বিএনপির মানববন্ধন আজ, পাল্টা কর্মসূচি আওয়ামী লীগ
সারা দেশের মহানগর ও জেলা পর্যায়ে আজ মানববন্ধন করবে বিএনপি ও তার মিত্ররা। আর এ
‘সমাবর্তন’ শব্দটায় বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের প্রাণোচ্ছল উচ্ছ্বাস জড়িত। সমাবর্তন এমনই এক অনুষ্ঠান যে অনুষ্ঠানের মাধ্যমে শিক্ষার্থীর দীর্ঘ তপস্যার ফল ডিগ্রী প্রদান করা হয়। বিশ্ববিদ্যালয় প্রাঙ্গনে জ্ঞানীগুণিদের সম্মিলন ঘটে। যা শিক্ষার্থীর জীবনের বড় প্রাপ্তি। সঠিক সময়ে সমাবর্তন অনুষ্ঠিত না হলে ডিগ্রীধারীদের মধ্যে চরম অপ্রাপ্তি কাজ করে।
জানা যায়, প্রতিষ্ঠার ১২ বছর পার করলেও কোন সমাবর্তন আয়োজন করতে পারেনি দেশের মধ্যপ‚র্বাঞ্চলের একমাত্র বিদ্যাপীঠ কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়। ২০০৬ সালের ২৮মে দেশের ২৬তম পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে কার্যক্রম শুরু করা এ শিক্ষালয়টির বিভিন্ন বিভাগ থেকে স্নাতক এবং স্নাতকোত্তর সম্পন্ন করেছেন ছয় থেকে সাতটি ব্যাচ। এক যুগেও শিক্ষার্থীরা সর্বোচ্চ ডিগ্রি অর্জন করেও আনুষ্ঠানিক স্বীকৃতি থেকে বঞ্চিত রয়েছেন।
উচ্চ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের অধ্যয়ন কার্যক্রম সমাবর্তনের মাধ্যমে আনুষ্ঠানিকভাবে শেষে করে কর্মজীবন শুরু করার কথা থাকলেও সমাবর্তন না হওয়ায় সাময়িক সনদপত্র নিয়েই কর্মজীবনে প্রবেশ করতে হচ্ছে শিক্ষার্থীদের। চ্যান্সেলরের হাত থেকে সনদপত্র গ্রহণ করবেন কিন্তু সমাবর্তন না হওয়ায় এই বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের সেই স্বপ্ন অধরাই রয়ে গেছে।
বিশ্ববিদ্যালয়টির পরীক্ষা নিয়ন্ত্রকের কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, সর্বশেষ ২০১২-১৩ শিক্ষাবর্ষ পর্যন্ত ২৭১৩ জন শিক্ষার্থী স্নাতক এবং ২০১৫-১৬ শিক্ষাবর্ষ পর্যন্ত ১৭৫৯ জন শিক্ষার্থী স্নাতকোত্তরের সাময়িক সনদ গ্রহণ করেছেন। ইংরেজী বিভাগের ২০০৬-২০০৭ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী এবং ব্রাক বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন শিক্ষক ও মালয়েশিয়ার ইনফ্রাট্রাকচার ইউনিভার্সিটি কুয়ালালামপুরে পিএইচডি গবেষক হাসান মোহাম্মাদ মাহাদী বলেন, সমাবর্তনের মাধ্যমে শিক্ষা সনদ গ্রহণ করা প্রত্যেকটি গ্যাজুয়েটের অধিকার, কিন্তু গত এক যুগ ধরে এই বিশ্ববিদ্যালয়ে সকলে বড় বড় স্বপ্নের গল্প শুনিয়েছেন। সমাবর্তনটা যেনো গল্পেই সীমাবদ্ধ না থাকে। শুধু মাত্র ঘোষণা নয় আমরা যত দ্রুত সম্ভব বাস্তবায়ন দেখতে চাই।
ডিগ্রী প্রদানের জন্য সমাবর্তনের আয়োজন করা হয় এবং সমাবর্তন ডিগ্রীর মান তরান্বিত করে বলে মনে করেন প্রধানমন্ত্রীর স্বর্ণপদক প্রাপ্ত ব্যবস্থাপনা শিক্ষা বিভাগের সাবেক শিক্ষার্থী মো. রফিকুল ইসলাম।
সম্প্রতি ডিগ্রী অর্জন করে একটি জাতীয় দৈনিকে কর্মরত নৃবিজ্ঞান বিভাগের সাবেক শিক্ষার্থী মুহাম্মাদ শফিউল্লাহ বলেন, বিশ্ববিদ্যালয় থেকে যারা ডিগ্রী অর্জন করেন তারা প্রত্যেকই স্বপ্ন দেখেন যে, একটি বিশেষ অনুষ্ঠানের মাধ্যমে তাকে এই ডিগ্রী প্রদান করা হবে। এতে ঐ শিক্ষার্থী সম্মানিত হন, এটি তার দীর্ঘ শিক্ষাজীবনের প্রাপ্তি স্বরূপ। তিনি সমাবর্তন বক্তার নিকট হতে দিকনির্দেশনা পাবেন। কিন্তু সমাবর্তন ছাড়া একজন শিক্ষার্থী তার শিক্ষা জীবন শেষ করে কর্মক্ষেত্রে প্রবেশ করছেন এবং সমাবর্তনের মাধ্যমে কবে ম‚ল সনদ পাবেন এমন একটা অনিশ্চতায় আছেন যেটা কষ্টকর।
সমাবর্তন বিশ্ববিদ্যালয় ও শিক্ষার্থীর জন্য অনেক গুরুত্বপ‚র্ণ বলে মনে করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ভিসি ড. আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক। তিনি বলেন, বিশ্ববিদ্যালয় দিবসসহ অন্যান্য গুরুত্বপ‚র্ণ দিবসের মত সমাবর্তনও বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। শিক্ষার্থীরা ভর্র্তি পরীক্ষার মাধ্যমে বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়ন শুরু করে এবং সমাবর্তনের মাধ্যমে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা জীবনের সমাপ্তি ঘটে। এ দিন সকল বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি, অধ্যাপক, সরকারের গুরুত্বপ‚র্ণ ব্যক্তি, বিদেশের বিশ্ববিদ্যালয় থেকে জ্ঞানীগুণীরা আসেন। সমাবর্তন বক্তা শিক্ষার্থীদের উদ্দেশ্যে বক্তব্য রাখেন। এটা শিক্ষার্থীদের আত্মবিশ্বাস ও মান বৃদ্ধি করে।’
সমাবর্তন বিশ্ববিদ্যালয়ের মান ও গুণ নির্ধারণে সহায়ক কিনা এমন প্রশ্নে এ অধ্যাপক বলেন, অবশ্যই মান নির্ধারণ করে। কেননা এখানে ডিগ্রী দেয়া হয়। স্বর্ণপদক প্রদান করা হয়। কতজন স্বর্ণপদক পেলেন। কতজন কি ডিগ্রী পেলেন এসব বিষয়ের দিকে বিশ্ব তাকিয়ে থাকে। এটা বিশ্ববিদ্যালয়েরও একটা প্রাপ্তিতে পরিণত হয়।
সমাবর্তন শিক্ষা কার্যক্রমের একটি নিয়মিত অংশ বলে মনে করেন কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির সহ-সভাপতি এবং মার্কেটিং বিভাগের শিক্ষক মেহেদী হাসান বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থী ভর্তি এবং সমাবর্তনের মাধ্যমে তাদের বিদায় দেয়া একটি নিয়মিত কার্যক্রম কিন্তু অতীতের বিভিন্ন সীমাবদ্ধতার কারণে সমাবর্তন আয়োজন করা যায়নি তবে বর্তমানে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের সমাবর্তন আয়োজনের সক্ষমতা রয়েছে বলে আমি মনে করি।
সমাবর্তন আয়োজনের বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি ড. এমরান কবির চৌধুরী ইনকিলাবকে বলেন, আমরা সমাবর্তন আয়োজনের অনুমতি পেয়েছি, এবং চেষ্টা করছি আগামী বছরের মধ্যে সকল আনুষ্ঠানিকতা সম্পন্ন করে সমাবর্তন আয়োজন করার।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।