার্থীদের গতকাল চিঠি প্রদানের পরিপ্রেক্ষিতে চট্টগ্রাম মহানগরীতে মহাজোটের অন্য কোনো শরিকদল আসন ভাগাভাগির হিসাবে এখন আর নেই। এছাড়া জেলায় চট্টগ্রাম-৫ (হাটহাজারী) আসনে জাতীয় পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য মন্ত্রী ব্যারিস্টার আনিসুল ইসলাম মাহমুদ ‘লাঙল’ প্রতীকে, চট্টগ্রাম-২ (ফটিকছড়ি) আসনে তরিকত ফেডারেশনের চেয়ারম্যান সৈয়দ নজিবুল বশর মাইজভান্ডারী এবং চট্টগ্রাম-৮ (বোয়ালখালী-চান্দগাঁও) আসনে জাসদ (একাংশ) থেকে মঈনুদ্দীন খান বাদল ‘নৌকা’ প্রতীকে জোটগত মনোনয়ন পেতে যাচ্ছেন।
যেহেতু এই তিনটি আসনে আওয়ামী লীগ প্রার্থী ঘোষণা করেনি। চট্টগ্রাম-১৬ (বাঁশখালী) আসনে দল নাকি মহাজোটের অপর শরিক দল পাচ্ছে তা স্পষ্ট নয়। তবে মহাজোটের অন্য দলের জন্য হিসাবে রাখা ওই তিনটি আসনেই আওয়ামী লীগের একাধিক করে মনোনয়ন প্রত্যাশী রয়েছেন। অনেকেই নির্বাচন কমিশনের মনোনয়নপত্র দাখিল করার কারণে প্রার্থীজট তৈরি হয়েছে। এরফলে মহাজোটের অন্য দলের সম্ভাব্য প্রার্থীরা নিজ নিজ এলাকায় কঠিন চ্যালেঞ্জ ও বিরোধিতার সম্মুখীন হতে পারেন।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।