Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

ইসলামী দলগুলোতে হতাশা

স্টাফ রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ২৬ নভেম্বর, ২০১৮, ১২:০২ এএম

একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ থেকে নৌকার মনোনয়ন ভাগ্যে না জোটায় বিভিন্ন ইসলামী ধারার দলগুলোর সম্ভাব্য প্রার্থীদের মাঝে চরম হতাশা দেখা দিয়েছে। ইসলামী দলগুলো থেকে দুই/তিনশ আসনে নমিনেশন চাওয়া হয়। প্রত্যাশা ছিল আলেম সমাজ-মাদরাসার ছাত্র-শিক্ষকদের ভোট নৌকায় তোলার কথা বিবেচনা করে আওয়ামী লীগ কম পক্ষ্যে ৩০ থেকে ৪০টি আসন দেবে। কিন্তু মাত্র ‘৫টি আসন ইসলামী দলগুলো পাচ্ছে’ ইংগিত দিয়ে ২৩০ আসনে নৌকা প্রতীকের প্রার্থী তালিকা প্রকাশ করেছে আওয়ামী লীগ। এই ঘোষণায় ইসলামী ধারার যে সব দল নৌকায় উঠতে তৎপর হন তারা হয়ে পড়েন আশাহত। অরাজনৈতিক সংগঠন হেফাজতসহ অসংখ্য ইসলামী ধারার দল সাময়িক সুযোগ সুবিধা নিয়ে আওয়ামী লীগের দিকে ঝুকে পড়েন। ইসলামী ঐক্যজোট-হেফাজতসহ দলগুলো আওয়ামী লীগের মনোনয়ন প্রত্যাশায় ২০১৬ সাল থেকে লবিং চালিয়ে যাচ্ছেন। আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে কয়েকটি আসনে মনোনয়নের আশ্বাসও মেলে। কিন্তু এখনো কোনো দলই আসন নিশ্চিত করে পাননি। ইসলামী ঐক্যজোটের দাবীকৃত চারটি আসনের একটিও মনোনয়ন জুটেনি। অন্যান্য ইসলামী দলগুলোর অবস্থা প্রায় অভিন্ন। এতে ইসলামী ধারা দলগুলোর শীর্ষ পর্যায়ের নেতারা হতাশ হয়ে পড়েছেন। ইসলামী ধারার দলগুলোর একাধিক সুত্র এতথ্য জানিয়েছে। ক্ষমতার মধুর লোভে দেশের তৌহিদী জনতার ভাবাবেগ-অনুভুতি প্রত্যাশা ঝিকেয় তুলে মূলতঃ ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন মহাজোটে ‘চাক’ বাঁধে প্রায় শতাধিক ইসলামী ধারার রাজনৈতিক দল। আদর্শ, নীতি নৈতিকতা জলাঞ্জলি দিয়ে নৌকায় উঠে ক্ষমতার মধু খাওয়াই ছিল উদ্দেশ্য। কিন্তু আওয়ামী লীগের প্রার্থী তালিকা প্রকাশ করায় আওয়ামী লীগের সঙ্গে চাক বাঁধা ইসলামী দলগুলোতে নেমে এসেছে চরম হতাশা।
আওয়ামী লীগের নৌকায় উঠে যেসব দল নির্বাচন করার জন্য দীর্ঘদিন থেকে চেষ্টা চালিয়ে আসছে সেগুলো হলো, বাংলাদেশ তরিকত ফেডারেশন, জাকের পার্টি, ইসলামী ঐক্যজোট (আমিনী), ইসলাকি ফাউন্ডশনের গভর্নিং বোর্ডের সদস্য মিছবাহুল রহমান চৌধুরীর নেতৃত্বাধীন ইসলামিক ডেমোক্রেটিক অ্যালায়েন্স (১৫টি দল), মাওলানা জাফরুল্লাহ খানের নেতৃত্বে সম্মিলিত ইসলাম জোটের (৮টি দল), ফরিদউদ্দিন মাসউদের জমিয়তুল উলামা এবং মুফতি রুহুল আমিনের নেতৃত্বে খাদেমুল ইসলাম, এরশাদের নেতৃত্বে ৫৯ দলের সম্মিলিত জাতীয় জোটের শরীক বাংলাদেশ খেলাফত মজলিস, বাংলাদেশ ইসলামি ফ্রন্ট ও আরো ৩২টি ইসলামী দল নৌকায় উঠে নির্বাচন করার চেষ্টা করে। এ ছাড়াও অরাজনৈতিক সংগঠন হেফাজতে ইসলাম, ব্যারিষ্টার নাজমূল হুদা বিএনএ (৩২টি দল) সব মিলে প্রায় শতাধিক ইসলামী ধারার দল নৌকা প্রতীকে নির্বাচন করার লক্ষ্যে দেন দরবার করেছে। গণভবনে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সংলাপ পরবর্তীতে একক ভাবে প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদকের সঙ্গে সংলাপ করেও নিজেদের ভবিষ্যৎ গড়তে আসন চেয়েছে।
গত ১৬ নভেম্বর জোটের পক্ষ থেকে ওবায়দুল কাদেরের সঙ্গে বৈঠক করে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের কাছে ১০টি আসন চেয়েছিল সম্মিলিত ইসলামী ঐক্যজোট। গত ৩ নভেম্বর বাংলাদেশ খেলাফত আন্দোলনের (একাংশ) আমির মাওলানা জাফরুল্লাহ খানের নেতৃত্বে এ জোট গঠিত হয়। পরবর্তীতে আরও দুটি দল এ জোটে যুক্ত হয়। জোটের দলগুলো অনিবন্ধিত হলেও আওয়ামী লীগের আনুকূল্য নিয়ে ক্ষমতায় যেতে তৎপর এ জোটের নেতারা।
জানা গেছে, সম্মিলিত ইসলামী ঐক্যজোটের চেয়ারম্যানের দায়িত্বে রয়েছেন বাংলাদেশ খেলাফত আন্দোলনের (একাংশ) আমির মাওলানা জাফরুল্লাহ খান। তিনিই একই সঙ্গে হেফাজতে ইসলামেরও শীর্ষ নেতা। জাফরুল্লাহ খানের নেতৃত্বে পাঁচ সদস্যদের প্রতিনিধি দল ধানমন্ডিতে আওয়ামী লীগের সভাপতির কার্যালয়ে যান। সেখানে তারা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের সঙ্গে বৈঠকে নৌকা প্রতীকে নির্বাচনে অংশ গ্রহণের আগ্রহ প্রকাশ করেন। একই সঙ্গে জোটের ১০ নেতার জন্য ১০টি আসন দেওয়ার প্রস্তাব দেন। যদিও আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে জানানো হয় তাদের প্রস্তাব আওয়ামী লীগের সভাপতি শেখ হাসিনার কাছে পাঠানো হবে। প্রয়োজনে পরবর্তীতে ফের বৈঠকে করে সিদ্ধান্ত জানানো হবে। কিন্তু ভাগ্যের সিঁকে ছিড়েনি। জাকের পার্টির চেয়ারম্যান মোস্তাফা আমির ফয়সাল ৫টি আসন চান, আর মাওলানা বাহাদুর শাহ মোজাদ্দেজীর ইসলামী ফ্রন্ট চায় একটি আসন। কিছুই জোটেনি।
নৌকায় উঠে নির্বাচন করার লক্ষ্যে ২০১৬ সানের ৭ জানুয়ারী ইসলামী ঐক্যজোটের চেয়ারম্যান মাওলানা আব্দুল লতিফ নেজামীর নেতৃত্বে ইসলামী ঐক্যজোট ২০ দলীয় জোট থেকে বেরিয়ে আসে। দলটি থেকে নরসিংদী-৩ আসনে দলীয় চেয়ারম্যান মাওলানা আব্দুল লতিফ নেজামীর, বি-বাড়িয়া-২/৩ আসনে দলের ভাইস চেয়ারম্যান মাওলানা আবুল হাসনাত আমিনী, চট্রগ্রাম-৭ আসনে দলের মহাসচিব মুফতী ফয়জুল্লাহ ও কুমিল্লা-১ আসনে দলের সহকারী মহাসচিব মাওলানা আলতাফ হোসাইনের মনোনয়ন চাওয়া হয়। ইসলামী ঐক্যজোটের একজন নেতা জানান, আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে চারটি আসনের মনোনয়নের একটিও ভাগ্যে না জোটায় নেতৃবৃন্দ চরমভাবে হতাশ হয়েছেন।
এদিকে আল্লামা শাহ আহমদ শফীর নেতৃত্বে গত অক্টোবর মাসে রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী ময়দানে আল-হাইয়্যাতুল উলয়ালিল জামিয়াতিল কাওমিয়া বাংলাদেশ-এর উদ্যোগে এক শোকরানা মাহফিলের আয়োজন করা হয়েছিল। উল্লেখিত শোকরানা মাহফিলে গওহরডাঙ্গা মাদরাসার প্রিন্সিপাল ও নড়াইল-১ আসনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন প্রত্যাশী মাওলানা রুহুল আমিন কওমী মাদরাসাকে স্বীকৃতি দেয়ায় প্রধানমন্ত্রীকে ‘কওমী জননী’ উপাধি দেন। কওমী অঙ্গনের একজন আলেম জানান, গতকাল তিনিও নড়াইল-১ আসনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন না পাওয়ায় চরমভাবে হতাশ হয়েছেন। ইসলামী ধারার অন্যান্য দলগুলোর নেতাদের অবস্থায়ও প্রায় অভিন্ন।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: জাতীয় সংসদ নির্বাচন


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ