জিম্বাবুয়ে সিরিজ শেষে খুব একটা বিশ্রামের সময় পায়নি টাইগাররা। ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে সিরিজ খেলতে চট্টগ্রামে অনুশীলন করছে বাংলাদেশ জাতীয় দল। সফরকারী ওয়েস্ট ইন্ডিজ চট্টগ্রামে অনুষ্ঠিত প্রস্তুতি ম্যাচে বিসিবি একাদশের সাথে করেছে ড্র। এ প্রস্তুতি ম্যাচে টেস্টে ফেরার ভালোই জানান দিয়েছেন সৌম্য সরকার। এক বছর পর তিনি ফিরছেন সাদা পোশাকে। এছাড়া টেস্ট দলে সাদমানেরও অন্তর্ভুক্তি হয়েছে। তরুণ এ ব্যাটসম্যান জায়গা করে নিলেন ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে টেস্ট দলে। ইনজুরি থেকে ফিরেছেন সাকিবও। এসব মিলে প্রস্তুত বাংলাদেশ দল। আগামীকাল থেকে চট্টগ্রাম জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়ামে প্রথম টেস্ট ম্যাচ দিয়ে ক্যারিবীয়ানদের বিপক্ষে ক্রিকেট যুদ্ধ শুরু হবে টাইগারদের।
গতকাল দুপুরে মুশফিক, নাঈম হাসান অনুশীলন করেছেন জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়ামে। বিশেষ করে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে ডবল সেঞ্চুরিয়ান উইকেট কিপার মুশফিক রহিম নেটে ব্যাটিং প্র্যাকটিস করেছেন দীর্ঘক্ষণ। ব্যাটিংয়ে যেভাবে মনোনিবেশ করে প্র্যাকটিস করতে দেখা গেছে এতে মনে হয়েছে ওয়েস্ট ইন্ডিজ সিরিজে ভালো করার প্রত্যয়। হুট করেই জাতীয় দলে সুযোগ পেয়েছেন সাদমান ইসলাম। তার জন্যে প্র্যাকটিস কিট এখনো তৈরি হয়নি। অধিনায়ক সাকিব আল হাসানের সঙ্গে অনুশীলনে এলেন এইচপি দলের জার্সি চাপিয়ে। জাতীয় লিগে সবচাইতে বেশি রান রয়েছে সাদমানের। এ দুই খেলোয়াড়ও নেটে করেছেন প্র্যাকটিস।
ডাকটা হুট করে হলেও সাদমানের প্রস্তুতি আসলে অনেক দিনের। হুটহাট অভিষেক হয়ে যাওয়াদের দলে নয়। এই তরুণ মনে করেছেন বড় মঞ্চে পোক্ত হয়েই এসেছেন তিনি। বিকেলে প্র্যাকটিস শেষে সাদমান বলেন, ‘প্রথম শ্রেণীর ক্রিকেট খেলছি গত প্রায় ৪-৫ বছর ধরে। একজন ক্রিকেটার যখন আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে খেলতে যায়, তখন একটু পরিণত হয়ে যাওয়াই ভালো। প্রথম শ্রেণীর ক্রিকেট আর আন্তর্জাতিক ক্রিকেটের পার্থক্য অনেক। আন্তর্জাতিক ক্রিকেট চিন্তা-ভাবনা করেই খেলতে হয় এবং ইনিংসটা কিভাবে গুছিয়ে খেলতে হবে তা জানা থাকতে হবে। আমার মনে হয়, সেরকম খেলে আমি ম্যাচিউর হয়েছি। সে সুবাদে প্রস্তুতি ম্যাচটা ভালো খেলেছি। হয়তো নির্বাচকদের মনে হয়েছে ম্যাচিউর ইনিংস। তাই আমাকে সুযোগ দিয়েছেন।’
তার কাছে অবশ্য কোচের চাওয়া আরও বেশি। ৭২ রানের ইনিংস খেলার পর কোচ স্টিভ রোডস তার সঙ্গে বেশ কিছুক্ষণ কথা বলেন। কি বলেছিলেন কোচ? জানালেন সেটিও, ‘তিনি (কোচ) বলেছেন ভালো করেছো। প্র্যাকটিস ম্যাচের ইনিংসটা আরো লম্বা করতে পারতে। একটু ডিফেন্স নিয়ে কাজ করতে হবে। লম্বা ইনিংসই কোচ আমার কাছে চান।’ ওয়েস্ট ইন্ডিজের পেসারদের মোকাবিলা করা কঠিন হবে কি-না এমন প্রশ্নের জবাবে সাদমান বলেন, ‘সেরকম মনে হয়নি। আমাদের পেসাররাওতো অনেক গতিতে বল বোলিং করেন। প্রস্তুতি ম্যাচে তাদের পেস বোলিংয়ে তেমন কঠিন কিছু দেখলাম না।’
বাংলাদেশে পা রেখে সাকিব-মুশফিকদের কাছ থেকে কঠিন লড়াই-ই আশা করছেন কার্লোস ব্রাফেটও। সংবাদমাধ্যমকে উইন্ডিজ অধিনায়ক বলেন, ‘ভারত সফর করে এসেছি। প্রথম টেস্টের আগে ওটা খুব ভালো প্রস্তুতি ছিল বলেই মনে করি। কন্ডিশন প্রায় একই, উইকেটেও তেমন পার্থক্য নেই।’ এবার ফিরতি সিরিজটা বাংলাদেশের মাটিতে হওয়ায় বাংলাদেশ যে কিছুটা সুবিধা পাবে তা মেনে নিচ্ছেন ব্রাফেট। উইকেট তো এমনিতেই হাতের তালুর মতো চেনা, তার ওপর ঘরের দর্শকদের সামনে খেলার সুবিধা পাবেন সাকিব-মুশফিকেরা। ব্রাফেট তাই মনে করেন, ‘চ্যালেঞ্জ থাকাই স্বাভাবিক। কাজটা মোটেও সহজ হবে না। ওরা ঘরের মাঠে খুব ভালো। কিন্তু আমাদের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলার জন্য প্রস্তুত থাকতে হবে।’
জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়ামে ক্যারিবীয়ানরা ২০১১ সালে বাংলাদেশের বিপক্ষে টেস্ট ম্যাচ খেলেছিলেন। সে ম্যাচটি হয়েছিল ড্র। এ ভেন্যুতে এ বছর ফেব্রুয়ারিতে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে বাংলাদেশ টেস্ট ম্যাচ খেলেছিল সেটিও ছিল ড্র। লঙ্গার ভার্সনে এবারের সিরিজে বাংলাদেশের কঠিন প্রতিপক্ষ হচ্ছে ওয়েস্ট ইন্ডিজ। র‌্যাংকিংয়ে বাংলাদেশের চেয়ে এক ধাপ উপরে থাকা দলটি স্বাগতিকদের চ্যালেঞ্জ জানাতে প্রস্তুত। চোটের কারণে ছিটকে গেছেন তাদের নিয়মিত অধিনায়ক জেসন হোল্ডার। তারপরও উইন্ডিজ দলকে সমীহ করতে হচ্ছে। ভারতের কাছে টেস্ট সিরিজে ওয়াইওয়াশ হয়ে আসা দলটি ক্ষুধার্ত। টাইগারদেরকে যে চ্যালেঞ্জ জানাবে দলটি তা বলার অপেক্ষা রাখে না।