নারী দিবস ম্যারাথনে পাপিয়া চ্যাম্পিয়ন
‘নিরাপদ সমাজ, নিরাপদ নারী’-স্লোগানে অনুষ্ঠিত নারী দিবস রেগুলার ম্যারাথনে রেগুলার বাংলাদেশের পাপিয়া খাতুন চ্যাম্পিয়ন, হামিদা
কক্সবাজারের ছেলে মুমিনুল হক। ডাক নাম তার সৌরভ। টেস্টে ব্যাট হাতে প্রায়শই সৌরভ ছড়ান তিনি। বিশেষ করে টেস্ট ম্যাচে। ২০১৩ সালের ৮ মার্চ শ্রীলংকার গলে আন্তর্জাতকি ক্রিকেটে সাদা পোষাকে অভিষেক হয় মুমিনুলের। ঐ ম্যাচেই জাত চিনিয়ছিলেন ব্যাট হাতে ফিফটির ইনিংস খেলে। অভিষেকের সাত মাস পর ক্যারিয়ারের চতুর্থ টেস্ট খেলতে নেমেই পান প্রথম সেঞ্চুরির দেখা। সেই যে শুরু, মাত্র ৩২ টেস্ট খেলেই বিশ্ব ক্রিকেটে সমীহের নাম মুমিনুল। দু’দুবার ডবল সেঞ্চুরির দোরগোড়ায় গিয়েও তা করতে না পারলেও ইতোমধ্যেই টেস্টে আটটি সেঞ্চুরি ও ১২টি ফিফটির ইনিংস খেলা হয়ে গেছে তার।
চট্টগ্রাম টেস্টে গতকাল ১২০ রানের দুর্দান্ত ইনিংস খেলে টেস্ট ক্যারিয়ারে অনেকগুলো রেকর্ডের মালিক হয়েছেন তিনি। এরমধ্যে চলতি বছর সাত টেস্ট খেলেই চারটি সেঞ্চুরির দেখা পেয়েছেন মুমিনুল। এ বছর তার সমান চার উইকেট আছে বিশ্বের মাত্র একজন ব্যাটসম্যানের। তিনি হলেন বিরাট কোহলি। তবে চার সেঞ্চুরি পেতে মুমিনুল যেখানে খেলেছেন সাত টেস্ট, সেখানে ভারতীয় অধিনায়ক খেলেছেন ১০ টেস্ট। বর্তমান বিশ্বের সেরা ব্যাটসম্যনকে ছাপয়ে আবারও আলোচনায় বাংলাদেশের ‘ব্র্যাডম্যান’।
রোস্টন চেজের বলটা রেশমি টাইমিংয়ে পয়েন্ট ও কভারের মাঝ দিয়ে পাঠিয়ে দিলেন বাউন্ডারিতে। গ্যালারির আসন ছেড়ে উঠে দাঁড়ালেন দর্শকরা। তাঁদের মুখে পরিতৃপ্তির হাসি, হাতে করতালির বৃষ্টি। মুমিনুল সেই ভালোবাসার বৃষ্টিতে ভিজে আকাশের দিকে চাইলেন। যেন বলতে চাইলেন, ‘এই মাঠ, এই দর্শক, অনেক দিয়েছে। আমি কৃতজ্ঞ!’
সাগর পাড়ের এই মাঠে ব্যাট হাতে নামলেই যেন সেঞ্চুরি করে বসেন তিনি। তাই এই বছর যে আরো সেঞ্চুরি করে বিরাট কোহলিকে পেছনে ফেলতে পারেন, সেই স্বপ্ন দেখাটা মুমিনুলের বাড়াবাড়ি কিছু নয়। এ বছর যে চারটি সেঞ্চুরি করেছেন মুমিনুল তার তিনটিই এসেছে চট্টগ্রামের প্রিয় ভেন্যু জহুর আহমদ চৌধুরী স্টেডিয়ামে। এই ভেন্যুতে এ বছরের ৩১ জানুয়ারি শুরু হওয়া শ্রীলংকার বিপক্ষে ওই টেস্টে জোড়া সেঞ্চুরি করেছিলেন তিনি। সর্বশেষটি করলেন গতকাল। সবমিলিয়ে চট্টগ্রামের এই ভেন্যুতেই ছয়টি সেঞ্চুরি করে রিকি পন্টিং (এডিলেইড ও সিডনি), গ্রাহাম গুচ (লর্ডস), মাইকেল ভন (লর্ডস) ও ম্যাথু হেইডেনের (মেলবোর্ন) পাশে নিজের নামও লেখালেন মুমিনুল। অবশ্য একই ভেন্যুতে সর্বোচ্চ ১১ সেঞ্চুরির রেকর্ড রয়েছে শ্রীলঙ্কার মাহেলা জয়াবর্ধনের (এসএসসি, কলম্বো)। গতকালের সেঞ্চুরির সুবাদে দেশ সেরা ওপেনার তামিম ইকবালকে ছাড়িয়ে গেছেন মুমিনুল হক। বাংলাদেশের হয়ে এক পঞ্জিকাবর্ষে সবচেয়ে বেশি চারটি টেস্ট সেঞ্চুরির রেকর্ড এখন এককভাবে তার। ২০১০ সালে তামিম করেছিলেন তিনটি। তাছাড়া চট্টগ্রামে এই সেঞ্চুরিসহ টেস্ট ক্যারিয়ারে আটটি সেঞ্চুরি পূর্ণ করে এখন তামিমের সঙ্গে মুমিনুল যৌথভাবে টেস্টে দেশের হয়ে সবচেয়ে বেশি সেঞ্চুরির মালিক হলেন। এতদিন এই রেকর্ড ছিল এককভাবে শুধুই তামিমের। তবে তামিমের চেয়ে একটি জায়গায় এগিয়েই থাকছেন মুমিনুল। আর তাহলো আট সেঞ্চুরি পেতে তামিম খেলেছেন যেখানে ৫৬ টেস্ট সেখানে মুমিনুল খেলেছেন মাত্র ৩২টি টেস্ট। অবশ্য দেশের ক্রিকেটারদের মধ্যে একটি জায়গায় সবার চেয়ে এগিয়ে রয়েছেন মুমিনুলই। সেটি হচ্ছে টেস্টে ব্যাটিং গড়। ৩২ টেস্টে মুমিনুলের ব্যাটিং গড় ৪৪.৯৪! যা বাংলাদেশের কোনো ব্যাটসম্যানের নেই। এরপরও অবশ্য একটি অপ্রাপ্তি এখনও রয়েই গেল মুমিনুলের। আর তা হলো, দেশের বাইরে এখনও তার টেস্ট সেঞ্চুরি হয়নি। ক্যারিয়ারের আটটি সেঞ্চুরিই করেছেন তিনি দেশের মাটিতে। ২০১৭ সালের ২৮ সেপ্টেম্বর দক্ষিণ আফ্রিকায় করা ৭৭ রানের ইনিংসটিই এখনও বিদেশের মাটিতে তার সেরা ইনিংস।
ভালো-মন্দের মিশেল প্রথম দিন শেষে আক্ষেপ আর উচ্ছাস নিয়ে সংবাদ সম্মেলনে হাজির দিনের সেরা পারফরমার। দক্ষ ব্যাটসম্যানের মত প্রশ্নগুলোও সামলালেন দারুণ সব ড্রাইভে। প্রথমেই ১২০ রানের দুর্দান্ত ইনিংস খেলার পরও আক্ষেপ মেশানো কণ্ঠে জানালেন, ‘যে শটটা খেলে আমি আউট হয়েছি। সেটি না খেললেও পারতাম। বলটি বাইরে ছিল। দোষটা আমারই। এভাবে আমার আউট হওয়াটা ঠিক হয়নি। আমি যদি আউট না হতাম তখন, তাহলে হয়তো সাকিব ভাই, মুশফিক ভাই ও রিয়াদ ভাইরা ওভাবে আউট হতো না। এই ইনিংসে আমরা ৪০০ রান করতে পারতাম। ওয়েস্ট ইন্ডিজের বোলাররা আমাদেরকে আটকে দিতে পেরেছে। পরে অবশ্য আমরাও কিছুটা ঘুরে দাঁড়াতে পেরেছি। তাইজুল ভাই ও নাঈম ভালো ব্যাট করছেন। টেল এন্ডারদের এই ব্যাটিংটা ভাইটাল পয়েন্ট। এ জন্যই আমরা ম্যাচটি জিততে পারি।’ নিজের সেঞ্চুরির ইনিংসটা আরো বড় করা যেত উল্লেখ করে মুমিনুল বলেন, ‘আমি সেশন বাই সেশন ভালো খেলার চেষ্টা করি। সব সময় চেষ্টা থাকে দেশের হয়ে ভালো খেলার। ভুল শট খেলে ওভাবে যদি আউট না হতাম, তাহলে আরো বড় হতো ইনিংসটি। ডবল সেঞ্চুরি করতে না পারার একটা আক্ষেপ আছে। এটা থাকা ভালো। কারণ, আক্ষেপ না থাকলে কিংবা ক্ষুধা না থাকলে এক জায়গায় স্থির থাকতে হবে।’ অন্য উইকেটের তুলনায় এই উইকেট একটু স্লো জানিয়ে তিনি বলেন, ‘এই উইকেট স্লো। টার্ন পাওয়া যাচ্ছে। প্রথম দিন থেকেই স্পিন ধরছে।’ আটটি সেঞ্চুরি করে তামিমের সঙ্গে যৌথভাবে দেশের হয়ে সর্বাধিক সেঞ্চুরির রেকর্ড করার কথা স্মরণ করিয়ে দিলে বিনয়ী মুমিনুলের জবাব, ‘তামিম ভাই বিশ্ব ক্রিকেটে অন্য এক উচ্চতায় রয়েছেন। আমি তার সমকক্ষ নই। বিরাট কোহলি বিশ্ব সেরা। তাদের সঙ্গে যৌথভাবে রেকর্ডের ভাগিদার হতে পেরে ভীষণ আনন্দিত আমি।’ এই বছরেই চারটি সেঞ্চুরি করে বিরাট কোহলির সঙ্গে এক বছরে সর্বোচ্চ সেঞ্চুরির ভাগিদার হয়েই থেমে থাকতে চান না মুমিনুল। তার কথায় স্পষ্ট ইঙ্গিত, ‘বছর এখনও শেষ হয়নি। এই বছর আরো ম্যাচ আছে।’
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।