পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ইভিএম ব্যবহার হলে সংবিধান লঙ্ঘনের অভিযোগে সরকার ও নির্বাচন কমিশনের বিরুদ্ধে মামলা করার হুশিয়ারি দিয়েছে জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট। গতকাল রাজধানীর লেকশোর হোটেলে জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট আয়োজিত ইভিএমকে না বলুন, আপনার ভোটকে সুরক্ষিত করুন’ শীর্ষক সেমিনারে ঐক্যফ্রন্টের নেতারা এ হুশিয়ারি দেন। সেমিনারে নেতারা বলেন, সংবিধান অনুযায়ী ইভিএম ব্যবহার করা রাষ্ট্রীয় অপরাধ। সংবিধান লঙ্ঘন করে যদি ইভিএম ব্যবহার করেন, তাহলে রাষ্ট্রীয় অপরাধ করবেন। এই অপরাধ করলে ড. কামাল হোসেনের নেতৃত্বে মামলা করা হবে।
বিএনপি মহাসচিব ঐক্যফ্রন্ট মুখপাত্র মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের সভাপতিত্বে এ সেমিনার অনুষ্ঠিত হয়। সেমিনারে ইলেক্ট্রনিক ভোটিং টেস্টিং ডিভাইসে দেখানো হয় কীভাবে ইভিএমের মূল ভোটিং প্র্রোগামিং পরিবর্তন করা যায়। এর মাধ্যমে ভোটের ফলাফল পরিবর্তন করা সম্ভব। সময়ভিত্তিক, সংখ্যা নির্ভর ও চূড়ান্ত ফলাফল ভিত্তিক কারচুপি সবই করা সম্ভব। সেমিনারে ইভিএম মেশিন তৈরি করে ভোট কারচুপির পদ্ধতি দেখান প্রকৌশলী রিয়াজুল ইসলাম রিজু, তাবিথ আউয়াল, ফয়সাল আলীম, আশরাফ উদ্দিন বকুল, তানবিরুল হাসান তমাল ও মিজানুর রহমান প্রমুখ। মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, এ সরকারের আজ্ঞাবহ নির্বাচন কমিশন। এজন্য জনগণের কোনো কথাই কানে যাচ্ছে না। রাজনৈতিকভাবে দেউলিয়া দল আওয়ামী লীগ নানা কৌশল করে ক্ষমতায় থাকতে চায়। যখন জনগণ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়, তখনই এ ধরনের কৌশল গ্রহণ করা হয়। আমরা নির্বাচনে যাবো, জনগণ ভোট বিপ্লব করবে। নির্বাচনকে অবশ্যই জনগনের রায়ে পরিণত করতে জনগন সেই লড়াই সেই যুদ্ধে লড়বে, ভোটের যুদ্ধে লড়বে। সেখানে কোনো কিছুই তাদেরকে আটকে রাখতে পারবে না। ভোট বিপ্লব হবে, জনগন সেই ভোট বিপ্লবের জন্য প্রস্তুত হয়ে রয়েছে।
জেএসডির সভাপতি ঐক্যফ্রন্ট নেতা আ স ম আবদুর রব বলেন, আমরা স্পষ্ট করে বলতে চাই, কনস্ট্রিটিউশন ভায়োলেশন হবে ইভিএম ব্যবহার করলে। সংবিধানের বিরোধিতা হবে, রাষ্ট্রদ্রোহিতা হবে। এটা রাষ্ট্রীয় অপরাধ, সাংবিধানিক অপরাধ। এটা যদি নির্বাচন কমিশন সরকারের আজ্ঞাবহ হয়ে ব্যবহার করতে যায় আমরা আমাদের নেতা সংবিধান প্রণেতা আইন বিশেষজ্ঞ প্রবীন রাজনীতিবিদ ড. কামাল হোসেনের নেতৃত্বে সরকার এবং নির্বাচন কমিশনের বিরুদ্ধে মামলা করবো।
সংবিধানের ৬৫ অনুচ্ছেদের ২(এ) ধারা উল্লেখ করে রব বলেন, সেখানে বলা আছে, সংসদ গঠন হবে জনগনের প্রত্যক্ষ ভোটে। মেশিনে প্রত্যক্ষ করা যায় না। সংবিধানের বলা আছে ডাইরেক্ট। প্রশ্নবিদ্ধ ইভিএম এই শর্ত পুরন করে না। তাই সংবিধান সংশোধন করা ছাড়া ইভিএম ব্যবহার করা যাবে না। প্রত্যক্ষ ভোটের একটি প্রধান শর্ত যে ভোট প্রদান থেকে শুরু করে সর্বশেষ ভোট গণনা পর্যন্ত সকল নির্বাচনী প্রক্রিয়ায় জনগনের কাছে উন্মুক্ত থাকতে হবে। ইভিএমের বর্তমান প্রস্তাব ও কাঠামো বাংলাদেশে মতো দেশে প্রচন্ডভাবে অগণতান্ত্রিক। জনগনের কাছে এই মেশিনের স্বচ্ছতা নেই, উন্মুক্ত নয়।
তিনি বলেন, বাংলাদেশে কোনো রাজনৈতিক দল, ভোটার ও জনগন চায়নি ইভিএম ব্যবহার। আমরা যারা নির্বাচনের অংশী, যারা নির্বাচন করবো, করাবো, ভোট দেবো, জয়লাভ করবো, সরকার গঠন করবো, আমরা কেউ চাইলাম না। আপনি নির্বাচন কমিশন এতো এডামেন্ট কেনো? আসলে ঘটনা হলো আপনি গতবারের ১০ হাজার টাকার মেশিন এবার ২ লাখ টাকা দিয়ে কিনেছেন। হারামটা জায়েজ করার জন্য, টাকাটা খাওয়ার জন্য। বিশ্বের জার্মানী, যুক্তরাষ্ট্রসহ বিভিন্ন উন্নত দেশে ইভিএম বন্ধ হয়ে যাওয়ার ঘটনাও তুলে ধরেন আসম আবদুর রব। ইভিএমের মাধ্যমে ক্ষমতাসীনরা ভোট জালিয়াতি করবে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ইভিএমে ভোট করতে দেয়া হবে না, আপনারা করতে পারবেন না। আমি নির্বাচন কমিশনকে বলতে চাই, এটা সংবিধান বিরোধী, রাষ্ট্র বিরোধী, মামলা হবে জেলে যাবেন। আমরা ছাড়লেও দেশের ১৮ কোটি মানুষ ছাড়বে না।
কৃষক শ্রমিক জনতা লীগের সভাপতি বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকী বলেন, বর্তমান সরকার এবার ভোট কেন্দ্রে যেতে পারবে বলে আমার সন্দেহ আছে। ইভিএমের এই রকম প্রেজেনেটশন আরো সব জায়গায় দেয়া দরকার। এতে মানুষ আরো সাহসী হবে। মূলত আমাদের দরকার মানুষকে সাহসী করে তোলা। তিনি বলেন, সংবিধান সংশোধন ছাড়া ইভিএম ব্যবহার করা যাবে না। জনগণের কাছে ইভিএমের কোনো স্বচ্ছতা নেই। সেমিনারে দেখানো হয়েছে, কীভাবে রাজ্জাকের ভোট খালেকের নামে চলে যাবে। ইভিএমের প্রোগ্রামিং কারা তৈরি করছে তা জাতির কাছে তুলে ধরার আহŸান জানিয়ে বলেন, ইভিএমে ভোট জালিয়াতি করে পার পাবেন না, মামলা হবে, একদিন জেলে যেতে হবে। ইভিএম দিয়ে দেশপ্রেমিক সেনাবাহিনীকে বিতর্কিত করবেন না। পুলিশ, আনসার ও প্রশাসনকে নিরপেক্ষ কাজ করার আহŸান জানিয়ে বলেন, নির্বাচনের পরে আপনাদের এদেশেই থাকতে হবে। তাই কোনো দলের হয়ে কাজ করবেন না। জনগণের বিরুদ্ধে যাবেন না, তা না হলে ইতিহাস ক্ষমা করবে না।
ডা: জাফরুল্লাহ চৌধুরী বলেন, দেশকে যদি শান্তির পথে রাখতে হয়, তাহলে সুষ্ঠু নির্বাচন দরকার। সুষ্ঠু নির্বাচনে ইসির ভয় কীসের। কমিশনকে বলেছি, তারা কতটি ইভিএম ব্যবহার করবে, তারা বলেছে, সীমিত আকারে, এটা কোনো সংখ্যা নেই। সহজেই বোঝা যায়, তাদের মতলব খারাপ। জনগণকে ভোট দেওয়ার ব্যবস্থা করে দেন, তা না হলে লুকিয়ে থেকেও রেহাই পাবেন না।
মাহমুদুর রহমান মান্না বলেন, যারা ৫ জানুয়ারি উড়ে এসে চাপ দিয়ে নির্বাচন করতে বাধ্য করেছে, তারাও বলেছে এবার আর প্রহসনের নির্বাচন মানবে না। আমরা আন্দোলনের অংশ হিসেবে নির্বাচনে অংশ নিয়েছি। ভোটের দিন ভোটের মাঠে ভোট দিতে যান। এবার ¯েøাগানটা দিতে হবে নিরাপদ ভোট চাই, নিরাপদ ভোট কেন্দ্র চাই। আমরা একটা শঙ্কামুক্ত, প্রশ্নমুক্ত নির্বাচন চাই। এই নির্বাচনের জন্য আমরা আমাদের দাবি উপস্থাপন করেছি।
তিনি বলেন, সর্বশেষ লাস্ট- আমাদের দেশের জনগনের অভ্যুত্থান হওয়ার সম্ভাবনা আছে। আশা হারাবার কোনো কারণ নেই। এজন্য লড়াইটা চালাতে হবে আমাদেরকে। সর্বাত্মকভাবে সর্বাংশে মন-প্রাণ দিয়ে সবাইকে অংশ গ্রহণ করতে হবে। কারণ যারা ক্ষমতায় বসে আছে- দে আর রাইডিং অন এ রানিং টাইগার। কোনো ছাড় দেবার উপায় নেই।
আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেন, কোনো প্রতিষ্ঠানের উপর আস্থা রাখতে হয়, তাদের কার্যক্রমে স্বচ্ছতা থাকতে হয়। সেখানে স্বচ্ছতা নেই বলেই ইসির উপর আস্থা রাখতে পারছি না।
সুব্রত চৌধুরী বলেন, ইভিএম মহা ভোট ডাকাতির পদ্ধতি। মানুষের ভোটের অধিকার হরণ করে বোকা বানিয়ে ইভিএমের উপর ভর করে আবারো ক্ষমতায় থাকতে চায়।
বিএনপির বিজ্ঞান-প্রযুক্তি বিষয়ক সম্পাদক প্রকৌশলী রিয়াজুল ইসলাম রিজুর পরিচালনায় সেমিনারে বিএনপির আবদুল মঈন খান, ও জাতীয় পার্টি (কাজী জাফর) মোস্তফা জামাল হায়দার বক্তব্য রাখেন।
সেমিনারে ২০ দলীয় জোটের শরিক খেলাফত মজলিশের অধ্যক্ষ মুহাম্মদ ইসহাক, ইসলামী ঐক্যজোটের এম এ রকীব, বিজেপির আন্দালিব রহমান পার্থ, কল্যাণ পার্টির মেজর জেনারেল (অব.) সৈয়দ মুহাম্মদ ইবরাহিম, এলডিপির রেদোয়ান আহমেদ, জাগপার তাসমিয়া প্রধান, খন্দকার লুৎফর রহমান, এনপিপির ফরিদুজ্জামান ফরহাদ, মোস্তাফিজুর রহমান মোস্তফা, লেবার পার্টির মোস্তাফিজুর রহমান ইরান, মুসলিম লীগের এএইচএম কামরুজ্জামান খান, পিপলস লীগের গরীবে নেওয়াজ, ন্যাপ-ভাসানীর আজহারুল ইসলাম, বাংলাদেশ ন্যাপের এম এন শাওন সাদেকী, ইসলামিক পার্টির আবু তাহের চৌধুরী, জমিয়তে উলামায়ে ইসলামের মাওলানা নুর হোসাইন কাসেমী, মুফতি মো. ওয়াক্কাস, মহিউদ্দিন ইকরাম, সাম্যবাদী দলের সাঈদ আহমেদ, ডিএলের সাইফুদ্দিন আহমেদ মনি, জাতীয় লীগের সৈয়দ এহসানুল হুদা, পিপিবি‘র শামসুল হক প্রমূখ উপস্থিত ছিলেন।
এ ছাড়া আরও উপস্থিত ছিলেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক মাহবুবউল্লাহ, তাজমেরী এস এ ইসলাম, অধ্যাপক মামুন আহমেদ, অধ্যাপক অধ্যাপক একেএম আজিজুল হক, সাংবাদিক শওকত মাহমুদ, সাংবাদিক মাহফুজউল্লাহ, ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের মহাসচিব এম আবদুল্লাহ, ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের সভাপতি কাদের গনি চৌধুরী, সাধারণ সম্পাদক শহীদুল ইসলাম, অধ্যাপক ডা. এ জেড এম জাহিদ হোসেন, অধ্যাপক সিরাজউদ্দিন আহমেদ, অধ্যাপক ফরহাদ হালিম ডোনার, বিএনপির শহিদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানি, সেলিম ভুঁইয়া, শাকিল ওয়াহিদ, মোস্তাফিজুর রহমান বাবুল, শামীমুর রহমান শামীম, আশরাফউদ্দিন বকুল, কেএম আসাদুজ্জামান, বেবী নাজনীন, হাছিনা আহমেদ, সারোয়ার হোসেন প্রমুখ।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।