ঈদে মিলাদুন্নবী (সা.) এর গুরুত্ব ও তাৎপর্য
মুসলিম ঈদোৎসবগুলির মধ্যে ঈদুল ফেতর ও ঈদুল আজহা- এই দুই ঈদকে প্রধান উৎসব বলে খোদ
তাবলীগের মর্ম
তাবলীগ শব্দটির অর্থ হচ্ছে পয়গাম পৌঁছানো। এর ব্যবহারিক অর্থ হচ্ছে এই যে, যে বস্তুকে আমরা উত্তম জানি, তার উত্তমতা এবং সৌন্দর্যকে অন্যান্য লোকের সামনে এবং অন্যান্য জাতি ও দেশে পৌঁছে দেয়া এবং তাদেরকে উহা গ্রহণ করার জন্য আহবান জানানো। কুরআনুল কারীমে তাবলীগের সমার্থবোধক আরও শব্দবলি আছে। তন্মধ্যে একটি হচ্ছে ‘ইনজার’ এর অর্থ হুঁশিয়ার এবং সতর্ক করা। দ্বিতীয় হচ্ছে ‘দাওয়াত’ অর্থাৎ ডাকা এবং আহবান করা। তৃতীয়টি হচ্ছে ‘তাজকীর’ অর্থাৎ স্মরণ করিয়ে দেয়া ও নসীহত করা।
রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর আবির্ভাবের প্রাক্কালে দুনিয়াতে দু’ধরনের ধর্ম ছিল। এই দু’টি ধর্মই ছিল তাবলীগী বা আহবাননসূচক। এর একটি খ্রিষ্টান ধর্ম এবং অপরটি বৌদ্ধ ধর্ম। অন্যান্য ধর্মগুলো যেমন তেমনই ছিল, কিন্তু তাবলীগী ছিল না। যেমন ইহুদিবাদ, অগ্নি পূজাবাদ এবং পৌঁত্তলিকতা। যে দু’টি ধর্ম তাবলীগী ছিল, এগুলো সম্পর্কে এই ফায়সালা করা কঠিন যে, এই তাবলীগ কি তাদের মৌলিক ধর্মের হুকুম ছিল, না কি উহা এর অনুসারীদের আমল? কেননা তাদের ধর্মীয় কিতাবাদিতে এই সাধারণ আহবানের সুস্পষ্ট হেদায়েত এবং উহার প্রবর্তকদের জিন্দেগিতে এর ব্যবহারিক নমুনা ও সাধারণ আহবানের সুস্পষ্ট হেদায়েত এবং উহার প্রবর্তকদের জিন্দেগিতে এর ব্যবহারিক নমুনা ও উদাহরণ খুঁজে পাওয়া যায় না। মোটকথা, সকল ধর্মমতের মাঝে শুধু ইসলামই এমন একটি মাজহাব, যেখানে তাবলীগের গুরুত্ব তুলে ধরা হয়েছে এবং এ সম্পর্কে স্বীয় কিতাবে সুস্পষ্ট নির্দেশ প্রদান করেছে। এমনকি এই ধর্মের প্রবর্তক স্বীয় জিন্দেগিতে এর ব্যবহারিক উদাহরণসমূহ পেশ করেছেন।
যে সকল ধর্মে তাবলীগ ও প্রচারকে স্বীয় বিধানের অন্তর্ভুক্ত করা হয়নি, সেগুলোর মাঝে তাবলীগের ব্যবহার মূলত: দুটি কারণেই হতে পারে। প্রথমত: তাদের নিকট এই সত্যকে কবুল করার সম্মানের যোগ্যতা ও অধিকার তাদের পয়দায়েশের মাধ্যমেই হাসিল হতে পারে, চেষ্টা ও তদবিরের দ্বারা নয়। দ্বিতীয়ত: যে সত্য তাদের নিকট আছে, সেটি তাদের কাছে এতই পাক ও পবিত্র যে, তাদের নির্দিষ্ট পবিত্র, মর্যাদাপূর্ণ ও সম্মানিত বংশ ও গোত্র ছাড়া অন্যান্য বংশ ও গোত্র যেগুলো নাপাক ও অপবিত্র এবং অকুলীন, তাদের পর্যন্ত নিজেদের পবিত্র ধর্ম ও মাজহাবকে নিয়ে যাওয়া স্বয়ং এই ধর্মকে আঘাত করারই শামিল। এটাই হচ্ছে এমমাত্র কারণ যে, হজরত ঈসা মাসীহ (আ.) একবার যখন তার কাছে একজন কিনআনী। (মথি-১) অথবা ইউনানী (মার্কস) মহিলা বরকত চাইলো, তখন বললেন, “আমি ইস্রাঈলের গৃহের হারিয়ে যাওয়া মেষপাল ছাড়া আর কারও প্রতি প্রেরিত হইনি। (মথি ১৫-৪৫) তারপর বললেন: এটা মোটেই সঙ্গত নয় যে, বাচ্চাদের রুটি (বনী ইস্রাঈলের ধর্ম) কুকুরগুলোকে (অইস্রাঈলী গোত্র) নিক্ষেপ করে দেই (মথি-২৮); তারপর বলেছেন: ভিন্ন গোত্রগুলোর দিকে গমন করো না এবং সামেরীদের কোনো শহরে প্রবেশ করো না, বরং প্রথমে ইস্রঈলীদের হারানো মেষগুলোর দিকে গমন করো, এবং চলার পথে ঘোষণা করে দাও (মথি-১০-৬); তারপর বলেছেন: ঐ বস্তু যা পাক ও পবিত্র, উহা কুকুরগুলোকে দিয়ো না এবং নিজেদের মোতিসমূহ শূকরগুলোর সামনে নিক্ষেপ করো না। (মথি-৭-৬)
হিন্দু এবং পৌত্তলিকরাও নিজেদের ধর্মকে অন্যান্য সকল জাতিগোষ্ঠী থেকে লুকিয়ে রেখেছে। এর কারণও সম্ভবত: এই ছিল যে, তারা তাদের পবিত্র ধর্মকে সেøচ্ছ এবং অসম্পৃশ্যদেরকে শিখিয়ে উহাকে নাপাক করতে চাইত না। তাছাড়া ইহুদিদেরও এই খেয়াল ছিল যে, খাতনাবিহীন সম্প্রদায় এই নিয়ামতের যোগ্য নয়। তাবলীগের গুরুত্ব
রাসূলুল্লাহ (সা.) দুনিয়ার সকল জাতিগোষ্ঠীকে সম্মান ও সমপর্যায়ের একই সমতলে এনে দাঁড় করিয়েছিলেন এবং আল্লাহর পয়গাম পৌঁছানোর অধিকার ও দায়িত্ব সকলকে সমানভাবে দান করেছেন। এ জন্য স্বীয় তাবলীগের ক্ষেত্রে কুরাইশ, গায়রে কুরাইশ, হেজাজ ও ইয়েমেন, আরব ও আযম, হিন্দুস্থান ও রূমের কোনো বাধ্য-বাধকতা রাখেননি; বরং দুনিয়ার সকল কাওম, সকল ভাষা এবং সকল অংশে আল্লাহর ধ্বনিকে পৌঁছে দেয়া ফরজ সাব্যস্ত করেন। অহী প্রারম্ভে অজানা লোকদের হুঁশিয়ার করা, বেখবরদেরকে অবহিত করা সর্বপ্রথম নির্দেশ ছিল। ইরশাদ হচ্ছে: “হে চাদব আবৃত নবী! উঠুন এবং সতর্ক করুন।” (সূরা মুদ্দাসসির) তারপর বারবার হুকুম হতে থাকে : (ক) “যা আপনার নিকট নাজিল করা হয়েছে, তা পৌঁছে দিন।” (খ) “মানুষকে দাওয়াত দিন এবং দৃঢ়ভাবে কায়েম থাকুন, যেভাবে আপনাকে নির্দেশ দেয়া হয়েছে।” (গ) “মানুষকে নসীহত করুন, যদি নসীহত উপকারী হয়।” (ঘ) “এবং নসীহত করুন, নসীহত ঈমানদারদের উপকার সাধন করে।” (ঙ) “কুরআনের মাধ্যমে ভয় দেখাও যেন আমার শাসনকে ভয় করে।” এ ছাড়াও অসংখ্য আয়াতে এই ফরজের গুরুত্বকে তুলে ধরা হয়েছে “একবার রাসূলুল্লাহ (সা.) হজরত আলী (রা.)-কে লক্ষ্য করে বললেন: বড় হতে বড় দৌলতের চেয়েও শ্রেষ্ঠ।” (সহীহ মুসলিম: খায়বর অধ্যায়) এর চেয়েও অধিক তাৎপর্যের কথা হচ্ছে এই যে, ইসলাম তার প্রত্যেক অনুসারীদের ওপর মঙ্গল কাজের প্রতি আহবান জানানো, সৎকাজের নির্দেশ করা, অসৎকাজ হতে নিষেধ করা, পরস্পর একে অন্যকে সত্যতার নসীহত করাকে আবশ্যক সাব্যস্ত করেছে এবং মুসলমানদের এটা ফরজ করা হয়েছে যে, তারা যেন নিজেদের সাথে অন্যান্যদেরকেও অন্ধকার হতে আলোর দিকে নিয়ে আসার জন্য চেষ্টা ও সাধনা করে। রাসূলুল্লাহ (সা.)-কে হুকুম করা হয়েছে যে, সকল প্রকার ভয়ভীতি উপেক্ষা করে যেন আল্লাহর পয়গামকে মানুষের নিকট পৌঁছে দেয়। আর যদি এমন না করেন, তাহলে রিসালতের দায়িত্ব ও আঞ্জাম দিতে পারবেন না। আল-কুরআনে ঘোষণা করা হয়েছে: “হে আল্লাহর পয়গাম পৌঁছানোকারী! যা কিছু আপনার প্রতিপালকের নিকট হতে আপনার প্রতি অবতীর্ণ হয়েছে তা মানুষের নিকট পৌঁছে দিন। যদি আপনি এমন না করেন, তাহলে আপনি আল্লাহর পয়গাম পৌঁছাননি; আর অবশ্যই আল্লাহপাক আপনাকে মানুষের খপ্পর হতে রক্ষা করবেন।” (সূরা মায়িদাহ: রুকু-১০)
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।