পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে মনোনয়ন প্রত্যাশীদের সাক্ষাতকার শেষে এখন চলছে প্রার্থী চূড়ান্ত এবং জোটের সাথে আসন ভাগাভাগি নিয়ে আলোচনা। ২০ দল, ঐক্যফ্রন্ট কিংবা বিএনপি যে দলেরই হোক বিজয়ী হতে পারবে এমন প্রার্থীকেই মনোনয়ন দেয়ার কথা ভাবছে দলটি। রাজপথের প্রধান বিরোধী দলটি পুরোনো জোট শরিকদের সাথে নতুন আরও একটি জোটকে নিয়ে নির্বাচনে অংশ নিচ্ছে। বিএনপি নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোট এখন ২৩ দলীয় জোট। জাতীয় ঐক্যফ্রন্টে বিএনপি ছাড়াও রয়েছে আরও ৪টি দল। দলগুলো হচ্ছে- গণফোরাম, জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল (জেএসডি), নাগরিক ঐক্য, কৃষক শ্রমিক জনতা লীগ। তাদের সাথে আরও রয়েছে ঐক্য প্রক্রিয়ার কয়েকটি দল। তাই সবমিলিয়ে আসন ভাগাভাগির ক্ষেত্রে বিএনপিকে ২৭টিরও বেশি দল নিয়ে ভাবতে হচ্ছে। এরই মধ্যে জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট ও ২০ দল বিএনপির কাছ থেকে শতাধিক আসন দাবি করেছে। যদিও আসন ভাগাভাগিকে তেমন কোন জটিল প্রক্রিয়া মনে করছেন বিএনপির শীর্ষ নেতারা। তারা বলছেন, জয়ী হওয়ার মতো প্রার্থী থাকলে শরিক দলগুলোকে আসন ছাড়তে তাদের কোনও আপত্তি নেই। আর আসন বণ্টনে জয়ী হবে এমন প্রার্থীকেই মনোনয়ন দেয়া হবে। এটি নিয়ে কোন সমস্যা হবে না।
এদিকে বিএনপির প্রার্থী চূড়ান্ত ও আসন বণ্টন নিয়ে গত দু’দিন ধরে আলোচনা করছেন দলটির নীতিনির্ধারক স্থায়ী কমিটির সদস্যরা। বৈঠকে নীতিনির্ধারক ফোরামের সদস্যরা মনোনয়ন প্রত্যাশীদের একটি সংক্ষিপ্ত তালিকাও তৈরি করেন। আগামী দু’একদিনের মধ্যে প্রার্থী তালিকার খসড়া তৈরি করা হবে। দলের চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া কারাগারে যাওয়ার আগে নানা জরিপসহ সার্বিক বিশ্লেষণ করে যে তালিকা তৈরি করেছিলেন তার সঙ্গে সমন্বয় করে চূড়ান্ত করা হবে ধানের শীষের প্রার্থী তালিকা।
জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট গঠনের পর একদিকে সংলাপের তোড়জোড় চললেও অন্যদিকে নিজস্বভাবে জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের সম্ভাব্য প্রার্থীদের মাঠের অবস্থান যাচাই করেছে বিএনপি। এতে জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট ও ২০ দলীয় জোটের শরিক দলের নেতাদের ৬০টি আসন পাওয়া যায়, যেখানে দলগুলোর সম্ভাব্য প্রার্থীদের ছাড় দেয়া যায়। কিন্তু প্রার্থীর গ্রহণযোগ্যতা ও জাতীয় রাজনীতি বিবেচনায় তার সঙ্গে ১০টি আসন যোগ করে সর্বোচ্চ ৭০টি আসনে ছাড় দেয়ার কথা ভাবছে বিএনপি।
বিএনপি সূত্রে জানা যায়, ৩০০ আসনে বিএনপির মনোনয়ন পেতে ২ হাজার ৫৮৬ জন প্রার্থী সাক্ষাতকার দিয়েছেন। তাদের সকলকেই দলের মনোনয়ন বোর্ডের সদস্যরা এবং ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান ৫টি নির্দেশনা দিয়েছেন। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দেয়া হয়েছে দলীয় সিদ্ধান্ত মানা ও ঐক্যবদ্ধ থাকা। সকলকেই বলা হয়েছে মাঠে শেষ পর্যন্ত অবস্থান করতে হবে, ভোট কেন্দ্র পাহারা দিতে হবে, ধানের শীষের পক্ষে অবস্থান নিতে হবে, বিদ্রোহী হলে কঠোর ব্যবস্থা এবং নির্দেশনা মেনে মনোনয়ন প্রত্যাহারের জন্য কঠোর বার্তা দেয়া হয়েছে। একইসাথে দলীয় নেতাকর্মীদের মতামত ও বিভিন্ন নাগরিক সংগঠনের জরিপের ভিত্তিতে দলের চেয়ারপারসনের পাশাপাশি ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান সম্ভাব্য প্রার্থীদের কয়েকটি তালিকা করেন। জরিপগুলো করা হয়েছিল সম্ভাব্য প্রার্থীর সাংগঠনিক সক্রিয়তা, তৃণমূল নেতাকর্মী ও সমর্থকদের সঙ্গে সম্পর্ক, সাধারণ ভোটারদের কাছে গ্রহণযোগ্যতা ও জনপ্রিয়তার ওপর ভিত্তি করে। বিএনপির একজন দায়িত্বশীল নেতা জানান, ২০১৭ সালের জুলাই মাসে বেগম খালেদা জিয়া ৩০০ আসনের সম্ভাব্য প্রার্থীদের একটি তালিকা তৈরি করেছিলেন। সেখানে কিছু আসনে একক প্রার্থীর ব্যাপারে যেমন উল্লেখ ছিল আবার অন্যান্য আসনগুলোতে প্রথম পছন্দ, দ্বিতীয় পছন্দ এবং তৃতীয় পছন্দের প্রার্থীর নাম উল্লেখ করা হয়েছিল। তবে এখন দেশের সার্বিক রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট গঠনের কারণে বেশকিছু আসনে ছাড় দেয়ার বিষয়টিও বিবেচনায় আনতে হচ্ছে।
বিএনপি সূত্রে জানা যায়, নানা মাধ্যমে প্রস্তুত তালিকাগুলো ধরে, বিভিন্ন আসনভিত্তিক জনমত ও সামর্থ্য বিবেচনা করে; একটি সংক্ষিপ্ত তালিকা তৈরি করা হচ্ছে। এর মধ্যে সিনিয়র নেতাদের আসনে বিকল্প রাখা হচ্ছে একজন করে। যেমন বেগম খালেদা জিয়াসহ সিনিয়র নেতাদের আসনেও একাধিক মনোনয়ন প্রত্যাশীকে মনোনয়ন ফরম সংগ্রহের সুযোগ রাখা হয়েছে। অন্তত ১৫০টি আসনে বিকল্প রাখা হচ্ছে দুই থেকে তিনজন করে। কিছু আসনে এ তালিকা তৈরীর পাশাপাশি ২০ দলীয় জোট ও জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের সঙ্গে আসন বন্টনের বিষয়ে সুরাহা করা করা হবে। সেই জন্য ২০ দলীয় জোট ও ঐক্যফ্রন্টের শরিকদের কাছে পাওয়া তালিকাগুলোর বিশ্লেষণ করা হচ্ছে। এছাড়া শরিকদের সঙ্গে আসন বণ্টন করা হলেও কিছু আসনে কৌশলগত কারণে রাখা হবে বিএনপির বিকল্প প্রার্থী।
এ বিষয়ে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান বলেছেন, আমাদের ছুটি জোট আছে। জয়ী হওয়ার সম্ভাবনা যার বেশি, তাকেই আমরা মনোনয়ন দেয়ার চেষ্টা করবো।
দুটি জোটের মধ্যে ২০ দল বিএনপির পুরোনো মিত্র। দীর্ঘদিন ধরে তারা বিএনপির সঙ্গে আছে। বিএনপির সিদ্ধান্ত মেনে নিয়ে তারা দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশ নেয়নি। ক্ষমতাসীন দল ও জোট ২০ দলের বহু নেতাদের বিভিন্ন সময় নানা প্রলোভন দেখিয়ে জোট ভাঙার চেষ্টা করেছে। কিন্তু জোট নেত্রী খালেদা জিয়ার নেতৃত্বের প্রতি তাঁরা বরাবরই আস্থা দেখিয়েছে। তাই তাদের খুশি রেখেই আসন ভাগাভাগি করতে চায় বিএনপি। দলটির একাধিক নেতা এমন আভাসই দিয়েছেন। ২০-দলীয় জোটের শরিকদের একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ৩৫-৪০ আসন দেয়ার কথা ভাবছে বিএনপি। তবে সমঝোতা না হলে চূড়ান্ত দরকষাকষির সময় আরও দুই-তিনটি আসনে ছাড় দিতে পারে। ইতিমধ্যে ২০ দলের শরিক দলগুলো নিজ নিজ দলের প্রার্থী তালিকা তৈরি করে বিএনপির দায়িত্বশীল নেতার হাতে পৌঁছে দিয়েছে। প্রার্থী তালিকা নিয়ে চুলচেরা বিশ্লেষণ চলছে। ২০ দলের মধ্যে জামায়াতে ইসলামী ৫০ আসনে তাদের প্রার্থী তালিকা দিয়েছে। বিএনপি তাদেরকে ২০টি আসনে ছাড় দেয়ার চিন্তাভাবনা করছে। তবে এতে জামায়াত রাজি না হলে আরও চার থেকে পাঁচটিতে ছাড় দেয়া হতে পারে। কর্নেল (অব.) ড. অলি আহমেদের নেতৃত্বাধীন লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টি (এলডিপি) ৩০ জনের একটি তালিকা জমা দিয়েছে। তবে পরবর্তী সময়ে ১২ জনের একটি সংক্ষিপ্ত তালিকাও দেয়া হয়। অলির চাওয়া অন্তত ৬ থেকে ৮টি আসন। এর মধ্যে কর্নেল অলি আহমেদ (চট্টগ্রাম-১৩), রেদোয়ান আহমেদ (কুমিল্লা-৭), শাহাদাত হোসেন সেলিমকে (লক্ষীপুর-১) বিএনপি ছাড় দেয়ার নীতিগত সিদ্ধান্ত নিয়েছে। বাংলাদেশ কল্যাণ পার্টি ১২ আসনের তালিকা দিয়েছে। এর মধ্যে দলটির চেয়ারম্যান মেজর জেনারেল (অব.) সৈয়দ মোহাম্মদ ইবরাহিমকে চট্টগ্রাম-৫ আসনটি ছাড় দেয়া হতে পারে। জাতীয় পার্টির (জাফর) ১৬ জনের একটি তালিকা বিএনপির কাছে জমা দিয়েছে। তাদের সর্বোচ্চ দুটি আসন দেয়া হতে পারে। ব্যারিস্টার আন্দালিব রহমান পার্থের নেতৃত্বাধীন বিজেপির চাওয়া তিনটি আসন। তবে ভোলা-১ আসনটি পার্থকে দেয়া হবে এটি মোটামুটি নিশ্চিত। এছাড়া খেলাফত মজলিস ৪টি আসন দাবি করলেও তাদের একটি বা দুইটিতে ছাড় দেয়া হতে পারে। জাগপা তিনটি আসনের তালিকা দিয়েছে। শফিউল আলম প্রধানের মেয়ে ব্যারিস্টার তাসমিয়া প্রধানকে পঞ্চগড়-২ আসন দেয়া হতে পারে। জমিয়তে উলামায়ে ইসলামের দুটি অংশই ২০ দলে রয়েছে। উভয় অংশ থেকে ৫ জন করে তালিকা দেয়া হয়েছে। দুই অংশে দুজনকে ছাড় দেয়ার চিন্তাভাবনা চলছে। এনপিপিও তাদের প্রার্থী তালিকা জমা দিয়েছে। দলটির চেয়ারম্যান ফরিদুজ্জামান ফরহাদ নড়াইল-২ থেকে নির্বাচনের প্রস্তুতি নিচ্ছেন। বাংলাদেশ লেবার পার্টি দলের চেয়ারম্যান-মহাসচিবসহ দুইটি আসনের তালিকা জমা দিয়েছে। তবে জোটের কোন দলকে আসন দিতে না পারলেও জোট ক্ষমতায় এলে তাদের অন্য কোনো সুবিধা দেয়ার প্রতিশ্রুতি দেয়া হতে পারে।
অন্যদিকে জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের শরিকদের মধ্যে নাগরিক ঐক্য ৪০টি, গণফোরাম ৩০টি, জেএসডি ৩০টি, কৃষক শ্রমিক জনতা লীগ ৫টি আসন চায়। গণফোরাম নেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের শীর্ষ নেতা ও গণফোরাম সভাপতি ড. কামাল হোসেন নির্বাচন করবেন না বলে জানা গেছে। তবে শেষ মুহূর্তে নির্বাচনে আসতে পারেন তিনি। আইনি বাধ্যবাধকতায় বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া নির্বাচন করতে না পারলে ড. কামাল হোসেন তার আসন থেকে নির্বাচন করতে পারেন। তাছাড়া রাজধানীর ধানমন্ডির আসন থেকেও নির্বাচন করতে পারেন ড. কামাল হোসেন। ঢাকার একটি করে আসনে গণফোরাম নেতা মোস্তফা মহসিন মন্টু ও সুব্রত চৌধুরীকেও মনোনয়ন দেয়া হতে পারে। ডাকসুর সাবেক ভিপি ও আওয়ামী লীগের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক সুলতান মোহাম্মদ মনসুর আহমেদ মৌলভীবাজার-২ আসনে মনোনয়ন পাবেন। মফিজুল ইসলাম খান কামালের জন্য মানিকগঞ্জ-৩ ও জানে আলমের জন্য চট্টগ্রাম-১০ আসন থেকে মনোনয়ন চাইবে গণফোরাম। জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল- জেএসডিও এর আগে ৩০ আসনের প্রস্তুতি নিলেও এখন ১৫টি চাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। জেএসডির সভাপতি আ স ম আবদুর রব লক্ষীপুর-৪ আসন থেকে অথবা ঢাকা থেকে মনোনয়ন চাইবেন। দলের সাধারণ সম্পাদক আবদুল মালেক রতন চান কুমিল্লা-৪ আসন। সহ-সভাপতি তানিয়া রব ঢাকা-১৮ (উত্তরা)। ঐক্যফ্রন্টের আরেক শরিক নাগরিক ঐক্য এতদিন ৩০ আসন চাইলেও এখন চূড়ান্ত দরকষাকষির পর্যায়ে ১৫টি চাওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছে। দলের আহ্বায়ক মাহমুদুর রহমান মান্না বগুড়া-২ মনোনয়ন চাইবেন। কাদের সিদ্দিকীর কৃষক শ্রমিক জনতা লীগকে সর্বোচ্চ দুটি আসন দিতে পারে বলে জানিয়েছে বিএনপি সূত্র। বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, আপাতত সবাই নিজেকে গোছাচ্ছে। আসন বণ্টন নিয়ে প্রত্যেক দল ও জোটের সঙ্গে বসতে হবে। তারপর আমরা ঠিক করব, কী করবো।#
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।