Inqilab Logo

সোমবার, ০১ জুলাই ২০২৪, ১৭ আষাঢ় ১৪৩১, ২৪ যিলহজ ১৪৪৫ হিজরী

চাপের মুখে ইসি

আন্তর্জাতিক মহল দেখতে চায় ‘লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড’# ১৫ ডিসেম্বর থেকে পুলিশের সঙ্গে থাকবে সশস্ত্রবাহিনী : সিইসি

স্টাফ রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ২৩ নভেম্বর, ২০১৮, ১২:০৪ এএম

# ৩ সচিবসহ ২২ ডিসি ও ৭০ পুলিশ কর্মকর্তা অপসারণ দাবির তালিকা ইসিতে 

# পর্যবেক্ষকরা ‘মূর্তির মতো’ থাকবে বক্তব্যে প্রতিবাদের ঝড়


‘লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড’ গঠনে চাপের মুখে পড়ে গেছে নির্বাচন কমিশন। যেনতেন প্রকারে অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের লক্ষ্যে ইসি প্রস্তুতি নিলেও দেশি-বিদেশি চাপে অংশগ্রহণকারী সব প্রার্থীর জন্য ‘সমতল মাঠ’ প্রস্তুতে প্রবল চাপের মুখে পড়ে গেছে। বিশেষ করে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সহকারী প্রিজাইডিং-পোলিং অফিসারদের তালিকা প্রণয়ন, বেপরোয়া আচরণ এবং পর্যবেক্ষকদের ‘মূর্তির মতো দাঁড়িয়ে থাকা’র নির্দেশনা দেয়ার পর নড়েচড়ে বসেছে আন্তর্জাতিক মহল। জাতিসংঘ, প্রভাবশালী দেশ, ইউরোপীয় ইউনিয়ন যেমন ‘সমতল মাঠ’ তৈরি চাপ দিচ্ছেন; তেমনি উন্নয়ন সহযোগী সংস্থা এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, ভারত, চীনও চায় নির্বাচনে জনগণের ভোটের প্রতিফলন। এর সঙ্গে যুক্ত হয়েছে ড. কামাল হোসেনের নেতৃত্বে ঐক্যফ্রন্টের দাবি। গতকালও ঐক্যফ্রন্ট থেকে শতাধিক ডিসি-এসপি ও পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তার অপসারণ চেয়ে ইসিতে চিঠি দেয়া হয়েছে। ওই চিঠিতে যাদের নাম দেয়া হয়েছে সেই ডিসি-এসপি এবং পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের রাজনৈতিক পরিচিতি, প্রশাসনিক দায়িত্ব পালনের নামে ক্ষমতাসীন আ.লীগের পক্ষে কাজ করার সুনির্দিষ্ট তথ্য-প্রমাণসহ অভিযোগ দাখিল করা হয়েছে। ইসিতে জমা দেয়া বিএনপির অভিযোগপত্রে কর্মকর্তাদে নাম দেখে নির্বাচন বিশেষজ্ঞ ও ঢাকায় কর্মরত বিদেশি ক‚টনীতিকদের চোখ ছানাবড়া। তাদের বক্তব্য; সিইসিকে কথায় নয়, কাজে নিরপেক্ষতা প্রমাণ করতে হবে।
তফসিল ঘোষণার পর নির্বাচন কমিশন প্রায় প্রতিদিন নিরপেক্ষ নির্বাচন সংক্রান্ত বিষয়াদি নিয়ে আলোচনার আয়োজন করছে। প্রতিদিন দফায় দফায় বৈঠকের পর কঠোর বার্তা, বিবৃতি দিচ্ছে। ঐক্যফ্রন্টসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দল অনিয়ম, পুলিশের ক্ষমতাসীনদের লাঠিয়াল বাহিনী হিসেবে দায়িত্ব পালনের অভিযোগসহ নানা ধরনের অভিযোগ জমা পড়ছে। কিন্তু সিইসি ও অন্যান্য কমিশনাররা নিজেদের মতো করে কথার ফুলঝুড়ি ছিটাচ্ছেন। বাস্তবে তাদের কথা মাঠে কোনো প্রতিফলন দেখা যাচ্ছে না। পুলিশ বাহিনীর কয়েকজন সদস্যদের বিরুদ্ধে বিতর্কিত ভ‚মিকার অভিযোগ উঠায় কারো বিরুদ্ধে কোনো কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়নি। উপরোন্ত সিইসি কড়া নির্দেশনার বদলে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে হালকা বার্তা দিচ্ছেন। এটা যেন কবি কুসুমকুমারী দাশের কবিতার মতো ‘আমাদের দেশে হবে সেই ছেলে কবে/কথায় না বড় হয়ে কাজে বড় হবে’। ইসিতে চলছে কথার ফুলঝুড়ি লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড গঠনে কাজের কাজ কিছুই হচ্ছে না।
জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট গতকালও নির্বাচন কমিশনে দুইজন সচিব, কয়েকজন বিভাগীয় কমিশনারসহ ২২ জন জেলা প্রশাসক (জেলা রিটানিং অফিসার) ও পুলিশের ৭০ জন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তার বিতর্কিত কর্মকাÐ ও দলবাজির চিত্র তুলে ধরে তাদের তালিকাসহ ১৩ দফা দাবিনামা দিয়েছে। এসব দাবিতে সুনির্দিষ্টভাবে তাদের রাজনৈতিক কর্মকাÐের চিত্র তুলে ধরা হয়েছে। অভিযুক্ত কর্মকর্তাদের সম্পর্কে জানতে ইসিকে বাড়তি পরিশ্রম করতে হবে না। চিঠিতে তাদের সম্পর্কে যেসব তথ্য দেয়া হয়েছে সেগুলোর সত্যতা যাচাই করে ইসি ব্যবস্থা গ্রহণ করতে পারে। ঐক্যফ্রন্ট থেকে ইসিতে যে ১৩ দফা লিখিত দাবি জানানো হয়, তার সারসংক্ষেপ হলোÑ মনোনয়ন ফরম সংগ্রহ ও জমাদানের জন্য বিএনপি অফিসের সামনে বিশাল গণজমায়েতে পুলিশি হামলা ও এ প্রসঙ্গে নির্বাচন কমিশনের নির্বিকার ভ‚মিকা, এক থানা অথবা নির্বাচনী এলাকায় কর্মরত কর্মকর্তাদের অন্য থানা বা নির্বাচনী এলাকায় ভোট গ্রহণ কর্মকর্তা হিসেবে পদায়ন, বিভিন্ন প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক মিডিয়ায় একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সম্পর্কে তথাকথিত জরিপ প্রতিবেদন সমতল নির্বাচনী মাঠ তৈরিতে প্রতিবন্ধকতা, বঙ্গভবনে সংসদ সদস্য পদ প্রার্থী প্রেসিডেন্ট পুত্রের নেতৃত্বে আ.লীগের সভা এবং আপ্যায়ন, চট্টগ্রাম সার্কিট হাউজে নির্বাচন কমিশন সচিব হেলালুদ্দিন আহমদের উপস্থিতিতে প্রধানমন্ত্রীর মূখ্য সচিব ও জননিরাপত্তা বিভাগের সচিবের সঙ্গে চট্টগ্রামে বিভাগের সকল রিটার্নিং অফিসার (জেলা প্রশাসক) ও পুলিশ সুপারদের নিয়ে রুদ্ধদ্বার বৈঠক, এনটিএমসি ও বিটিআরসির বিতর্কিত কর্তকর্তাদের সরিয়ে নিরপেক্ষ কর্মকর্তা পদায়ন, নির্বাচন সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষভাবে অনুষ্ঠানের জন্য সকল দল ও প্রার্থীর জন্য লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড তৈরির জন্য জনপ্রশাসনের দলবাজ ও রাজনৈতিক মতাদর্শের অনুসারি কর্মকর্তাদের অবিলম্বে প্রত্যাহার, আসন্ন নির্বাচনে সবার জন্য সমান সুযোগ-সুবিধা সম্পন্ন সমতল নির্বাচনী মাঠ তৈরির স্বার্থে থানা পুলিশের তথ্য অনুযায়ী ভোট গ্রহণ কর্মকর্তা নিয়োগ না দেয়া, পুলিশ বিভাগের রাজনৈতিক মতাদর্শের অনুসারি কর্মকর্তাদের অবিলম্বে প্রত্যাহার, তফসিল ঘোষণার পরও নির্বাচনে সম্ভাব্য প্রার্থী বর্তমান প্রধানমন্ত্রীর বিষয়ে ডকুমেন্টারি মুভি ইলেকট্রনিক ও প্রিন্ট মিডিয়ায় বিবিধ বিজ্ঞাপন প্রচার বন্ধ, সিটি করপোরেশন ও সরকারি মালিকানাধীন ইলেকট্রনিক ডিসপ্লে বোর্ড এবং ডিজিটাল বিল বোর্ডে প্রধানমন্ত্রী, মন্ত্রী ও এমপিদের ছবি সংবলিত কথিত উন্নয়ন প্রচারণা বন্ধ এবং গণহারে আ.লীগপন্থী কর্মকর্তা ও শিক্ষকদের নির্বাচন কর্মকর্তা নিয়োগ না দেয়ার দাবি জানানো হয়। একই সঙ্গে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর স্বাক্ষরিত বিস্তারিত বিবরণে ১৩ দফার সার্বিক বিষয় তুলে ধরা হয়েছে। সিইসি বরাবর মির্জা ফখরুল ইসলাম এক চিঠিতে লিখেছেন, স¤প্রতি সারাদেশের প্রত্যেকটি নির্বাচনী এলাকায় ভোটগ্রহণ কর্মকর্তা নিয়োগের তালিকাভুক্ত প্রতিটি ব্যক্তির বাড়ি বাড়ি গিয়ে পুলিশ তাদের ব্যক্তিগত তথ্য সংগ্রহ করে আ.লীগের অনুগত কিনা তা যাচাই-বাছাই করছে। যা ইতোপূর্বে বাংলাদেশের নির্বাচনী ইতিহাসে নজিরবিহীন। এ ধরনের কাজ নির্বাচনী মাঠ তৈরির স্বার্থে ব্যত্যয় বিধায় থানা পুলিশের তথ্য অনুযায়ী ভোট গ্রহণ কর্মকর্তা নিয়োগ না দেয়া থেকে বিরত রাখার জন্য কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণে জোর দাবি জানাচ্ছি। আরেক দফায় বিতর্কিত পুলিশ কর্মকর্তাদের তালিকা দিয়ে তাদের সকল প্রকার দায়িত্ব থেকে বিরত থাকার দাবি জানানো হয়। তালিকা জমা দিয়ে নির্বাচন ভবন থেকে বেরিয়ে সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল সাংবাদিকদের বলেন, এখনো নৌকার পক্ষে প্রচার চালাচ্ছেন সরকারি কর্মকর্তারা। অবস্থাদৃষ্টে মনে হচ্ছে, বিএনপিকে নির্বাচন থেকে দূরে সরিয়ে রাখার জন্য সব আয়োজন যেন করে রেখেছে সরকার ও প্রশাসন।
৭০ পুলিশ কর্মকর্তার তালিকা
একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে পক্ষপাতিত্বের অভিযোগে ইসিতে পুলিশের শীর্ষ ৭০ কর্মকর্তার তালিকা জমা দিয়েছে বিএনপি। সুনির্দিষ্ট অভিযোগ তুলে জমা দেয়া আবেদনে এদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ এবং নির্বাচনী কার্যক্রম থেকে প্রত্যাহারের দাবি জানানো হয়েছে। যাদের বিরুদ্ধে দলবাজির অভিযোগ তোলা হয় তারা হলেনÑ এডিশনাল আইজিপি (প্রশাসন) মোখলেছুর রহমান, র‌্যাবের ডিজি বেনজির আহমদ, ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের কমিশনার আসাদুজ্জামান মিয়া, এডিশনাল আইজিপি (টেলিকম) ইকবাল বাহার, ডিআইজি (নৌ পুলিশ) শেখ মো. মারুফ হাসান, ডিআইজি সিলেট রেঞ্জ মো. কামুরুল আহাসান, ডিআইজি চট্টগ্রাম রেঞ্জ খন্দকার গোলাম ফারুক, ডিআইজি খুলনা রেঞ্জ মো. দিদার আহমেদ, ডিআইজি রাজশাহী রেঞ্জ এম খুরশিদ হোসেন, কমিশনার (ডিআইজি কেএমপি) হুয়াহুন কবির, ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের এডিনশাল কমিশনার কাউন্টার মো. মনিরুল ইসলাম, কমিশনার (ডিআইজি) চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশ মাহবুবুর রহমান রিপন, অতিরিক্তি পুলিশ কমিশনার (ডিআইজি, ঢাকা) মীর রেজাউল আলম, ডিআইজি (সিটি এসবি ঢাকা) মোহাম্মদ আলী মিয়া, ডিআইজি (রংপুর রেঞ্জ) দেবদাস ভট্টাচার্য, অতিরিক্ত কমিশনার (ডিআইজি ডিএমপি) কৃঞ্চপদ রায়, ডিআইজি (পুলিশ হেডকোয়ার্টাস) হাবিবুর রহমান, ডিআইজি (অপারেশন পুলিশ হেডকোয়ার্টাস) আনোয়ার হোসেন, রাজশাহী মেট্রোপলিটন পুলিশনের কমিশনার হাফিজ আক্তার (ডিআইজি ট্রেনিং), ড. খ মহিদ উদ্দিন (বরিশাল), অতিরিক্ত কমিশনর (ডিএমপি) আবদুল বাতেন, র‌্যাব-৪-এর এডিশনাল ডিআইজি চৌধুরী মঞ্জুরুল কবির, যুগ্ম কমিশনার (ডিএমপি) শেখ নাজমুল আলম, এডিশনাল ডিআইজি (খুলনা রেঞ্জ) এ কে এম নাহিদুল ইসলাম, এডিশনাল ডিআইজি (খুলনা রেঞ্জ) মো. মনিরুজ্জামান, এডিশনাল ডিআইজি (সিলেট রেঞ্জ) জয়দেব কুমার ভদ্র, এডিশনাল ডিআইজি (ঢাকা রেঞ্জ) মো. আসাদুজ্জামান, জয়েন কমিশনার (ডিবি) মাহবুব আলম, এসপি মোল্লা নজরুল ইসলাম, এসপি (টুরিস্ট পুলিশ, সিলেট) আলতাফ হোসেন, ডিসি (তেজগাঁও) বিপ্লব কুমার সরকার, ডিসি ডিএমপি হারুন অর রশীদ, ডিসি রমনা মো. মারুফ হোসেন সরকার, ডিসি (সিএমপি) এস এম মেহেদী হাসান, ডিসি (ডিবি, উত্তর) খন্দকার নুরুন নবী, ডিসি (সিএমপি) মো. ফারুকুল হক, ডিসি (কাউন্টার টেরিজিম, ডিএমপি) প্রলয় কুমার জোয়ার্দার, ডিসি (ডিএমপি) এস এম মুরাদ আলী, এডিসি (ডিএমপি) শিবলী নোমান, এসপি (ঢাকা) শাহ মিজান শফি, এসপি (নায়ারণগঞ্জ) মো. আনিসুর রহমান, এসপি (মুঞ্জিগঞ্জ) মো. জায়েদুল আলম, এসপি (নরসিংদী) মিরাজ (পটুয়াখালী), এসপি (টাঙ্গাইল) সনজিত কুমার রায়, এসপি (মাদারীপুর) সুব্রত কুমার হাওলাদার, এসপি (ময়মনসিং) শাহ আবিদ হোসেন, এসপি (শেরপুর) আশরাফুল আজিম, এসপি (সিলেট) মো. মনিরুজ্জামান, এসপি (বরিশাল) সাইফুল ইসলাম, এসপি (ভোলা) মোক্তার হোসেন, এসপি (খুলনা) এস এম শফিউল্লাহ, এসপি (সাতক্ষীরা) মো. সাজ্জাদুর রহমান, এসপি (বাগেরহাট) পঙ্কজ চন্দ্র রায়, এসপি (যশোর) মঈনুল হক, এসপি (ঝিনাইদহ) হাসানুজ্জামান, এসপি (কুষ্টিয়া) আরাফাত তানভির, এসপি (চট্টগ্রাম) নূর এ আলম মিনা, এসপি (নোয়াখালী) ইলিয়াস শরীফ, এসপি (ফেনী) এসএম জাহাঙ্গীর আলম সরকার, এসপি (কুমিল্লা) সৈয়দ নুরুল ইসলাম, এসপি (রংপুর) মিজানুর রহমান, এসপি (দিনাজপুর) সৈয়দ আবু সায়েম, এসপি (ঠাকুরগাঁও) মনিরুজ্জামান, এসপি (রাজশাহী) মো. শহিদুল্লাহ, এসপি (চাপাইনবাবগঞ্জ) মোজাহিদুল ইসলাম, এসপি (নওগাঁ) ইকবাল হোসেন, এসপি (নাটোর) সাইফুল্লাহ, এসপি (বগুড়া) আশরাফ আলী, এসপি (সিরাজগঞ্জ) টুকুল চক্রবর্তী ও এসপি (পাবনা) রফিক ইসলাম। এদের সবার বিরুদ্ধে আ.লীগের পক্ষে কাজ করার অভিযোগ তোলা হয়।
সচিবসহ প্রশাসনের ২২ কর্মকর্তা
পুলিশ কর্মকর্তাদের পাশাপাশি জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সচিব ফয়েজ আহমেদ, নির্বাচন কমিশন সচিব হেলালুদ্দীন আহমদ, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগের সচিব মোস্তফা কালাম এবং কয়েকজন বিভাগীয় কমিশনারসহ জনপ্রশাসের ২২ জন কর্মকর্তার বদলি এবং নির্বাচন সংশ্লিষ্ট সকল প্রকার দায়িত্ব থেকে বিরত রাখার দাবি জানিয়েছে বিএনপি। তাদের কর্মকাÐ বিতর্কিত উল্লেখ করে দ্রæত প্রত্যাহারের দাবি জানানো হয়। কেন তাদের প্রত্যাহার করা উচিত সে কারণও চিঠিতে উল্লেখ করে কিছু চিত্র তুলে ধরা হয়েছে।
নির্বাচন কমিশন সচিব পদত্যাগের কারণ হিসেবে উল্লেখ করা হয়Ñ বিতর্কিত ও অতিমাত্রায় প্রচারমুখী। বিসিএস ৮২ বিশেষ ব্যাচের এবং ৮৪ পদের শতাধিক কর্মকর্তাদের ডিঙিয়ে তাকে রাজনৈতিক কারণে সচিব পদে পদায়ন করা হয়। তিনি নির্বাচন কমিশনের কর্মকর্তাদের ডেকে নিয়ে গোয়েন্দা প্রতিবেদন দেখিয়ে ভয়ভীতি দেখাচ্ছেন বলে বিভিন্ন সূত্র থেকে জেনেছি। তিনি চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের সাবেক মেয়র মহীউদ্দীনের একান্ত সচিব ছিলেন। মহীউদ্দীনের ছেলে ব্যারিস্টার নওফেল এখন আ.লীগের নেতা। যিনি এখন আ.লীগের প্রতিনিধি হিসেবে কমিশনে নিয়মিত যাতায়াত করেন। সচিবের নিরপেক্ষতা প্রশ্নবিদ্ধ।
অন্য কর্মকর্তারা হলেন জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সচিব ফয়েজ আহমেদ, জননিরাপত্তা বিভাগরে সচিব মোস্তফা কামাল উদ্দিন, চট্টগ্রামের বিভাগীয় কমিশনার মো. আবদুল মান্নান, খুলনার বিভাগীয় কমিশনার লোকমান হোসেন মিয়া, ভোলার ডিসি মো. মাসুদ আলম সিদ্দিকী, চট্টগ্রামের ডিসি মো. ইলিয়াস হোসাইন, কুমিল্লার ডিসি মো. আবুল ফজল মীর, ফেনীর ডিসি ওয়াহেদুজ্জামান, ল²ীপুরের ডিসি অঞ্জন চন্দ্র পাল, কিশোরগঞ্জের ডিসি সারোয়ার মোর্শেদ চৌধুরী, নরসিংদীর ডিসি সৈয়দা ফারহানা কাউনাইন, টাঙ্গাইলের ডিসি মো. শহিদুল ইসলাম, ঝিনাইদহের ডিসি সুরজ কুমার নাথ, খুলনার ডিসি হেলাল হোসাইন, কুষ্টিয়ার ডিসি মো. আসলাম হোসাইন, নড়াইলের ডিসি আঞ্জুমান আরা, ময়মনসিংহের ডিসি ড. শুভাস চন্দ্র বিশ্বাস, জয়পুরহাটের ডিসি মো. জাকির হোসাইন, নওগাঁর ডিসি মিজানুর রহমান, রাজশাহীর ডিসি আবদুল কাদের ও সিলেটের ডিসি কাজী ইমদাদুল হক। তালিকা জমা দেয়ার পর সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল বলেন, সরকারের এবং কোনো কোনো ক্ষেত্রে নির্বাচন কমিশনের কোন দায়িত্বশীল কর্মকর্তারা আচরণ বিধি লঙ্ঘন করছেন। তাদের জড়িত থাকার বিষয়ে প্রতিকার চেয়ে ইসির কাছে কিছু দালিলিক প্রমাণ উপস্থাপন করেছি।
আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর বৈঠকের পর সিইসি
পুলিশকে বাড়ি বাড়ি গিয়ে ভোটগ্রহণ কর্মকর্তাদের তথ্য সংগ্রহ করতে নিষেধ করেছেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কে এম নূরুল হুদা। তিনি জানান, একাদশ জাতীয় নির্বাচন উপলক্ষ্যে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে আগামী ১৫ ডিসেম্বরের পর থেকে পুলিশের সঙ্গে মাঠে থাকবে সশস্ত্রবাহিনীর সদস্যরা। গতকাল আগারগাঁওয়ের নির্বাচন ভবনে আইনশৃঙ্খলা-বিষয়ক বিশেষ সভায় সিইসি এসব কথা বলেন। সেখানে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে ১২ দফা নির্দেশনা দেন সিইসি। তিনি বলেছেন, বাড়ি বাড়ি গিয়ে ভোটগ্রহণ কর্মকর্তাদের তথ্য সংগ্রহ করার কথা আমরা বলিনি। এটা আপনারা করবেন না। কারণ, এটা নিয়ে নানা শ্রশ্ন উঠেছে। যারা ভোটগ্রহণ কর্মকর্তা, তারা বিব্রত হন। আমরা এটা চাই না।
সিইসি নূরুল হুদা বলেন, যদি তথ্য সংগ্রহ করার প্রয়োজন হয়, তবে গোপন সূত্র ব্যবহার করে সংগ্রহ করতে পারেন। বাড়িতে বাড়িতে গিয়ে তাদের জিজ্ঞেস করার দরকার নেই। এটা আমরা চাই না। তফসিল ঘোষণার পর কাউকে বিনা ওয়ারেন্টে গ্রেফতার করবেন না, মামলা করবেন না। কাউকে হয়রানিমূলক মামলা বা গ্রেফতার করা যাবে না। আশা করি, আপনারা এটা করছেনও না। মামলার বিষয়ে বিএনপির পক্ষ থেকে শুরুতে চার থেকে পাঁচ হাজার জনের একটি তালিকা দেয়া হয়েছিল। পরীক্ষা করে দেখা গেছে ওই সব মামলা ২০১৪ সালের নির্বাচনের আগের। আর এবারের নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পর থেকে করা মামলার পূর্ণাঙ্গ তথ্য বিএনপির পক্ষ থেকে পাওয়া যায়নি। তাই ব্যবস্থা নিতে পারছি না। অবাধ, সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন আয়োজনে পুলিশ প্রশাসনের ভ‚মিকা সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ উল্লেখ করে তিনি বলেন, পুলিশ প্রশাসনের কারণে যেন নির্বাচন প্রশ্নবিদ্ধ না হয়, সে বিষয়ে লক্ষ রাখতে হবে। এই নির্বাচন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কেননা, সব দল অংশ নেবে। নির্বাচনের সব প্রস্তুতি গ্রহণ করা হয়েছে। প্রজাতন্ত্রের সবাই মিলেই নির্বাচন সুষ্ঠু করতে কাজ করতে হবে। নির্বাচনের বেশির ভাগ দায়িত্ব পুলিশের থাকে। ভোটারের নিরাপত্তা থেকে শুরু করে সব ধরনের নিরাপত্তার দায়িত্ব তাদের ওপরই বেশি থাকে।
পুলিশ প্রশাসনের প্রতি সিইসি বলেন, নির্বাচন-পরবর্তী সহিংসতা রোধ করা ঐতিহ্যগতভাবেই আপনাদের দায়িত্ব। এবারো দেশের বৃহত্তর স্বার্থে আপনারা দায়িত্ব পালন করবেন। সংবিধান মতে কর্তৃত্ব নয়, বিবেক মতো কাজ করতে হবে। নির্বাচন যেন কোনোভাবে প্রশ্নবিদ্ধ না হয়। আইনশৃঙ্খলার দায়িত্ব পালনে পূর্ণ স্বাধীনতা থাকবে। তবে নির্বাচন কমিশন তা নজরদারি করবে। ইতোমধ্যেই অভিযোগ আসা শুরু করেছে। তবে নির্বিঘেœ দায়িত্ব পালন করতে হবে। ভালোভাবে যাচাই না করে কারো বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেয়া হবে না। আতঙ্কিত হওয়ার কিছু নেই। আইনশৃঙ্খলার বিভিন্ন পর্যায়ের তথ্য ও পরামর্শ পুলিশের কাছ থকে বিভিন্ন বাহিনী নেবে উল্লেখ করে সিইসি পুলিশকে এখনই কৌশলগত পরিকল্পনা তৈরি করতে বলেন। ১৫ ডিসেম্বরের পর সশস্ত্র বাহিনীর ছোট ছোট দল পুলিশের সঙ্গে দেখা করবে। সশস্ত্র বাহিনীর ছোট টিম প্রতিটি জেলাতেই থাকবে। এদের নিয়ে সমন্বয় করে কাজ করতে হবে। তাদের যাতায়াতের ব্যবস্থা করে রাখতে হবে। অন্যান্য বাহিনী ও ম্যাজিস্ট্রেটকে তথ্য দিয়ে সহায়তা করতে হবে। ১৫ ডিসেম্বর থেকে প্রতি জেলায় সশস্ত্রবাহিনীর ছোট টিম থাকবে, তাদের সঙ্গে সমন্বয় করে কাজ করবেন।
সভায় চার নির্বাচন কমিশনার, ইসি সচিব, অতিরিক্ত সচিব, জননিরাপত্তা বিভাগের সচিব, আইজিপি, জাতীয় পরিচয় নিবন্ধন অনুবিভাগের মহাপরিচালক, ডিএমপি কমিশনারসহ পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।

 

 



 

Show all comments
  • Ameen Munshi ২৩ নভেম্বর, ২০১৮, ২:৩৯ এএম says : 0
    বিতর্কিত আচরণ ও কর্মকাণ্ড করলে চাপের মুখে তো পড়তেই হবে।
    Total Reply(0) Reply
  • গাজী ২৩ নভেম্বর, ২০১৮, ২:৪০ এএম says : 0
    আন্তর্জাতিক মহলকে ইসিকে আরও বেশি চাপ দিতে হবে। যাতে নিরপেক্ষ ও সুষ্ঠু ভোট না দিয়ে তাদের উপায় না থাকে। এখন থেকেই তৎপর হতে হবে।
    Total Reply(0) Reply
  • Monir ২৩ নভেম্বর, ২০১৮, ২:৪২ এএম says : 0
    তফসিল ঘোষণা বেশ কিছু দিন হয়ে গেলেও এখন পর্যন্ত লেবেল প্লেয়িং ফিল্ড েএর নূন্যতম কোনো লক্ষণ পাওয়া যাচ্ছে না। কাজের চাপ দেয়া ছাড়া পথ নাই।
    Total Reply(0) Reply
  • Mohammed Shah Alam Khan ২৩ নভেম্বর, ২০১৮, ২:৪৪ এএম says : 0
    আইনত কথা ছিল তফসিল ঘোষণার পর সরকারের সকল এজেন্সি নির্বাচন কমিশনের অধীনে, তাদের নির্দেশনায় চলবে। কিন্তু বাস্তবে দেখা যাচ্ছে পুলিশ যেভাবে বলছে সেভাবে করছে ইসি। যা উদ্বেগজনক।
    Total Reply(0) Reply
  • রুবেল খান ২৩ নভেম্বর, ২০১৮, ২:৪৫ এএম says : 0
    িইসিকে শিগগিরই শক্ত ভূমিকায় আসতে হবে। নতুবা সুষ্ঠু নির্বাচন সম্ভব নয়।
    Total Reply(0) Reply
  • Abdul baki ২৩ নভেম্বর, ২০১৮, ২:৪৭ এএম says : 0
    Presser will be continue on EC.
    Total Reply(0) Reply
  • Mohammed Kowaj Ali khan ২৩ নভেম্বর, ২০১৮, ৪:১১ এএম says : 0
    They're is eight kind of person get topper punishment one of them is who doing miss jujment. Becairfull oh responsible person. দায়ীত্বে অবহেলা অথবা কারচুপি করিবেন না। ঘৃণিত হইবেন সন্দেহ নাই। ইনশাআল্লাহ। *********
    Total Reply(0) Reply
  • Islam ২৩ নভেম্বর, ২০১৮, ৬:৩০ এএম says : 1
    নিরপেক্ষতার সংগা কি? আওয়ামীলীগপন্থীদের অপসারন করে বিএনপি পন্থীদের বসানো ? তাহলেও তো লেভেল সমতল হবে না ।
    Total Reply(0) Reply
  • Engr Amirul Islam ২৩ নভেম্বর, ২০১৮, ৭:৪৪ এএম says : 0
    Fair election will never be possible under this pro Indian EC.. and Police .. any mad or stupid can understand that.
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: জাতীয় সংসদ নির্বাচন


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ